শিরোনাম:
ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩১

Somoy Channel
বৃহস্পতিবার ● ১১ এপ্রিল ২০২৪
প্রথম পাতা » ধর্ম » ঈদুল ফিতরে করণীয়-বর্জনীয়
প্রথম পাতা » ধর্ম » ঈদুল ফিতরে করণীয়-বর্জনীয়
৬৪ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার ● ১১ এপ্রিল ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

ঈদুল ফিতরে করণীয়-বর্জনীয়

ঈদুল ফিতরে করণীয়-বর্জনীয়দেশের আকাশে পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) সারা দেশে মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত হবে।

উৎসব মানেই হাসি-খুশি আর আনন্দ। ঈদের দিন মুসলমানরা আনন্দ উদযাপন করে থাকেন। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে খুশি ভাগাভাগি করেন। উচ্ছ্বাস প্রকাশের মধ্য দিয়ে মেতে ওঠেন ঈদ আনন্দে।

প্রায় সাড়ে ১৪০০ বছর আগ থেকে এ উৎসব পালন করে আসছে বিশ্ব মুসলিম সমাজ। হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) হিজরত করে মদিনায় এসে দেখেন, মদিনাবাসী বছরে দু’দিন আনন্দ-উৎসব পালন করে। সেই উৎসব সম্পর্কে রাসুল (সা.) জানতে চাইলে তারা জানায়, জাহেলি যুগ থেকে আমরা এ দুই দিন উৎসব পালন করে আসছি। রাসুল (সা.) বললেন, ‘আল্লাহতায়ালা তোমাদের এ দুই দিনের বদলে উৎসবের জন্য অন্য উত্তম দুটি দিন দিয়েছেন। তা হলো- ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা।’ (সুনানে আবি দাউদ : ১/১৬১)।

সেদিনের পর থেকে মুসলিম জাতি স্বমহিমায়, সগৌরবে বছরে দুটি ঈদ উৎসব পালন করে আসছে। ঈদ যেমন আনন্দের, তেমনি ইবাদতেরও। ঈদের দিন বেশ কিছু আমল রয়েছে, যার মাধ্যমে আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়া যায়। একই সঙ্গে সমাজে প্রচলিত কিছু কাজ রয়েছে, যার সঙ্গে ঈদের কোনো সম্পর্ক নেই; এসব পরিহার করা চাই। এখানে ঈদের দিনের করণীয় ও বর্জনীয় কাজগুলো তুলে ধরা হলো।

ঈদের দিনে করণীয়

১. গোসল ও পবিত্রতা অর্জন করা
ঈদের নামাজের জন্য গোসল করা ও মিসওয়াক করা সুন্নত। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবী কারিম (স.) ঈদুল ফিতর ও আজহার দিন গোসল করতেন। (বুখারি: ১/১৩০)

২. উত্তম পোশাক পরিধান করা
ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সুন্দর ও সাধ্যের ভেতরে সবচেয়ে উত্তম পোশাক পরিধান করা সুন্নত। ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, নবীজি (স.) দুই ঈদের দিন সবচেয়ে সুন্দর ও উত্তম জামাটি পরিধান করতেন। তাঁর একটা বিশেষ পোশাক ছিল, যা তিনি দুই ঈদে ও জুমায় পরিধান করতেন। হাদিসে এসেছে, নবী কারিম (স.) প্রতিটি ঈদে ডোরাকাটা পোশাক পরিধান করতেন। (বায়হাকি: ৬৩৬৩)

৩. ঈদগাহে যাওয়ার আগে পানাহার করা
আনাস (রা.) বলেন, নবীজি (স.) ঈদুল ফিতরের দিন সকালে কিছু খেজুর খেতেন। অন্য এক বর্ণনা মতে, তিনি বিজোড় সংখ্যক খেজুর খেতেন। (বুখারি: ৯৫৩)

