শিরোনাম:
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

Somoy Channel
বৃহস্পতিবার ● ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
প্রথম পাতা » অনুপ্রেরণা (গল্প) » গল্পঃ অপ্রাপ্তি
প্রথম পাতা » অনুপ্রেরণা (গল্প) » গল্পঃ অপ্রাপ্তি
৭১ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার ● ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

গল্পঃ অপ্রাপ্তি

গল্পঃ অপ্রাপ্তিছাত্রীকে অংক করাতে দিয়ে, তার ইংরেজী বইটা হাতে নিতেই বই থেকে একটা ছবি নিচে পড়ে গেলো। আমি ছবিটা হাতে নিতেই দেখতে পারলাম ছবিটা আমার ! ছবির নিচে ছোট্ট করে লেখা,
— ‘ভালোবাসি তোমায়!’
ছবিটা যেখানে ছিল ঠিক সেখানেই রেখে দিলাম। কথা আঁড়চোখে তাকিয়ে আবারো অংক করায় মন দিল। এসির মাঝেও শরীরটা ঘামছে! কথার দিকে তাকিয়ে দেখি সে আজ নীল শাড়ি পড়েছে! দিন দিন মেয়েটার পাগলামি কেন জানি বেড়েই চলছে।
— স্যার এই নেন খাতা, অংক করা শেষ।
— অংক দেখছি।
— এমন সময় কথা বলল’ স্যার আজ আমাকে কেমন লাগছে?’
— ভালো।
— শুধু ভালো আর কিছু না? স্যার আমাকে শাড়িতে কেমন লাগছে? সুন্দর না?
— অংকে দিনদিন খারাপ করছো তুমি। কিন্তু কেনো?
— স্যার আপনাকে অংকের কথা বলিনি। স্যার আমার দিকে তাকান।
— হুম।কি বলবে বলো?
— আচ্ছা স্যার, পৃথিবীতে সকল মানুষ সমান তাই না?
— হুম সমান।
— স্যার সবাই যদি সমান থাকে, তাহলে ধনী হয়ে গরীবকে কেন ভালোবাসা যায় না?
— কথা, তোমার না টেস্ট পরীক্ষা। তা কতো তারিখ থেকে?
— স্যার আমার প্রশ্নের উওর পাইনি?
এমন সময় কাজের মেয়েটা এসে চা আর পাঁচ-সাতটা বিস্কুট দিয়ে গেলো!
— স্যার খেয়ে নিয়েন।
আমি কাজের মেয়েটার দিকে তাকিয়ে মুঁচকি একটা হাসি দিয়ে চা’তে বিস্কুট ভিজিয়ে খেতে লাগলাম।কারণ প্রতিদিন, কয়েক প্রকারের বিস্কুট থাকলেও,আজ শুধু শক্ত টোস্ট বিস্কুট!কথার খুব রাগ হচ্ছে আমার সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। আমি চা’তে বিস্কুট ভিজিয়ে খেতে লাগলাম।হঠাৎ কথা আমার সামনে থেকে বিস্কুটের প্লেট’টা সরিয়ে নিল।আমি খানিকটা লজ্জা পেয়ে কথার দিকে তাকালাম।
মেয়েটা আজ কাজল দিয়েছে। কালো পাড়ের নীল শাড়ি পড়েছে।কিন্তু কাজলটুকু তার চোখে ধরে রাখতে পারছে না। স্পষ্টত দেখতে পারছি, কোন এক অজানা ঢেউ তার চোখের কাজলটুকু ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
— আজ আমি উঠি!
এই বলে বের হয়ে আসলাম।কথা কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল।আমি ফুটপাত দিয়ে হাঁটছি। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত আট’টা বাজে ‘ প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে। প্রতিদিন রাতে টিউশনিতে কিছু না কিছু খেতে দেয়। আর রাতে খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু আজ বড্ড বেশি ক্ষুধা পেয়েছে। পকেটে হাত দিয়ে দেখি ১৩০ টাকা আছে ভাবলাম ‘ ত্রিশ টাকায় কিছু খেয়ে নিবো। এই ভেবে যখনি হোটেলে ঢুকতে যাবো তখনি, পকেটে থাকা ফোনটা বাজতে লাগল।সেই চেনা রিংটোন। ফোনটা বের করতেই দেখি বাবা ফোন দিয়েছে।ফোন রিসিভ করেই বললাম,
