শুক্রবার ● ৮ মার্চ ২০২৪
প্রথম পাতা » অনুপ্রেরণা (গল্প) » গল্পঃ- নারী
গল্পঃ- নারী
নুসরাত হক :: পুরুষাঙ্গের প্রথম স্পর্শ পেয়েছিলাম যখন আমার বয়স ৮ বছর৷ তাও আপন খালাতো ভাই এর। বেড়াতে এসেছিলো আমাদের বাড়িতে। সবাই ওকে খুব ভালোবাসতো, আদর করতো তাই কখনো কাউকে ওর বিপক্ষে বলার সাহস পাইনি। লুকোচুরি খেলার ছলে আমাকে আলাদা ঘরে নিয়ে যেতো। লুকিয়ে থাকার নামে আমার শরীরের এমন জায়গা নাই যেখানে সে স্পর্শ করেনি।
আমি জন্মের পর নাকি আমাকে নিয়ে সারা পরিবারে কান্নার মেলা বসে গিয়েছিলো, আমার মা ও নাকি আমাকে দুধ দিতেন না মেয়ে হয়েছি বলে। সবাই ভেবেছিলো আমি ছেলে হয়ে সবার মনের আশা পুরন করবো। আমার বাবা দেয়ালে মাথা ঠুকরে কেদেছিলেন অনেক। অথচ তারা কেউই ভাবে না তাদের সবারই জন্য কোনো না কোনো নারীর গর্ভ থেকে।
আমি রিতু, মা বলতো আমার গ্রোথ খুব অল্প অবয়সেই অনেক বেড়ে গিয়েছিলো৷ আমি সুন্দর কি না জানি না কিন্তু আমি ভেড়ে উঠার সাথে সাথে আমার বাবা মায়ের আর আমাকে নিয়ে কোনো আফসোস ছিলো না। গ্রামের সবাই আমাকে দেখলেই আড়চোখে শরীর দেখতো, জিহবা দিয়ে ঠোট ভেজাতো। নানা মানুষের নানা কথায় প্রাইমারি পার হতে না হতেই আমার পড়াশোনার ইতি ঘটে৷
আমার যখন বয়স ১৩। আমার বাবা মারা জান, এতিমকে সবাই শান্তনা দিতে এসেছিলো, সেই সাথে এসেছিলো এতিমের কাছে আরো কিছু চেতে৷ দূর দূর সম্পর্কের নানার বয়সী মানুষ এসে আদরের ছলে কতো যে বুকে হাত দিতে চেয়েছে তার আর হিসেব কে রাখে,
মা যেদিন আমাকে কাকার কাছে রেখে চলে গেলো অন্য কারো ঘরে সেদিন আমি বুঝেছিলাম আমার জীবনে আপন বলে আর কেউ রইলো না।
তখন আমার বয়স ১৪ বছর। এক রাতে কাকার ছোট ছেলে যে কি না আমারও ১ বছরেএ ছোট সে আমার ঘরে আসলো…
মাঝ রাতে কাকার ছোট ছেলে এসে চুপিচুপি আমার পাশে বসে আমাকে বলে
“রিতু আপু, তোমার কেউ নেই তো কি হয়েছে আমি তো আছি”।
ওর এমন কথা শুনে আমি চোখের পানি আটকে রাখতে না পেরে ওকে ধরেই কেঁদে ফেলেছিলাম। অন্তত কেউ তো বললো সে আমার পাশে আছে। বাবা মা চলে যাবার পর এটা তো শান্তনা ছাড়া মন থেকে কেউ বলেনাই।
যেহেতু লেখাপড়া করি না তাই সারাদিন কাকার ঘরের কাজই আমার প্রতিদিনের কাজ হিসেবে নির্ধারিত হয়ে গেলো। ঘর মুছা, থালাবাসন মাজা, সবার কাপড় ধোয়া, রান্নাটা কাকি করতো কিন্তু সব কাটাকাটি আমাকে দিয়েই করাতো। এই ছোট বয়সে এতো কিছু করতে হাপিয়ে উঠতাম তাও মনে হতো আপনের ঘরই তো । কিছুদিন যেতেই বুঝলাম কাকি আর কাকার বড় ছেলে আমাকে সহ্য করতে পারছে না। তারা কাকাকে বার-বার আমার বাবার ঐ অল্প একটু রেখে যাওয়া সম্পত্তি নিয়ে ফেলতে কাকাকে চাপ দিচ্ছিলো। আমি আর কি করবো সম্পদ দিয়ে, তাদের কাছেই তো থাকি। তাই আমিও মনে মনে ভেবেছিলাম এইসব দিয়ে কি লাভ। নিয়ে যাক।