৪. ঈদগাহে যাতায়াতের সময় তাকবির বলা
ঈদগাহে যাতায়াতের সময় ঈদুল ফিতরের দিন তুলনামূলক নিম্নস্বরে তাকবির বলা এবং ঈদুল আজহার দিন উচ্চৈঃস্বরে তাকবির পাঠ করা সুন্নত। ইমাম জুহরি থেকে বর্ণিত, নবীজি (স.) ঈদুল ফিতরের দিন তাকবির পাঠ করতে করতে ঈদগাহের দিকে গমন করতেন। নামাজ পড়া পর্যন্ত এই তাকবির অব্যাহত রাখতেন। নামাজ শেষ হলে তাকবির পাঠ বন্ধ করে ফেলতেন। (সিলসিলাতুল আহাদিস আস-সহিহা: ১৭১)

৫. ঈদগাহে আসা-যাওয়ার রাস্তা পরিবর্তন করা
ঈদগাহে যাতায়াতের রাস্তা পরিবর্তন করা সুন্নত। যাওয়ার সময় এক রাস্তা দিয়ে গমন করা। আর প্রস্থানের সময় অন্য রাস্তা ব্যবহার করা সুন্নত। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, নবীজি (স.) ঈদের দিন ঈদগাহে আসা-যাওয়ার রাস্তা পরিবর্তন করতেন। (বুখারি: ৯৮৬)

৬. হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া
কোনো ধরনের অপারগতা ও অক্ষমতা না থাকলে, হেঁটে ঈদগাহে গমন করা সুন্নত। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (স.) হেঁটে ঈদগাহে গমন করতেন এবং হেঁটে ঈদগাহ থেকে প্রত্যাগমন করতেন। (তিরমিজি: ১২৯৫)

৭. ঈদগাহে যেতে শিশুদের সঙ্গে নেওয়া
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) দুই ঈদের দিন ঈদগাহে যাওয়ার সময় ফজল ইবনে আব্বাস, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আব্বাস, আলী, জাফর, হাসান, হুসাইন, উসামা বিন জায়দ, জায়েদ বিন হারিসা, আইমান ইবনে উম্মু আইমান রাদিয়াল্লাহু আনহুমকে সঙ্গে নিয়ে উচ্চৈঃস্বরে তাকবির ও তাহলিল পাঠ করতে করতে বের হতেন। অতঃপর তিনি কামারদের রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে উপস্থিত হতেন এবং প্রত্যাবর্তনের সময় মুচিদের রাস্তা দিয়ে ঘরে আসতেন। (সুনানে কুবরা বায়হাকি: ৬৩৪৯)

৮. ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা
ঈদের দিন একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে শুভেচ্ছা বিনিময় করা সুন্নত। হাদিসে বর্ণিত আছে, জুবায়ের বিন নুফাইর (রা.) বলেন, নবীজি (স.) ও সাহাবায়ে কেরাম ঈদের দিন পরস্পর সাক্ষাৎ হলে বলতেন তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়ামিন কুম অর্থাৎ আল্লাহ আমার ও আপনার যাবতীয় ভালো কাজ কবুল করুক। (ফাতহুল কাদির: ২/৫১৭)

৯. ঈদের খুতবা শোনা
ঈদের নামাজ শেষে খুতবা মনোযোগ সহকারে শোনা। হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ বিন সায়িব (রা.) বলেন, নবীজি (স.)-এর সঙ্গে আমি ঈদগাহে উপস্থিত হলাম। এরপর তিনি আমাদের নামাজ পড়িয়েছেন। অতঃপর তিনি বলেন, আমরা নামাজ শেষ করেছি। যার ইচ্ছা সে খুতবা শোনার জন্য বসবে, আর যে চলে যেতে চায়, সে চলে যাবে। (ইবনে মাজাহ: ১০৭৩)

১০. ঈদগাহ থেকে ফিরে নফল আদায় করা
ঈদের নামাজের আগে-পরে ঈদের নামাজের স্থানে যেকোনো ধরনের নফল নামাজ আদায় করা মাকরুহ। ঈদের নামাজের পরে ঈদগাহ থেকে বাড়ি ফিরে দুই রাকাত নফল আদায় করা সুন্নত। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, নবী কারিম (সা.) ঈদের নামাজের আগে কোনো নামাজ পড়তেন না। তবে নামাজের পর ঘরে ফিরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। (ইবনে মাজাহ: ১২৯৩)

