শিরোনাম:
ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩১

Somoy Channel
বুধবার ● ১০ এপ্রিল ২০২৪
প্রথম পাতা » অনুপ্রেরণা (গল্প) » তারা_রাতের_সন্তান
প্রথম পাতা » অনুপ্রেরণা (গল্প) » তারা_রাতের_সন্তান
১২৬ বার পঠিত
বুধবার ● ১০ এপ্রিল ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

তারা_রাতের_সন্তান

তারা_রাতের_সন্তানমাসুদ রানা ::
মাঝরাতে হঠাৎ করে কারও হাড় কামড়ে খাওয়ার কটমট শব্দে ঘুম ভেঙে যায় মিলির। মিলি বেশ চমকে বিছানা থেকে উঠে। শব্দটা আসছে তার পাশের ঘর থেকে। সেখানে তার ছোট ভাই অনিক ঘুমায়। মিলি ভয়ে ভয়ে বিছানা থেকে উঠে তার ভাইয়ের ঘরের দিকে হাঁটতে শুরু করল। মিলি যত ঘরের দরজার কাছে যাচ্ছে কটমট শব্দটা তত গাড়ো হচ্ছে। দরজাটা ভেতর থেকে চাপিয়ে দেওয়া। মিলি হালকা ধাক্কা দেওয়াতেই দরজাটা খুলে গেল এবং সাথেসাথেই সেই কটমট শব্দটাও একেবারে থেমে গেল। ঘর কুচকুচে অন্ধকার,কিছুই দেখা যাচ্ছে না। মিলি অন্ধকারে হাতড়ে সুইচ চেপে ঘরের আলোটা জ্বেলে আঁতকে উঠে সাথে সাথেই আবার আলোটা বন্ধ করে দিল। মিলি দেখল অনিক বিছানা ছেড়ে সম্পুর্ণ নগ্ন হয়ে মেঝেতে উপুর হয়ে শুয়ে রয়েছে। মিলি বেশ লজ্জা পেয়েই তার নিজের ঘরে চলে এল। সে তার ঘরের বিছানায় এসে চুপচাপ আবার শুয়ে পড়ল। মিলি বিছানায় শুয়ে শুয়ে ঘড়িটা দেখল। রাত এখন ৩টা ২৩ বাজে। মিলি ভাবতে লাগল সে এতরাতে তার ভাইয়ের ঘরে কেন গিয়েছিল। মিলি কিছুতেই মনে করতে পারল না যে সে কিসের জন্য তার ছোট ভাইয়ের ঘরে গিয়েছিল। অনিকের বয়স ১৮। সে কলেজে পড়ে। এত বড় একটা ছেলে মাঝরাতে নগ্ন হয়ে মেঝেতে পড়ে রয়েছে এই জিনিসটা মিলিকে ভাবাচ্ছে না। সে শুধু লজ্জিত ভাবে ভাবছে, এতরাতে সে কী করতে সেই ঘরে গিয়েছিল। তাকে কি কেউ ডেকে ছিল। কিছুই বুঝতে পারছে না মিলি। একটা ঘোরের মধ্যে যেন ডুবে যাচ্ছে সে। গভীর ঘুমে তলিয়ে যাচ্ছে।
.
পরেরদিন সকাল ৮টায় ঘুম ভাঙল মিলির। ঘুম থেকে উঠেই বুঝতে পারল তার মাথাটা প্রচুর ব্যথা করছে। হঠাৎ মিলির গতরাতের কিছু ঘটনা মনে পড়তে শুরু করল। মিলির মনে পড়ল গতরাতে হঠাৎ কটমট করে কারও কিছু খাওয়ার শব্দ শুনে তার ঘুম ভেঙেছিল। সে শব্দের পিছুপিছু তার ভাইয়ের ঘরের দরজার সামনে গেল। দরজা খুলল। আলো জ্বালাতে সুইচ চাপল। এরপর কী হয়েছিল? মিলির কিছুতেই মনে পড়ছে না। সে বিছানায় উঠে বসে কিছুক্ষণ ভাবল। তাও তার কিছুই মনে পড়ল না। মিলির হঠাৎ করে মনে হলো পুরো বিষয়টা একটা স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই না।
.
