শিরোনাম:
ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ন ১৪৩১

Somoy Channel
সোমবার ● ২০ মে ২০২৪
প্রথম পাতা » অনুপ্রেরণা (গল্প) » নীল_বেনারশী_
প্রথম পাতা » অনুপ্রেরণা (গল্প) » নীল_বেনারশী_
৬২ বার পঠিত
সোমবার ● ২০ মে ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

নীল_বেনারশী_

নীল_বেনারশী_লাল বেনারশী পরে বউ সেজে বসে আছি।কিছুক্ষণ পরেই আমার বিয়ে।আর সেই মুহূর্তে খবর এলো ছেলে এই বিয়ে করবেনা।ছেলের বাসা থেকে না করে দেয়া হয়েছে।আব্বু কথাটা শুনে মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে বসে পড়েছে।বাড়ী ভর্তি মেহমান।এলাকার সবাই জানে আজ আমার বিয়ে।গ্রাম অঞ্চলে বিয়ের কথা বার্তা হলে সারা এলাকায় জানাজানি হয়ে যায়।আর এখন যদি বিয়ে টা না হয় তাহলে মানুষের কথার যন্ত্র’ণায় রাস্তায় মুখ দেখানো যাবেনা।
লোকে বলবে আমার কোন দো’ষ আছে আর তাই বিয়ে ভেঙে গেছে।
এই প্রথম বারের মত আব্বুর চোখে জল দেখতে পাচ্ছি আমি।
আম্মুও খুব কান্নাকাটি করছে।সবাই জিজ্ঞেস করায় আব্বু আম্মু বলতে বাধ্য হয় যে বিয়ে টা হচ্ছেনা।
ছেলে পক্ষ না করে দিয়েছে।
সবাই এক এক করে বলে যাচ্ছে, হয়তো মেয়ের কোন দোষ আছে।
আবার কেউ বলছে,এই মেয়ের এখন বিয়ে হবে কই,খুঁত না থাকলে কি আর বিয়ের আসর থেকে বিয়ে ভাঙে?
কেউ আবার বলছে,কারো অভিশা*পের ফল।নিশ্চয় কারো অভি*শা’প লেগেছে।
একজন তো বলেই বসলো আব্বুকে,ভাইজান এই মেয়েকে এখন বিয়া দিবা কই?
কেউ তো বিয়ে করবেনা,যদি জানে এই মেয়ের বিয়ের দিন বিয়ে ভেঙে গেছে।
তখনই কেউ একজন এসে বলে উঠে,
আর যদি বিয়েটা আজই হয়,তাহলে তো আর কেউ কিছু বলবেনা তাইনা?
_আজ আর কিভাবে বিয়ে হবে রে বাবা?
বিয়ে তো ভেঙেই দিয়েছে ছেলে পক্ষ।(আব্বু)
আর এত বড় বদনামের পর কে বিয়ে করবে আমার মেয়েকে?
ছেলেটা সিনেমার নায়কের মত বলে উঠলো,
আমি বিয়ে করবো আপনার মেয়েকে।
আপনার যদি কোন আপত্তি না থাকে।
আব্বু ছেলেটাকে বুকে জড়িয়ে বল্লো,
আমার কোন আপত্তি নেই বাবা।
কিন্তু তোমার পরিবার?
তারা কি মেনে নিবে এই বিয়ে?
_আপনি সেসব আমার উপর ছেড়ে দিন,আর বিশ্বাস রাখুন আমার উপর।
চোখ মুছুন আর আপনার মেয়ের কাছে গিয়ে বসুন।
আমি আসছি একটু পরে।
_আসবে তো বাবা?
_ভরসা রাখুন আমার উপর।আসছি আমি কিছু ক্ষণ পরেই।
ছেলেটা চলে যায়।
আম্মু এসে আমাকে বলে,চিন্তা করিস না মা।
কাঁদিস না তোর বিয়ে আজই হবে।
আমি তাদের কিভাবে বুঝাই আমি আমার বিয়ে হচ্ছেনা তার জন্য কান্না করছিনা।
কেউ আমাকে ঠকিয়েছে আমি সেই জন্য কাঁদছি।তার কথা মনে করে কাঁদছি।
অনেক ক্ষণ হয়ে যায় ছেলেটা আর আসেনা।
সবাই আবার কানাকানি শুরু করে।
আর বলতে থাকে আসবেনা ওই ছেলে।বিয়ে এটাও হবেনা দেখে নিও।
সবার কানাকানি চলাকালীন হঠাৎ করেই ছেলে তার মাকে নিয়ে হাজির।
