শিরোনাম:
ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩১

Somoy Channel
বুধবার ● ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
প্রথম পাতা » জীবনযাপন » দিনে কতবার আলিঙ্গন করা জরুরি এবং কেন উপকারী?
প্রথম পাতা » জীবনযাপন » দিনে কতবার আলিঙ্গন করা জরুরি এবং কেন উপকারী?
১০৪ বার পঠিত
বুধবার ● ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

দিনে কতবার আলিঙ্গন করা জরুরি এবং কেন উপকারী?

দিনে কতবার আলিঙ্গন করা জরুরি এবং কেন উপকারী?প্রতিদিন আলিঙ্গন দরকার আমাদের জীবনে। বেঁচে থাকার জন্য দরকার, ব্যবস্থাপনার জন্য দরকার, দরকার উন্নতি করার জন্য।

আজ ১২ ফেব্রুয়ারি, হাগ ডে বা আলিঙ্গন দিবস। একটু উষ্ণ আলিঙ্গনের মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসার আদান-প্রদান ঘটে। শুধু ভালোবাসার মানুষের ক্ষেত্রেই নয়; পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব সবার সঙ্গেই আলিঙ্গন করা উচিত।

জানেন কি, আমরা কখন একে অপরকে আলিঙ্গন করি? যখন সুখে বা দুঃখে থাকি, কোনো বিষয়ে অধীর হই কিংবা কাউকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করি, তখন অন্যের সঙ্গে আলিঙ্গনে আবদ্ধ হই। এটা আমাদের স্বস্তি দেয়।

শুধু এসবই কেন, এর স্বাস্থ্যগত অনেক উপকারিতাও আছে। আলিঙ্গনের ফলে ভয়, দুশ্চিন্তা, ব্যথা দূর হয়ে যায়। এমনকি ইমিউন ও কার্ডিওভাস্কুলার-সংক্রান্ত স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

প্রশ্ন হলো, দিনে কতবার আলিঙ্গন করতে হবে? এর একটি উত্তর দিয়েছেন ফ্যামিলি থেরাপি নিয়ে কাজ করার জন্য বিখ্যাত মার্কিন ফ্যামিলি থেরাপিস্ট ভার্জিনিয়া স্যাটিয়ার। তাঁকে ‘মাদার অব ফ্যামিলি থেরাপি’ও বলা হয়।

তিনি বলেন, ‘বেঁচে থাকার জন্য আমাদের প্রতিদিন অন্তত চারবার আলিঙ্গন করা দরকার। মেইটেন্যান্স থেরাপির জন্য দিনে আলিঙ্গন দরকার আটবার। আর উন্নতির জন্য প্রতিদিন দরকার ১২ বার।’

চলুন, জেনে নিই আলিঙ্গন করার আরও কিছু উপকারিতার কথা—

মানসিক চাপ কমায়

বন্ধুবান্ধব কিংবা পরিবারের কোনো সদস্যকে যদি আপনি বেদনাদায়ক বা অস্বস্তিকর কোনো পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যেতে দেখেন, তাহলে বুকে জড়িয়ে নিন। উষ্ণ আলিঙ্গনে আবদ্ধ করুন। বিজ্ঞানীরা বলেন, আপনার স্পর্শ পেয়ে হয়তো অন্য কারও মানসিক চাপ কমে যেতে পারে। এটা তার জন্য বড় ধরনের ‘সাপোর্ট’ হতে পারে। এর ফলে এমনকি উভয়েরই মানসিক চাপ কমে যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন প্রিয়জনকে সমর্থন দেওয়ার স্নায়ুবিক সম্পর্কের ওপর একটি গবেষণা চালিয়েছিল। ২০ দম্পতির ওপর চলে গবেষণাটি। এ সময় তাঁদের বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়। দেখা যায়, শক দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেক নারী তাঁর সঙ্গীর হাত চেপে ধরেন। গবেষকেরা এ সময় দেখতে পান, প্রত্যেক নারীর মস্তিষ্কে মানসিক চাপসংক্রান্ত কার্যকলাপ হ্রাস পেয়েছে, পাশাপাশি মাতৃসুলভ আচরণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যখন আমরা কাউকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য আলিঙ্গন করি, তখন আমাদের মস্তিষ্কেও একই রকম প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা কমায়

আলিঙ্গনের ফলে মানসিক চাপ কমে যাওয়ার প্রভাব আমাদের দৈনন্দিন সুস্থতার ক্ষেত্রেও পড়ে। আমেরিকান ইনডিপেনডেন্ট একাডেমিক পাবলিশিং কোম্পানি প্রকাশিত সেজ জার্নালস চার শতাধিক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ওপর একটি গবেষণা করে। গবেষকেরা সেখানে দেখেন, আলিঙ্গন কোনো ব্যক্তির অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস করতে পারে। এ সময় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যাঁরা বেশি আলিঙ্গন পেয়েছেন, তাঁদের অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা কম ছিল।

