মঙ্গলবার ● ৫ মার্চ ২০২৪
প্রথম পাতা » সাহিত্য রম্যগল্প » এরেঞ্জ_ম্যারেজ
এরেঞ্জ_ম্যারেজ
★স্বপ্নীল আজিম:
যাক বাবা !! শেষমেশ বিয়েটা করেই ফেললাম।
আজ আমার বাসর রাত।
বউ-টউ আমি এখনো দেখিনি, দেখার দরকার ও নেই
আমি বাসর ঘরে ঢুকেই লুঙ্গি পড়ে হাত-পা চারদিকে ছড়িয়ে দিয়ে বেডে শুয়ে পড়লাম ।
বউ দাঁড়িয়ে আছে।
আমি বললাম; “এই মেয়ে আমার হেডফোনটা এদিকে একটু দেন তো”।
আর রুমের বাতিটা অফ করেন ।
হেডফোন হাতে নিয়ে বললাম; “চার্জারটা এদিকে দেন” ।
মোবাইল চার্জে লাগিয়ে আমি হেডফোন দিয়ে মনের সুখে গান শুনতেছি আর ফেসবুকিং করছি।
মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে, কিছুক্ষণ পর আমার পায়ে সালাম করলো।
আমি চমকে উঠে বললাম; “এই মেয়ে এই, সালাম করবা ভালো কথা আপনি আমার পা স্পর্ষ করলা কেন ??
-দেখেন, আমি “এই মেয়ে” না, আমার নাম “নাদিয়া” ।
আপনার নাম দিয়ে আমার কোনো কাম নেই,
আমাকে কখনো স্পর্ষ করবেনা বলে দিচ্ছি।
-আমি কি খুব গরম, যে স্পর্ষ করলেই আপনার গা জ্বলে যাবে ??
আরে আপনি তো আচ্ছা বিয়াদাব মেয়ে আপনার সাহস তো কম না, এতো প্যাচাল পারবেন না আমার সাথে।
-হুম টিক আছে, কিন্তু আমি তো আপনার পাশের বালিশটায় শুতে পারি, নাকি ??
-অবশ্যই না, ফ্লোরে ঘুমাবেন ।
-ওকে সমস্যা নেই।
আমি গান শুনছি, রাত ঘনিয়ে আসছে, হটাৎ ফ্লোরে খেয়াল করে দেখলাম মেয়েটা এতক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে, মোবাইলের ডিসপ্লের হালকা আলো ওর মুখে গিয়ে পড়ছে, এতক্ষণে আমার খেয়াল হলো আম্মুর কথাটাই টিক, মেয়েটা আসলেই খুব সুন্দরী ।
তাতে আমার কি, আমি ও ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি, কেন জানি আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, শরীরটা যেনো কে চেপে ধরেছে।
ওমা কি সাহস মেয়েটার, আমার বুকের উপর ঘুমিয়ে আছে।
হটাৎ খেয়াল করে দেখলাম আমার পরনে লুঙ্গীটা ও আর নেই।
কি সর্বনাশ রে বাবা, কে আমার এই সর্বনাশ করলো, এই মেয়ে এই, উঠেন বলছি উঠেন ।
-চোখ কচলাতে কচলাতে বললো “কি হইছে ?? সাতসাকালে চেচামেচি করছেন কেন” ??
-আরে চেচামেচি কি আর স্বাদে করছি, আমার লুঙ্গী কই ??
-মুচকি হাসি দিয়ে ও বাতরুমে চলে গেলো গোসল করতে।
-আমি অবাক, ঘুম থেকে উঠেই মেয়েটা গোসল করতে গেলো কেন, আমিতো কিছু টের পেলাম না। লুঙ্গীটা খাটের নিচে পড়ে আছে।
ঘটনা কি !!
