শিরোনাম:
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

Somoy Channel
রবিবার ● ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
প্রথম পাতা » সাহিত্য রম্যগল্প » রম্য : মাসে মাত্র একদিন
প্রথম পাতা » সাহিত্য রম্যগল্প » রম্য : মাসে মাত্র একদিন
১১৪ বার পঠিত
রবিবার ● ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

রম্য : মাসে মাত্র একদিন

রম্য : মাসে মাত্র একদিনরাতে ঘুমের প্রস্তুতি চলছে। এমন সময় সীমা আমার দিকে একটা কাগজ এগিয়ে দিলো। কোনো অফিসিয়াল কাগজ মনে করে আমি নির্বিকার ভাবে কাগজের ভাঁজ খুললাম। কাগজে লেখা :
অফিস - ৮ ঘন্টা
যাতায়াত - ২ ঘন্টা
সকালের নাস্তা - ১ ঘন্টা
ছেলের স্কুলের প্রস্তুতি - ৩০মিনিট
নিজের অফিসের প্রস্তুতি - ৩০ মিনিট
রাতের রান্না - ৩ ঘন্টা
থালা বাসন পরিষ্কার - ১ ঘন্টা
রাতের ঘুম - ৭ ঘন্টা (মাঝে মধ্যে ঘন্টা খানেক নষ্ট )
নিজের ব্যক্তিগত সময় - ১ ঘন্টা
মোট - ২৪ ঘন্টা
আমি কিছুটা আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
- এটা কি ?
সীমা বললো
- এটা আমার সারা দিনের কর্ম বিবরণ। গত প্রায় দুই যুগ ধরে আমি এই রুটিনে চলছি। আমার এখন মনে হচ্ছে নিজের জন্য আমার আলাদা কিছু সময় দরকার।
কাগজে বিবরণ দেখে আমার মনে হলো হিসাবে কোথাও গড়বড় আছে। আঙুল গুনে ঘন্টার হিসাব মিলিয়ে দেখি নির্ভুল হিসাব। সীমার কোম্পানির দুই সহস্রাধিক কর্মচারীর বেতনের চেকটা সীমার হাত দিয়েই যায়। সুতরাং, ভুল হবার সম্ভাবনা খুবই কম। হিসাবে সীমা খুব পাকা।
আমি কাগজটার দিকে খুব আগ্রহের সাথে তাকিয়ে থেকে বললাম
- তো, আমার এখন কি করনীয় ?
সীমা আমার দিক থেকে চোখ না সরিয়ে বললো
- ভয়ের কোনো কারণ নাই, তোমাকে তেমন কিছু করতে হবেনা। খোদার ৩০ দিন আমি বাসার যে কাজ গুলো করি, এখন থেকে তুমি সেটা একদিন করবে, বাকি ২৯ দিন আমিই করবো। মানে, মাসের একটা দিন আমি ছুটি নিবো।
ঘুমের আগে সীমার সাথে কোনো ধরণের তর্কে লিপ্ত হওয়া মানে সেই রাতের ঘুম শেষ। এই ব্যাপারে তার অসীম ধৈর্য্য। সারা রাত সে একটার পর একটা যুক্তি দেখিয়েই যাবে, এবং আমি একটা করে যুক্তি খণ্ডন করে পরেরটার পথ উন্মুক্ত করে দিবো। অতএব, আমি সেই পথে না হেঁটে সাদা পতাকা উড়িয়ে দিয়ে ঘোষণা দিলাম; “আগামীকালই হবে মাসের সেই একদিন”।
সকাল ৫:৩০ মিনিটে অ্যালার্ম সেট করে আমি ঘুমাতে গেলাম। ৫.৩০ মিনিটে অ্যালার্ম বেজে উঠলো, আমি যথারীতি অ্যালার্ম বন্ধ করে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। ৬ টার সময় সীমা আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুললো, তারপর দলিলে সই করা আমাদের শান্তি চুক্তির কথা মনে করিয়ে দিলো। অতঃপর, শর্ত মোতাবেক আমি নিচে এসে রান্না ঘরে পরোটা ভাজার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে ফ্রিজে আর পরোটা খুঁজে পাইনা। সময়ের কথা বিবেচনা করে পরোটা ভাজার চিন্তা বাদ দিয়ে আমি টোস্টারে পাউরুটি ঢুকিয়ে দিলাম। পাউরুটির দোসর হিসেবে ফ্রিজ থেকে ডিম বের করলাম, ঠিক সেই সময় আমার মোবাইলে সীমার টেক্সট এলো
