শিরোনাম:
ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩১

Somoy Channel
মঙ্গলবার ● ১২ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » বিজয়ের প্রাক্কালে বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » বিজয়ের প্রাক্কালে বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা
৪৮ বার পঠিত
মঙ্গলবার ● ১২ ডিসেম্বর ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

বিজয়ের প্রাক্কালে বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা

বিজয়ের প্রাক্কালে বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশাআজ ১২ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে যুদ্ধ পরাস্ত পাকি বাহিনী অন্য পরিকল্পনা করে। পরাজয়ের মেনে নেওয়ার আগেই তারা এমন কিছু করতে চায় যেন এ জাতি তাদের স্মরণ করে। ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধি হত্যার পরিকল্পনা শুরু হয় এদিন থেকে। সেনানিবাসে প্রাদেশিক সরকারের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী’র সভাপতিত্বে বৈঠক বসে। ওই বৈঠক থেকেই আলবদর, আলশামস বাহিনীর কেন্দ্রীয় অধিনায়কদের সঙ্গে নিয়ে বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা প্রণয়ন করা হয়।

অন্যদিকে তুমুল যুদ্ধে লিপ্ত মুক্তিবাহিনী। ১২ ডিসেম্বর ভোরে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে হানাদারের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক সম্মুখ যুদ্ধ হয়। দিনাজপুরে ক্যাপ্টেন শাহরিয়ার রশীদের দল ভারতীয় বাহিনীসহ খানসামা আক্রমণ করে। এই আক্রমণে ভারতীয় বাহিনীর ১৫ জন ও ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

দিনাজপুরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একটি দল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণের মুখে একটি গ্রামে ব্রাশফায়ার করে। এই গণহত্যায় শহীদ হন নিরীহ ৩৭ জন মানুষ। এ দিন নরসিংদী পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হয়। সকাল ৮টায় ভারতীয় ৪ গার্ড রেজিমেন্টসহ মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে নরসিংদী ছেড়ে পালিয়ে যায় হানাদার বাহিনী।

ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী বগুড়া দখলের জন্য আসবে এমন তথ্য জেনে পাকিস্তানি বাহিনী বগুড়া শহরের এতিমখানায় অবস্থান নেয়। এ সময় গাইবান্ধায় থাকা মিত্রবাহিনীর ওপর পাকিস্তানি হানাদারেরা গোলাবর্ষণ শুরু করে। ভারতীয় বাহিনী এ সময় পাল্টা গোলাবর্ষণ চালালে হানাদার সৈন্যরা পালিয়ে যাওয়ার সময় বেশ কয়েকজন সৈন্যকে গ্রামবাসীরা গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে কুমিল্লায় ক্যান্টনমেন্ট থেকে পালিয়ে আসা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মিত্রবাহিনীর ১১ ডিসেম্বর গভীর রাত পর্যন্ত চলা যুদ্ধের এক পর্যায়ে হানাদার সৈন্যদের গোলাবারুদ শেষ হয়ে গেলে এ দিন ভোরে প্রায় ১ হাজার ৭০০ হানাদার সৈন্য ভারতীয় মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এতে করে চান্দিনা হানাদার মুক্ত হয়।

গাইবান্ধায় ৫ নম্বর সেক্টর কমান্ডার লেফট্যানেন্ট কর্নেল মীর শওকত আলী গোবিন্দগঞ্জ দখল করার পর হানাদার সেনারা গোবিন্দগঞ্জ ছেড়ে নদী পেরিয়ে লামাকাজীতে শক্ত প্রতিরক্ষা বুহ্য গড়ে তুলেছিল। এই বুহ্য ভেদ করতে কর্নেল শওকত মিত্রবাহিনীর জেনারেল গিলের কাছে বিমান হামলার সাহায্য চান। এরপর ভারতীয় ৪টি মিগ বিমান লামাকাজীতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অবস্থানের ওপর বোমাবর্ষণ করে। সিলেটের গোয়ানঘাটে ক্যাপ্টেন আব্দুর রবের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় সুরমা নদী পার হয় এবং পিছন দিক থেকে হরিপুরে হানাদার বাহিনীর ওপর আক্রমণ করে।

সিরাজগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকাংশ দল একত্রে সিরাজগঞ্জ শহরের উত্তরে শৈলাবাড়ি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণ করে। এ সময় মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে হানাদার বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। যুদ্ধের এক পর্যায়ে হানাদার বাহিনী টিকতে না পেরে পালিয়ে যায়। এ যুদ্ধে ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

অন্যদিকে দিল্লির রামলীলা ময়দানে দেওয়া এক বিশাল জনসভায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এ দিন বলেন, ‘ভারত নয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই পাকিস্তানের দুর্দশার জন্য দায়ী। কমিউনিজম ঠেকানোর নামে সামরিক সাহায্য দিয়ে এবং গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধে ইন্ধন জুগিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই পাকিস্তানের গোরস্থান রচনার পথ প্রশস্ত করেছে। কারণ এই সামরিক সাহায্যই পাকিস্তানের জঙ্গি শাসকদের উদ্ধত এবং আপন জনগণের প্রতি উদাসীন করে তুলেছে। এই সামরিক সাহায্যের দরুন তারা মনে করে নিয়েছে বুলেটের জোরেই তারা জনগণের গণতান্ত্রিক ভাবনাকে চিরদিন দমিয়ে রাখতে পারবে!’ বক্তব্যে একই সঙ্গে ইন্দিরা গান্ধী পাক-ভারত যুদ্ধের জেরে পশ্চিমা রাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের যেসব সামরিক চুক্তি আছে সেগুলো কার্যকর বন্ধ করতে দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।

ইন্দিরা গান্ধী পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের সঙ্গে ভারতের কোনো বৈরী মনোভাব নেই উল্লেখ করে বলেন, ‘ভারত কখনোই পাকিস্তানের জনগণকে বৈরী বলে মনে করে না। বস্তুতপক্ষে পাকিস্তানের জনগণের প্রতি ভারত অত্যন্ত সহানুভূতিশীল। তার কারণ, পাকিস্তানের জনগণ বারবার একটি মুষ্টিমেয় চক্রের দ্বারা শোষিত হয়ে আসছে।’

১২ ডিসেম্বর ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে প্রাদেশিক সরকারের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী আলবদরের কমান্ডার কামারুজ্জামান ও আলশামসের কমান্ডার মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, আলবদরের প্রধান নির্বাহী আশরাফুজ্জামান খান, অপারেশন ইনচার্জ চৌধুরী মুঈনুদ্দীনসহ ২ বাহিনীর শীর্ষ অধিনায়কদের ডেকে পাঠান। এরপর মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর নেতৃত্বে তাদেরকে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা দেওয়া হয়। যুদ্ধ যখন সমাপ্তির পর্যায়ে তখনই ষড়যন্ত্রের নীলনকশা আঁকে পাকবাহিনী।



বিষয়: #  #  #  #


আর্কাইভ