শিরোনাম:
ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩১

Somoy Channel
শুক্রবার ● ১ মার্চ ২০২৪
প্রথম পাতা » সাহিত্য রম্যগল্প » গল্পঃ- ব্যক্তিগত
প্রথম পাতা » সাহিত্য রম্যগল্প » গল্পঃ- ব্যক্তিগত
১৩১ বার পঠিত
শুক্রবার ● ১ মার্চ ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

গল্পঃ- ব্যক্তিগত

আল আমিন:
গল্পঃ- ব্যক্তিগতপ*তিতাপল্লীর পাশ দিয়ে আসার সময় আমার স্ত্রী শায়লাকে দেখে রিকশা থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম আমি। কিছুতেই আমি আমার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। বেশ কয়েকবার ওর সামনে যাবো ভেবেও শেষমেষ যেতে পারিনি। তার আগেই একজন পুরুষ ওকে ডেকে ভিতরে নিয়ে গেলো।
উদ্ভ্রান্তের মতো এদিক ওদিক হাঁটাহাঁটি করে সামনের একটি টং থেকে সি*গারেট কিনে টানতে লাগলাম। কি করবো, কি করবো ভাবতে ভাবতে শেষমেষ শায়লাকে কল করলাম। শায়লা কল রিসিভ করে আমাকে বললো,
আমি একটু ব্যক্তিগত কাজে আছি, বাসায় আসতে দেরি হবে। তুমি ফ্রিজ থেকে খাবার গরম করে খেয়ে নিয়ো।
শায়লার কথা শুনে গায়ে জ্বালা ধরে গেলো। ইচ্ছা করছিলো তখন সমগ্র পৃথিবীটাকে গুড়িয়ে দিই। ঠিক সেই সময় একজন দালাল এসে আমাকে বললো, স্যার অনেকক্ষণ ধরে দেখলাম আপনি দাঁড়িয়ে আছেন, কিন্তু ভিতরে ঢুকছেন না। লজ্জা পাচ্ছেন বুঝি খুব?
ওর কথা শুনে আমার রাগে গা ঘি*নঘি*ন করতে লাগলো। তারপরও আমি চুপ করে রইলাম।
আমার নীরবতা দেখে দালালটি বললো, স্যার, অনেক সুন্দর সুন্দর মাল আছে আমার কাছে। আপনার পছন্দ হবেই।
আর, লজ্জা করবেন না স্যার। এখানে লজ্জা পেতে হয়না। এখানের রাতের অন্ধকারে ঘটে যাওয়া ঘটনা দিনের আলোয় কেউ জানতে পারেনা। পুরোটাই ব্যক্তিগত থাকে।
কথাটি শুনে মেজাজ চরম মাত্রায় বিগড়ে গেলো। চিৎকার করে, ব্যক্তিগত শব্দটি উচ্চারণ করে ঘুষি বসিয়ে দিলাম দালালটির মুখে।
দালালটি আঘাত সামলে নিয়ে শেয়ালের মতো মুখ করে বিশ্রী একটা হাসি দিয়ে বললো, নিজের মাল কি পতিতা নাকি যে এই পাড়ার প্রতি এতো ঘৃণা!
কথাটি শুনে আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। সোজা রিক্সা নিয়ে চলে এলাম বাসায়।
বাসায় এসে কোনমতে অফিসের কাপড় খুলে শুয়ে পড়লাম বিছানায়। প্রচন্ড রকমের চেষ্টা করছিলাম ঘুমাতে কিন্তু কোনমতেই ঘুমাতে পারছিলাম না।
