শিরোনাম:
ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১

Somoy Channel
বুধবার ● ২২ মে ২০২৪
প্রথম পাতা » অনুপ্রেরণা (গল্প) » গল্প: প্রত্যাবর্তন
প্রথম পাতা » অনুপ্রেরণা (গল্প) » গল্প: প্রত্যাবর্তন
৬৫ বার পঠিত
বুধবার ● ২২ মে ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

গল্প: প্রত্যাবর্তন

গল্প: প্রত্যাবর্তনতোমার বুকের ডানপাশে এ কাটা দাগটা কিসের?
বাসর রাতেই তনিমাকে প্রশ্নটা করেছিল অভ্র। তনিমা নির্লিপ্ত ভাবেই উত্তর দেয়।

: ‌ব্রেস্ট টিউমার ছিল। ওটা সেই সার্জারির দাগ।
–কবে হয়েছিল?
খুব স্বাভাবিক প্রশ্ন। কিন্তু তনিমার মাথার মধ্যে একটা সূক্ষ্ম ক্রোধ চিনচিন করে ওঠে। মা প্রায়ই বলতেন,
মেয়ে মানুষের এত রাগ ভালো নয়।
কিন্তু এই উপদেশ মেনে চলার মেয়ে তনিমা কোনদিনই ছিল না। তবু আজ সে আশ্চর্যরকম শান্ত।

: বছর তিনেক আগে।
–ও আচ্ছা।

মুখে ও আচ্ছা বললেও সেদিন অভ্রর চোখে লেগে থাকা একরাশ অবিশ্বাস আর সন্দেহ তনিমার দৃষ্টি এড়ায়নি । একটু আগেও যে মানুষটা তার মধ্যে ডুবে যাচ্ছিল সে যেন হঠাৎই সচেতন হয়ে উঠল।
রাত অনেক হয়েছে। সুতরাং আমাদের এখন ঘুমানো উচিত।

বলেই সে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। তনিমাও আর কথা বাড়ালো না। হঠাৎ করেই তার সেই রাগটা গভীর বেদনায় রূপ নিল। সেই বেদনার দু’চার ফোঁটা ঝড়েও পড়ল গাল বেয়ে।

অভ্র তনিমাকে বিশ্বাস করেনি। কিন্তু সত্যিই এসএসসি পরিক্ষার আগে ওর ব্রেস্ট টিউমারের সার্জারিটা হয়েছিল। এই সার্জারির জন্য মেয়েটা টেস্ট পরিক্ষাটা পর্যন্ত দিতে পারেনি। কিন্তু নেহায়েৎ ভালো ছাত্রী ছিলো বলে স্কুল থেকে এসএসসি পরিক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগটা করে দিয়েছিল। কিন্তু ও ভেঙে গিয়েছিলো। মন ভেঙে গিয়েছিল আসলে।

যদিও সার্জারিটা খুব বড় কিছু ছিল না তবু ভয়ই ওকে কাবু করে ফেলেছিল। পড়ালেখায় গতি ফিরল না। এসএসসির রেজাল্টটাও আশানুরূপ হয়নি। তাই ঐ স্মৃতিটা তনিমা মনে রাখতে চায় না। তবু তার বাসর রাতের স্বপ্ন ভাঙতে সে হাজির হয়ে গেল।
পরিবারের পছন্দে শিক্ষিত আর সুশীল একটা ছেলেকেই তো বিয়ে করেছে তনিমা।

কিন্তু কেমন শিক্ষিত সে যে একটা সার্জারির দাগ চিনতে পারে না? অন্যকিছু ভেবে বসে আছে। থাক না!
বিয়ের দু’দিন বাদেই অভ্র কৌশলে তনিমার ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ড চাইল।
–তনিমা, তোমার এফবি পাসওয়ার্ডটা বলো তো। আমার সাথে এ্যাড দিয়ে দেই।
তনিমা ফেসবুকে খুব একটা অ্যাকটিভ নাহ্। কেবল বন্ধুদের সাথে যোগাযোগটা রাখার জন্য ফেসবুক ইউজ করা। ফোন করে আর ক’দিনই বা ওদের খোঁজ নেওয়া হয়। তারচেয়ে অবসরে ফ্রেন্ডস গ্রুপে অল্প বিস্তর চ্যাটিং, মনটা ভরে যায়। কিন্তু তবুও সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাই সোজা সাপ্টা উত্তর দিয়ে দিলো।

: পাসওয়ার্ড কেন লাগবে? তুমি রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দাও। আমি একসেপ্ট করে নেব।
তনিমার কথার প্রত্যুত্তরে সেদিন অভ্রর মুখে এক রাশ অন্ধকার নেমেছিল। ও গায়ে মাখেনি। ছেলেটা এমনিতেই ফর্সা। তনিমার চেয়ে বেশি সুন্দর দেখতে। মুখ কালো করে আছে বলে সৌন্দর্যে গ্রহন লেগেছে যেন। থাক না!