— হ্যাঁ বাবা বল।
— বাজান তুই কিভা আছিস?
— হ্যাঁ। বাবা ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?
— হুম ভালাই। তোর মা’টার অসুখ বাড়ছে আবার। ওষুধ শেষ তো তাই।
— আচ্ছা বাবা কাল বা পরশু টাকা পাঠাবো কেমন?
— আইচ্ছা। বাজান তুই খাইছিস?
— হ্যাঁ বাবা তোমরা খাইছো?
— হুমম, বাজান তোর ছুটকি কথা বলবে তোর সাথে।
— আচ্ছা দাও তো ওকে।
— এই নে কথা বল।
— আসসালামু আলাইকুম, ভাইয়া কেমন আছ?
— হুম ছুটকি ভালো আছি। আমার কুটনি বুড়িটা কেমন আছে?
— তুমি আমাকে কি বললা ভাইয়া?
— কিছু বলিনি। আচ্ছা মহারাণী পড়ালেখা কেমন চলছে?
— ভাইয়া জান আমি ফাস্ট হইছি, অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায়। ভাইয়া স্কুলের সবার না নতুন জামা আছে, আমার নেই।
— আচ্ছা পরশু টাকা পাঠালে ওখান থেকে তোকে জামা কিনে দিবেনি কেমন? এবার মন দিয়ে পড়তে হবে কিন্তু।
— হুম ভাইয়া।
— বাবাকে ফোনটা দে।
— আচ্ছা।
বাবার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ফোনটা রেখে দিলাম। হোটেলে ঢুকতে গিয়েও ফিরে আসলাম। কেন জানি হোটেলে খেতে যেতে পারলাম না। রওনা দিলাম মেসের উদ্দেশ্যে।
.
এদিকে কথার কোন ভাবেই ঘুম আসছে না। কল্পনাকে ফোন দিয়ে অনেক গুলো ঝাড়ি দিলো। কারণ কল্পনার বুদ্ধিতেই বইয়ের ভেতর ছবি রেখেছিল। কথা জানে স্যারের রাতের খাওয়ার টাকা থাকে না। থাকলেও খায় না বাড়ির কথা ভেবে। এমনিতেই আজ ফেলানিকে,শুধু টোস্ট-বিস্কুট দিতে বলেছে। তার উপর খাবার সামনে থেকে সরিয়ে নিয়েছে।
আচ্ছা স্যার কি বুঝে না তাকে আমি ভালোবাসি। কেন আমাকে বুঝতে চাই না। কথা কিছু ভাবতে পারছে না বালিশে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে লাগে। ফেলানি এসে ডেকে গেল ডিনার করতে।
কিন্তু কথা ভাবছে ‘স্যার তো আজ খায়নি’। আমি কিভাবে খাবো? হঠাৎ মনে পড়ে, রাতুল ভাইয়ার কথা। রাতুল ভাইয়া স্যারের রুমমেট। রাতুল ভাইয়াকে ফোন করে সব খুলে বলে।
— আচ্ছা তুমি চিন্তা করো না আর তুমি কাঁদছ কেন? রাজের খাওয়া নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। মেসে আসলে আমি ওকে খাওয়াবো।
.
কথা ফোন কেটে দিয়ে আবারো চিন্তা করতে লাগল সত্যি তো খাওয়াবে?স্যারকে ফোন দিয়ে দেখি।
.
আমি হেঁটে হেটেঁ প্রায় মেসের সামনে এসে পড়েছি এমন সময় ফোনটা বাজতে লাগল ফোনটা বের করতেই দেখি কথা ফোন দিয়েছে।আমি ফোনটা কেটে দিয়ে বন্ধ করে রাখি। কারণ আমি জানি বাস্তবতা কি। এটাও জানি মেয়েটা আমায় ভালবাসে বড্ড বেশি ভালবাসে। তার এলোকেশে যে কেউ নিজেকে হারিয়ে ফেলতে পারে। তার মায়াবি মুখটা দেখে মানুষ হাসতে হাসতে নিজের জীবন দিয়েও দিতে পারে। কিন্তু আমি পারি না। কারণ আমি যে শিক্ষক। আমি যে সবাইকে শিক্ষা দিবো কোনটা ভালো কোনটা খারাপ।
