বৃহস্পতিবার ● ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » সাহিত্য রম্যগল্প » #সত্য_ঘটনা
#সত্য_ঘটনা
আমার স্বামীর সাথে সংসার জীবন এই ১৩বছর হলো।সম্পর্ক করেই বিয়ে করেছিলাম আমরা।
আমার ভাবির ভাই ছিল ও।আমি এতটাই অন্ধ ছিলাম যে ওর আমার সাথে রিলেশান চলাকালীন একাধিক সম্পর্ক ছিল তা জেনেও আমি ভুলতে পারিনি ওকে।
বিয়েটা হয়েই গেল।একরকম সবার অমতে আমি বাসা থেকে পালিয়ে ওদের বাসায় চলে যাই।
আমার ভাই রাজি ছিলেন না তবুও কিছু করার ছিলনা আমার।
আমার শ্বশুর শাশুড়ির মেয়ে যেহেতু আমার ভাইয়ের বউ ছিল তাই তারা আমার উপর অত্যাচার করতে পারেনি।
মিলনের সাথে ১৩টি বছর কাটিয়য়ে দিলাম।
আমার দুজন কন্যা সন্তান ও আছে আল্লাহর রহমতে।
মিলন বিয়ের পর ও বিভিন্ন মেয়ের সাথে ফোন এ কথা বলতো আমি কিছু বললেই বলতো কথা বললে কি জাত যায়?
এরা তো ফ্রেন্ড। বউ তো তুমিই।
আমার ছোট মেয়ে হবার পর থেলেই মিলনের পরিবর্তন হতে লাগলো খুব।
চাকরীর সুবাদে ও থাকতো দূরে।প্রায় ১ মাস পর আসতো।
আমি ওর মা বাবার সাথেই থাকতাম।
এত কিছু ত্যাগ করেও শুধু চেয়েছি মিলন এর মনের মতন হতে।
এরমাঝেই হঠাৎ মিলন ঈদ এ ও বাড়িতে আসলোনা।
আমি বার বার জিজ্ঞেস করাতে ও বললো ওর এক বোনের বাড়িতে।
আমি: কোন বোন?
তোমার একমাত্র বোন তো আমার ভাবি।আর কে?
মিলন: আহা নিশি সে না।
এ আমার ধর্মের বোন।
অনেক ভালো।
তোমায় নিয়েও একদিন যাব।
এর পর ওই মেয়ে আমাকেও কল দিল।
একদিন কল দিয়ে বলে ভাবি আমি বিথী।
কোন বিথী?
মিলন কিছু বলেনি?
ওই যে আমাদের বাড়িতে ও আসছিল।
ও ওই যে বোন?
হুম আমিই সেই, ভালো আছেন?
এর পর প্রতিনিয়ত ও কল দিত।
মেয়েও বিবাহিতা।কথাও খারাপ লাগতোনা।
কয়েকমাস পর মিলন কে বললাম ওদের বাড়ি নিয়ে যেতে।
মিলন ও রাজি হয়ে গেল।
আমরা বিথীদের বাড়িতে গিয়ে দেখি মেয়ে আমার চেয়েও বড় হবে।
কিভাবে এই মেয়েকে মিলন বোন বানায় বুঝলাম না।
তবুও স্বামীর উপর অন্ধ বিশ্বাস আমি রেখেছিলাম।
দুদিন ছিলাম।হঠাৎ এক রাতে মিলন দেখি আমাদের রুমে নেই।
গ্রামে এতো রাতে ও কই বা যাবে!
এই ভেবে ওকে ঘরে খুঁজতে লাগলাম।
হঠাৎ এক রুম থেকে মিলন এর হাসির শব্দ পেয়ে আমি রুমের সামনে গেলাম।
রুম দেয়া।
আমি দরজায় কান পেতে শুনছি ভিতরে শুধু মিলন না।
ভিতরে কোন মেয়েও আছে।
আচ্ছা এ বাসায় বিথী ছাড়া অন্য মেয়েও নেই।
আর বিথীর সাথে দরজা বন্ধ করে হাসাহাসি করার কি মানে!
দরজার পাশের এক ভাঙা জানালা ছিল।
আমি জানালার পর্দা সরাতেই যা দেখলাম তা দেখার জন্য আমি কখনই প্রস্তুত ছিলাম না।
রুমের ভিতর বিথী আর মিলন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে আছে।
বিথী বলছে,নিশিকে তো চোখে হারাও।আমার দিকে তো তাকাবার সময় ই নেই।
মিলন হেসে বলে,ওকে দেখে হারানোর কি আছে?
বিয়ের আগে সুন্দর ছিল।এখন দুই মেয়ের মা।বুড়ি বুড়ি ভাব, ভালোবাসার কি বুঝবে!
এই আমার বিশ্বাস এর দাম দিল ওরা।
আমি রেগে গিয়ে দরজা অনবরত ধাক্কা দিতে লাগলাম।
মিলন দরজা খুলে বিথীর দিকে তাকিয়ে বলে দরজাটা দিলি কেন বিথী।
আমি মিলনকে ধাক্কা দিয়েই বিথীকে থাপ্পড় দিলাম।
বোন সেজেছো তাইনা?
বোন ভাইয়ের সাথে নোংড়ামী করতে গায়ে বাঁধেনা?
আল্লাহর ভয় নাই মনে?
মিলন: নিশি কি শুরু করলা?
আমি: তুই একটা কথাও বলবিনা।একটাও না।তুই না বাবা হয়েছিস!এই প্রথম আমি ওকে তুই সম্বোধন করলাম।বুক ফেটে কাঁন্না আসছে।
এতদিনের তিল তিল করে জমানো সম্মান আজ ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।মেনে নিতেও পারছিনা না মেনেও উপায় নেই।
মেয়েরা জানলে মরে যাবে এই বলে কাঁদতে কাঁদতে রুমে চলে আসলাম..
সারারাত মিলন আমার সামনেই আসেনি।
মেয়েদের জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম।
এখন যেখানে আমি আমার সন্তানের খেয়াল রাখার কথা,সন্তান্দের চোখে চোখে রাখার কথা সে কিনা নিজের স্বামিকেই চোখে চোখে রাখতে হচ্ছে।
আয়নার সামনে তাকিয়ে দেখছি নিজেকে,আচ্ছা মিলন আমি বুড়ি হয়ে গেছি!
কাকে ভালোবেসে হয়ে গেছি।
তোমার সংসার সামলাতেই তো হয়েছি!
তোমার বাচ্চার ই তো মা হয়েছি।
এর প্রতিদান তুমি এভাবে দিলে!
লেখা: Umme Nipa
ঘটনা: নাজমা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত
বিষয়: #অবলম্বন #ঘটনা #সত্য