শিরোনাম:
ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১

Somoy Channel
বুধবার ● ৩ জানুয়ারী ২০২৪
প্রথম পাতা » খুলনা » সুন্দরবনে উপকূলে ২ মাস কাঁকড়া ধরা নিষেধাজ্ঞা, জেলেরা সরকারী সহায়তা দেওয়ার দাবী জানান
প্রথম পাতা » খুলনা » সুন্দরবনে উপকূলে ২ মাস কাঁকড়া ধরা নিষেধাজ্ঞা, জেলেরা সরকারী সহায়তা দেওয়ার দাবী জানান
৭২ বার পঠিত
বুধবার ● ৩ জানুয়ারী ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

সুন্দরবনে উপকূলে ২ মাস কাঁকড়া ধরা নিষেধাজ্ঞা, জেলেরা সরকারী সহায়তা দেওয়ার দাবী জানান

সুন্দরবনে উপকূলে ২ মাস কাঁকড়া ধরা নিষেধাজ্ঞা, জেলেরা সরকারী সহায়তা দেওয়ার দাবী জানানএস. এম সাইফুল ইসলাম কবির,বিশেষ প্রতিনিধি : সুন্দরবনের উপকূলে নদনদী ও জলাভূমিতে বেড়ে ওঠা সব ধরনের কাঁকড়া আহরণ দুই মাস নিষিদ্ধ করেছে বন বিভাগ। চলতি বছরের ১লা জানুয়ারি থেকে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুরো সুন্দরবনে এই নিষেধাজ্ঞার বলবৎ থাকবে। দুই মাস দরিদ্র পরিবারগুলোর খেয়ে না খেয়ে কষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করতে হবে। তারপরও সরকারি নিয়ম তো মানতে হবে। জেলেরা সরকারী সহায়তা দেওয়ার দাবী জানান। বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারী এই দুই মাস প্রাকৃতিক মৎস্য সম্পদ মা কাঁকড়ার প্রধান প্রজনন মৌসুম। এসময়ে প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষে সরকারী ভাবে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরার পাশ পারমিট বন্ধ রাখার নির্দেশনা রয়েছে। এই দু‘মাসে ডিমওয়ালা মেদী-মায়া কাঁকড়া বিভিন্ন নদী খালে কোটি কোটি বাচ্চা ছাড়ে। আর বনের উপকূলীয় এলাকার হাজারো জেলে এই কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।

এছাড়া এই কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি করে ব্যবসায়ীরাও বছরে কোটি টাকা আয় করেন। বনবিভাগের তথ্যানুযায়ী সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ শতাংশ। সুন্দরবনের জলভাগে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি ও ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া রয়েছে। বনের এই প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় এবং মা কাঁকড়ার প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষে ৫৯ দিনের জন্য জেলেদের সুন্দরবনে প্রবেশ করে কাঁকড়া ধরার অনুমতি বন্ধ রাখেন। তবে এই দুই মাস কিভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চলবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হাজারো জেলে। কালাবগি এলাকার জেলে সালাম মোল্যা বলেন, কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম শুরু হয়েছে। বনবিভাগ পাশ পারমিট বন্দো করে দিয়েছে তাই সুন্দরবন থেকে ৩ দিন আগে কাঁকড়া ধরা বন্ধ দিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছি। শুধু আমি না আমার মত সকল জেলেও নৌকা দড়ি নিয়ে ফিরে এসেছে। আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল কোনো লোক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরতে যায় না। আর যারা যায় তারা অধিকাংশ অতি দরিদ্র পরিবার। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে এই দুই মাস দরিদ্র পরিবারগুলোর খেয়ে না খেয়ে কষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করতে হবে। তারপরও সরকারি নিয়ম তো মানতে হবে। তা ছাড়া কাঁকড়া ধরা বন্ধের সময়ে সরকারী কোনো ভাতার ব্যবস্থা থাকলে এমন কষ্ট হতো না। তিনি বন্ধের সময়ে সরকারী সহায়তা দেওয়ার দাবী জানান।

