সোমবার ● ১ জানুয়ারী ২০২৪
প্রথম পাতা » ঢাকা » ঢাকা-১৯: সাভারে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনি ক্যাম্পে হামলা, আহত ৫
ঢাকা-১৯: সাভারে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনি ক্যাম্পে হামলা, আহত ৫
ঢাকা-১৯ আসন সাভারে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের অস্থায়ী নির্বাচনি ক্যাম্পে হামলা, ভাঙচুর ও কর্মীদের কুপিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে নৌকার প্রার্থী ডা. এনামুর রহমানের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এতে আহত হয়েছেন ৫ জন। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় বাইপাইল-আব্দুল্লাপুর ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকলীগের নেতাকর্মীরা। পরে পুলিশের আশ্বাসে তারা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন।
রবিবার (৩১ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ইয়ারপুর ইউনিয়নের ঘোষবাগ সোনামিয়া মার্কেট এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগ, নৌকার প্রার্থী ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান নিজের পরাজয় নিশ্চিত জেনেই নির্বাচন বানচাল করতে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন।
আহতরা হলেন- জাতীয় শ্রমিক লীগ আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক সানাউল্লাহ ভূঁইয়া সানি, মো. সাগর, সুজন, এনামুল হক মিলন ও নূর ইসলাম। তারা সবাই ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের কর্মী।
অভিযুক্তরা হলেন- ইয়ারপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রাজন ভূইয়া, সাইফুল ও রাকিবসহ অজ্ঞাত বেশ কয়েকজন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ইয়ারপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও ১৭ মামলার আসামি রাজন ভূঁইয়ার নেতৃত্বে সোনামিয়া মার্কেট এলাকায় ট্রাক প্রতীকের নির্বাচনি ক্যাম্পে ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে শ্রমিক নেতা ও ট্রাক প্রতীকের সমর্থক সানাউল্লাহসহ চার জন সেখানে গেলে তাদেরকে কুপিয়ে জখম করে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে নারী ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হামলায় আহত সানাউল্লাহ সানি ভূঁইয়া বলেন, ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাশে সোনামিয়া মার্কেটে ট্রাক প্রতীকের একটি নির্বাচনি ক্যাম্প রয়েছে। সেই অফিস ভাঙচুর করে রাজন ভূঁইয়া। খবর পেয়ে আমরা চার জন দুটি মোটরসাইকেলযোগে সেখানে যাই এবং রাজন ভূঁইয়াকে বলি নির্বাচন করার সবারই অধিকার আছে। তুমি ট্রাক প্রতীকের ক্যাম্প ভাঙচুর করেছ কেন? তুমি যে যার নির্বাচন করো তার করো, ট্রাক প্রতীকে যারা নির্বাচন করে তারা তাদের মতো করুক। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলের পাশেই রাজনের ব্যক্তিগত অফিস থেকে চাপাতি, চাইনিজ কুড়ালসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। তিন/চার রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। আমরা আহত হলে সমর্থকরা উদ্ধার করে স্থানীয় নারী ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করে।
আহত এনামুল হক মিলন বলেন, রবিবার রাতে আমাদের নির্বাচনি ক্যাম্পে ঢুকে চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে নৌকার কর্মী স্থানীয় ইউপি মেম্বার রাজন ভূঁইয়া ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। ভাঙচুর করে তারা ক্যাম্প বন্ধ করে দেয়ার সময় গোপনে ধারণকৃত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভাঙচুরের খবর পেয়ে আমরা ক্যাম্পের সামনে গেলে আমাদের ওপরেও হামলা করে সন্ত্রাসীরা। এসময় তারা সানি ভূইয়াসহ ৫ জনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে। মূলত আমরা ট্রাকের নির্বাচন করতে পারব না, আমাদের নৌকার নির্বাচন করতে হবে- এ কারণেই আমাদের ওপর নৌকার লোকজন হামলা চালিয়েছে।
এদিকে, ঘটনার পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের জামগড়া ছয়তলা এলাকা অবরোধ করেন শ্রমিকলীগের নেতাকর্মীরা। প্রায় এক ঘণ্টা অবরোধের পর রাত ১২টার দিকে পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন তারা।
আহত কর্মীদের হাসপাতালে দেখতে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ডা. এনামুর রহমানের সরাসরি নির্দেশে রাজন মেম্বারের নেতৃত্বে ২৫/৩০ জন সন্ত্রাসী আমার দুটি নির্বাচনি ক্যাম্প ভাঙচুর করেছে। এসময় আমার কর্মী শ্রমিকলীগ নেতা সানি ভূইয়াসহ কয়েকজন সেখানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের কুপিয়ে আহত করে। আমার কর্মীদের ওপর হামলা করেছে। আমি নির্বাচন কমিশন ও অনুসন্ধান কমিটিকে বিষয়টি জানিয়েছি।
তিনি বলেন, নৌকার প্রার্থী এনামুর রহমান নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য এই সমস্ত নারকীয় জঘন্য ঘটনা ঘটাচ্ছে। সে তার পরাজয় নিশ্চিত জেনে ঢাকা-১৯ আসনে যাতে নির্বাচন না হয়, সেজন্য সুপরিকল্পিতভাবে এই ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটাচ্ছে। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এদিকে ঘটনার পরপর গভীর রাতে হামলার প্রতিবাদে ও আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড মহাসড়কের নরসিংহপুর ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পল্লীবিদ্যুত এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। পরে আশুলিয়া থানা পুলিশের আশ্বাসে তারা সড়ক থেকে সরে গেলে প্রায় আধঘণ্টা পর যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।
আশুলিয়া থানার ওসি এএফএম সায়েদ বলেন, রাতে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত তিনজনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের আটকেও অভিযান চলছে। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
তবে এ বিষয়ে নৌকার প্রার্থী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বিষয়: #নির্বাচন ২০২৪