শিরোনাম:
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

Somoy Channel
শুক্রবার ● ২২ মার্চ ২০২৪
প্রথম পাতা » অনুপ্রেরণা (গল্প) » #ছোটগল্প_#সমাপ্ত
প্রথম পাতা » অনুপ্রেরণা (গল্প) » #ছোটগল্প_#সমাপ্ত
৫৭ বার পঠিত
শুক্রবার ● ২২ মার্চ ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

#ছোটগল্প_#সমাপ্ত

#ছোটগল্প_#সমাপ্তআমি বিয়ে করি ২০০১ সালে। আমার মায়ের খুব ইচ্ছা ছিল, আর্থিক অবস্থা যেমনই হোক, অসম্ভব একজন রুপবতী মেয়েকে তার ছেলের জন্য বউ করে আনবেন।
তিনি সে ইচ্ছে পূরণ করেছেন।
আমার মাও বেশ সুন্দরী ছিলেন। মা পৈত্রিক সূত্রে সুন্দরী। আমার নানীও বেশ রুপবতী ছিলেন। মায়ের মুখে শুনেছি, আমার নানীকে দেখে নানাভাই পাগল হয়ে গিয়েছিলেন এবং প্রভাব প্রতিপত্তি খাটিয়ে অনেকটা জোর করে বিয়ে করেছিলেন!
আমার মা যখন আমার বউ পছন্দ করলেন, আমি প্রচন্ড রকম বেঁকে বসলাম। আমার শ্বশুর ছিলেন পুলিশ অফিসার। আমি পুলিশের সাথে আত্বীয়তা করতে চাইলাম না। কেননা আমি শুনেছিলাম, ‘পুলিশরা কখনোই ভালো হয় না, এরা ঘুষখোর, দূর্নীতিবাজ হয়! অসৎ হয়!!’
মায়ের জোড়াজুড়িতে একদিন শুধুমাত্র মাকে খুশি করার জন্যই মেয়ে দেখতে গেলাম। আগেই ডিসিশন নিয়ে রেখেছিলাম, মেয়ে যতোই সুন্দরী হউক, বাসায় এসে বলবো, ‘মেয়ে পছন্দ হয় নাই!’
.
একদিন ছোটবোন আর ওর স্বামীকে নিয়ে মেয়ে দেখতে গেলাম।
মধ্যবিত্ত পরিবার, তারপরও যথেষ্ট আপ্যায়ন করলো। মেয়ে দেখানোর সময় অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, সাথে যেসব মেয়ে এসেছে, সবাই হিজাব পরা। এমনকি ছোট বাচ্চারা সহ!
পরে কথায় কথায় জানলাম, আমার শ্বশুর একজন পরহেজগার মানুষ। পুলিশে থেকেও তিনি নিয়মিত নামাজ রোজা করেন।
সবাই তার সম্পর্কে ভালো ধারণা দিল।
আমি বুঝলাম, পুলিশ সম্পর্কে আমার ধারনা ভুল ছিল। ওখানে চাকরি করলেই সবাই ঘুষখোর, দূর্নীতিবাজ হয় না। কেউ কেউ ভালোও হয়।
সততা এবং অসততা, দুটোই পারিবারিক শিক্ষা।
মেয়ে দেখে আমার পছন্দ হয়ে গেল। পণ করে গিয়েছিলাম, এই মেয়ে যতোই সুন্দরী হউক, এখানে আমি রাজি হবো না। কিন্তু সবার আগে আমিই রাজি হয়ে বসে আছি!
ছোটবোন বললো,
- ‘ভাইয়া, মেয়ে পছন্দ হয়েছে?’
আমি বললাম,
- ‘তোর পছন্দ হয় নাই?’
- ‘হয়েছে, কিন্ত ভাইয়া, তুই তো পুলিশের মেয়ে পছন্দ করবি না, মাকে বলি বাদ দিয়ে দিতে!’
প্রচন্ড একটা ধমক দিয়ে বললাম,
- ‘এই তোদের একটা সমস্যা। সবকিছুতেই জাজমেন্ট দিয়ে বসিস? কেন, পুলিশ কী মানুষ না? সব পুলিশ কী খারাপ হয়?’
কথা শুনে বোন এবং তার স্বামী আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো!
.
মা কথা দিয়েছিলেন, বউকে স্বর্ণ দিয়ে মুড়িয়ে আনবেন।
