মঙ্গলবার ● ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
প্রথম পাতা » সাহিত্য রম্যগল্প » গল্পঃ “না বলা কথা”
গল্পঃ “না বলা কথা”
বাসায় প্রবেশ করে টেবিলে বসতেই ছাত্রী বলে উঠলো স্যার আপনার আন্ডার প্যান্টটা কি খুব দামি? ক্লাস টেনে পড়ুয়া মেয়ের মুখে হটাৎ এমন কথা শুনে অবাক না হয়ে পারলাম না। হা করে তাকিয়ে আছি উত্তর খোঁজার চেষ্টায়, কেনো হটাৎ এই প্রশ্ন?
—-বলুন না স্যার কোন মার্কেট থেকে কিনলেন?
—-দেখো নিলাম্বরি, ফাজলামির সাথে তোমার বেয়াদবিটাও দিন দিন বাড়ছে।
— কেনো স্যার, আমি শুনছি দামি কিছু কিনলে মানুষ সবাইকে দেখায়। যদি দামি প্যান্ট না হতো তাহলে কি আর গেট খোলা রেখে সবাইকে দেখাতেন? হি হি হি….
নিচের দিকে তাকাতেই জিভে কামর দিয়ে অন্যদিকে ঘুরে গেলাম। লজ্জায় আর কিছু বলার থাকলো না আমার। ছাত্রি বলে কথা। মাথাটা নিঁচু করে ওকে পড়াতে লাগলাম আমি। ওর মুখের দিকে তাকাতেই কেমন লজ্জা বোধ করছি। ও বার বার টেবিলের নিচে পা দিয়ে আমায় খোঁচাচ্ছে, আর মিটি মিটি হাসছে। বিষয়টা কিছুটা বুঝলেও না বুঝার ভান করলাম। কারণ এটা তার বয়সের দোষ।
কিছুক্ষন পড়ানোর পরই বেড়িয়ে গেলাম। মনে মনে ভাবছি ওর ফাজলামির মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলছে। ওকে আর পড়াতে যাবো না।
খুবই গরিব পরিবারের সন্তান আমি, পড়া লেখা চলছে বলে কোনো চাকরি বাকরি করতে পারছিনা। যার কারনে টিউশনি করেই নিজেকে চলতে হয়, সাথে বাবার ঔষধের খরচ।
বাসায় গিয়ে দেখি বাবার ঔষধ শেষ। পকেটে হাত দিয়ে দেখি মাত্র ৫০০ টাকা আছে। মাসের এখনো ৩-৪ দিন বাকি এই টাকা দিয়েই এই ৩-৪ দিন চলতে হবে। আপাদত বাবার ঔষধগুলো নিয়ে আসি বাকিটা পরে বুঝা যাবে।
,
দুই দিন যেতেই আন্টি ফোন দিলো, কি হলো বাবা তুমি নিলাম্বরিকে পড়াতে আসোনা কেনো?
কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছিনা।
আর কি করার আন্টির জোড়াজুড়িতে আবার পড়াতে শুরু করলাম নিলাম্বরিকে।
একদিন নিলাম্বরি হটাৎ আমার হাতটা ধরে ফেললো, বললো স্যার আপনাকে একটা কথা বলার আছে। আমি তার কথা না শুনলেও কিছুটা অনুমান করতে পারছি। তাই কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তাকে ধমকের সুরে পড়তে বললাম। আর আন্টিকে সোজা বলে দিলাম আমি আর নিলাম্বরিকে পড়াতে পারবোনা।
বিকেলে হটাৎ একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এলো, রিসিভ করতেই বুঝলাম নিলাম্বরি, কেটে দিতে চাইলে সে বললো, স্যার স্যার আমার কথাটাতো একবার শুনুন।
— ওকে কি বলবে বলো।
— স্যার আজকের রাতটাকি আমি আপনার বাসায় থাকতে পারি?