ভালোবাসা আমার জন্য নয়। কারণ যার টিউশনির টাকায় পুরো সংসার চলে। চলে নিজের পড়াশোনা। আমি চাই না কথার জন্য টিউশনিটা চলে যাক। কত কষ্ট করে ভার্সিটি চান্স পেয়েছি। বাবা-মা’র স্বপ্ন শিক্ষক হবো। আর অন্যদিকে কথা ধনীর দুলালি। এইবার এইচএসসি দিবে।সোনার চামচ মুখে দিয়ে যে বড় হয়েছে।
.
এদিকে মেসে আসতেই দেখি, রাতুল আমার বিছানায় বসে আছে। টেবিলে দেখলাম বিরিয়ানির প্যাকেট।
— দোস্ত আসছিস? যা ফ্রেশ হয়ে নে তোর জন্য ট্রিট আছে।
— হঠাৎ তোর আবার কি হলো? যে একটা চকলেট পর্যন্ত খাওয়াতে চায় না সে আবার আমাকে ট্রিট দিবে ব্যাপার কি?
— যা ফ্রেশ হয়ে আয়। আর শুন আজ জুঁইকে প্রপোজ করেছিলাম রাজি হয়েছে। তাই তোকে ট্রিট দিলাম।
এদিকে ফ্রেশ হয়ে, রাতুলের দেওয়া খাবার খেয়ে নিলাম।খাওয়ার শেষ করতে না করতেই দেখলাম রাতুল কাকে যেন ফোন করে বলল,
— রাজ খেয়েছে তুমি চিন্তা করো না।
রাতুলের কথায় কিছুটা আঁচ করতে পারলাম। এ সব কথারই কাজ। কাল মেয়েটাকে বলতে হবে কিছু। পরের দিন সকালে বন্ধু ফয়সাল বললাম,
— ‘দোস্ত আমার একটা পার্ট টাইম চাকরির দরকার। টিউশনি দিয়ে চলে না।
ফয়সাল যে কোম্পানীতে চাকরি করে সেখানে একটা আবেদন করতে বললো। বিকেল বেলা একটা আবেদন করে, সন্ধ্যায় পড়াতে গিয়ে দেখি, কথা পড়ার টেবিলে বসে আছে।
আমি চেয়ার টেনে বসে বললাম।
— অংকতে পিছিয়ে পড়েছো।পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে হবে। এভাবে রেজাল্ট ভালো হবে না।
কথা কিছু বলছে না। বুঝতে পারলাম কথা কাঁদছে’ এই পর্যন্ত বলেই চুপ করে থাকলাম। চশমাটা খুলে চোখ দু’টি মুছে নিলাম।.
.
সেই বিশ বছর আগের ঘটনা। বুকের ভেতরটা কেমন যেনো করছে। চুলগুলো পাক ধরেছে। আজ আমি বি.সি.এস প্রাপ্ত লেকচারার। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি সেই বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষক..
সমস্ত ক্লাসে পিনপতন নীরবতা। সবাই নিশ্চুপ হয়ে শুনছে। এমন সময় ‘হৃদয় নামের একটা ছেলে বলল’
— স্যার তার পর কি হলো? আপনি কি কথা ম্যাডাম কে পেয়েছিলেন? আচ্ছা স্যার আপনিও কি ম্যাডাম কে ভালবাসতেন।
আমি চশমাটা পড়ে আবারো বলতে লাগলাম,
— যখন দেখলাম কথা কাঁদছে। তার কান্না গুলো কেন যেন সহ্য করতে পারছিলাম না। আবার এটাও পারছিলাম না যে কথার চোখের পানিটা মুছে দেয়। কারণ শিক্ষকতা যে মহান পেশা।তাই কথাকে বললাম,
— আজ তাহলে উঠি, কাল আসবো।
— না স্যার যাবেন না।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত



বিষয়: #  #


আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)