আমি তখন সবেমাত্র একটা ব্যবসা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছি। বিয়েতে তেমন খরচাপাতির বিপক্ষে আমি। ছোটখাটো আয়োজন করতে চাইলাম। মা আমাকে না জানিয়ে বিশাল আয়োজন করে ফেললেন!
আমাদের সংসারে মায়ের কথাই শেষ কথা। মহা ধুমধাম করে একদিন বিয়েটা সেরে ফেললাম।
.
বিয়ের কয়েকদিন পর একদিন মা আমাকে ডেকে আফসোস করে বললেন,
- ‘বউকে সব গয়না বানিয়ে দিয়েছি, শুধু মাথার তাজটা দিতে পারি নাই। আমি তোর শ্বশুরকে কথা দিয়েছিলাম,,বউমাকে তাজ পরিয়ে আনবো।’
আমি বললাম,
- ‘মা, বিয়ের দিন তো বউয়ের মাথায় তাজ দেখেছি!’
- ‘ওটা আসমার বিয়ের তাজ। তোর ব্যবসাটা দাঁড়িয়ে গেলে বউমাকে একটা তাজ বানিয়ে দিস তো, বাবা।’
বলাবাহুল্য, আসমা আমার ছোটবোন।
আমি বললাম,
- ‘আচ্ছা মা, বানিয়ে দেবো।’
বিষয়টা আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। মা ও আর এই বিষয়টা নিয়ে কিছু বলেননি। বউও না।
.
এর তিন বছর পর।
আমরা পরিবারের সবাই একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছি। আমার ছোটবোন মাথায় তাজ পরেছে। আমি লক্ষ্য করলাম, আমার বউ বারবার তাজের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। মাও বিষয়টা খেয়াল করলেন, তবে কোন মন্তব্য করলেন না।
আমি তখনও ব্যবসাটা ঠিকঠাক দাঁড় করাতে পারি নাই, আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছি, এটা আমার মায়ের মাথায় ছিল।
কিন্তু বিষয়টা আমার কলিজায় গিয়ে লাগলো।
.
একদিন হঠাৎ মাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য ল্যাব এইড হাসপাতালে নিয়ে গেলাম, ওখান থেকে বসুন্ধরা সিটি মার্কেটে। মা অবাক হয়ে বললেন,
- ‘এখানে নিয়ে এলি কেন?’
আমি বললাম,
- ‘তুমি ওয়াদা করেছিলে, তোমার বউমাকে তাজ বানিয়ে দিবে,দাওনি। তোমার ওয়াদা রক্ষা করা উচিত না?’
মা আমতা আমতা করে বললেন,
- ‘ব্যবসাটা গুছিয়ে নে, তারপর না হয়…’
আমি মায়ের হাত ধরে বললাম,
- ‘এসব চিন্তা করলে আর কখনোই তাজ কেনা হবে না। তোমার বউমা তাজ পরবে কখন? তোমার মতো বুড়ি হয়ে গেলে?’
ওয়াদা রক্ষা হচ্ছে বলে মা অসম্ভব খুশি হলেন। তিনি ধার্মিক মানুষ ছিলেন। বোরকা পরে চলাফেরা করতেন। বাসায়ও সব সময় ঘোমটা দিয়ে থাকতেন।
সারাদিন এই দোকান সেই দোকান ঘুরে অসম্ভব সুন্দর একটা তাজ পছন্দ করলেন। আমি যে বাজেট কল্পনা করেছিলাম, দাম তারচেয়ে বহুগুণ বেশি। তিনি তাজ পছন্দ করেই ইতস্ততভাবে আমার দিকে চাইলেন।
আমি ‘বিসমিল্লাহ’ বলে কিনে ফেললাম।
মা বাসায় এসে নিজহাতে তার বউমাকে তাজ পরিয়ে দিয়েছিলেন। বউ আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলো। তাকে এতো খুশি হতে আর সারা জীবনেও দেখি নাই।
মা ও খুব খুশি, ওয়াদা রক্ষা করতে পেরেছেন বলে।
সেদিনই বউ আমাকে প্রথম বলেছিল,
- ‘ছোটবেলা থেকেই তার তাজ পরার অনেক শখ। সে ভেবেছিল, এই শখ কোনদিনই পূরন হবে না!’