— এই মেয়ে কিসব বেয়াদ্দপের মতো কথা বলছো, তোমার সাহস হয় কি করে এভাবে কথা বলার, আর কক্ষনো এই নাম্বারে ফোন দিবানা।
তার পর থেকে নিলাম্বরি আর ফোন করেনি।
এইদিকে বাবার শরীলটাও দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে তাই একটা প্রাইবেট হসপিটালে নিয়ে গেলাম, কারণ ওখানে চিকিৎসা ভালো হয়।
ডাক্তার বললো, আমি নাকি একটু দেরি করে ফেলেছি। এখন বাবার অপারেশন করাতে হবে, তাই ২ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। টিউশনি করে এতো টাকা জোগার করা আমার পক্ষ পসিবল না।
ভাইয়াকে ফোন দিলাম। আসলে ভাইয়া আমাদের সাথে থাকেনা। ভাইয়া আগেও এমন ছিলো তা না, বিয়ে আগে আমাদের সাথেই থাকতো। চাকরি করে যা পেতো তা দিয়ে আমাদের সংসার ভালোই যেতো। কিন্তু ভাইয়ার বিয়ের পর থেকে অন্য রক্তের গ্রান পেয়ে নিজের রক্তকেই অবহেলা করতে শুরু করলো।
ভাইয়াকে বাবার কথা জানাতেই বললো, আমার কাছেতো এখন তেমন টাকা পয়সা নেই। আর যা আছে তা হয়তো কয়দিন পর তোর ভাবির ডেলিভারিতে লেগে যাবে। আর বাবাতো আর আমার একার না, তোরও …. তখনি আমি ফোনটা কেটে দিলাম কারণ যা বুঝার আমি বুঝে গেছি।
এর কাছ ওর কাছ থেকে কিছু টাকা ধার করে করে অনেক কষ্টে এক লক্ষ টাকা যোগার করলাম।
—- ধুর মিয়া আপনার অভাবের কথা চিন্তা করে আমরা ২ লক্ষ টাকা চেয়েছি। অন্য কারো থেকে হলে ৩ লক্ষ টাকার কম নিতাম না।
—- প্লিজ ডাক্তার এর থেকে বেশি জোগার করা আমার পক্ষে সম্ভব না।
—- তাহলে এখানে এলেন কেনো? কোনো সরকারি হসপিটালে নিয়ে যান। সেখানে অনেক কম দামে করাতে পারবেন।
উপায়ান্তর না পেয়ে বাবাকে নিয়ে গেলাম নিকটস্থ সরকারি হসপিটালে। আল্লার উপর ভরসা করলাম বাঁচা মরা তো তিনিই নির্ধারন করেন।
বাবা এখন মোটামুটি সুস্থ। সেই দিনের পর থেকে ভাইয়ার সাথেও আর যোগাযোগ হয়নি।
আজ শুক্রবার। সকালে বসে বসে ফোনে গেম খেলছি এমন সময় আন্টির ফোন এলো,
ফোন রিসিভ করতেই দেখি আন্টি কাঁদছে।
— কি হলো আন্টি কাঁদছেন কেনো?
—- বাবা নিলাম্বরি….. আবার কেঁদে দিলো।
—- কি হয়েছে আন্টি?