বিয়ের সপ্তাহখানেক পরে তনিমার বন্ধুরা এসেছিল ওদের বাসায়। ওদের মধ্যে দু’জন ছেলে বন্ধু্ও ছিল। নাঈম আর রাশেদ। তনিমার ছোটবেলার ফ্রেন্ড। কিন্তু ওদের দেখেই অভ্রর চোখে বিরক্তি ফুটে উঠল। বিয়ের এই ক’দিনের মধ্যেই তনিমা ওর চোখের ভাষা পড়তে শিখে গেছে। স্বামীর সাথে এইটুকই মাত্র হৃদ্যতা তার! বন্ধুদের সাথে বহুক্ষন আড্ডা চলল। অভ্রও সবার সাথে বসে ছিল।

কিন্তু আড্ডায় ওর উপস্থিতি বা আগ্রহ কোনটাই ছিল না। যেন অনেকটা বাধ্য হয়েই বসে আছে। বউকে পাহারা দিচ্ছে যেন! রাতে খাওয়ার পর ওরা চলে গেলে অভ্র কথাটা বলেই ফেলল।
–তোমার ছেলে ফ্রেন্ডও আছে দেখছি!
কন্ঠে স্পষ্ট বিদ্রুপ। কিন্তু তনিমা একটুও ঘাবড়ালো না। মেয়েটা কেমন যেন শক্ত ধাতুতে গড়া। অভ্র যে কিছু একটা বলবে তার জন্য সে তৈরি হয়েই ছিল। তাই ধীরে সুস্থে জবাব দিল।
: হুম। দেখছই তো।
–তোমার কোন বান্ধবীর বয়ফ্রেন্ড?
: নাহ্। ওরা আমারই ফ্রেন্ড।
–খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব?
: দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব।
–আচ্ছা।

সেদিন রাতে পতিদেব কেবল পাশ ফিরে শুয়েই ক্ষান্ত হলেন না। তাদের মাঝখানে একটা কোল বালিশও স্থান পেল। তনিমা আবারও অবাক হয়। একটা শিক্ষিত লোকের মন কি করে এতটা সংকীর্ন হতে পারে। অবশ্য এসব ভেবে কোন লাভ নেই। বাবা মার পছন্দে বিয়ে করল। তারা নিশ্চয়ই ভুল করতে পারেন না। তনিমার জন্য হয়ত এই ছেলেটাই পারফেক্ট। একটু সন্দেহপ্রবন। তো কি হয়েছে? থাক না!

ঘটনাগুলো খুব দ্রুত ঘটছিল। সময়ও যেন তার সাথে পাল্লা দিয়ে হারতে রাজি নয়। দেখতে দেখতে অভ্র তনিমার বিবাহিত জীবনের পাঁচটি বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেল। এই পাঁচ বছরের স্মৃতি বলতে তাদের মধ্যের আরও কিছু অপ্রিয় ঘটনা। সন্দেহ আর অবিশ্বাস অভ্রর অন্তরে একেবারে গেঁথে গিয়েছিল। তবুও সব কিছুর পরে থাক না বলে বলেই তনিমা অভ্রর সাথে থেকে গিয়েছিল।

সব দু:খ কষ্টকে অবজ্ঞা আর অবহেলা করার আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল মেয়েটার। জীবনটা মসৃন না হলেও সংসারটা চলছিল। হয়ত আরও কয়েক বছর এভাবেই চলতে পারতো যদি না সে এসে পড়ত। যার আগমন ঘটেছিল অনাড়ম্বর ভাবে কিন্তু তনিমার জীবনটাকে সম্পূর্ন উল্টে দিয়েছিল।

সেদিন অভ্র অফিসে চলে যাওয়ার পর তনিমা কিচেনে ব্যস্ত ছিল। হঠাৎ কলিংবেলের শব্দে কিছুটা চমকেই ওঠে। এখন তো কারও আসার কথা নয়। তবু অনিশ্চিত পদক্ষেপে এগিয়ে যায় দরজার দিকে। অভ্র ফিরে এলো নাতো? আজ এত তাড়াতাড়ি অফিস ছুটি হয়ে গেল? ‌কোন দুর্ঘটনা নয়তো? ভাবতেই পদক্ষেপ দ্রুততর হয় তনিমার। এক ছাদের নিচে থাকতে থাকতে আজকাল মানুষটার প্রতি খুব মায়া পড়ে গেছে ওর। তবে কি এর নাম ভালোবাসা?

বিয়ের পাঁচ বছর পর স্বামির প্রেমে পড়েছে সে? দ্রুতই এসব এলোমেলো ভাবনা খেলে যায় তনিমার মাথায়। দুশ্চিন্তা আরও গাঢ় হয়। কিন্তু এক রাশ উৎকন্ঠা নিয়ে দরজা ‌খোলার সাথে সাথে ভূত দেখার মত চমকে ওঠে মেয়েটা। সহসা কোন কথা বের হয় না মুখ দিয়ে। এক জোড়া বিস্ফোরিত চোখের সাথে সংঘর্ষ হয় আরেক জোড়া চোখের। নিরুত্তাপ আর শীতল সেই চোখ দুটি। এক রাশ বিষন্নতা যেন ভর করে আছে সে দৃষ্টিতে…..

লেখা: অরু



বিষয়: #  #


আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)