আরো এক ঘন্টা চেষ্টার পরও যখন ঘুমাতে পারছিনা ভেবে বিছানা থেকে উঠতে যাবো, ঠিক তখনই দরজা খুলে ঘরে ঢুকলো শায়লা। শায়লার আগমনের শব্দ শুনে আমি ঘুমের ভান করে পড়ে রইলাম বিছানায়।
শায়লা রুমে ঢুকে বাতি জ্বালিয়ে একগ্লাস পানি পান করলো। তারপর, আমাকে ঘুমাতে দেখে শোবার কাপড় নিয়ে চলে গেলো স্নান করতে। গুনে গুনে বরাবর একঘন্টা পর ও বের হলো স্নানঘর থেকে। তারপর, টেবিলের উপর থেকে অ্যাসট্রেটা নিয়ে একটা সিগারেট ধরালো। শান্ত ভঙ্গিতে সিগারেট টেনে বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়লো আমার পাশে।
আধঘন্টার মধ্যে শায়লা ঘুমিয়ে পড়েছিলো। আমি শায়লাকে পাশে রেখে শুয়ে থাকতে না পেরে সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়ে উঠে চলে গেলাম বারান্দায়। একের পর এক সিগারেট ধ্বংস করে বোঝার চেষ্টা করছিলাম ঘটনাটির পেছনের কারণ। আর ঠিক তখনই শায়লার একটি কথা আমার মনে পড়ে।
মনে পড়ে, প্রথম যেদিন আমার শায়লার সাথে কথা হয়েছিলো, সেদিন শায়লা আমাকে বলেছিলো, মানুষ একজন মানুষের সাথে সারা জীবন কখনোই কাটাতে পারেনা।
রাগে, দুঃখে আমি তখন আমার পাশে থাকা রকিং চেয়ারটিতে বসে পড়লাম। চোখ বন্ধ করে সিগারেট টানতে টানতে দুলতে থাকলাম রকিং চেয়ারটিতে। এভাবে করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি, তা বুঝতেই পারিনি।
সকালে ঘুম ভাঙার পর খেয়াল করলাম, শায়লা এই রাতেই আমার গায়ে কাথা জড়িয়ে দিয়ে গেছে, এবং হাতের সিগারেটটি নিভিয়ে দিয়ে অ্যাসট্রেতে রেখে গেছে।
অপরাধীর মতো ভঙ্গিতে আমি রুমে ঢুকলাম। শায়লা আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো, ফ্রেশ হয়ে নাও। টেবিলে তোমার জন্য নাস্তা দিচ্ছি।
আমি চুপচাপ শায়লার কথা শুনে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলাম। খাবার সময় দু’জনের মধ্যে কোন বাক্যবিনিময় হলোনা। খাবার শেষে আমি সবকিছু ধুঁয়ে গুছিয়ে রেখে অফিসে যাবার জন্য তৈরি হলাম। তৈরি হয়ে বের হবার সময় শায়লা আমাকে বললো,
শোনো আমার আজকেও ফিরতে দেরী হবে। তুমি খেয়ে নিও।
আমি আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কি কাজ?
শায়লা শান্ত ভঙ্গিতে বললো, ব্যক্তিগত কাজ।
আমি মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললাম, ওহ হ্যাঁ। ভুলে গেছিলাম, তোমার ব্যক্তিগত কাজ।

