সোমবার ● ২৭ মে ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » রেমালের তাণ্ডবে সাড়ে ৮ হাজার মোবাইল টাওয়ারের নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন
রেমালের তাণ্ডবে সাড়ে ৮ হাজার মোবাইল টাওয়ারের নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন
প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে উপকূলীয় ১২ জেলা এখনও বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এছাড়া, মোবাইল সেবা ব্যাহত হচ্ছে ৩২ জেলায়।
দেশের বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর গ্রামীণ ফোন জানিয়েছে, ৩২ জেলার ৭ হাজার ১৬৭টি টাওয়ারের সেবা দেয়া বিঘ্ন ঘটছে। আর রবির সেবা ব্যাহত হচ্ছে ৮ জেলায়। সব মিলে ১২ হাজার টাওয়ারে মোবাইল সেবা বন্ধ রয়েছে।
এদিকে, লক্ষ্মীপুরে রবিবার (২৬ মে) রাত ১২টা থেকে বিদ্যুতবিচ্ছিন্ন রয়েছে। লক্ষ্মীপুর-রামগতি সড়কে রাস্তায় গাছ পড়ে সড়ক যোগাযোগও বন্ধ আছে।
জরুরি ভিত্তিতে এসব টাওয়ারে বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় স্থাপনে সোমবার (২৭ মে) পিডিবি, ডিপিডিসি ও বিআরইবিকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
বিটিআরসির সোমবার বিকেলের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী- রবিবার (২৬ মে) রাত ১০টার দিকে ৪৫ জেলায় ৩২ শতাংশ মোবাইল টাওয়ার অচল হয়ে পড়েছিল। পরে এ নিয়ে কাজ শুরু করে কর্তৃপক্ষ। সোমবার দুপুর নাগাদ ৪ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করে পুনরায় কিছু টাওয়ার সচল করা হয়। বর্তমানে ৮ হাজার ৪১০টি টাওয়ার নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন।
বিটিআরসি জানিয়েছে, ৪৫ জেলার মধ্যে ৮টি জেলায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ টাওয়ারের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে- পটুয়াখালী, বরিশাল, বরগুনা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, ভোলা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট। এসব এলাকায় দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ না থাকার কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হলে সংকট সমাধান হবে।
সংস্থাটির চেয়ারম্যান বলেন, ‘মোবাইল যোগাযোগ স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে টেলিকম অপারেটদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। সমস্যা সমাধানে সেন্ট্রাল মনিটরিং ও ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে।’
এদিকে, সাতক্ষীরা গতকাল দুপুর থেকে নেই বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট সেবাও ব্যাহত হচ্ছে। সাতক্ষীরা-মুন্সিগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ আছে। বাগেরহাটে প্রায় ৫ লাখ গ্রাহক বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন।
এছাড়া পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, ভোলা, বরিশাল, শরীয়তপুর, মাদারীপুরের বিভিন্ন এলাকা বিদ্যুৎহীন রয়েছে।
রেমালের তাণ্ডবে সবচেয়ে বেশি মোবাইল টাওয়ার নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়েছে বরগুনায়। সেখানে থাকা ৩২৬টির মধ্যে ২৬৬টিই বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া বাগেরহাট ও পিরোজপুরের ৭৮ শতাংশ, ভোলা, সাতক্ষীরা ও ঝালকাঠীতে ৭৭ শতাংশ, পটুয়াখালীতে ৭৬ শতাংশ, বরিশালে ৭১ শতাংশ, গোপালগঞ্জের ৬৬ শতাংশ, নড়াইলে ৬৪ শতাংশ, যশোরে ৫৬ শতাংশ, খুলনায় ৫০ শতাংশ টাওয়ার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
এদিকে উপকূলীয় এলাকায় ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) অপারেটরদের ৩২০টি পপের (পয়েন্ট অব প্রেজেন্স) মধ্যে ২২৫টি অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোলা জেলার ৮৫ শতাংশ পপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ওই অঞ্চলের তিন লাখের বেশি গ্রাহক সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন। সেবা সচল রাখতে তারা পোর্টেবল জেনারেটর ব্যবহার করছে বলে জানিয়েছে বিটিআরসি।
ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) অপারটেররা জানিয়েছে, বিদ্যুৎ না থাকায় ১৫ জেলায় তাদের ১ হাজার ৯০৮টি পপ বন্ধ হয়ে গেছে। ফাইবার অ্যাট হোমের খুলনা, বারিশাল ও চট্টগ্রামের ১ হাজার ৬৯০টি পপের ব্যাটারি ব্যাকআপ শেষ হওয়ায় ৬টি লোকেশন বন্ধ রয়েছে। তবে বাহন লিমিটেডের কোনো পপ বন্ধ হয়নি বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে সংযোগ সচল রাখতে সম্ভব সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে অপারেটরদে তৎপর থাকার নির্দেশনা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। ঘূর্ণিঝড়ে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক কেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা পরে জানাবে অপারেটরটি। আর মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো জানিয়েছে দ্রুত তারা সংযোগ ফেরাতে চেষ্টা করছে।
গ্রামীণফোনের হেড অব কমিউনিকেশনস শারফুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং সম্মিলিতভাবে কাজ করছি। একটি ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম ও কন্ট্রোল রুম গঠন করা হয়েছে। সংযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকা দ্রুত সংযোগের আওতায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
রবির কমিউনিকেশন বিভাগ থেকে গণমাধ্যমকে জানানো হয়, তারা ঘূর্ণিঝড় রেমালের সময়ে গ্রাহকদের জন্য ফ্রি মিনিট এমার্জেন্সি ব্যালান্স এবং অ্যাপে ঘূর্ণিঝড়ের আপডেট দিচ্ছে। ঝড় চলমান থাকায় নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্নতা এবং ক্ষতির বিষয়টি এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না।
ক্যাবল কাটা পড়া ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় উপকূলীয় এলাকার মধ্যে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর এলাকা পুরোপুরি ব্রডব্যান্ড সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি ইমদাদুল হক।
তিনি বলেন, দুর্যোগের কারণে ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চলের ৯০ শতাংশ ব্রডব্যান্ড সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে ৬-৭ লাখ গ্রাহক ভোগান্তিতে পড়েছেন। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী জোয়ার ও ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের কারণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত সংযোগ পুনঃস্থাপন সম্ভব নয়।
মোবাইলফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেন, বিটিএসসমূহের পাওয়ার ব্যাকআপের জন্য বিকল্প জেনারেটর চালু করা জরুরি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর কাছ আত্মীয় এবং সরকারি সহায়তাকারী সংস্থাসমূহের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসির জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
বিষয়: #রেমাল