এসেই আব্বুকে বলেন,
_এটা আমার আম্মু।
আম্মুকে ছাড়াতো আর বিয়ে করতে পারিনা।
তাই নিয়ে আসলাম আম্মুকে।আব্বু দূরে আছেন,তাই তাকে নিয়ে আসতে পারলাম না।
আমার শাশুড়ী আম্মু,আব্বু আম্মুকে আশ্বাস দিয়ে বললেন তারা আমাকে খুব ভালো রাখবেন।
আর তাদের বাসার ঠিকানা পরিচয় সব কিছু জানান।মায়ান কি করে সে সব ও খুলে বলেন।
আব্বু শুনে একটু স্বস্তি পান।
তবে আব্বুর সেই মুহূর্তে শুধু মনে হচ্ছিলো আমাকে বিয়ে দিতে পারলেই হলো।
নয়তো আজ বিয়ে না হলে সমাজ আমাকে বাঁচতে দিবেনা তাদের বিষাক্ত কথায়।
তারপর ছেলে আর ছেলের মা একটা “নীল বেনারশী”আর কিছু গহনা দিয়ে আম্মুকে বলেন,আগের সব কিছু বাদ দিয়ে এগুলো পরিয়ে মেয়েকে তৈরি করুন।
তারপর সবাই মিলে আমাকে আবার নতুন করে সাজায়।
আমি স্বপ্নেও ভাবিনি আজ আমি নীল বেনারসি পরে বিয়ে করবো।
তবে একটা সময় খুব ইচ্ছে ছিলো,আমি সবার থেকে আলাদা ভাবে বিয়ে করবো।
যেমন আমার বিয়ের শাড়ী হবে লালের বদলে নীল।
আমার বাসর ঘরে কোন গাদা ফুল থাকবেনা আমার বাসর ঘর হবে রজনীগন্ধা আর গোলাপ দিয়ে সাজানো।
আর আমার বর আমাকে বাসর ঘরে একটা লকেট গিফট করবে,যেই লকেটে থাকবে তার নামের প্রথম অক্ষর।
যেটা আমি চেইনের সাথে পরলে সব সময় আমার বুকে থাকবে।
কিন্তু সব স্বপ্ন কি আর পূরণ হয়?
তবুও তো একটা হলো।
এটাই বা কম কি?
আমি রেডি হবার সাথে সাথে কাজী ডেকে আনা হলো।
কাজী আমাদের বিয়ে পড়ালেন।
আর মজার কথা হচ্ছে,আমরা কেউ ই কাউকে এখনো দেখিনি।আর যেই নাম শুনলাম ছেলের,
মায়ান রাহমান।
আমি জীবনেও এই নাম শুনিনি।
ছেলেকে আর চিনবো কোথায় থেকে।
ছেলে আমাকে চিনে কিনা তাও জানিনা।
দেখেছে কিনা কোন দিন সেটাও জানিনা।
তবে মনে হচ্ছে ছেলেটা খুব ভালো হবে।
নয়তো এমন পরিস্থিতিতে একটা মেয়েকে কেউ এভাবে বিয়ে করে?
যাইহোক এখন তো সে আমার বর।
আল্লাহ যেন তাকে ভালোই করেন।
বিয়ে শেষে আব্বু আম্মু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন।
আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেন,আল্লাহ তোকে ভালো রাখবেন দেখিস।
মায়ানকে আব্বু হাত ধরে বলে দেন,আমার মেয়েকে কোন দিন ক’ষ্ট দিওনা বাবা।
আম্মুও শাশুড়ী আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বলে দেয়,আমাকে যেন মেয়ের মত দেখে রাখেন।
আমার শাশুড়ী আম্মুও আম্মুকে আস্থা রাখতে বলেন তাদের উপর।
আম্মু আব্বু আমাদের বিদায় দেন।
মায়ান আর শাশুড়ী আম্মু আমাকে ধরে গাড়ীতে তুলেন।
তারপর আমার যাত্রা শুরু হয় মায়ানদের বাড়ীর উদ্দেশ্যে।
আমি একদম জার্নি করতে পারিনা।
তাই খুব বেশিই খা’রাপ লাগছিলো।
হঠাৎ করেই বেখেয়ালে মায়ানের কাঁধে মাথা রেখে আমি শুয়ে পরি।চোখ বন্ধ করে ছিলাম বলে কখন ঘুমিয়ে পড়ি বুঝতেই পারিনি।
হঠাৎ করেই শাশুড়ী আম্মুর ডাকে আমার ঘুম ভাঙে,
