রবিবার ● ৩ মার্চ ২০২৪
প্রথম পাতা » রাজশাহী » জয়পুরহাটে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে স্ট্রবেরি
জয়পুরহাটে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে স্ট্রবেরি
মোফাজ্জল হোসেন, জয়পুরহাট:
জয়পুরহাটে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে স্ট্রবেরি। বিদেশী ফল স্ট্রবেরি চাষ করে এখানকার কৃষকরা জীবনমান উন্নয়ন করেছে অনেকেই। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় কয়েক জন কৃষক থেকে এখন ২ শতাধিকের অধিক কৃষক চাষ করছে স্ট্রবেরি। এর মধ্যে জয়পুরহাট সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নেই ১শ’৫০ জন চাষী স্ট্রবেরি চাষ করছে।
এ এলাকার কৃষকরা কখনো চিন্তাই করে নি যে, জয়পুরহাট জেলার মাটিতে বিদেশী জাতের সুস্বাদু ফল স্ট্রবেরি চাষ হতে পারে। বর্তমান এ এলাকার অনেকেই স্ট্রবেরি চাষ করে এখন ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে। অন্য ফসলের তুলনায় লাভ হয় প্রায় চারগুণ। স্থানীয়ভাবে খুচরা পর্যায়ে কিছু ফল বিক্রি হলেও বর্তমানে প্রতিদিন ঢাকার পাইকারিরা এসে ট্রাকে করে স্ট্রবেরি নিয়ে যাচ্ছে।
আলু, ধান, চাল, সহ বিভিন্ন সজবির বাজারের ন্যায় এ স্ট্রবেরি ফল বাজারজাত করা হয় তাহলে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাবে। তাই তারা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত স্ট্রবেরি বাজারজাতের জন্য প্রশাসন সহ জনপ্রতিনিধিদেরকে একাধিক বার জানিয়েও বাজারজাত ব্যবস্থপনা না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন চাষীরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, জয়পুরহাট সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের চাঁন্দা, কালীবাড়ী মাঠে ক্ষেতের পরে ক্ষেত জাল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে ফসলের মাঠ। আর জাল দিয়ে ঘিরে রাখা ক্ষেতের ভেতরেই কেউ করছেন স্ট্রবেরি গাছের পরিচর্যা, কেউ সেচ দিচ্ছেন, আবার কেউ তুলছেন স্ট্রবেরি ফল।
কালীবাড়ী গ্রামের সফল স্ট্রবেরি চাষী আমিনুর বলেন, ১১ বছর আগে কৃষক আব্দুল আলিম আমাদের এলাকায় প্রথম স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেন। তার সাফল্য দেখে ৬ বছর আগে দেড় বিঘা জমিতে আমিও বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করি। অল্প খরচে অন্য ফসলের তুলনায় বেশি লাভজনক হওয়ায় পরের বছর থেকে ৩ বিঘা জমিতে প্রতি বছর স্ট্রবেরি চাষ করে আসছি। স্ট্রবেরি ফল বিক্রির মাধ্যমে এরই মধ্যে সংসার থেকে অভাব দূর করে আমি স্বাবলম্বী হয়েছি। এখন অন্য চাষীরা আমার কাছ থেকে স্ট্রবেরি চারা সংগ্রহ করে, অনেকে পরামর্শও নেন। ফলে দিন দিন এলাকায় স্ট্রবেরির চাষ বেড়েই চলেছে। গত বছর এ এলাকায় স্ট্রবেরি চাষ করেছিলে মাত্র ৬০ থেকে ৭০ জন কৃষক। এ বছর নতুন করে আরো বেশকিছু চাষীসহ ২ শতাধিক কৃষক স্ট্রবেরি চাষ করেছেন।
চাঁন্দা গ্রামের সফল স্ট্রবেরি চাষী রিপন বলেন, আগস্টের মাঝামাঝি স্ট্রবেরি চাষ শুরু করতে হয়। এজন্য পাওয়ার টিলার বা ট্রাক্টর দিয়ে পাঁচ-ছয়টি চাষ করে জমির মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হয়। তারপর সার, গোবরসহ অন্যান্য উপাদান ব্যবহার করে জমি প্রস্তুত করতে হয়। এসব মিলে স্ট্রবেরি চাষের জন্য প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয় চারা সহ প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। আগে লাভ বেশি হত কিন্তু বর্তমানে সার, কিটনাশক, শ্রমিকের মজুরী, সেচের খরচ বৃদ্ধি হওয়ায় এখন লাভ একটু কম হচ্ছে। এরপরও সব খরচ বাদ দিয়ে লাভ হয় ফল এবং চারা বিক্রি করে ১ বিঘায় ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা।
একই এলাকার স্ট্রবেরি চাষী সরোয়ার হোসেন, বেলাল, পার্থ, মনোয়ার হোসেন, সুমন বলেন, অস্ট্রেলিয়া, উইন্টারডন জাতের একটি চারাগাছ থেকে মৌসুমে কমপে ২ কেজি ফল পাওয়া যায়। স্থানীয় ভাবে এলাকায় পাইকারি স্ট্রবেরি বিক্রি করা যায় না। খাওয়ার জন্য রাস্তা পার্শ্বে হাট-বাজারে ও ফেরি করে স্কুল-কলেজ সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিছু বিক্রি করে ফেরিওয়ালারা। যা বর্তমান বাজার মান ভেদে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা।
জয়পুরহাট সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাফসিয়া জাহান বলেন, নিরাপদ স্ট্রবেরি চাষের জন্য উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে মালচিং পদ্ধতি, কেঁচো সার, ছাত্রানাশক পাউডার এবং হলুদ ফাঁদ ব্যবহার করে নিরাপদ স্ট্রবেরি চাষে কৃষকদের সচেতনাতা করা হয়েছে। এছাড়াও স্ট্রবেরি চাষীদের নিয়ে চাষী সমাবেশ ও উঠান বৈঠক সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে।
জয়পুরহাট জেলায় এবার প্রায় ২শ’ বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ হয়েছে। স্ট্রবেরি চাষের পুরো কৃতিত্বই কৃষকদের। কারণ কৃষকরা নিজ উদ্যোগে স্ট্রবেরি চাষ করেছে।
বিষয়: #চাষ #জয়পুরহাট #বাণিজ্যিক #স্ট্রবেরি