এদিকে এলাকার ছেলেরা নাকি এ ঘরের সামনে সারাক্ষণ ঘুরাফেরা করে এ নিয়ে প্রতিদিন কাকা কাকির মাঝে ঝগড়া হতে থাকলো। আমি যথেষ্ট লোকচক্ষুর আড়ালে থাকি। যেনো আমার জন্য এ বাড়ির মানুষ বিরক্ত না হয়৷ তবু এমন কিছু হচ্ছে ভেবে নিজেকে খুব খারাপ মনে হতে থাকে। তাদের ঝগড়াঝাটি আমি চুপচাপ শুনে মাঝেমাঝে মা বাবার ছবি ধরে অনেক কাদতাম। কোথায় রাজকন্যার মতো ছিলাম আর কোথায় এলাম। মা বাবা ছাড়া পৃথিবীতে সবাই স্বার্থের জন্য ভালোবাসে। এই বয়সের একটা মেয়ের কিইবা বুদ্ধি থাকে। তাও আমি ঐ বয়সেই একজন প্রাপ্তবয়স্কদের মতো ভাবতে শুরু করলাম।
ধীরেধীরে ১৫ তে পা দিলাম। গ্রোথ ভালো থাকায় দেখতেও বড় বড়ই লাগতো। শরীরেও কিছু পরিবর্তন আসছিলো। কিন্তু আমাকে এসব নিয়ে বুঝানোর কেউ ছিলো না তাই নিজে নিজেই সব বুঝেও চুপচাপ থাকতাম। এক সকালে কাকারা সবাই চলে গেলো ঢাকা। রয়ে গেলো শুধু তাদের বড় ছেলে। তার কলেজে পরীক্ষা দেখে যাবে না। আমার উপর দায়িত্ব তার খেয়াল রাখা৷ কলেজ থেকে আসলে ভাত দেয়া, চা লাগলে চা করে দেয়া, এইসব করেই ঠিকভাবে সারাদিন কাটালাম৷ রাতে ভাইয়া বললো তার রুমে যেনো থাকি। তার নাকি একা ভয় লাগে৷ কিন্তু আমার তো অন্য কারো ঘরে শুতে অভ্যাস নেই। তাও কি না ১৭-১৮ বছরের ছেলে। অনিচ্ছাকৃত বাধ্য হয়ে যেতেই হলো, সে খাটে আর আমি ফ্লোরে। বার বার কাপড় টেনে ঠিক করে শুয়ে আছি। প্রচন্ড গরম তাও গায়ে চাদর দিয়ে রেখেছিলাম৷ ঘুম আসছিলো না কারন এভাবে কখনো এক ঘরে কোনো ছেলে নিয়ে থাকি নাই আগে। অজানা এক ভয়ে কেপে উঠছিলাম একটু পর পর। কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারি ভাইয়া খাট থেকে নেমেছে৷ টয়লেটে যাবে ভেবে আমি ঘুমের মতো করে পরেছিলাম৷ কিন্তু ঠিক একটু পরেই আমি আমার কোমড়ে কারো স্পর্শ পাই, হাতটা কোমড় থেকে অল্প অল্প করে উপরের দিকে উঠছিলো। ভয়ে সংশয়ে আমি পাথর হয়ে ছিলাম যেন কি হচ্ছে কিভাবে হচ্ছে জানি না। যখন হাতটা পুরোপুরি আমার বুকের উপর রাখা হলো তখন আমি মানুষটার দিকে ঘুরে তাকালাম। ভাইয়া আমার দিকে একটা হাসি দিয়ে আরেক হাতও আমার আরেক বুকের উপর রাখলো। আমি অন্ধকারে অনুভব করলাম আমার কেউ নেই এই দুনিয়ায়…
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত
বিষয়: #অবলম্বন #গল্প #ঘটনা #নারী #সত্য