- তোমার মতো ডিম পোচ আমি খেতে পারিনা। ডিমে যেন পেঁয়াজ কাঁচামরিচ থাকে।
তথাস্তু, বলে আমি কাঁচা মরিচ কাটলাম স্বচ্ছন্দে, কিন্তু আয়রন শেফের মতন পেঁয়াজ দ্রুততার সাথে কাটতে গিয়ে আঙ্গুল কেটে ফেললাম।
যাই হোক, আঙ্গুলে একটা টিস্যু পেঁচিয়ে কোনোমতে ডিমটা ভাজলাম। চায়ের বন্দোবস্ত করতে গিয়ে চিনি পাই তো চা পাতা পাইনা। অনেক খোঁজাখুঁজি করে অবশেষে সেটাও ম্যানেজ হলো। সকল আয়োজন সম্পন্ন করে নাস্তা টেবিলে লাগিয়ে নিচ থেকে গলা চড়িয়ে সীমাকে ডাক দিলাম:
- নাস্তা রেডি।
সীমা অফিসের জন্য রেডি হয়ে বীরদর্পে সিঁড়ি ভেঙে নিচে নেমে এলো। আমার মনে হলো পরের মাসে মনে হয় আদেশ জারি হবে তাকে কোলে করে নামিয়ে আনার।
ডিম খেতে গিয়ে সীমা বললো
- চামচ কোথায়?
আমি একটা চামচ এগিয়ে দিলাম। ডিমের এক কোনা খেয়ে তার চেহারা পাল্টে গেলো, সে হেসে উঠলো
- লবন দিতে ভুলে গেছো ?
আমি লবনদানিটা এগিয়ে দিয়ে বললাম
- আজকে প্রথম দিনতো ম্যাডাম, এরপর আর এই ভুল হবে না।
সীমা খুব আয়েশ করে চা টা খেলো। তারপর গড়ির চাবি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বললো
- ছেলেকে তুলে ব্রাশ করাও। তারপর নাস্তা খাওয়াও। সকাল বেলা সে কিছু খেতে চায় না, তার সাথে একটু জোর জবরদস্তি করতে হবে। চুলা বন্ধ করে থালা বাসন ধুয়ে তার পরে অফিস যাবা। দেইখো, আবার দরজা খোলা রেখে চলে যেও না।
সীমা অফিসে চলে যাবার পর আমি ছুটলাম ছেলের রুমে। ছেলে আর ঘুম থেকে ওঠেই না! সীমা যে কি টেকনিক খাটায় এই কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙাতে, আমিতো আর জানিনা! অবশেষে কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম :
- বড় বিপদে আছি বাপজান, উঠে পড়
ছেলে কি বুঝলো কে জানে, উঠে গেলো। কিন্তু, বাথরুমে দাঁত ব্রাশ করতে গিয়ে নড়ে কি নড়ে না! নাস্তা খাওয়াতে গিয়েও দেখি একই অবস্থা! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বুঝলাম আজকে অফিসে আমি নির্ঘাত লেইট।
ছেলেকে বললাম
- তোর নাস্তা খেতে হবে না, স্কুলে যা
ছেলে খুশি মনে লাফিয়ে উঠে স্কুলে চলে গেলো। আমি মনে মনে ভাবলাম, ছেলে মাসে একদিন নাস্তা না খেলে শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাবে না।
অফিসে গিয়েতো আজকে আর আমার কাজে মন বসে না। সকালে জোড়াতালি দিয়ে পুলসিরাত অর্ধেক পার করেছি, এখন রাতেরটা কেমন করে পার করবো সেই ভাবনায় ইয়া নফসি ইয়া নফসি করছি মনে মনে।
ডিমের একটা তরকারি কোনোভাবে ইউ টিউব দেখে বানাতে হয়তো পারবো, আর রাইস কুকারে ভাত। কিন্তু এটার আবার একটা বিপদ ও আছে। সীমা আমার এই অক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে বাকি ২৯ দিন ফায়দা তুলবে। মাসে কয়দিন যে ডিমের কারি খাওয়াবে কে জানে! রাগটা গিয়ে পড়লো মায়ের উপর। কিছুই শেখাননি আল্হাদটা ছাড়া।
ঠিক তখনই সীমার ফোন এলো
- শোনো, অফিস শেষে চুলে মেহেদী লাগাতে যাবো আজকে। ফিরতে কিন্তু দেরি হবে। তুমি অফিস শেষে বাড়ি ফিরে যেমন ডিনার রেডি পাও, আমিও যেন আজকে সেটা পাই। এসে একসাথে ডিনার করবো, কেমন?