ঈদের দিনে বর্জনীয়

১. বিজাতীয় সংস্কৃতি কাম্য নয়
ঈদুল ফিতরের মতো ধর্মীয় উৎসবগুলো মুসলমানদের জন্য নিজস্ব সংস্কৃতিতে সম্পন্ন করা বাঞ্ছনীয়। বিজাতীয় সংস্কৃতি পালন করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কেননা এ ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো কওমের (সম্প্রদায়ের) অনুসরণ-অনুকরণ করবে সে তাদের দলভুক্ত হবে। (আবু দাউদ: ৩৯৮৯)

২. বিদআত থেকে সতর্ক থাকা
ঈদের দিন অনেকে না জেনে কবর বা মাজারে গিয়ে বিদআতে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। কবর জিয়ারত নিঃসন্দেহে একটি নেক আমল। কিন্তু ঈদের দিনে কবর জিয়ারতে বিশেষ সাওয়াব আছে বলে বিশ্বাস করা বা এটিকে একটি প্রথা বানিয়ে নেয়া শরিয়তসম্মত নয়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘তোমরা আমার কবরে ঈদ উদযাপন করবে না বা ঈদের স্থান বানাবে না.. ‘ (আবু দাউদ: ২০৪২)

৩. অশ্লীলতার ব্যাপারে সতর্ক থাকা
সিয়াম সাধনার মাসে সবাই যেমন গুনাহর ব্যাপারে সতর্ক ছিল, ঠিক তেমনি সারাবছর থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে ঈদের দিনগুলোতে অশ্লীলতার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হয়। কেননা ঈদ উপলক্ষে এগুলো বেশি প্রকাশিত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এক শ্রেণির লোক আছে, যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশ্যে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং তাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।’ (সুরা লুকমান: ৬)

৪. গান-বাজনা-সিনেমা থেকে দূরে থাকা
ঈদের দিনের একটি স্বাভাবিক গুনাহ হলো- গান-বাজনা শোনা ও এতে জড়িত হওয়া। শরিয়তে এটি নিষিদ্ধ এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। আবার যদি হয় অশ্লীল গান বা সিনেমা তাহলে তো তা হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোনো ভিন্নমত নেই। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের মাঝে এমন একটা দল পাওয়া যাবে যারা ব্যভিচার, রেশমি পোশাক, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল [বৈধ] মনে করবে।’ (বুখারি: ৫৫৯০)

৫. অপচয় না করা
অপচয় এমন খরচকে বলা হয় যার কোনো উদ্দেশ্য নেই, যার কোনো ফায়দা নেই। ঈদের দিনকে ঘিরে অনেকে অযথা খরচ করেন। অথচ আল্লাহ তাআলা অপচয় করতে নিষেধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের ভালবাসেন না।’ (সুরা আনআম: ১৪১)
৬. ঈদের দিনের নিষিদ্ধ কাজ
ঈদের দিন মহান আল্লাহ সবাইকে মেহমানদারি করেন। এদিন নিজে খাওয়া এবং অন্যকে খাওয়ানোর দিন। তাই এদিন রোজা রাখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আবু সাঈদ (রা.) বলেন, রাসুল (স.) ঈদুল ফিতরের দিন ও কোরবানির ঈদের দিন রোজা পালন করা থেকে, সাম্মা ধরনের কাপড় পরিধান করা থেকে, এক কাপড় পরিধানরত অবস্থায় দুই হাঁটু তুলে নিতম্বের ওপর বসতে (কেননা এতে সতর প্রকাশ পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে) এবং ফজর ও আছরের পর নামাজ আদায় করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারি: ১৮৬৮; মুসলিম: ২৫৪৪)



বিষয়: #  #  #  #


আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)