শিরোনাম:
ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

Somoy Channel
মঙ্গলবার ● ২১ নভেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » বিশ্ব » মিয়ানমারের জান্তা শাসন কি হুমকির মুখে?
প্রথম পাতা » বিশ্ব » মিয়ানমারের জান্তা শাসন কি হুমকির মুখে?
৬০ বার পঠিত
মঙ্গলবার ● ২১ নভেম্বর ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

মিয়ানমারের জান্তা শাসন কি হুমকির মুখে?

মিয়ানমারের জান্তা শাসন কি হুমকির মুখে?” বিশ্লেষক ও কূটনীতিকদের মতে, চীনের আশীর্বাদ ছাড়া বিদ্রোহীরা সাম্প্রতিক হামলা চালাতে পারত না ”

জান্তা শাসনে বিপর্যস্ত মিয়ানমারের গণতন্ত্র। দীর্ঘদিন ধরেই সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্ন লড়াই করছে জাতিগত সংখ্যালঘু বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও গণতন্ত্রপন্থীরা। সাম্প্রতিককালে জান্তা শাসনকে হটাতে জোট বাধে বেশ কয়েকটি সংগঠন। আর তাতেই বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে উর্দিধারীরা। দেশটিতে সীমান্তের একাধিক পয়েন্টে বিদ্রোহীদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়েছে সেনাবাহিনী।

গত ২৭ অক্টোবর চীনের সীমান্তবর্তী উত্তর শান রাজ্যে সামরিক পোস্টে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর একটি জোট। “১০২৭” নামে ওই অপারেশনে বেশ কয়েকটি শহর দখল করে বিদ্রোহীরা।

মিয়ানমারের ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ), তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) ও আরাকান আর্মির (এএ) গ্রুপ “থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স” যৌথ এ অভিযান পরিচালনা করে। তাদের দাবি, বেসামরিক নাগরিকদের জীবন রক্ষা, নাগরিকদের আত্মরক্ষার অধিকার নিশ্চিত ও আঞ্চলকি নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য এই অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানে আর্টিলারি ও বিমান হামলা চালায় বিদ্রোহীরা।

যুদ্ধটি ইতোমধ্যে পশ্চিম রাখাইন ও চিন রাজ্যসহ বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো বলছে, এ অভিযানের মধ্য দিয়ে “অত্যাচারী সামরিক একনায়কত্ব” নির্মূল করা হবে।

যে অঞ্চলকে ঘিরে এ হামলার ঘটনা ঘটছে ওই এলাকাটি মিয়ানমার-চীন সীমান্তে অনলাইন জুয়া কেলেঙ্কারি কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। সেখানে হাজার হাজার বিদেশিরা বসবাস করেন।

এলাকাটিতে চীনের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। বেইজিং দীর্ঘদিন ধরেই ওই এলাকায় বিদ্যমান বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা বন্ধে জান্তাকে চাপ দিয়ে আসছিল। তবে জান্তা সেখানে কার্যকর তেমন কিছুই করতে পারেনি।

বিশ্লেষক ও কূটনীতিকের মতে, চীনের আশীর্বাদ ছাড়া বিদ্রোহীরা এ হামলা চালাতে পারত না।

যে কারণে তাৎপর্যপূর্ণ অপারেশন ১০২৭

২০২১ সালে অভ্যুত্থানে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে মিয়ানমারের একাধিক অঞ্চলে লড়াই চলছে। আক্রমণের নতুন মাত্রা জান্তা শাসনের জন্য সবচেয়ে বড় সামরিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে উঠে এসেছে।

বিদ্রোহী জোটের তিনটি দলের (এমএনডিএএ, টিএনএলএ ও এএ) যুদ্ধের বড় অভিজ্ঞতা রয়েছে।

এসব দলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাধারণ জনগণও। এছাড়া প্রতিরক্ষা বাহিনীর অনেকেও বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এসব বিচ্ছিন্ন সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি)।

থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী কায়াহ রাজ্যে বিদ্রোহীদের হামলা, সীমান্তবর্তী সাগাইং অঞ্চল এবং চিন রাজ্যে এক বছর আগে যুদ্ধবিরতি সম্মত হওয়া সত্ত্বেও এএ রাখাইন রাজ্যে নিজেদের ঘাঁটি থেকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। তারাই শান রাজ্যেও হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

কতটা হুমকিতে জান্তা?

