শিরোনাম:
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩১

Somoy Channel
বুধবার ● ১ মে ২০২৪
প্রথম পাতা » ধর্ম » কুরআনে যাদেরকে আল্লাহর ওলি বলা হয়েছে। দুধরচকী।
প্রথম পাতা » ধর্ম » কুরআনে যাদেরকে আল্লাহর ওলি বলা হয়েছে। দুধরচকী।
৭৯ বার পঠিত
বুধবার ● ১ মে ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

কুরআনে যাদেরকে আল্লাহর ওলি বলা হয়েছে। দুধরচকী।

কুরআনে যাদেরকে আল্লাহর ওলি বলা হয়েছে। দুধরচকী।ইসলামের ইতিহাসে ‘ওলি-আওলিয়া’ ব্যাপক মর্যাদা ও সম্মানের স্থান দখল করে আছে। তাহলে আল্লাহর ওলি কারা? কুরআনুল কারিমে কোন কোন গুণের অধিকারীদের ওলি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে? ওলির পরিচয়ই বা কী?

ওলির পরিচয়

ওলি ও আওলিয়া শব্দ দুটি আরবি। ওলি একবচন। যার অর্থ বন্ধু, মুরব্বি বা অভিভাবক। আর ‘আউলিয়া’ শব্দটি বহু বচন। পবিত্র কুরআনুল কারিমের একাধিক স্থানে ওলি ও আওলিয়া শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছ তাদের পরিচয়। আবার যেসব গুণের কল্যাণে একজন মানুষ ওলিতে পরিণত হয়, তা-ও সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা যার বন্ধু বা অভিভাবক তিনিই হলেন ওলি। আর ওলিদের ওপর মহান আল্লাহ সব সময় সন্তুষ্ট থাকেন। যারা ওলি তারাও মহান আল্লাহর বিধি-বিধান পালনে থাকেন একনিষ্ঠ। কুরআনুল কারিমে ওলিদের ব্যাপারে বলা হয়েছে-
أَلا إِنَّ أَوْلِيَاء اللّهِ لاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ
সাবধান! জেনে রেখ, যারা আল্লাহর বন্ধু; তাদের না কোনো ভয়-ভীতি আছে, আর না তারা চিন্তান্বিত হবে।’ (সুরা ইউনুস : আয়াত ৬২)

ওলি হওয়ার গুণ
কোনো মানুষ যদি আল্লাহর ওলি বা বন্ধু হতে চায়। আল্লাহকে অভিভাবক হিসেবে পেতে চায় তবে দুটি কাজ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
الَّذِينَ آمَنُواْ وَكَانُواْ يَتَّقُونَ
‘যারা ঈমান এনেছে এবং ভয় করতে রয়েছে।’ (সুরা ইউনুস : আয়াত ৬৩)

আল্লাহর বন্ধু হওয়ার বা আল্লাহকে অভিভাবক হিসেবে পাওয়ার মাধ্যম হলো দুইটি-
- আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং
- আল্লাহকে ভয় করতে থাকা।

আল্লাহর বন্ধুদের সফলতা
আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং তাকে ভয় করার মাধ্যমে যে ব্যক্তি আল্লাহর বন্ধুতে পরিণত হয়। তার কোনো চিন্তা নেই বলে ঘোষণা দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা। আবার তাদের পুরস্কারও ঘোষণা করেছেন তিনি। আল্লাহ তাআলা বলেন-
لَهُمُ الْبُشْرَى فِي الْحَياةِ الدُّنْيَا وَفِي الآخِرَةِ لاَ تَبْدِيلَ لِكَلِمَاتِ اللّهِ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
তাদের জন্য দুনিয়ার জীবন ও পরকালীন জীবনে রয়েছে সুসংবাদ। আল্লাহর কথার কখনো রদবদল হয় না। এটাই হল মহা সফলতা।’ (সুরা ইউনুস : আয়াত ৬৪)

আল্লাহ তাআলা উল্লেখিত আয়াতে আল্লাহর বন্ধু হওয়ার জন্য দুটি শর্তারোপ করেছেন। একটি হলো- আল্লাহর প্রতি ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা। আর দ্বিতীয়টি হলো- আল্লাহকে ভয় করা অর্থাৎ আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও অবাধ্যতা থেকে আত্মরক্ষা করে চলা বা তাকওয়া অবলম্বন করা।

কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী ‘ঈমান এবং তাকওয়া’- এ দুটি গুণের মধ্যেই আল্লাহর ওলি বা বন্ধু হওয়ার মূল উপায় সীমাবদ্ধ। ঈমান ও তাকওয়ার গুণ যার মধ্যে যত বেশি ও যত পরিপূর্ণ হবে; ওই ব্যক্তি বেলায়েতের পথে তত বেশি অগ্রসর ও তত বেশি আল্লাহর ওলি বা বন্ধু হিসেবে বিবেচিত হবেন।

ইমাম আবু জাফর তাহাবি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘সব মুমিন করুণাময় আল্লাহর বন্ধু। তাঁদের মধ্য থেকে যে যত বেশি আল্লাহর অনুগত ও কুরআনের অনুসরণকারী, সে তত বেশি আল্লাহর কাছে সম্মানিত অর্থাৎ তত বেশি বেলায়েতের অধিকারী। (ইবনুল মুবারক)

হাদিসে পাকে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার দুটি উপায় ওঠে এসেছে। একজন মুমিনের কাজকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন। তাহলো-
- প্রথমত : বান্দা আল্লাহর ফরজ বিধানগুলো যথাযথ পালন করবে।
- দ্বিতীয়ত : ফরজ বিধান পালনের পাশাপাশি নফল ইবাদত-বন্দেগিতে আত্মনিয়োগের মাধ্যমে বেলায়েত তথা আল্লাহর বন্ধুত্ব অর্জন করবে।

যারা আল্লাহর ওলি বা বন্ধু। তাদের মর্যাদাও অনেক বেশি। কেননা যে ব্যক্তি আল্লাহর বন্ধু হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলাও ওই ব্যক্তির হয়ে যায় বলে ব্যাপক প্রচলিত একটি প্রবাদ বাক্য রয়েছে। হাদিসে কুদসিতে এসেছে-
‘যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলির সাথে শত্রুতা করে আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার নৈটক্য অর্জন বা ওলি হওয়ার জন্য বান্দা যত কাজ করে তন্মধ্যে সে কাজ আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি; যে কাজ আমি ফরজ করেছি। অর্থাৎ ফরজ কাজ পালন করাই আমার নৈকট্য অর্জনের জন্য সর্ব প্রথম ও সবচেয়ে প্রিয় কাজ।
এরপর বান্দা যখন সর্বদা নফল ইবাদত পালনের মাধ্যমে আমার বেলায়েতের পথে অগ্রসর হতে থাকে তখন আমি তাকে ভালোবাসি। আর যখন আমি তাকে ভালোবাসি তখন আমি তার কানে পরিণত হই, যা দিয়ে সে শুনতে পায়; আমি তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখতে পায়; আমি তার হাত হয়ে যাই, যা দ্বারা সে ধরে বা আঘাত করে এবং আমি তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে হাঁটে।
সে যদি আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করে তাহলে আমি অবশ্যই তাকে তা প্রদান করি। সে যদি আমার কাছে আশ্রয় চায় তাহলে আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় প্রদান করি।’ (মুয়াত্তা মালেক)

পরিশেষে
আল্লাহ তাআলার বন্ধু হতে ফরজ বিধান পালনের নির্দেশনা মেনে কাজ করা জরুরি। যেমনটি একাধিক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
- ‘নিশ্চয়ই তোমাদের ওলি হলেন আল্লাহ এবং তাঁর রসুল আর ঈমানদার লোকেরা; যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত আদায় করে এবং আল্লাহর প্রতি অনুগত বাধ্যগত থাকে। যারা ওলি মানে আল্লাহকে এবং আল্লাহর রসুলকে আর ঈমানদার লোকদেরকে, তারাই আল্লাহর দল এবং আল্লাহর দলই থাকবে বিজয়ী। (সুরা মায়েদা : আয়াত ৫৫-৫৬)
- ‘আর আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক।‘ (সরা ইমরান : আয়াত ৬৮ )
- ‘আর আল্লাহ মুত্তাকিদের (তাকওয়াবানদের) বন্ধু।’ (সুরা জাসিয়া : আয়াত ১৯)
- ‘তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তিই বেশি মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে বেশি মুত্তাকি (তাকওয়াবান)।’ (সুরা হুজরাত : আয়াত ১৩)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঈমান ও তাকওয়া অবলম্বনের পাশাপাশি ফরজ বিধানগুলো পালনের পাশাপাশি সাধ্যমত নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর বন্ধু হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী।



বিষয়: #


আর্কাইভ