বুধবার ● ২২ মে ২০২৪
প্রথম পাতা » নারী ও শিশু » এক নারী প্রার্থীর কাছে হারলেন আওয়ামী লীগের ৫ নেতা
এক নারী প্রার্থীর কাছে হারলেন আওয়ামী লীগের ৫ নেতা
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেকুন নাহার শিখা। এই উপজেলার ৫ আওয়ামী লীগ নেতাকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন শিখা ট্রাস্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান। তিনি ঘোড়া প্রতীকে ৩৮ হাজার ৩০৯ ভোট পেয়ে বেসরকারি ভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভিপতি আবু বকর সিদ্দিক আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ১১ হাজার ৬৪৭ ভোট।
এছাড়াও অপর ৩ প্রার্থী বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল শহীদ মুন্না মোটরসাইকেল প্রতীকে পেয়েছেন ১১ হাজার ৭০০ ভোট, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি জাহিদুল আলম বেনু কৈ মাছ প্রতীকে পেয়েছেন ৯ হাজার ১৭০ ভোট, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও কুসুম্বা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন মণ্ডল দোয়াত কলম প্রতীকে পেয়েছেন ৪ হাজার ৬ ভোট এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুমন চৌধুরী টেলিফোন প্রতীকে পেয়েছেন ১ হাজার ৫৭৬ ভোট।
মঙ্গলবার (২১ মে) অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা, পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মোট ৬ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ছিলেন ৫ জন। আর একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে ছিলেন একজন নারী। এ কারণে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ৫ জন প্রার্থীই ছিলেন একে অপরের কঠোর প্রতিদ্বন্দ্বী।
জানা গেছে, চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে আবু বকর সিদ্দিক মণ্ডল, তার আপন জামাই সুমন চৌধুরী, সোহরাব হোসেন ও জাহিদুল আলম বেনু ছিলেন এমপি সামছুল আলম দুদুর অনুসারী। শুধুমাত্র বর্তমান চেয়ারম্যান মনিরুল শহীদ মুন্না ছিলেন পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান হাবীবের অনুসারী।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, পাঁচবিবি উপজেলায় আওয়ামী লীগ দুই গ্রুপে বিভক্ত রয়েছেন। যার একটি অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জয়পুরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সামছুল আলম দুদু, অন্য অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পাঁচবিবি পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব। পাঁচবিবি উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপের বিভক্তির প্রভাব গেল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দৃশ্যমান হয়েছে। এবার প্রতীক হিসেবে নৌকা না থাকায় জটিল হয়ে উঠেছে এই সমীকরণ। প্রার্থী উন্মুক্ত থাকায় ‘নিজের লোককেই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বসাতে চান এমপি-মেয়র। এ কারণে পাঁচবিবি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে একে অপরের ‘পথের কাঁটা’ হয়ে দাঁড়ায় আওয়ামী লীগের পাঁচজন প্রার্থী। আর এই সুযোগে মাঠে কোমর বেঁধে নামেন গত পৌরসভা নির্বাচনে জনপ্রিয় মুখ হিসেবে পরিচিত পাওয়া শিখা ট্রাস্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাবেকুন নাহার শিখা।
এ বিষয়ে পাঁচবিবি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিহাদ মণ্ডল বলেন, এমপি-মেয়রদের মনোনীত প্রার্থী থাকতেই পারে। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মনের ইচ্ছে ছিল যে, উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দলীয় লোক নির্বাচিত হলে তারা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাবেন। কিন্তু সেই আশায় গুড়ে বালি। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বর্তমান চেয়ারম্যানের কাছ থেকে এর ছিটেফোঁটাও পাননি। সে কারণে তিনি এবার বিপুল ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতা আবু বকর সিদ্দিক, সোহরাব হোসেন ও সুমন চৌধুরী এমপি সাহেবের লোক হিসেবে পরিচিত। এবার সোহরাব হোসেনকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে দাঁড়িয়ে দিয়ে এবং সুমন চৌধুরীকে বসিয়ে রেখে মুরুব্বি আবু বকর সিদ্দিক মণ্ডলকে সমর্থন জানালে ফলাফল আওয়ামী লীগের পক্ষেই আসতো।
ভোটের ফলাফল পরবর্তী সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা গেছে, অনেকেই ঠাট্টা করে লিখছেন: জয়পুরহাটের সীমান্তবর্তী উপজেলা পাঁচবিবিতে এবার ৫ পুরুষ আটকাতে পারলো না ১ বিবিকে। আর সেই ১ বিবিই হলেন-সাবেকুন নাহার শিখা।
পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৪ হাজার ৬৪৬ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ২ হাজার ৬১৮ জন, পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২ হাজার ২৫ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৩ জন।
মঙ্গলবার (২১ মে) অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এ উপজেলায় ভোট পড়েছে ৩৯.৪৭ শতাংশ।
বিষয়: #নারী