শুক্রবার ● ৫ এপ্রিল ২০২৪
প্রথম পাতা » অনুপ্রেরণা (গল্প) » অনুপ্রেরণা (গল্প) - #ডাক
অনুপ্রেরণা (গল্প) - #ডাক
তখন বাড়িটা ভেঙে নতুন করে একটা অংশ হচ্ছে। ওকে আমিই বুদ্ধিটা দিয়েছিলাম। নীচে এতো সাপ ঢুকে পরে যে পর্টিকোটা উপভোগ করা যায় না। বাবাকে, দেখেছি এখান ভেঙ্গে ওখান গড়ে। প্ল্যানটা ছবি এঁকে বলে দিয়েছিলাম কোন দিক দিয়ে কি হবে। ওর মনে ধরেছিল। কাজ শুরু হলো। সে বছর কি বৃষ্টি , কি বৃষ্টি!
একটা দিনের কথা মনে পড়ে। সেদিন দুপুর থেকে আকাশ কালো হয়ে বৃষ্টি নেমেছে। কদিন ধরেই শরীর টা ভালো নেই আমার। ও সারাদিন ঘুমোয় রাতে কাজ করে। আমাকেই মিস্ত্রিদের চা দেওয়া ,জল দেওয়া ,কাজের তদবির করা এগুলো করতে হয়। মিস্ত্রিরা একটা অস্থায়ী ছাউনী করে এখানেই থাকে। সেদিন কি বৃষ্টি। ও ঘুমোচ্ছে। কখন উঠবে ঠিক নেই। উঠে ভাত খাবে। দুপুর থেকে বৃষ্টি নামার সাথে সাথে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এলো আমার।
ও একাকী সব কাজ করে আমেরিকায়। ওর কাছে জ্বর শরীর খারাপ এগুলো কোনো কিছু না। আমিও এতে অভ্যেস হয়ে গেছি। নিজেকে নিয়ে আতু পুতু নিজেরই পোষায় না। সাড়ে বারোটা নাগাদ খেয়ে শুয়ে বুঝতে পারলাম তিনি আসছেন। একটা প্যারাসিটামল খেয়ে নিয়েছি। ও ঘুম থেকে ওঠার পর ওকে খেতে দেওয়া, বাড়তি খাবার ফ্রিজে রাখা এগুলো করে মোটা একটা দোহার গায়ে দিয়ে ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেছি। যখন ঘুম ভাঙলো দেখি আটটা বাজছে সাইড টেবিলের ঘড়িতে। এতো ক্লান্ত, মাথা ব্যাথা, গায়ে ব্যাথা। দিয়া বললো , ও ম্যাগী করে খেয়ে নিয়েছে। কিন্তু আমাকে তো পরোটা আড়হার ডাল করতে হবে ওর জন্য। তিন ,তিন ,দুই এই হিসাবে foil প্যাক করে গরম বাক্সে রাখতে হবে। বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে টলে গেলাম। ভাবলাম নিচে গিয়ে আদা দিয়ে চা খেলেই গায়ে জোর পাবো। এর আগে দুই দুই বার করনার সাথে যুদ্ধে জিতেছি। নিচের লিভিং রুমে একটা ওয়ার্ম লাইট জ্বলছে। কালো সিঁড়ি গুলো আমার চোখে আরো কালো লাগছে। সিঁড়ি দিয়ে নামবো ,ঠিক এই সময় মাথাটা ঘুরে গেল। আর কয়েক সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সমযটুকুতে শুনতে পেলাম, স্পষ্ট বাবা ডেকে উঠলো, ‘ মামনি, দেখে নামো ‘ ।
আমি যেন একটা ঘোর থেকে জেগে উঠলাম। গা দিয়ে জ্বর নেমে গিয়ে ঘেমে গেল গা।
এরকম আরো কয়েক বার হয়েছে। যখনই একটা বিপদ আসে, বাবা ডেকে ওঠে। স্পষ্ট শুনতে পাই। বাবা যেখানে চলে গেছে সেখানে আর কোনো মান অভিমান ইগো কিছু নেই, শুধু স্নেহাশীষ আছে, আশির্বাদ আছে।
ও কিন্তু একদমই বাজে মানুষ না। সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার এখানে থাকলে আমরা বাইরে খাই। যে কদিন থাকে আমার হাতের তুলোর মতো পরোটা আর ডাল খেতে ও খুব পছন্দ করে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত
বিষয়: #ডাক