মিলিদের একতলা বাড়ি। বাড়িটিতে ৪টা ঘর। একটাতে থাকে মিলি আরেকটাতে অনিক। বাকি একটাতে তাদের বাবা-মা আর আরেকটা ঘর খালি পড়ে রয়েছে। মিলি অনার্স ২য় বর্ষে পড়ে।
.
মিলি বিছানা থেকে উঠে হাত মুখ ধুয়ে খাবার টেবিলে গেল। মা রান্নাঘরে। বাবা অনেক আগেই অফিসে চলে গেছেন। অনিকের এখন কলেছে থাকার কথা। অনিক খাবার টেবিলে বসে ডিম-পরোটা খাচ্ছে। মিলি অনিককে ঘরে দেখে প্রশ্ন করল:
-কিরে, তোর আজ কলেজ নেই?
-আছে, আপু। তবে শরীরটা খারাপ
লাগছে। তাই আজ যাব না।
.
মিলি আর অনিক দুজনেই চুপচাপ খাবারটা শেষ করল। খাবার টেবিলে আর তাদের মধ্যে কোনো কথা হলো না। মিলি খাওয়া শেষে রোজকার মতো গোসল করে তৈরি হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে গেল। মিলির সারাটা দিন স্বাভাবিক ভাবেই কাটল। প্রতিদিনের মতো রাত ১১টা বাজতেই ঘরের আলো নিভিয়ে কাথামুড়ী দিয়ে শুয়ে পড়ল। গভীর রাতে আবার সেই হাড় কামড়ে খাওয়ার কটমট শব্দে তার ঘুম ভাঙে। মিলি চমকে বিছানা থেকে উঠে। শব্দটা তার ভাইয়ের ঘর থেকেই আসছে। মিলি ধীরে ধীরে অনিকের ঘরে গিয়ে আলো জ্বালিয়েই আঁতকে উঠে লজ্জা পেয়ে তার শোবার ঘরে চলে আসে। মিলির লজ্জায় চোখ-মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। সে ভাবছে এত রাতে একটা ছেলে নগ্ন হয়ে শুয়ে থাকতেই তো পাড়ে। কিন্তু সে শুধু শুধু এতরাতে তার ভাইয়ের ঘরে কেন গেল। মিলি কিছুতেই মনে করতে পারে না তার ভাইয়ের ঘরে যাওয়ার কারণ। কোনো একটা মায়া যেন তাকে আচ্ছন্ন করে রয়েছে। মিলি ঘুমিয়ে পড়ে।
.
আবার প্রচন্ড মাথা ব্যথা নিয়ে মিলির ঘুম ভাঙে সকাল আট টার কিছু পরে। ঘুম ভাঙতেই মিলির মনে পড়ে গতরাতের ঘটনা। মাঝরাতে অনিকের ঘর থেকে হাড় কামড়ে খাওয়ার শব্দে তার ঘুম ভাঙে। সে সাথে সাথেই অনিকের ঘরে গিয়েছিলো। আলো জ্বালিয়ে ছিলো। এরপর কী হলো? মিলি কিছুই মনে করতে পারছে না। এটা স্বপ্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। টানা ২ দিন একই রকম স্বপ্ন দেখা অস্বাভাবিক কিছুই না।
.
