বুধবার ● ২৭ মার্চ ২০২৪
প্রথম পাতা » সাহিত্য রম্যগল্প » #হিসেবের_খাতা
#হিসেবের_খাতা
একদিন রাতে ভাইয়া ভাবীকে বললো,’
নীলা, আমি ভাবছি চাকরিটা করবো না।
চাকরি বাকরি আমার ভালো লাগে না একদম!
বেতনও কম।
তারপরে একটু ত্রুটি হলে যা বকাঝকা শুনতে হয়!’
ভাবী বললেন,’ চাকরি ছেড়ে দিলে চলবা কীভাবে? ‘
ভাইয়া বললো,’ ভাবছি লোন নিবো।
লোন নিয়ে বিজনেস করবো।’
ভাবী শুনে বললেন,’
লোন নিয়ে বিজনেস করতে হবে না।
লোন নিয়ে বিজনেস করে কেউ সুবিধা করতে পারে না।
বড় ভাইয়া করলো না একবার। দু’ বছরও টিকলো না।’
ভাইয়া খানিক সময় চুপ করে রইলো।
তারপর বললো,’ নীলা, কিছু মনে যদি না করো তবে বাবাকে বলো কিছু টাকা দিতে।
আমি এক বছর পরেই ব্যাক দিবো টাকা। কথা দিলাম।’
ভাবী চুপ হয়ে গেলেন। কিছু বললেন না।
মা কীভাবে যেন কথাটা শুনে ফেললেন।
সঙ্গে সঙ্গে মা ভাইয়ার ঘরে ঢুকে বললেন,’
তুই একটু আগে কী বললি বউয়ের কাছে?’
ভাইয়া খানিক চমকেই উঠলো।
আমতা আমতা করে বলবো,’ কী বলবো? গল্প করছিলাম।’
মা রাগ দেখিয়ে বললেন,’ না।
তুই তার বাপের কাছ থেকে টাকা এনে দিতে বলেছিস।
এতো বড় সাহস কে দিয়েছে তোরে?
এতো এতো পড়াশোনা শিখিয়েছি তোকে যৌ*তুক চাইবার জন্য তাই না?’
ভাইয়া বললো,’ এসব কী বলছো মা? আমি যৌ*তুক কখন চাইলাম?’
ভাইয়ার কথার সঙ্গে সঙ্গে নীলা ভাবীও বললেন,’ না মা।
সে তো যৌতুক চায়নি।
বাবার কাছ থেকে ধার এনে দিতে বললো শুধু।
এক বছর পর নাকি দিয়ে দিবে।’
মা ধমক দিলেন ভাবীকে। বললেন,’
তুমি যৌ*তুকের কী বুঝো?
এই ছেলে এক বছর পর তোমার বাবার টাকা ফেরত দিবে কীভাবে?
কোত্থেকে এনে দিবে টাকা?’
ভাবী কিছু বলার আগেই ভাইয়া বললো,’ কেন? ব্যবসা করে দিবো! ‘
মা ভাইয়াকে শক্ত করে ধমক দিলেন। বললেন,’ চুপ কর বেয়াদব!
তুই ব্যবসা করে টাকা দিবি!
আট ঘণ্টা ডিউটির চাকরিটা করতে পারস না তুই ,
আর বিজনেস করে দুনিয়া উল্টে ফেলবি!
বিজনেস করার ইচ্ছে থাকলে বাপের টাকা দিয়ে কর গিয়ে।
বাপের বেটা হলে তোর বাপের কাছে গিয়ে বল দেখি বিজনেস করার টাকা দেয়ার জন্য।
অন্যের বাপ তোকে টাকা দিবে কেন?
নীলার বাপ কী তোর জন্য টাকা পয়সা উপার্জন করেছে নাকি?
