মঙ্গলবার ● ২৬ মার্চ ২০২৪
প্রথম পাতা » অর্থ-বাণিজ্য » খেলাপি ঋণে ডুবতে বসেছে ফনিক্স ফাইন্যান্স
খেলাপি ঋণে ডুবতে বসেছে ফনিক্স ফাইন্যান্স
মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র ১ দিন আগে বরখাস্ত করা হয় ফনিক্স ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এস এম ইন্তেখাব আলমকে। গত বছরের ডিসেম্বরের ২৮ তারিখে তিনি যখন এই বরখাস্তের আদেশ পান তখন তার চাকরির মেয়াদ আছে আর এক কর্মদিবস।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে এই নির্দেশনা দেয়া হয়।
এর আগে ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভস ডিপার্টমেন্ট (এফআইসিএসডি) পরিদর্শনে নানান অনিয়ম খুঁজে পায়।
তবে প্রশ্ন উঠেছে মেয়াদ শেষের মাত্র ১ দিন আগে বরখাস্ত করা নিয়ে। যদিও এই নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলছে না।
নির্দেশনায় ইন্তেখাব আলমের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন ডিএমডি মোহাম্মদ সাইদুজ্জামান। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন।
তবে চেয়ারে বসেও ভারপ্রাপ্ত এমডি স্বস্তিতে নেই। গত ২৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক চিঠি দেয় (স্মারক নং ডিএফআইএমসি/১০৫৪/৫৫২০২৪-২৮৯) ফনিক্স ফাইন্যান্সকে। চিঠিতে ঋণ গ্রহীতা এস এ অয়েল রিফাইনারি লি., আমান সিমেন্ট, মিলস লিমিটেড ইউনিট-২, মনোস্পুল পেপার ম্যানোফ্যাকচারিং কোম্পানি লি., মাহিন এন্টারপ্রাইজ, ম্যাক স্টিল ইন্ড্রাস্ট্রিজ এবং গ্রাহক নাজমা পারভিন, ফারহান মোশাররফ এর ঋণ অনিয়মের সাথে কারা জড়িত তা জানতে চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে তা প্রমাণসহ বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই চিঠির প্রেক্ষিতে ডিএমডি এবং প্রিন্সিপাল ব্রাঞ্চের প্রধান শিরিণ আখতারকে শোকজ লেটার দিয়েছে ফনিক্স ফাইন্যান্স। এই চিঠি দিতেও তারা সময় নিয়েছে প্রায় ১ মাস। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক ২৩ জানুয়ারি চিঠি দিলেও ফনিক্স ফাইন্যান্স ডিএমডিকে শোকজ দিয়েছে ১৮ ফেব্রুয়ারি (স্মারক নং PFIL/HQ/HRD/2024/0335)।
বিষয়গুলো নিয়ে জানতে একাধিকবার ফনিক্স ফাইন্যান্সে গেলেও ভারপ্রাপ্ত এমডির স্বাক্ষাৎ মিলেনি। অভ্যর্থনা কক্ষ থেকে জানানো হয়, তিনি ক্লায়েন্ট ভিজিটে আছেন। বিষয়টি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির অন্য কেউ কথা বলতে রাজী হন নি।
তবে প্রতিষ্ঠানের কোম্পানি সেক্রেটারি সাবিরুল হক চৌধুরী বিবার্তাকে বলেন, আমরা ঋণ খেলাপি নিয়ে সমস্যার মধ্যে আছি। তবে আশা করছি ২০২৪ সালের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আবার আমরা শেয়ার হোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারব।
এই বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেসবাউল হককে বিবার্তার পক্ষ থেকে ফোন করা হয়। তবে তিনি কল রিসিভ করেন নি। হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি প্রতিউত্তর দেননি।
তবে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৮ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকে এই বিষয়ে বৈঠক রয়েছে। সেখানেই পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।
প্রসঙ্গত, ফনিক্স ফাইন্যান্স পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান। ১৬৬ কোটি টাকা পেইড আপের এই প্রতিষ্ঠানে ১৬ কোটি ৫৯ লাখ শেয়ার রয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য মতে, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত, পরিচালকদের শেয়ার রয়েছে ২৯.১৭ শতাংশ, ইনস্টিটিউটের হোল্ডিং রয়েছে ২৩.০৫ শতাংশ এবং পাবলিক শেয়ার রয়েছে ৪৭.৭৪ শতাংশ।
২০০৭ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া ফনিক্স ফাইন্যান্স এর অথোরাইজড ক্যাপিটাল ৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে লং টার্ম লোন ৪১৮.৩ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটিতে ২২ কোটি ৩ লাখ টাকার নেগেটিভ ব্যালেন্স রয়েছে।
২০১৯ সালের পর প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়নি। ২০১৯ সালে ৬ শতাংশ, ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭ সালে প্রতিবছর ২০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে তারা। তবে ২০১৮ সালেও কোনও ডিভিডেন্ড দেয়নি।
এ ক্যাটাগরির ফনিক্স ফাইন্যান্সের আজ ২৫ মার্চ, সোমবার পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে ৮ টাকা ৮০ পয়সায়। যদিও গত ৫২ সপ্তাহে এর সর্বোচ্চ দর ছিল ১৬ টাকা ৩০ পয়সা।
ফনিক্স ফাইন্যান্সের সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জের কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম জানান, তিনি ছুটিতে আছেন। কাগজপত্র না দেখে তিনি মন্তব্য করতে চান না। বিএসইসি’র কমিশনার অধ্যাপক শেখ সামছুদ্দিন আহমেদকে ফোন করলে তিনি কল রিসিভ করেননি এবং ক্ষুদে বার্তার উত্তর দেননি।
বিষয়: #ঋণ #খেলাপি #ফনিক্স #ফাইন্যান্স