হৃৎপিণ্ড ভালো রাখে

আলিঙ্গন হৃৎপিণ্ড ভালো রাখার দারুণ একটি উপায়। ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন আরেকটি গবেষণায় ২০০ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে দুটি দলে ভাগ করে। সেখানে প্রথম দলে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে রোমান্টিক সম্পর্ক ছিল। তাঁরা ১০ মিনিট একে অপরের হাত ধরে ছিলেন এবং ২০ সেকেন্ড করে আলিঙ্গনে আবদ্ধ হন। অন্য গ্রুপে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মধ্যেও রোমান্টিক সম্পর্ক ছিল, কিন্তু তাঁরা ১০ মিনিট ২০ সেকেন্ড পাশাপাশি চুপচাপ বসে ছিলেন। দেখা যায়, দ্বিতীয় দলের চেয়ে প্রথম দলের সঙ্গীদের রক্তচাপের মাত্রা ও হার্ট রেট বেশ ভালো অবস্থায় আছে। গবেষণা অনুসারে বলা যেতে পারে, একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

সুখী হতে সাহায্য করে

আমাদের শরীরে অক্সিটোসিন নামে একটি হরমোন কাজ করে, যাকে বিজ্ঞানীরা আলিঙ্গন হরমোনও বলেন। কারণ, আমরা যখন অন্য কাউকে আলিঙ্গন করি, স্পর্শ করি বা কাছাকাছি বসি, তখন এর নির্গমনের মাত্রা বেড়ে যায়। সুখানুভূতি তৈরি এবং চাপ কমিয়ে রাখার ক্ষেত্রে অক্সিটোসিন সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এই হরমোন নারীদের ওপর বেশি প্রভাব ফেলে। রক্তচাপ ও নোরাপিনেফ্রিন নামে স্ট্রেস হরমোনকে নিয়ন্ত্রণে রাখে অক্সিটোসিন। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ তাদের গবেষণায় দেখেছে, যেসব নারীর সঙ্গে তাঁদের সঙ্গীর সুন্দর সম্পর্ক বিরাজ করছে এবং তাঁরা যখন ঘন ঘন আলিঙ্গনে আবদ্ধ হন, তখন সেসব নারীর মধ্যে অক্সিটোসিন ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। শিশুদের ঘনিষ্ঠভাবে বুকে জড়িয়ে ধরার ক্ষেত্রেও নারীরা অক্সিটোসিন হরমোনের প্রভাব উপলব্ধি করতে পারেন।

ভয় কমায়

যাঁরা আত্মসম্মানবোধের অভাবে ভোগেন, কারও স্পর্শ পেলে তাঁদের ভয় দূর হয় কি না, তার ওপর একটি গবেষণা চালিয়েছেন অ্যাসোসিয়েশন ফর সাইকোলজিক্যাল সায়েন্সের গবেষকেরা। সেখানে তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন, কারও সংস্পর্শ আত্মসম্মানবোধের অভাবে ভুগতে থাকা ব্যক্তির মনের ভয় দূর করে। কখনো কখনো কারও মধ্যে একাকিত্ববোধ দেখা দেয়। দীর্ঘ সময় তাঁরা নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে রাখেন, এমনকি মৃত্যুর কথা পর্যন্ত চিন্তা করেন। কারও সংস্পর্শ তাঁদের এ ধরনের চিন্তা থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে। নিজের অস্তিত্ব নিয়ে মানুষের মধ্যে যে ভয় কাজ করে, কোনো জড় বস্তুকে ছুঁয়ে দিলে, সেটা টেডি বিয়ারও হতে পারে, তা দূর হয়ে যায়।

ব্যথা দূর করে

স্পর্শ ব্যথা দূর করতে কতটা কার্যকর, সেজ জার্নালসের এ-সংক্রান্ত একটি গবেষণায় স্পর্শের কয়েকটি ধরনের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া দ্য ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স অব হেলথ অ্যান্ড হিলিংয়ের দ্বিমাসিক জার্নাল হলিস্টিক নার্সিং প্র্যাকটিস তাদের গবেষণায় তুলে ধরেছে, যাঁরা ফাইব্রোমায়ালজিয়ায় ভুগছেন, তাঁদের জন্য ছয়টি থেরাপিউটিক স্পর্শের চিকিৎসা আছে। প্রতিটি চিকিৎসায় কোনো না কোনোভাবে ত্বকে স্পর্শের প্রয়োজন হয়। আলিঙ্গনও তেমনই একটি ধরন। উল্লেখ্য, ফাইব্রোমায়ালজিয়া একটি দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক অসুস্থতা, এর ফলে মাংসপেশি ও অস্থিসন্ধিতে প্রদাহ হয়; সারা শরীরে ব্যথা হয়।

যোগাযোগ স্থাপনে সাহায্য করে

মৌখিকভাবে বা মুখের অভিব্যক্তির মাধ্যমে বেশির ভাগ মানুষের যোগাযোগ তৈরি হয়। কিন্তু স্পর্শ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়, যার মাধ্যমে একে অপরের মধ্যে বার্তার আদান-প্রদান ঘটে। অপরের সংস্পর্শে এলে মানুষের আবেগের প্রকাশ ঘটে। সেটা রাগ, ভয়, ঘৃণা, ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা, সুখ, দুঃখ কিংবা সহানুভূতি হতে পারে। আলিঙ্গন হচ্ছে স্পর্শের আরামদায়ক ও যোগাযোগমূলক একটি ধরন।



বিষয়: #


আর্কাইভ