মিলি হাত-মুখ ধুয়ে খাবার টেবিলে গিয়ে দেখল অনিক আজও কলেজ যায়নি। বাবার এই সময়ে অফিসে থাকার কথা। তিনিও আজ খাবার টেবিলে অনিকের পাশে বসেই নাস্তা করছেন। মিলি কিছুটা অবাক হয়ে চেয়ারে বসতে বসতে তার বাবাকে প্রশ্ন করল, বাবা, আজ তুমি অফিস যাও নি? প্রশ্নটা শুনে অনিক আর বাবা দুজনেই একসাথে হেসে উঠল। বাবা বললেন, গাধা মেয়ে। শুক্রবারে আবার কিসের অফিস? মিলি ভূলেই গিয়েছিল যে আজ শুক্রবার। সপ্তাহে এই একদিনই সবার একসাথে গল্প করে করে খাওয়া হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই মিলির মা আরও বেশ কিছু গরম লুচি নিয়ে খাবার টেবিলে হাজির হলেন। সবাই গল্প করতে করতেই সকালের নাস্তা শেষ করলেন। খাওয়া শেষে অনিক ও মিলি যার যার ঘরে চলে গেল। মিলি নিয়মকরে প্রতি শুক্রবারে তার খালার বাড়িতে বেড়াতে যায়। তাদের বাড়ি থেকে তার খালার বাড়ি মাইল ২ দুরে। সারাদিন সেখানে খালাতো বোন আর খালার সাথে কাটিয়ে সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরে। মিলি তৈরি হয়ে নিল। বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে অনিকের ঘরে একবার গেল। অনিক বিছানায় শুয়ে শুয়ে কোনো একটা বই পড়ছিল। মিলিকে ঘরে ঢুকতে দেখে দ্রুত বইটা বালিশের নিচে লুকিয়ে রাখল। মিলি বিষয়টা লক্ষ করল। অনিককে বলল, কীরে সারাদিন কী ঘরেই পড়ে থাকবি? চল খালার বাড়ি থেকে ঘুরে আসি। খালা বলেছে অনেকদিন তোকে দেখে না। তাই এবার তোকে নিয়ে যেতে। অনিক হাই তুলতে তুলতে বলল, তুমি যাও আপু। আমার ভালো লাগছে না। অন্য একদিন গিয়ে দেখে আসব।
.
মিলি একাই তার খালার বাড়িতে চলে যায়। সারাদিন সেখানে কাটিয়ে সন্ধ্যাঁয় বাড়ি ফিরে।
রাতে সবাই এক সাথে খাবার খায়। মিলি সারাদিনে কী কী করল তার গল্প দিয়ে আড্ডার আসর শুরু করে। গল্প শেষে প্রায় ১২টার দিকে সবাই ঘুমাতে যায়।
.
মধ্যরাতে অনিকের ঘর হতে আবার সেই হাড় কামড়ে খাওয়ার শব্দ ভেসে আসতে থাকে। মিলি আবার শুয়া থেকে উঠে বেশ কিছুক্ষণ ধ্যান ধরে বসে থাকে। সে বোঝার চেষ্টা করে শব্দটা তার মনের ভূল কিনা। না, সে স্পষ্ট কটমট শব্দ শুনছে। গত ২ রাতেও সে এইরকম শব্দ শুনেছে। কিন্তু শব্দের পিছুপিছু অনিকের ঘরে যাওয়ার পরের আর কিছু তার মনে থাকে না। মিলি এটাও বোঝার চেষ্টা করে সে কোনো স্বপ্ন দেখছে কিনা। মিলির মনে হচ্ছে না এটা কোনো স্বপ্ন। স্বপ্ন হয় সাদা-কালো। মিলি আশেপাশে অনেক রং ই দেখছে। এছাড়া স্বপ্নে এতটা স্পষ্টভাবে চিন্তা করা যায় না। মিলি ভাবে সকাল হলে সে হয়তো আবার রাতের এই ঘটনাটা ভূলে যাবে। তাই সে তার ঘরেরই পড়ার টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। বইয়ের তাক থেকে একটা সাদা খাতা ও কলম হাতে নেয়। খাতার একটি পৃষ্ঠাতে সে লিখে, “এখন মধ্যরাত। ঘড়িতে ৩টা ২১ বাজে। আমি অনিকের ঘরে যাচ্ছি।” খাতাটা খোলা অবস্থাতেই টেবিলের উপর রেখে দেয় মিলি। সে কাল সকালে যখন ঘুম থেকে উঠবে তখন