শিরোনাম:
ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩১

Somoy Channel
মঙ্গলবার ● ২ জানুয়ারী ২০২৪
প্রথম পাতা » সাহিত্য রম্যগল্প » প্রিয়শীর গল্প-আমার_শহর
প্রথম পাতা » সাহিত্য রম্যগল্প » প্রিয়শীর গল্প-আমার_শহর
১০০ বার পঠিত
মঙ্গলবার ● ২ জানুয়ারী ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

প্রিয়শীর গল্প-আমার_শহর

প্রিয়শীর গল্প-আমার_শহর“তোমার ভাইয়ের নজর ভালো না। আমি গোসল করতে গেলেও তোমার ভাই আমাকে ডেকে এটা সেটা করতে বলে। এমনকি আমার ভেজা শরীরের দিকে তাকিয়ে থাকে ড্যাবড্যাব করে ।”
মিলি আমাকে কথা গুলো প্রথমে ইতস্ততভাবে বলেছিলো। আমি মিলির চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। মাথাটা নিঁচু করে আবারো বললো..
- দেখো আয়ান তোমার ভাই মানে আমারও ভাই। আমার কোনো ভাই নেই। আমি ওকে আমার ভাইয়ের চোখেই দেখি। হতে পারি আমরা সমবয়সি, কিন্তু ওর চাল চলন আমার কাছে একদমই সুবিধা মনে হচ্ছে না।
- মাহিন কি কি করেছে শুনি?
- তুমি তো বাসায় থাকো না। অফিসের কাজে একদম ব্যস্ত থাকো। তোমার ভাই ভার্সিটি থেকে ফিরে সোজা আমার রুমে এসে শুয়ে পরে। কোনো কোনো দিন আমি ঘুম থাকি। ও হুট করে এসে কিছু না বলেই রুমে ঢুকে পরে।
- তোমায় কিছু বলেছে?
- না আমায় কিছু বলেনি, তবে ওর ভাব লক্ষন ভালো না।
- আচ্ছা আমি মাহিনের সাথে কথা বলে দেখি। আর বারণ করে দিবো এই রুমে আসতে।
- আয়ান তোমার দুইটা পা ধরি! আমি যে কিছু বলেছি তা প্লিজ ওকে কিছু বলো না। এম্নিতেই আমি তোমাদের বাসার সবার চোখের কাঁটা। আগে রুমের দরজা লক করে ঘুমাতাম সেটা নিয়ে তোমার মা আমাকে কত কথা শুনিয়ে দিলো। এমনকি তোমার কাছে বলেছে আমি রুমে দরজা লাগিয়ে ঘুমাই নাকি অন্য কারো সাথে কথা বলি।
- তুমি চুপ থাকো তো। বললাম তো বিষয়টা আমি দেখতেছি।
- আচ্ছা ঠিক আছে আয়ান।
আমি,মিলি,মাহিন আর মা চার জনে রাতে একসাথে খেতে বসেছি। মাহিনের কথাটা কিভাবে বলবো বুঝতে পারছি না। আর এই ভাবে বলা ঠিক হবে কিনা তাও জানি না। খাবার প্লেটে চামচে করে ভাত নিতে নিতে বললাম….
- মা আমায় তো অফিস থেকে ট্রান্সফার করে অন্য অফিসে পাঠাবে অল্প দিনে। সেখান থেকে তো বাসায় আসা সম্ভব না। আমি বলি কি মিলিকে নিয়ে আমি সেখানে একটা ফ্লাটে উঠবো।
- ভাইয়া কি বলতেছো? ভাবীকে নিয়ে সেখানে ফ্লাটে উঠবে মাকে কে দেখবে। আমারদের এই বাসা কে দেখবে।
- তুই চুপ থাক! মা কি বলে আগে তা শুনি।
- আয়ান! মাহিন ঠিকই বলেছে। আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি। বাড়ির খাবার রান্না সহ আমার ঔষধ ঠিক মত কে খাইয়ে দিবে?
- মা তুমি তো এখনো সব পারো আর তাছাড়া মাহিন তো আছে ও দেখাশুনা করতে পারবে।তুমি আর মাহিন থাকবে বাসায় তেমন কোনো কাজ তো নেই।আমি ট্রান্সফার হলে আমার খাওয়া দাওয়া করে অফিসে যেতে সমস্যা হয়ে যাবে।
- ও এতোদিন তো কোনোই সমস্যা ছিলো না। এখন বউ পেয়ে অনেক সমস্যা হচ্ছে তাই না? আমি মা আমার কথার তো কোনো মুল্য নেই। বউ যেটা বলবে সেটাই করতে হবে। আজ আমার একটা মেয়ে থাকলে এমনটা দেখতে হতো না। তুইও দুই দিনে বউ পেয়ে মাকে ভুলে গেলি। কি আর করার।
(মা হাই ছেড়ে কথাটা বললেন।)
আমি মিলির দিকে তাকিয়ে আছি। ওর চোখে জল ছলছল করছে। আমি মিলির হাত টিপুনি দিয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দিতে বললাম। মাকে আর কি বলবো বুঝতে পারছি না। চুপচাপ খেয়ে উঠে গেলাম। মিলি একটু পরে রুমের মধ্যে এসে বললো…
- আয়ান আমার যত কষ্ট হোক আমি এখানেই থাকবো। আমি গ্রামের মেয়ে তুমি যে আমায় বিয়ে করেছো এটা আমার জন্য অনেক বড় কপাল। তুমি মাকে আর মাহিনকে আর কিছু বলো না, আমি নিজেকে সামলে নিতে পারবো।