প্রতিটা মানুষের জীবনে কিছু ব্যক্তিগত বিষয় কিংবা কাজ থাকে, যা সে অন্য কাওকে বলেনা। কিন্তু, তার কাছের মানুষটার ব্যক্তিগত বিষয় কিংবা কাজকে সে কখনোই মেনে নিতে পারেনা। বারবার সেটাকে জানার চেষ্টা করে। এবং বার বার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে, আবিষ্কার করে সম্পর্কের মাঝের এক সূক্ষ্ন ফাঁটল।
বেশ কয়েকবার আমার স্ত্রী শায়লাকে পতিতাপল্লীর সামনে দেখে আমি আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলাম না। শেষমেষ, বাধ্য হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
পতিতাপল্লীতে তোমার কি কাজ?
আমার দিকে শান্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে শায়লা বললো, ব্যক্তিগত কাজ। এবং আমি আমার ব্যক্তিগত কাজ সম্পর্কে তোমাকে জানাতে বাধ্য নই।
শায়লার কথা বলার ভঙ্গিতে এমন একটা কিছু ছিলো, যার পরে আমি আর দ্বিতীয় কোন প্রশ্ন করার সুযোগ পাইনি। মুখের উপর স্পষ্টভাবে “না” শুনে আমি একদম চুপসে গেলাম।
এই মুহুর্তে আমি হয়তো শায়লাকে মারতে পারতাম, কিন্তু সেটা করলেও আমি শায়লা থেকে কিছু জানতে পারবো না, পাশাপাশি, নিজের বিবেকের কাছে ছোট হয়ে যাবো।
আবার, হয়তো পারতাম শায়লাকে ঘর থেকে বের করে দিতে। সেটা হয়তো উপযুক্ত কাজ হতো।
কিন্তু, কেন এমন ঘটনা ঘটছে সেটা না জেনে বের করে দিলে আমার সারাজীবন কেন’র উত্তর না জানতে পারার আক্ষেপ নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে।
তাই, আমি শায়লাকে বের করে না দিয়ে, এই ব্যক্তিগত’র রহস্য উদ্ধার করতে নেমে পড়লাম।
ব্যক্তিগত’র রহস্য নিহিত পতিতাপল্লীতে। আর, আমাকে সবার প্রথমে শায়লার সাথে পতিতাপল্লীর সংযোগস্থলটা বের করতে হবে।
এক্ষেত্রে, সবচেয়ে সহজ উপায় হতে পারে পতিতাপল্লীতে গিয়ে কাওকে ধরে শায়লার ছবি দেখিয়ে তথ্য বের করা। কিন্তু, সেই কাজটা করা হবে মারাত্নক বোকামী। কেননা, পতিতাপল্লীর কেউই কারো সম্পর্কে কিছু বলবেনা। কারণ, সেখানে সবটাই ব্যক্তিগত থাকে।
সুতরাং, আমাকে বাহির থেকে এমন একজনকে পাঠাতে হবে, যে ভেতরে যেয়ে আমাকে জানাতে পারবে শায়লা কি করছে সেখানে।
তাই, সত্যকে জানার জন্য আমি পাঠালাম আমার সবচেয়ে বিশ্বস্ত ইনফরমারকে, যেহেতু তাকে কেউ চিনেনা। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, আমি ইনফরমার পেলাম কোথায়?
সেক্ষেত্রে আমি আমার পরিচয়টা আগে খুলে বলি।
আমি হাসান। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা। এবং কাজের সূত্র ধরেই আমার সাথে বিভিন্ন ইনফরমারদের পরিচয় রয়েছে।
সে যাই হোক, ইনফরমার পতিতাপল্লীর ভেতরে ২ ঘন্টা থাকার পরও কোন তথ্য আবিষ্কার করতে পারলোনা। সে শায়লাকে একটি ছেলের সাথে একটি ঘরে ঢুকে যেতে দেখেছিলো। তারপর, শায়লাকে আর বের হতে দেখেনি। এরমধ্যে আমি ওকে জানালাম শায়লা বাসায় চলে এসেছে।
আমার কথা শুনে ইনফরমার আমাকে বললো, ওই ঘরের দরজা এখনো খুলে নি। এবং কেউ ওখান থেকে বের হয়নি।
বিষয়টা কেমন যেনো খটকা লাগলো আমার।
একবার মনে হলো, ইনফরমার আমাকে ভুল ইনফরমেশন দেয়নি তো?
আবার, মনে হলো ও তো কখনো ভুল ইনফরমেশন দেয়না।
এইসব নিয়ে যখন মাথায় জটলা লেগে গেলো, তখন শায়লা আমাকে বললো,
কি ভাবছো এতো? এরকম করলে তো শরীর ভেঙে পড়বে।
শায়লার কথা শুনেও আমি কোন উত্তর দিলাম না।
তখন, শায়লা বললো,
রহস্য সমাধান করার মজাই আলাদা, তাইনা ?
আমি শায়লার দিকে তাকিয়ে বললাম, হ্যাঁ।
শায়লা একটা হাসি দিয়ে বললো, মাঝে মাঝে রহস্য তৈরি করে দেখিও, ওটারও আলাদা একটি মজা আছে।
এই বলে শায়লা বাতি নিভিয়ে পাশ ফিরিয়ে শুয়ে পড়লো। আর আমি, বসে বসে সিগারেট টানতে টানতে ভাবতে লাগলাম,
এমন কি হলো, যার জন্য ও রহস্য তৈরিতে নেমে পড়লো!