—- বাবা তুমি একটু আমাদের বাসায় এসো।
বলেই ফোনটা কেটে দিলো।
তারাহুরা করে নিলাম্বরির আইডি চেক করতেই একটা মেসেজ সামনে আসলো।
–যদি আমার কিছু হয়ে যায় তাহলে আমার ঘরে এসে ডায়রিটা নিবেন আশা করি আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
নিলাম্বরির নিথর দেহটা ফ্লোরে পরে আছে, পাশে আঙ্কেল আন্টি বসে কাঁদছে। আমাকে দেখেই আন্টি এসে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।
বিকেলের মধ্যেই দাফন কাফন সব শেষ। ঘরে আঙ্কেল আন্টিকে সান্তনা দিচ্ছি। হঠাৎই নিলাম্নরির দেওয়া শেষ মেসেজটার কথা মনে পড়লো।
ওর রুমে গিয়ে ওর ডাইরিটা খুললাম,
স্যার,
আমি জানি এই ডায়রিটা যখন আপনার হাতে যাবে তখন আমি আর থাকবোনা। আপনি অনেক সময় আমাকে বলতেন, আমি ফাজিল মাঝে মাঝে বেয়াদবিও করি। কিন্তু জানেন স্যার আমার ফাজলামি টুকু শুধু আপনি আসার পর থেকে যাওয়ার আগ পর্যন্ততেই সিমাবদ্ধ ছিলো। আপনি সবসময় যাদেরকে আমার মা বাবা বলে জানতেন, তারা আসলে আমার মা বাবা নয়। আমার মা তাদের বাসায় কাজ করতো। মা যখন মারা যায় তখন আমার বয়স ১০ বছর। তাদের কোনো সন্তান না থাকায় মা মারা যাওয়ার পর ওরা আমাকে তাদের সাথে রেখে দেয়। আসলে স্যার একটা কথা আছে, পর কখনো আপন হয়না। যখন আমি তাদের বাসায় থাকা শুরু করি তখন থেকেই আঙ্কেল মানে বাবা আমায় খুব আদর করতো। তখন ভাবতাম আঙ্কেল হয়তো আমাকে খুব ভালোবাসে। কিন্তু যখন আমার বারো তেরো বছর তখন থেকে বুঝতাম আঙ্কেলের আদরটাতে এক ধরনের শয়তানি লুকিয়ে থাকতো। যখন খেয়াল করতাম সে আমাকে আদর করার নামে আমার স্পর্শ কাতর অঙ্গ গুলোতে হাত দিতো, তখন থেকে তার কাছ থেকে দুরে দুরে থাকতাম। যৌন মিলনের প্রথম ছোয়া পেলাম যখন ক্লাস টেনে উঠি। তাও আবার নিজের বাবা ডাকা লোকটার কাছ থেকে।
সেদিন আন্টি মানে মা বাড়িতে ছিলোনা। তখন আমাকে ভয় দেখানোর কারনে কাওকে কিছু বলিনি।
কিন্তু সেই দিন যখন শুনলাম মা একদিনের জন্য তার বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছে, তখন আমি আপনাকে এই বিষয়ে বলতে চেয়ে ছিলাম কিন্তু আপনি আমায় ভুল বুঝলেন। ফোনোও আপনার কাছে একটি রাত হেল্প চেয়েছিলাম কিন্তু আপনি পুরোটা না শুনেই ফোনটা কেটে দিলেন। আমার আর কিচ্ছু করার ছিলো না। আচ্ছা স্যার, তার একটা মেয়ে থাকলে আমার মতো কি সেও তাকে বাবা ডাকতো না? তখন কি তার সাথেও সে এমন করতো?
সেদিনও বিষয়টা কাউকে বলিনি। শুধু মাঝরাতে ছাদে দাড়িয়ে আকাশটার সাথে কথা বলতাম। আমার সকল দুঃখ কষ্ট ওই তারা ভরা নীল আকাশটাই ভাগ করে নিতো।
কিন্তু কিছুদিন আগে যখন আমি বুঝতে পারলাম যে আমি প্রেগনেট, তখন ভাবলাম আমার মতো পাপির এই পবিত্র পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোনো অধিকারই নেই। ভালো থাকবেন স্যার। কখনো কোনো বেয়াদবি করে থাকলে মাফ করি দিবেন।
হটাৎ খেয়াল করলাম ডায়রির পাতাগুলো ভিজে গেছে। হয়তো হতভাগিটার জন্য একটুখানি চোখের জলে।
আসার সময় আঙ্কেলকে কানে কানে বললাম, মানুষের কৃত কর্মের ফল ভোগ করতেই হবে। যদি আপনি যৌনতা কন্ট্রোল রাখতেন তাহলে নিলাম্বরি এখনো বেঁচে থাকতো।
নিরিবিলি রাস্তায় হেটে চলছি আর বারবার চোখের পানি মুচছি। চাইলে হয়তো আমি মেয়েটাকে উপকার করতে পারতাম। নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবো কিনা জানিনা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত
বিষয়: #কথা #গল্প #না #বলা