টাকা খরচ করে তোর বউকে পেলে পুষে বড় করেছে।
পড়াশোনা করিয়েছে। বিয়ে দিয়েছে।
এখন মেয়ের জামাইকেও সে পালবে নাকি? ‘
ভাইয়া মিইয়ে গেল একেবারে।
তার মুখে কোন কথা নেই।
মা এবার ভাবীকে বললেন,’
আর কখনো যদি তোমার কাছে একটা পয়সা চায় সঙ্গে সঙ্গে আমায় বলবে তুমি।
আর তুমি যদি গোপনে একটা পয়সা বাপের কাছ থেকে এনে দাও ওকে
তবে তুমি এই বাড়িতে এক সেকেন্ড থাকতে পারবা না।
সব সময় একটা কথা মনে রাখবা।
যে মানুষ সত্যি সত্যি টাকা পয়সা উপার্জন করবে সে নিজের পরিশ্রমে নিজের উপার্জিত ক্যাশ ক্যাপিটাল দিয়েই করবে।
পরের পয়সা দিয়ে কেউ কখনো বড় হতে পারে না ।
সুবিধা করতে পারে না।
পরের পয়সার প্রতি মোহ যার সে সব সময় পরের সাহায্য নিয়েই চলতে চায়।
তার মেরুদন্ড আস্তে আস্তে ভেঙে যায়।
বাঁকা হয়ে পড়ে।
এই জীবনে কখনোই সে আর উঠে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে না।
কিন্তু নিজের শ্রম দিয়ে, কষ্ট করে অগুনতি মানুষ বড় হয়েছে।এর নজির আছে।
পরের পয়সা দিয়ে তা বাড়িয়ে বলিয়ে কেউ বড় হয়েছে এরকম নজির নাই।
তো তুমি যদি আজ তোমার বাবার কাছ থেকে ওকে পয়সা এনে দাও।
দেখবা বছর না ঘুরতেই এই টাকা সে হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়েছে।
পরের টাকা তো।পরের টাকা নষ্ট করলে কখনোই মায়া হয় না।বুক কাঁপে না।
কিন্তু নিজের ঘামে অর্জন করা একটা পয়সা নষ্ট করলেও বুক কাঁপে। কষ্ট লাগে।
এই জন্যই বললাম,
সাহস থাকলে তার বাবার কাছে গিয়ে বলুক টাকা দিতে ।
আমি জানি এই সাহস আমার ছেলের নাই।
সাহস করে গেলেও ফল হবে না।
তার বাবা এক পয়সাও তাকে দিবে না।
কারণ তার বাবা একেকটা পয়সা তার রক্ত পানি করে কামিয়েছে।
রক্ত পানি করা টাকাকে এভাবে নষ্ট করতে কেউই দিবে না।’
ভাইয়া কোন কথা বললো না।
চুপচাপ ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
ভাবী বললেন,’ মা, আপনি শুধু শুধু ওকে এসব বললেন।
ওর মন খারাপ হয়েছে খুব!’
মা ভাবীর কাছে বসলেন।
তার হাত মুঠো করে ধরে বললেন,’
মাগো, তুমি তারে ভালোবাসো।
তার প্রতি তোমার মনে ভীষণ দূর্বলতা আছে।
এই জন্য তার প্রতি এখন তোমার একটা দরদ কাজ করছে।
মনে হচ্ছে ও যা চাইছে তা ওকে দিয়ে দিলেই তো হয়।
কিন্তু আমি জানি ওকে এটা দিয়ে দিলে কি হবে।
ও এই টাকা দিয়ে বড় জোর দু বছর চলবে।
ব্যবসা টিকবে না।ক্যাশ ফুরিয়ে যাবে।
তারপর সে চলবে কীভাবে?
উপায় না দেখে আবার টাকা চাইবে।
প্রথমবেলা তুমি টাকা এনে দিবে।
এটাতে তুমি কষ্ট পাবে না।
তোমার বাবাও তেমন কষ্ট পাবে না।
কিন্তু বার বার যখন এটা হবে তখন?
এই জন্য শুরুতেই এটা আমি বন্ধ করে দিলাম।
এতে করে আমার ছেলেও নষ্ট হবে না।
তুমি কিংবা তোমার বাবাও কষ্ট পাবে না।
আমি এটা ভালো করিনি বলো?’
ভাবী বললেন,’বুঝেছি মা।’
ভাইয়া দু’ চারদিন অফিসে গেলো না। রাগ করে রইলো ।
তারপর আবার অফিস যেতে শুরু করলো।
বেতন তার সামান্য বাড়লো।
কিন্তু তার প্রবল ইচ্ছে নিজের মতো করে ব্যবসা করবে।
তাই সে বেতনের টাকা থেকে কম খরচ করে ক্যাশ বাড়াতে লাগলো।
একটা সময় তার ভালো ক্যাশ হলো।
আম্মার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে সে ব্যবসা শুরু করলো।
দু’ চার বছর ব্যবসা করে এখন সে ভালো ব্যবসায়ী।
সে এখন টাকা খরচ করে হিসেব করে।
সংসারের বাজার করে গোনে গোনে।
বেহিসাবি একটা পয়সাও খরচ করে না।
একদিন মা ভাবীকে বললেন,’
দেখেছো নিজের কষ্টে উপার্জিত পয়সার প্রতি মানুষের কতো বেশি দরদ?’
ভাবী বললেন,’ মা, আপনি সেদিন ঠিক কাজটিই করেছিলেন।
এই কাজটা যদি সেদিন না করতেন তবে ওর এই পরিবর্তন হতো না।’
‘
লেখকঃ অনন্য শফিক
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত
বিষয়: #খাতা #হিসেবের