শায়লার সব ডকুমেন্ট ঘেটেও পতিতাপল্লীর সাথে কোন সংযোগ খুঁজে পেলাম না।
যেহেতু, শায়লা জেনেই গেছে আমি রহস্য উদ্ধারের কাজে নেমে পড়েছি, সেহেতু এভাবে বসে থাকার কোন মানে হয়না।
অফিসের কেসগুলো ও ইনফারমারদের কাছ থেকে পতিতাপল্লী সম্পর্কিত যা তথ্য আছে বের করার চেষ্টা করছি। কিন্তু, কোথাও কোন কিছুর হদিশ পাচ্ছিনা।
তাই, প্রায় বাধ্য হয়ে চলে গেলাম পতিতাপল্লীতে। ইনফারমারের দেখানো ঘরটি ঘুরেও কোন কিছু আবিষ্কার করতে পারলাম না।
ঘরটির ভেতরে ডানপাশে একটি খাট, বা পাশে প্রসাধনসামগ্রী। এই রুম পার হলে ভেতরে আরেকটি বেডরুম, বেডরুমটির ডানপাশে রান্নাঘর, বা’পাশে বাথরুম। আর বেডরুমের সাথে আরেকটি দরজা আছে, যেটা সরাসরি বাহিরে নিয়ে যায়। সুতরাং, শায়লা সামনের রুম দিয়ে ঢুকে পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়েছে।
আমি আশেপাশের সবাইকে শায়লার ছবি দেখালাম। সবাই একই উত্তর দিলো,
শায়লা স্বেচ্ছায় পতিতাবৃত্তি পেশায় যোগদান করেছে। একসপ্তাহ আগে নিজে থেকেই সে এখানে এসেছিলো।
সুতরাং, আমার অনুসন্ধান এখানেই শেষ। শায়লার সাথে সম্পর্কের ইতি এখানেই টানতে হবে।
কিন্তু, আমি মানতে পারছিলাম না। বারবার, একটা কথা মাথায় আঘাত করছিলো,
সবকিছু যদি এতো সহজে জানা গেলে রহস্য তৈরি করলো কোথায়?
না কি, আমাকে ইচ্ছে করেই এসব দেখিয়ে দূরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে?
কিন্তু, কোন প্রমান না পেলে আমার তো অনুসন্ধানেরও কিছু নেই।
এসব ভাবতে ভাবতে আমি পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ, কি মনে করে যেনো ইনফারমার যে ঘরে বসে সব পর্যবেক্ষণ করছিলো, সে ঘরে ফিরে গেলাম। এবং সেই ঘরের ভেতরের বেডরুমের পেছনের দরজা দিয়ে বের হতেই আবিষ্কার করলাম, একটি ছোট্ট পুকুর। পুকুর ভর্তি আফ্রিকান মাগুর। আর, চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মানুষের হাড়। ঠিক সেই সময় আমি পেছন থেকে খুব পরিচিত নারীকন্ঠে শুনলাম,
ব্যক্তিগতকে কখনো জানতে হয়না।
কথাটি শুনে যেই আমি পেছন ফিরতে যাবো ঠিক সেই সময় আমার মুখে রুমাল চেপে ধরা হলো।
ঘটনার আকস্মিকতায় আমি কিছু বুঝে উঠতে পারার আগেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলাম আফ্রিকান মাগুরভর্তি পুকুরটিতে…
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত



বিষয়: #  #


আর্কাইভ