_বউমা ওঠো এবার।
আমরা এসে গেছি।
চোখ খুলতেই দেখি আমি মায়ানের কাঁধে মাথা রেখে শুয়ে আছি।
তাড়াতাড়ি করে ভালো মত উঠে বসে আম্মুকে বললাম,
আসলে আম্মু আমি জার্নি করতে পারিনাতো তাই খারাপ লাগছিলো।
কখন ঘুমিয়ে গেছি বুঝতে পারিনি।
_আমি বুঝেছি মা।
নেমে এসো।
মায়ানের মুখটা আমি এখনো ভালো মত দেখিনি।
আর না বান্দা কোন কথা বলেছে।
আমি নেমে আসতেই কয়েক জন মেয়ে এসে আমাকে বরণ করে নেয়।
মায়ানের ভাবী এসে পরিচয় দেয় সে মায়ানের ভাবী।
সে বিয়েতে আসতে পারেনি কারণ এই বাসায় সব কিছু আয়োজন করতে হয়েছে তার,সেই জন্য।
ভাবী আমাকে ধরে একটা রুমে নিয়ে যায়।
অনেক রাত হয়ে যায় এর মধ্যে।
আম্মু এসে আমাকে খেতে বলেন।
আমার খেতে ইচ্ছে করছিলোনা তাই খাবোনা বলায় আম্মু আমাকে নিজে হাতে খাইয়ে দিয়ে যান।
মনে মনে বলছিলাম,এত ভালো শাশুড়ী পাওয়া আসলেই ভাগ্যের ব্যাপার।
রাত তখন ১টা।
এত ক্ষণে একবারও মায়ানকে আমি দেখিনি।
আর না আমার আশেপাশে এসেছে।
যাইহোক,
ভাবী আমাকে ডেকে বলেন,
মেঘা!
চলো তোমাকে তোমাদের রুমে নিয়ে যাই।
ভাবী আমাকে ধরে মায়ানের রুমে নিয়ে যায়।
আমি ঢুকতে যাবো,তখনই মায়ানের ছোট ভাই এসে বলে,
_আগে টাকা তারপর ঢুকবে বুঝলা?অনেক ক’ষ্ট করে সাজিয়েছি।
আমি ভাবীর দিকে তাকাতেই ভাবী বলে,
এটা তোমার একমাত্র দেবর।
সে এত ক্ষণ তোমাদের বাসর ঘর সাজিয়েছে।
তখনই কে যেন জোরে বলে উঠে দূর থেকে।
ছোট, তুই এদিকে আয় আমি টাকা দিচ্ছি।
ওকে ঢুকতে দে।
_ওহ তাহলে এটাই মায়ান সাহেব।
ভয়েজ তো সুন্দরই, কিন্তু গম্ভীর স্বভাবের নাকি আবার?
যাইহোক,পরে দেখা যাবে।
ঘরে ঢুকতেই আমি অবাক,
এ তো রজনী আর গোলাপে সাজানোই ঘর।
যেমন টা আমি কল্পনায় চেয়েছি সব সময়।
ভাবী আমাকে খাটে বসিয়ে দিয়ে চলে যায়।
আর বলে যায়,
কোন কিছু প্রয়োজন হলে যেন আমি ডাকি তাকে।
আর বলে যায়,ওয়ারড্রবের ২য় ড্রয়ারে তিন টা শাড়ী রাখা আছে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে যেন একটা পরে নেই।
_কিন্তু ভাবী,আমিতো শাড়ী পরতে পারিনা।
আপনাকে ডাকবো সকালে তাহলে হুম।
_আচ্ছা ঠিক আছে ডেকো।
আমি আসছি তাহলে কেমন?
ভাবী চলে যায়।
আমি বসে আছি চুপচাপ।
তখনই দরজায় নকের আওয়াজ,
_আসবো?
_জ্বী আসুন।
মায়ান ঘরে ঢুকতেই আমি খাট থেকে নেমে ওকে সালাম করতে যাই।
সবার কাছে শুনেছি বরকে নাকি বাসর ঘরে সালাম করতে হয়।
যেই না আমি মায়ানের পায়ে হাত দিতে যাবো।
মায়ান আমাকে অবাক করে দিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠে,
_এই মেয়ে এই!
ছোঁবেনা আমায়,একদম ছোঁবেনা।
আমার বুকটা ধক করে উঠে,
আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম,
এ আমি কোথায় এসে পড়লাম আল্লাহ!
#_নীল_বেনারশী_
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা



বিষয়: #  #


আর্কাইভ