যদি দেখে টেবিলে খাতাটি রয়েছে এবং খাতাটিতে কিছু লেখা রয়েছে তাহলে এটা স্বপ্ন না বাস্তব। অন্যথায় এটা স্বপ্ন। শব্দটা এখনও কমেনি। একই রকম ভাবে কটমট শব্দ ভেসে আসছে সেই ঘর থেকে। মিলি ধীরে ধীরে অনিকের ঘরে যায়। আলো জ্বালতেই অনিকের নগ্ন দেহ দেখে আঁতকে উঠে সে। লজ্জা পেয়ে আলো নিভিয়ে দ্রুত আবার তার ঘরে ফিরে আসে। লজ্জায় তার মরে যেতে ইচ্ছা করছে। সে ভাবে এতরাতে এত বড় একটা ছেলে তার ঘরে নগ্ন হয়ে ঘুমোতেই পারে। কিন্তু আমি তার ঘরে গেলাম কেন? মিলি কিছুতেই মনে করতে পারে না সে অনিকের ঘরে কেন গিয়েছিল। হঠাৎ তার চোখ যায় পড়ার টেবিলের উপরে একটি খাতায়। মিলি খাতাটি হাতে নিয়ে চমকে উঠে। এখানে লিখা, ” এখন মধ্যরাত। ঘড়িতে ৩টা ২১ বাজে। আমি অনিকের ঘরে যাচ্ছি।” মিলি কিছুতেই মনে করতে পারে না এই লেখাটি সে কখন লিখেছে, কেন লিখেছে। শুধু ভাবে, ছিঃ ছিঃ এটা আমি লিখেছি! অনিক যদি এই লেখাটা পড়ে তাহলে কী ভাববে! লজ্জায় মিলি খাতার সেই পৃষ্ঠাটি ছিড়ে গুলটি করে জানালা দিয়ে ছুড়ে বাড়ির বাহিরে ফেলে দেয়। খাতাটা আর কলমটা আবার বইয়ের তাকে তুলে রাখে। মিলির মাথা এলোমেলো হয়ে যায়। সে কাথামুড়ী দিয়ে আবার শুয়ে পড়ে। মুহুর্তেই গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় সে।
.
আবার সেই মাথা ব্যাথা নিয়েই মিলির ঘুম ভাঙে। ঘুম ভাঙতেই গতরাতের ঘটনা অস্পষ্ট ভাবে তার মনে পড়তে থাকে। সে কটমট শব্দশুনে ঘুম থেকে উঠেছিল। নানান বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করেছিল। পড়ার টেবিলের উপর একটা খাতায় কিছু একটা লিখেও রেখে ছিল সে। এরপর অনিকের ঘরের দিকে যায়। আলো জ্বালায়। তারপর? আর কিছুই মনে পড়ে না মিলির। গতরাতের ঘটনাটা যদি বাস্তব হয় তাহলে সেই খাতাটা এখন টেবিলে থাকার কথা। এত সকালে তার ঘরে কেউ আসে না। মিলি দেখল টেবিলে কোনো খাতা নেই। সেই খাতাটা বইয়ের তাকেই রয়েছে। খাতাটা খুলে মিলি একটার পর একটা পৃষ্ঠা উল্টায়। কোনো লেখাই সে খুঁজে পায় না। মিলি এবার নিশ্চিত হয় এই পুরো ঘটনাটাই তাহলে একটা স্বপ্ন ছিল।
.
মিলি যেই বিছানা থেকে উঠতে যাবে দেখল অনিক তার ঘরের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে কিছু একটা বলতে এসেছে সে। মিলি প্রশ্ন করল, কিরে কিছু বলবি? অনিক ধীরে ধীরে মিলির বিছানায় এসে বসে। আমতা আমতা করে বলে, আপু একটা কথা কিছুদিন ধরেই তোমাকে বলবো বলবো ভাবছি। কিন্তু কথাটা বেশ অদ্ভুত। তাই কথাটা বলে উঠতে পারছি না। কয়েকদিন ধরেই হঠাৎ মাঝরাতে হাড় কামড়ে খাওয়ার মতো কটমট শব্দ শুনে আমার ঘুম ভাঙে। শব্দটা আসে তোমার ঘর থেকে। আমি ধীরে ধীরে তোমার ঘরে আসি। আলো জ্বালাই। এরপর কী হয় সকালে আমার মনে থাকে না। বিষয়টা কী স্বপ্ন নাকি বাস্তব এটাই বুঝতে পারছি না!

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত



বিষয়: #  #  #


আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)