শিরোনাম:
ঢাকা, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

Somoy Channel
বৃহস্পতিবার ● ১৪ মার্চ ২০২৪
প্রথম পাতা » বিশেষ প্রতিবেদন » অসাধু ব্যবসায়ীদের কঠোর হস্তে দমন করুন
প্রথম পাতা » বিশেষ প্রতিবেদন » অসাধু ব্যবসায়ীদের কঠোর হস্তে দমন করুন
১৫১ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার ● ১৪ মার্চ ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

অসাধু ব্যবসায়ীদের কঠোর হস্তে দমন করুন

দেওয়ান ফয়সল :
অসাধু ব্যবসায়ীদের কঠোর হস্তে দমন করুনলেখার শুরুতেই সম্মানিত পাঠকদের জানাচ্ছি রামাদানুল মোবারক। আমাদের সকলকে পবিত্র রমজান মাসের ৩০টি রোজা, আল্লাহ যেভাবে খুশি থাকেন সে ভাবেই রাখার তৌফিক দান করুন, আমীন।

পবিত্র সিয়াম সাধনার মাস রমজান শুরু হয়ে গেছে। রমজান মাস শুরু হওয়ার আগে থেকেই বাংলাদেশ তথা বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর জনগণের মনের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যেতে দেখা যায়। সারা বছরের মধ্যে এই একটি মাস খুবই ফজিলতের। তাই এ মাসে মুসলমানরা চেষ্টা করে আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামীনকে খুশী করার জন্য এবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকতে। পাপ মোচনের জন্য আল্লাহ পাকের কাছে দু’হাত তুলে কান্নাকাটি করে।এই পরিত্র রমজান মাসে যাতে দেশের জনগণ শান্তিতে রোজা রাখতে পারে সে জন্য কাঁচামাল সহ নিত্যপ্রয়োজনী দ্রব্যের দাম জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সরকারকে যেমন উদ্যোগ নিতে হবে, তার পাশাপাশি জনগণ, স্থানীয় প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রতিবছরই দেখা যায়, কিছু সংখ্যক অসাধু ব্যবসায়ী রমজান মাস আসার আগেই চাল, ডাল, চিনি সহ বিভিন্ন দ্রব্যমূল্য এমন ভাবে আগে থেকেই মজুত করে রাখে, যাতে রমজান শুরু হওয়ার সাথে সাথেই মূল্য বৃদ্ধি করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করতে পারে। যার ফলে দেশের গরীব, অসহায় সহ মধ্যবিত্ত পরিবারের জনগণের পক্ষে রোজা রাখা ভীষণ কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং এ সকল অসাধূ ব্যবসায়ীদেরকে যে ভাবেই হোক সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। প্রয়োজনে এদের বিরুদ্ধে আইনত: ব্যবস্থা নেয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ সবার সর্বাত্মক সহযোগিতা।

একটি অনলাইন পত্রিকায় গত ১৯ ফেব্রুয়ারী সোমবার প্রকাশিত খবরে প্রকাশ, ”নওগাঁর রাণীনগরে একটি ক্লাব ঘর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ভিজিডির বিতরণকৃত ২ হাজার ১৯০ কেজি চাল জব্দ করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। সোমবার দুপুরে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালিয়ে উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাশে একটি ক্লাব ঘর থেকে এই চালগুলো জব্দ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট উম্মে তাবাসসুম।
রাণীগঞ্জ উপজেলা সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবু রায়হান জানান, এদিন সকাল থেকে কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদে ভিজিডির কার্ডধারী সুবিধাভোগীদের মাঝে চাল বিতরণ করা হচ্ছিল। এ সময় অসাধু কিছু ব্যবসায়ী ওইসব সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে সরকারী ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ চাল কিনে পরিষদের পার্শ্বে একটি ক্লাব্ ঘরে মজুদ করছেন, এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দুপুরে সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে ওই ক্লাবঘর থেকে দুই হাজার ১৯০ কেজি চাল জব্দ করা হয়। অভিযানকালে চাল ব্যবসায়ী কাউকে না পাওয়ায়, পরে চালগুলো জব্দ করে তিনটি এতিম খানা ও মাদ্রাসায় বিতরণ করা হয়েছে।”

এসব অসাধু ব্যবসায়ীরা শুধু রাণী নগরেই নয়, সারা বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় তাদের গরীব অসহায় লোকদেরকে বড় অংকের লোভ দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে বাজারে বেশি দামে বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা করছে। যদি স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যাপারে কড়া নজর রাখে এবং এদেরকে আইনের মাধ্যমে কঠোর শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হবে বলে জনগণের অভিমত।

জনকন্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত অন্য এক খবরে প্রকাশ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের। সোমবার (৫ জানুয়ারী)সচিব সভায় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্য্যলয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে নজরদারী করতে বলেছেন। নজরদারী করার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট একটি ক্ষেত্রের কথাও তিনি বলেছেন। অনেক সময় দ্রব্যমূল্যের জন্য বিভিন্ন সমসয় বিভিন্ন পর্যায়ে চাঁদাবাজির প্রসঙ্গ আসে। এ ক্ষেত্রে তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে খুবই শক্ত ভাবে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন, এটি যাতে কোথাও না হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশ বাস্তবায়নে খাদ্যমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী সহ এমপি, মন্ত্রী সবাই মিলে একযোগে কাজ করতে হবে।