অনেক দাম দিয়ে কেনা সেই শখের তাজ বোধহয় তিন চারবারের বেশি পরে নাই। তারপরও মেয়েদের শখ বলে কথা!
.
এর দশ বছর পর ব্যবসা যখন মোটামুটি দাঁড়িয়ে গেছে, আমার অতি ঘনিষ্ঠ একজন বন্ধু আমার সাথে বেঈমানি করে বসলো।
সে আমার ব্যবসায়িক পার্টনার ছিল। বেশকিছু টাকা মেরে দিয়ে ব্যবসায় লালবাতি ধরিয়ে দিল। আমি একা একা দুই বছর ব্যবসা টেনে নিতে গিয়ে আরও লসের পাল্লায় পরলাম।
কেউ আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলো না! আমি একটা জমি বিক্রি করে আবার ব্যবসা দাঁড় করালাম। ব্যবসা যখন দাঁড়িয়ে যাচ্ছে, পরিবেশের দোহাই দিয়ে সরকার আমাদের পুরো ব্যবসাই বন্ধ করে দিলো!
এইবার আমার অবস্থা কাহিল হয়ে গেলো। আমি চারিদিক অন্ধকার দেখতে শুরু করলাম। নতুন ব্যবসা শুরু করার মতো আর্থিক অবস্থা তখন আমার নাই।
এই অবস্থায় আমার পরহেজগার মা একদিন স্ট্রোক করলেন এবং এক সপ্তাহের মাথায় আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেলেন!
মা চলে যাওয়ার পর আমি চোখে সর্ষেফুল দেখতে শুরু করলাম। অনেক ধনী আত্বীয় থাকার পরও কেউ আমার পাশে এসে দাঁড়ালো না।
একদিন হঠাৎ করে বেশ কিছু টাকা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বউ বললো,
- ‘নতুন করে শুরু কর। পাশে আছি!’
আমি বেশ অবাক হলাম, সে এতো টাকা পেল কই?
চাপাচাপি করার পর জানালো, ‘সে তার বাবার মাধ্যমে সমস্ত গয়না বিক্রি করে দিয়েছে, তার এক আত্বীয়ের স্বর্নের দোকান আছে। তার বাবার কাছ থেকেও বেশ কিছু টাকা ধার হিসেবে নিয়েছে।’
আমি দোকানে গিয়ে তার গয়না ফেরত আনতে চাইলাম, সে রাজি হলো না। বউ আমার হাত ধরে বললো,
- ‘তোমার যখন অনেক টাকা হবে, আবার নতুন করে বানিয়ে দিও!’
আমি আনন্দে কেঁদে ফেললাম।
.
আমি আবার একটা নতুন ব্যবসা দাঁড় করালাম। আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। যদি সেদিন বউ পাশে এসে না দাঁড়াতো, আমি অথৈ জলে ভেসে যেতাম।
.
একদিন আলমারি খুলে দেখি, গয়নার বাক্সে শুধু তাজটা পরে আছে। আর সব খালি!
বউ বললো,
- ‘আমার শ্বাশুড়ি আমাকে অনেক পছন্দ করে এই তাজটা কিনে দিয়েছেন, এটা আমি নষ্ট করবো না। এটা আমি স্মৃতি হিসেবে আমার মেয়েকে দিয়ে যাবো!’
আমার চোখে পানি এসে গেলো।
এখন আর সে স্বর্নের গয়নার প্রতি আগ্রহী নয়। আমি কিনে দিতে চাইলেও সে রাজি হয় না।
আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, ‘আমরা যতোখানি বউকে অবহেলা করি, ঠিক ততোখানি অবহেলাই ফেরত পাই। কিন্ত বউকে যতোখানি ভালবাসা দেই, তার বহ গুন বেশি ফেরত পাই!’

#হানিফ_ওয়াহিদ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত



বিষয়: #  #


আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)