তবে মিয়ানমারের বাকি অংশে সামরিক শাসন কতটা হুমকির মুখে পড়তে পারে সেটি এখনই বলা মুশকিল।

দেশটির ছয় দশকের ইতিহাসে পাঁচ দশকই শাসক ছিলেন জেনারেলরা। কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে ভয়ঙ্করভাবে সীমান্ত বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণ ও বিভক্ত শাসন কৌশলে নাগরিকদের ওপর কর্তৃত্ব বজায় রেখেছে সামরিক শাসকরা।

তবে ১০২৭ হামলাটি সম্পূর্ণ নতুন। বিদ্রোহ দমনে জেনারেলদের এমন অভিজ্ঞতা কখনই হয়নি।

এই ঘটনার মধ্য দিয়ে সশস্ত্র বিরোধিতা আরও বেশি উৎসাহিত হয়েছে। বিদ্রোহীরা বিভিন্ন অঞ্চলে হামলা চালাচ্ছে। আর কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হচ্ছে সামরিক বাহিনী। অপ্রস্তুত সেনাবাহিনী অনেকগুলো পোস্ট ছেড়ে দিয়েছে। বিদ্রোহীরা তাদের ছোট অস্ত্র, গোলাবারুদ, মেশিনগান, সাঁজোয়া যান জব্দ করেছে।

এই অপারেশনে বহু নাগরিকও সম্মতি জানিয়েছে বলেই উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যমগুলোতে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্রোহীদের প্রশংসা করছেন সাধারণরা।

এই ভয়ের প্রতিফলন ঘটছে জান্তার কথায়ও। সামরিক সরকারের প্রেসিডেন্ট আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, মিয়ানমার ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

কি ঘটতে পারে?

সত্যিই এক সন্ধিক্ষণ পার করছে মিয়ানমার। দেশের বহু অঞ্চলে বড় পরীক্ষার মুখোমুখি সামরিক সরকার। নাগরিকরা যেমন তাদের সাদরে গ্রহণ করছেন না, তেমনই বিদ্রোহীদের চাপে বিপদ আরও বেড়েছে। কর্তৃত্ব এখন ধুলোয় হারিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থায়।

সামরিক বাহিনীর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে বিভিন্ন খাতে। ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তারকারীর ভূমিকায় উঠে এসেছে তারা। সম্পদ, বিমান সম্পদ, আর্টিলারিসহ বিদ্রোহ দমনের বহু দশকের অভিজ্ঞতা তাদের ঝুলিতে।

এই মুহূর্তে তাই সেনাবাহিনী পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনী ইতিমধ্যেই সশস্ত্র বিরোধীদের দমাতে ফন্দি আঁটছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

সেনাবাহিনী পুরোদমে মাঠে নামলে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী লড়াই হতে পারে। এতে উভয়ের শক্তি ও অস্ত্রাগারের পরীক্ষা হয়ে যাবে। এর ফলে সম্ভাব্য পরিস্থিতি হতে পারে, কেন্দ্রীয়ভাবে ক্ষমতায় থাকলেও সীমান্তের কিছু অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারাবে জান্তা।

ফলাফল যাদের পক্ষে যাবে প্রতিবেশী ভারত, থাইল্যান্ড এবং চীন হয়ত তাদেরই সমর্থন জানাবে। তবে তাদের মধ্যেও অস্থিতিশীলতা এবং শরণার্থী সংকটের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হবে।



বিষয়: #  #


আর্কাইভ