এসব ভাবতে ভাবতে মেজাজটা খুব গরম হয়ে আসছে, আব্বু-আম্মুর কথায় বিয়ে করাটাই ভুল হইছে। আমার ডিসিশনই ঠিক ছিলো।
-তিশাকে যখন আব্বু-আম্মু মেনে নেয়নি, তখন থেকে রাগে-ক্ষোভে দুঃখে-কষ্টে গভীর রাতে তিশাকে কাছে না পাওয়ার যন্ত্রণায় ধীরে ধীরে আমি একজন পাথর মানুষে পরিণত হয়েছিলাম, মাথায় একটা জিনিস খুব অশ্লীলভাবেই ঢুকিয়ে নিয়েছিলাম; বিয়েসাদী আর করবোই না । তিশা ছিলো বড়লোকের মেয়ে, এখানেই আম্মুর যত্তসব সমস্যা, আম্মুর একটাই কথা, “আমার একটা মাত্র ছেলে, ছেলেটাকে আমাদের থেকে কোনো বড়লোকের মেয়ের সাথে বিয়ে দিবো না”।
আম্মুর কথাবার্তার ধরনে মনে হতো; বড়লোকের মেয়েরা বর পিটায়, অথবা বড়লোকের মেয়েরা মাদকের মতো ধীরে ধীরে উনার একমাত্র ছেলেকে শেষ করে ফেলবে।
এদিকে
প্রেম আর লাভ ম্যারেজ নিয়ে ছিল আব্বুর যত্তসব সমস্যা; আমি যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন সিনেমা দেখে সবেমাত্র চোখমারা শিখেছি, স্কুলে যেয়ে সহপাঠী তমাকে বার বার চোখ মারছিলাম, তমা সেদিন বাড়িতে এসে আব্বুর কাছে দিয়ে দিলো বিচার ; সেদিন রাত্রে ধপায় ধপায় আব্বুর হাতে মাইর খেলাম, সেকি যন্ত্রণা, পাছা ফ্যানের দিকে দিয়ে উল্টো হয়ে ঘুমোতে হয়েছে রাত্রে । পিটান খেয়ে আর তমার পিছনে লাগিনি প্রায় দুবছর , ক্লাস নাইনে যখন উঠলাম তখন আবার তমাকে চিটি দিলাম, সেদিন কে জানি বিচার দিয়ে দিলো হেডস্যারের কাছে, হাতেনাতে চিটি ধরা পড়ায় হেডস্যার আব্বুকে ফোন দিয়ে স্কুলে নিলেন, আব্বু আমাকে বাসায় এনে স্যান্ডেল দিয়ে পাছায় দুচা পিটান দিলেন । সেদিন টেবিল ফ্যানের সামনে পাছা রেখে জ্বালা-যন্ত্রনাকে সামাল দিতে হয়েছিল। এসব মনে হলে শরীর এখনো ভয়ে ঘেমে যায়।
ধীরে ধীরে বড় হলাম, প্রেম করলাম তিশার সাথে, বিয়ের বয়স হয়েছে, ভয়-ডর ভেঙে তিশার কথা জানালাম আব্বু-আম্মুকে, কিন্তু তারা কিছুতেই তিশাকে মেনে নেয়নি, সবটিক থাকলে ও আব্বু লাভ ম্যারেজে রাজি নয়, সবটিক থাকলে ও বড়লোকের মেয়ে আম্মুর পছন্দ নয় ।
আব্বু-আম্মুর খামখেয়ালে যখন আমি আমার ভালোবাসা তিশাকে প্রায় হারিয়ে ফেলতে বসলাম, তখন পালিয়ে বিয়ে ছাড়া কোনো উপায় ছিলো না, তিশাকে বললাম চলো আমরা পালিয়ে বিয়ে করি, এদিকে আবার তিশা কল্পণাই করতে পারেনা পালিয়ে বিয়ে করবে, তিশার ডিসিশন ফাইনাল; ওর মা-বাবাকে কাদিয়ে সে বিয়ে করবেনা, মা-বাবার ইজ্জতের বারোটা বাজিয়ে ও সুখে থাকবেনা। যদি আমার পরিবারকে রাজি করতে পারি তাহলে তিশাকে পাবো।
-তিশাকে আমি পাইনি, আজ তিনবছর হলো অন্যকারো সাথে তিশার বিয়ে হয়ে গেছে , আমি এখনো ওরে পুরোপুরি ভুলতে পারিনি।
আব্বু-আম্মু খুব জোরাজোরি করতেছে বিয়ে করার জন্য, আম্মুর ও বেশ বয়স হয়েছে, আমার বিয়েটা যেনো এখন সময়ের দাবী, বান্ধুবান্ধবরা ও খুব বুঝায় বিয়ে করার জন্য, আম্মু মাঝেমধ্যে বিয়ের জন্য খুব ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে। আমিও বুঝতাম, বাসার রান্নাবান্নার জন্য হলেও একটা বউ দরকার।
শেষমেশ আব্বু-আম্মুর জোরাজোরিতে, সাময়ের দাবী মেনে নিতে বিয়ে করলাম; ভাবলাম আব্বু-আম্মুর কাছে যে বউমা, আমার কাছে না হয় সে কাজের মেয়ে হয়ে থাকবে; সমস্যা কি ??
কিন্তু এখন বুঝতে পারলাম এই মেয়েটা আসলেই সমস্যা।
এতক্ষণে গোসল করে মনের সুখে গুনগুন গান গেয়ে বাতরুম থেকে বের হচ্ছে।
আমি খুব কটিনভাবে চোখ রাঙানি দিয়ে বললাম; “এই মেয়ে এই, আপনি সাতসকালে গোসল করলেন কেন ??
-মেয়েটা আমার চোখ রাঙানিকে পাত্তা না দিয়ে খুব স্বাভাবিকভাবেই বললো; “আরে বোকা গোসল করতে হয়, তুমিও গোসল করে এসো, যাও”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত
বিষয়: #এরেঞ্জ #ম্যারেজ