শুক্রবার ● ১৫ মার্চ ২০২৪
প্রথম পাতা » অনুপ্রেরণা (গল্প) » #অনুগল্প #একটি_রোজা
#অনুগল্প #একটি_রোজা
“আব্বা,তুমি এত ইফতার এনেছো যে? অনেক খরচ হয়েছে, তাই না?”
নিজের মেয়ের কথায় হাবিবুল শেখ ক্ষাণিক হাসে। মাথা নাড়িয়ে বলে,
-’তোর খুশির কাছে খরচ কেনো ব্যাপার হলো,আম্মা? আর এত খরচও হয় নি।’
পরিশ্রমের ঘাম তখনও হাবিবুল শেখের শিরদাঁড়া বেয়ে নামছে কিন্তু মুখে দুনিয়ার সমস্ত সুখ যেনো।
ইমা বুঝতে পারে বাবার হাসির আড়ালে কঠোর পরিশ্রমের গল্প খানা। মধ্যবিত্ত পরিবার যে বাবার। সারাদিন রোজা রেখে গা’ধার খাটুনি খেটে হয়তো এত কিছুর আয়োজন।
ইমা খুব সংগোপনে হতাশার শ্বাস ফেললো। বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ি এসেছে সবে মাস দুই। কিন্তু যেনো জীবনের প্রতি তিক্ততা তার আকাশ সমান।
নিজের ব্যাথা খুব গোপনে লুকিয়ে হাসিমুখে বাবার উদ্দেশ্যে বললো,
-’যাও বাবা,হাত মুখ ধুয়ে আসো। একটু পর’ই তো আজান দিবে। সারাদিন যা গরম পড়েছে।’
হাবিবুল শেখ ব্যতিব্যস্ত হয়ে মাথা নাড়িয়ে বললো,
-’হ,হ আম্মা। গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। আগে হাত মুখ ধুয়ে আসি। আচ্ছা মা,তোর শাশুড়ী কোথায়? তাকে যে দেখলাম না?’
ইমা’র হাসিমুখ হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। তবুও নিজেকে যথেষ্ট সামলে বললো,
-’হয়তো রুমে গিয়েছেন হাত মুখ ধুতে। তুমি যাও হাত মুখ ধুয়ে আসো।’
হাবিবুল শেখ মাথা নাড়িয়ে হাত মুখ ধুতে চলে গেলেন। এর মাঝেই রান্নাঘর থেকে শাশুড়ির কণ্ঠ ভেসে এলো। ইমা দৌড়ে গেলো রান্নাঘরের দিকে।
ইমা’র শাশুড়ী হাবিবুল শেখের আনা ইফতার গুলো দু আঙুলে ছুঁয়ে ছুঁয়ে বলছে,
-’ছোট ঘরে ছেলে বিয়ে দিলে যা হয় আরকি। এই ইফতার ক’জনের মুখে দিবো? আত্মীয় স্বজনদের কাছে বড় গলায় বলতেও পারবো না। তা বউ,তোমার কী আ’ক্কে’ল জ্ঞান নাই? তোমার বাপরে বলো নি আমাদের রাজকীয় ইফতারের কথা?’
শাশুড়ির কথায় অপমানে ইমা’র মুখ নত হয়ে যায়। খুব ক্ষীণ স্বরে বলে,
-’এর চেয়ে বেশি করা আমার বাবা’র পক্ষে যে সম্ভব না, আম্মা।’
-’তাহলে না দিলেই হতো। সামান্য দিয়ে নাম করার কী মানে? আমার বাপের বাড়ি থেকে এখনো দেখবা কত ইফতার পাঠায় এত বছর পরও। আর তোমার তো নতুনই সংসার। ছেঃ কেমন আ’ক্কে’ল জ্ঞান তোমাদের!’
ইমা আর কথা বলে না। রোজা রেখে সারাদিন গা’ধার খাটনি খেটেও শাশুড়ির মন জোগাড় করতে পারে নি। সে জানতো, ইফতারি নিয়ে যে বড় ঝামেলা হবে। তাই তো বাবাকে ইফতারি আনতে না করেছিলো। কিন্তু বাবা-মায়ের কাছে তো মেয়ের সুখই সব।
হঠাৎ ড্রয়িং রুম থেকে হাবিবুলের ডাক ভেসে এলো। ইমা ব্যস্ত পায়ে আবার সেখানে ছুটলো।
মেয়েকে আসতে দেখেই হাবিবুল শেখ হাসি দিয়ে বললো,
-’মা,এবার যে আর তোর সাথে ইফতার করা হলো না। চলে যেতে হবে। দোকান থেকে ফোন আসছে।’
ইমা শক্তপোক্ত বায়না ধরলো না। কেবল ধীর কণ্ঠে বললো,
-’ইফতার টা সেড়ে গেলে হয় না, বাবা?’
হাবিবুল শেখ ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে বললো,
-’না রে মা, পারছি না। আবার কোনো একদিন একসাথে বসে নাহয় ইফতার করবো। আজ আর না।’
ইমা আর জোর করলো না। বাবা সদর দরজা পেরিয়ে যেতেই চোখের কোণ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। ইমা মনে মনে বললো,
-’বাবা,তোমার মেয়ের দুঃখ বুঝি আর দেখার সাহস হলো না!’
কাজের মেয়েটা তখন ইমার শশুর বাড়ির রাজকীয় টেবিলটায় হরেক রকমের খাবার সাজিয়ে রাখলো। সবাই আজানের অপেক্ষায় উন্মুখ হয়ে রইলো। কারো কোনো ভ্রুক্ষেপ রইলো না হতভাগা বাবার বিদায়ের।
আজান দিলো। সবাই রাজকীয় ইফতার করলো। ইমা’র গরীব বাবার আনা খাবার গুলো ছুঁয়েও দেখলো না কেউ। আর, ঘরের বউটা কেবল পানি খেয়ে রোজা ভেঙেছে সেটাও কেউ খোঁজ নিলো না।
এভাবেই কত অভুক্ত বাবা আর ইমা’র রোজার গল্প চাপা পড়ে যায় বাহিরের চাকচিক্যতায়।
#মম_সাহা
বিষয়: #অনুগল্প #একটি #রোজা