- মিলি আমি বুঝি। তোমার কথার অর্থ আমি গভীর ভাবে বুঝতে পারি। তুমি অনেক কষ্ট পেলেও খুব সহজে কিছু বলতে চাও না। তুমি কি বলবে, আমিও মাহিনের চালচলন বেশ কয়েকদিন ধরে লক্ষ করছি। তোমাকে বুঝতে দেইনি। আর কিই বা বলবো, মাহিন তো আমার ছোট ভাই। আমাদের হয়তো কোথাও ভুল ছিলো বলে ও এমন হয়েছে।
মিলি বিছানায় শুয়ে অন্য দিকে ফিরে নিরবে চোখের পানি ফেলছে। আমি অনুভব করছি মিলি কান্না করছে। পিছন থেকে মিলিকে জড়িয়ে ধরে আছি। আমি মিলিকে কিভাবে শান্তনা দিবো তার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
এইতো মাত্র দেড় মাস হলো আমরা বিয়ে করেছি। সম্পুর্ন পরিবারিক ভাবেই আমাদের বিয়েটা হয়েছে। মিলিকে আমার ছোট খালা পছন্দ করে আমার মাকে এবং আমাকে যেতে বলে। মিলিকে দেখে আমার মায়ের খুব পছন্দ হয়েছে। মিলি গ্রামের একটা মেয়ে। এবং খুব সরল সোজা। আমার মা যেহেতু পছন্দ করেছে সেহেতু আমার দ্বিমত এর কোনো কথাই আসে না। হুট করে গ্রামে যাওয়া হুটকরে বিয়ে করে মিলিকে শহরে নিয়ে আসা হয়েছে। আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছুই হয়নি।
প্রেম ভালোবাসা? ফ্যামিলির একমাত্র দ্বায়িত্ববান তখন আমি। আমার বাবা হুট করে ব্রেইন স্ট্রোক করে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। তখন আমার বয়স সবে মাত্র বিশ। যখনই নিজেকে গড়ে তুলবো তখনই আমরা দুই ভাই এতিম হয়ে যাই। আমার আর ভালো কোনো কলেজে ভর্তী হওয়া হয়নি। আমি পড়াশুনার পাশাপাশি একটা মার্কেটিং এর কাজ করতাম। বাবা ছিলেন সরকারী কর্মকর্তা। বাবার ইচ্ছা ছিলো আমাকে ভার্সিটিতে পড়াবেন। কিন্তু নিজেকে ভার্সিটির পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার আগেই সব কিছু শেষ হয়ে যায়। বাবা আমাদের জন্য টাকা পয়সা রেখে যাননি তবে সুন্দর একটা বাড়ি করে দিয়েছেন। থাকার মত একটা যায়গা রেখে গিয়েছেন।
আমার ছোট ভাই মাহিন আমার চেয়ে চার বছরের ছোট। মাহিনকে কখনো কষ্ট আমি করতে দেইনি। স্বার্থমত মাহিনের চাহিদা গুলো আমি পূরন করতাম। মাহিনকে বলেছি ভালোমত পড়াশুনা করে বাবার স্বপ্নটাকে পূরণ করতে। আমি তো বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারিনি। তাই মাহিনের ভার্সিটিতে পড়ার জন্য আমার যেটা করার দরকার হয় আমি করবো। ভাইকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট এর জন্য যদি বাবার রেখে যাওয়া বাড়িটাও বিক্রি করে দেওয়া লাগে সেটা করতে আমি প্রস্তুত।
বিয়ের পরে আমি মিলির প্রেমে পরে যাই। মিলি স্বাবাবিক পরিবারের একটা মেয়ে। ওর নম্রতা ভদ্রতা আমায় মুগ্ধ করে। তার চেয়ে অবাক হই মিলির জীবনে ভয়ংকর একটা অতীত ছিলো। যে কথাটা মিলি আমায় বিয়ের আগেই কথা বলার সময় জানিয়ে দেয়। নিখুঁত ভাবে বলে দিয়েছে। ওর কথা বলার চালচলন আমার বেশ ভালো লেগে যায়। তাই আমি আর কিছু না ভেবে মায়ের কাছে মত প্রকাশ করি।
আমাদের বাসায় এসে সবকিছু মিলি দেখাশোনা করে। আমার মায়ের ঔষধ নিয়ম মাফিক মত খাইয়ে দেয়। খাবার-দাবার রান্না করার সমস্ত দ্বায়িত্ব মিলি নিজের হাতেই নেয়। মিলির ভালোবাসা আমার প্রতি কোনো কমতি ছিল না বরং বেশি ছিল। ভেবেছিলাম হয়তো মিলি বিয়ের পরে আমাকে মেনে নিতে পারবে না। সমস্ত ভুল মিথ্যে প্রমান করে দিয়ে মিলি আমাকে যথেষ্ট পরিমাণ ভালোবেসেছে। মিলি ভালোবেসে আমাকে আগলে রেখেছে। আমার জীবনে মিলির মত একটা মেয়ে আসবে সেই কারণে হয়তো আমার কারো সাথে প্রেম ভালোবাসা হয়নি। আমি অনেক হ্যাপি।

রোমাঞ্চকর সব গল্প পড়তে ফলো করুন প্রিয়শীর গল্প

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত



বিষয়: #  #  #  #


আর্কাইভ