এদিকে গত ২৪ ফেব্রয়ারী পরারাষ্ট্র মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ দুপুরে রাজধানীর জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গনে এলডি হল চত্বরে ’রাঙ্গুনিয়া সমিতি, ঢাকা” আয়োজিত সম্বর্ধনা, মেজবান ও মিলনমেলা ২০২৪ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য সাংবাদিকদের প্রশ্নের জাবাবে বলেন, বাজারে অসাধু সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেবে সরকার। তিনি বলেন নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা বলেছিলাম, দ্রব্যমূল্য যেন মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে সেটি আমাদের প্রায়রিটি বা অগ্রাধিকার। এই সরকারের যাত্রার শুরু থেকেই সেই অগ্রাধিকার নিয়ে আমরা কাজ করছি এবং বাজারে অসাধু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সরকার সব রকমের ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন এ ব্যাপারে জনগণকেও সচেতন হতে হবে।

সরকারকে মনে রাখতে হবে, নির্বাচনের পূর্বে দেয়া তাদের প্রতিশ্রুতিগুলোর উপর বিশ্বাস রেখে জনগন আবারও ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। দেশি-বিদেশী বিরোধী চক্রের রক্তচক্ষুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, জনগণ স্বাধীনতার পক্ষের রাজনৈতিক শক্তিকেই তাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে, সুতরাং সরকারকে তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতেই হবে। জনগণই সরকারের শক্তি এ কথা মনে রাখতে হবে।

এই সরকারের যাত্রার শুরু থেকেই সেই অগ্রাধিকার নিয়ে আমরা কাজ করছি এবং বাজারে অসাধু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সরকার সব রকমের ব্যবস্থা নেবে। ড. হাসান মাহমুদের এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বলবো, সিডিন্ডকেটের বিরুদ্ধে সরকার সব ধরণের ব্যবস্থা নেবে বললেই হবে না, কালক্ষেপন করলে চলবে না। সরকারকে বলতে হবে, আমরা এদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে দিয়েছি এবং অনতিবিলম্বেই এর কার্য্যকারিতা জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। রমজান মাসে দেশের জনগণ যাতে পণ্যদ্রব্য কিনতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার না হয়ে বরং স্বাচ্ছন্দে রোজা রাখতে পারে সে ব্যবস্থা সরকাকে করতে হবে। তাহলেই জনগণ বুঝতে পারবে, সরকার তাদের নির্বাচনের পূর্বে দেয়া প্রতিশ্রæতিগুলো পালন করতে শুরু করেছে এবং বাকীগুলোও করবে। সরকারের উপর তাদের আস্থা আরও দৃঢ় হবে। দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ শুধু রমজান মাসের জন্যই নয়, তা করতে হবে আগামী দিনগুলোর জন্যও। অর্থাৎ চিরতরের জন্য সিন্ডিকেট প্রথা ভেঙ্গে দিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের দমন করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দেশকে সিন্ডিকেট এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর দপক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্য্যলয়ে অনুষ্ঠিত সচিব সভায় এ নির্দেশ দেন, এর পরপরই কিছুদিন আগে একজন মন্ত্রী রমজান মাসে ’খেজুরের বদলে বড়ই’ খাওয়ার যে উপদেশ জনগণকে দিয়েছেন তা নিয়ে সারা দেশব্যাপী শুরু হয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। এ ধরণের কথা বলে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দিলে (হার্ট) তীরবিদ্ধ করেছেন। কাজেই তাঁর ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই।

দেশের জনগণের ধারণা, এই মন্ত্রী সিন্ডিকেট দলের একজন প্রভাবশালী নেতা হতে পারেন, আর কারণেই তিনি এ রকম বক্তব্য দিয়ে সরকারের সিন্ডিকেট- বিরোধী অবস্থানকে দুর্বল করতে চেয়েছেন। এ বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করে এই ’বড়ই’ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনত: পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ। তিনি যদি এ রকম বক্তব্য দিয়ে থাকেন তা হলে অনতিবিলম্বে তাকে মন্ত্রীত্ব পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে, সরকারকে সমালোচনার হাত থেকে রক্ষ করতে হবে। এই ’বড়ই’ মন্ত্রী নিশ্চয় জানেন, নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের অনেক নামীদামী মন্ত্রী বেফাঁস বক্তব্য দেয়ার কারণে এবারের মন্ত্রী সভায় স্থান পান নি। প্রধানমন্ত্রীর এই পদক্ষেপকে জনগণ স্বাগত জানিয়েছে। যাত্রার শুরুতেই সরকারের মন্ত্রী সভার সদস্যরা যাতে জনগণকে সরকারের বিরুদ্ধে উস্কে দেয়ার মতো বক্তব্য না রাখেন, সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে এদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারী দিয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

দেওয়ান ফয়সাল, সাংবাদিক ও লেখক, লন্ডন, যুক্তরাজ্য।



বিষয়: #  #  #  #  #


আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)