মঙ্গলবার ● ১২ মার্চ ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » জলদস্যুর কবলে বাংলাদেশি জাহাজ আমাদের জন্য দোয়া করবেন: জিম্মি জাহাজের কর্মী
জলদস্যুর কবলে বাংলাদেশি জাহাজ আমাদের জন্য দোয়া করবেন: জিম্মি জাহাজের কর্মী
আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়ে ২৩ নাবিকসহ বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ।
১২ মার্চ, মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে কেএসআরএম গ্রুপের মালিকানাধীন জাহাজটি সোমালিয়ান জলদস্যুরা আটক করে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম।
জিম্মি এক নাবিক জানিয়েছেন, জাহাজটিকে সোমালিয়ার দিকে নেয়া হচ্ছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, সোমালিয়ান উপকূল থেকে জাহাজটি ৫০০ নটিক্যাল মাইল দূরে রয়েছে।
জাহাজে থাকা ওই নাবিক আরো জানান, প্রায় শতাধিক জলদস্যু ছোট ছোট বোটে করে প্রথমে জাহাজটিকে ঘিরে ফেলে। পরে তারা সশস্ত্র অবস্থায় জাহাজে উঠে নিয়ন্ত্রণ নেয়। এসময় নাবিক ও ক্রুদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে জলদস্যুরা কোনো নাবিকের ওপর হামলা চালায়নি বলে জানান ওই নাবিক।
জাহাজটিকে সোমালিয়া উপকূলে নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে ওই নাবিক জানান, বাংলাদেশি নাবিকদের একটি কেবিনে আটকে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে ক্যাপ্টেনকে দিয়ে জাহাজটিকে সোমালিয়ার উপকূলের দিকে নেয়া হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত জলদস্যুরা কোনো দাবি করেনি বলেও জানান জিম্মি ওই নাবিক। জাহাজটির ২৩ নাবিক-ক্রুর সবাই বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে ১১ জনই চট্টগ্রামের।
জানা যায়, ‘এম ভি আবদুল্লাহ’ নামের জাহাজটি গত বছর সংগ্রহ করে চট্টগ্রামভিত্তিক কেএসআরএম গ্রুপ। ২০১৬ সালে তৈরি করা ১৯০ মিটার লম্বা জাহাজটি সাধারণ পণ্য পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা হয়।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুটি অডিও ক্লিপে জাহাজটির এক কর্মীকে বলতে শোনা যায়, আমাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আমি এখন ওয়াশরুমে ঢুকে কথা বলছি। দস্যুরা আমাদের তাদের আস্তনায় নিয়ে যাবে। ওরা সাত-আটজন আছে অস্ত্রসহ। ইরানি একটা ফিসিং বোট তারা দুই মাস আগে জিম্মি করেছিলো। সেটা করে এসেই আমাদের জিম্মি করে। আমাদের থেকে জ্বালানি নিয়েছে। ওই ফিসিং বোট ছেড়ে দেবে। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
এদিকে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম জানিয়েছেন, জাহাজের ২৩ জন ক্রু নিরাপদে আছে। তবে কেন তাদের জিম্মি করা হয়েছে তা এখনও জানা যায়নি।
তিনি জানান, জাহাজটি দস্যুদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। সরকার কূটনৈতিক চ্যানেলে যোগাযোগ করছে।
জিম্মি জাহাজের মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপ। ওই গ্রুপের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি নৌপথে পণ্য পরিবহন করে। জাহাজের ক্যাপ্টেনের নাম আবদুর রশিদ।
জাহাজটির চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান এবং সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী।
জাহাজের ক্রুদের থেকে পাওয়া মেসেজ ও ই মেইলের মাধ্যমে জাহাজটি জলদস্যু কবলিত হওয়ার সংবাদ পান কেএসআরএম কর্মকর্তারা।
জাহাজটি সোমালিয়ান জলদস্যুদের দখলে নিয়েছে বলে ধারণা জাহাজটির মালিক কর্তৃপক্ষের। বাংলাদেশ সময় বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে সমুদ্র উপকূল থেকে ৪৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে জাহাজটির অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে।
কেএসআরএমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম জানান, মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার পর থেকে জাহাজটির সাথে স্বাভাবিক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। জাহাজ থেকে পাওয়া বার্তায় বলা হয়, জলদস্যুরা জাহাজ দখল করে নিয়েছে। আমাদের নাবিকরা আটকা পড়েছেন। আমরা বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি।
জিম্মিদের তালিকা:
মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ (মাস্টার), আতিক উল্লাহ খান (চিফ অফিসার), মোজাহিরুল ইসলাম চৌধুরী (সেকেন্ড অফিসার), তারিকুল ইসলাম (থার্ড অফিসার), সাব্বির হোসেন (ডেক ক্যাডেট), এএসএম সাইদুজ্জামান (চিফ ইঞ্জিনিয়ার), তৌফিকুল ইসলাম (সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার) মোহাম্মদ রোকনউদ্দিন (থার্ড ইঞ্জিনিয়ার), তানভীর আহমেদ (ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার), আইয়ুব খান (ইঞ্জিন ক্যাডেট), ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ (ইলেক্ট্রিশিয়ান), আনোয়ারুল হক (এবি), আসিফুর রহমান (এবি), সাজ্জাদ হোসেন (এবি), জয় মাহমুদ (ওএস), নাজমুল হক (ওএস), আইনুল হক (ওয়েলার), মোহাম্মদ সামসুদ্দিন (ওয়েলার), আলী হোসেন (ওয়েলার), মোশারফ হোসেন শাকিল (ফায়ারম্যান), শফিকুল ইসলাম (চিফ কুক), নূর উদ্দিন (জিএস), সালে আহমেদ (ফিলার)।
বিষয়: #জলদস্যু #জাহাজ #বাংলাদেশি