বুধবার(৩ জানুয়ারী) বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মো. নূরুল করিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সুন্দরবন বিভাগ জানায়, ‘জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাস সুন্দরবনের নদ-নদী ও জলাভূমিতে বেড়ে ওঠা দেশের রপ্তানি পণ্য শিলা কাঁকড়াসহ সব ধরনের কাঁকড়ার প্রজনন মওসুম। এ সময়ের মধ্যে মা কাঁকড়ার ডিম থেকে প্রচুর পরিমাণ কাঁকড়া জন্ম নেয়। মা কাঁকড়া রক্ষার জন্যই প্রতি বছরের এ সময়ে সুন্দরবন থেকে কাঁকড়া আহরণ নিষিদ্ধ করে বন বিভাগ।

এদিকে কাঁকড়া ব্যবসায়ীরা জানান, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা ও মোংলাসহ সুন্দরবন সন্নিহিত এলাকা থেকে কয়েক কোটি টাকার বিশ্বখ্যাত শিলা কাঁকড়া রপ্তানির জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। বিদেশে রপ্তানি করা কাঁকড়ার ৯৯ শতাংশ সুন্দরবন থেকে আহরণ করা হয়ে থাকে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি এ দুই মাসে কাঁকড়া রফতানি শূণ্যের কোঠায় নেমে আসে। ফলে এর সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার মানুষ এ সময় বেকার হয়ে পড়ে। উল্লেখ্য ২০০৩-০৪ অর্থ বছরে কাঁকড়া রফতানিতে আয় দাঁড়ায় ১৪৬ মিলিয়ন ডলারে। এভাবে পর্যায়ক্রমে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে এর আয় পাঁচ থেকে ছয় গুণ বেড়ে য়ায়। কাঁকড়া আহরণের সবচেয়ে বড় ভান্ডার সুন্দরবন।

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সোনাতলা গ্রামের কাঁকড়া জেলে নিমাই চন্দ্র বালা জানান, আমার প্রধান পেশা সুন্দরবন থেকে কাঁকড়া আহরণ করা। বছরে এই দুই মাস আমি পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করি। দুই মাসের জন্য অন্য পেশায়ও যুক্ত হতে পারি না।

বছরে দুইমাস বিকল্প কর্মসংস্থানের দাবি জানিয়ে, মংলার জয়মনি এলাকার কাঁকড়া জেলে শফিকুল ইসলাম বলেন, সরকার বিভিন্ন পেশার কর্মজীবিদের প্রনোদনা দেয় কিন্তু আমাদের জন্য কিছু নাই।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল জানান, কাঁকড়া নদী বা খালে বেড়ে উঠলেও এর প্রজনন হয় সাগরের মুখে বা গভীর সাগরে। তাই এই সময় কাকড়া গভীর সাগরের দিকে ছোটে। তাছাড়া এই সময় নদীর পানি থেকে সাগরের পানি গরম এবং নদীর পানির থেকে সাগরের পানির লবনাক্ততা বেশি থাকে। এসব কারণেও নদী খাল থেকে কাঁকড়া সাগরে ছুটে যায়। কাঁকড়া সাগরে ছুটে যাওয়ার মুহূর্তে যাতে তাদের ধরতে না পারে সে জন্য কাঁকড়ার অভায়ারণ্য সুন্দরনে মা কাঁকড়া রক্ষায় এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বন ব্যিভাগ। এছাড়া মা কাঁকড়ার যখন ডিম হয় তখন তাদের ধরা খুবই সহজ। তারা ক্ষুধার্থ থাকে। তাদের সামনে যে খাবার দেয়া হয় তারা দ্রুত তা খাওয়ার জন্য এগিয়ে আসে। এর ফলে প্রজনন মৌমুমে খুব সহজেই জেলেরা কাঁকড়া শিকার করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, যদি এই সময় কাঁকড়া শিকার না করা হয় তাহলে পরবর্তী বছরে অধিক হারে কাকড়া উৎপাদন ও বিদেশে অধিক পরিমাণ রফতানি করা সম্ভব হয়।

পূর্ব-সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মো. নূরুল করিম বলেন, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এ দুই মাস কাঁকড়ার প্রজননের মৌসুম হওয়ায় এই সময় কাঁকড়া ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। আর এই নিষিদ্ধ বলবৎ থাকে শুধু সুন্দরবন এলাকায়। তাই সুন্দরবন বিভাগ এটা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।



বিষয়: #  #  #


আর্কাইভ