বাই, জান।
বাই জান না ভাইজান বুঝতে একটু সময় লাগলো। আমার নিজেকে তখন সেই আমলের সিনেমার নায়কদের মতো মনে হতে লাগলো। সেইযে, বড়লোকের মেয়ে আর গরিব ঘরের ছেলে, বিয়ের পর জামাইকে দিয়ে ইচ্ছা মতন ঘরের কাজ করাচ্ছে বউ ….। মনে মনে নিজেকে অভয় দিলাম, “মাসে একদিন না হয় ৮০র দশকের নায়ক হয়েই থাকলাম! বাকি সময়তো আমি নায়িকার বাবা চৌধুরী সাহেব, হা হা হা।”
সীমা চুলে মেহেদী লাগাতে যাবে। মানে, কম করে হলেও দেড় ঘণ্টা বসে থাকতে হবে তাকে। সব কিছু মিলে পার্লারে তার সময় যাবে ২ ঘন্টা। তার মানে রাত ৯ টার আগে সে বাড়ি ফিরছে না। হিসাবে আমিও খুব কাঁচা না। আমার উর্বর মস্তিষ্কে বুদ্ধির অঙ্কুরোদগম শুরু হয়ে গেলো।
রাশেদ চাচা আর চাচী অবসরে যাওয়া দম্পতি। আমি যে শহরে থাকি, উনারাও সেখানেই থাকেন। টোনাটুনির সংসার। আমাদের সাথে হৃদ্যতা ভালোই।বয়সের কারণে ভদ্রলোক রাতে গাড়ি চালাতে ভয় পান। তাই, রাতে কোন সামজিক অনুষ্ঠান বা দাওয়াত থাকলে, আমিই উনাদের অন্ধের ষষ্ঠী। তা ছাড়াও মাঝেমধ্যেই সুযোগ সুবিধা মতো আমি এই দম্পতির নানা ফুট-ফরমায়েশ পালন করি। চাচী সীমাকে খুব স্নেহ করেন।
আমি অফিসে বসে চাচীকে ফোন দিলাম। এই কথায় সেই কথায় এক সময় চাচীকে বললাম
- চাচী আপনার হাতের মুরগির মাংস রান্নাটা অসাধারণ, আমার মায়ের মতো স্বাদ। আমার মাও এমন করে রান্না করতেন।
আমার কথায় বিগলিত হয়ে চাচী আমাকে রাতের জন্য দাওয়াত দিয়ে বসলেন। আমি কথা ঘুরিয়ে দিয়ে বললাম
- চাচী, করোনার সময় তো দাওয়াত খাওয়া ঠিক হবে না। আচ্ছা, আপনি এক কাজ করেন, রান্না করে বক্সে ভরে রেখে দিয়েন, আমি অফিস থেকে ফেরার পথে নিয়ে যাবো।
চাচী খান্দানী বংশের লোক, মুরগির মাংসের সাথে যে আরো কয়েকটা পদ যোগ হবে সেটা আমি জানি।
কাজের গতি বেড়ে গেলো আমার। মন লাগিয়ে অফিসের কাজ শেষ করলাম। বিকেলে অফিস থেকে ফেরার পথে বগল বাজিয়ে আমি চাচীর বাসায় হাজির হলাম। চাচী মুরগির মাংস সহ আরো ৪ পদ তরকারি ফুড গ্রেডেড প্লাস্টিক বক্সে ভরে দিয়ে দিলেন আমাকে।
খান্দানী বংশের মানুষের মস্তিস্ক খুব প্রখর হয়। চাল টিপা লাগেনা, ভাতের চেহারা দেখলেই হাঁড়ির খবর টের পেয়ে যান। বিদায় নেবার সময় শুধু জিজ্ঞেস করলেন
- তুমি আর সীমা ভালো আছতো ?
বাসায় ফিরে পাঁচ তরকারি পাঁচটা পাতিলে ঢেলে গরম করতে শুরু করলাম, সাথে রাইস কুকারে গরম গরম ভাত। সীমা ফিরলো রাত ৯টায়। রাতে খাবার টেবিলে ৫ পদ তরকারি দেখে সীমা একটু বিভ্রান্তিতে পড়ে গেলো, তাও আবার টপ ক্লাস রান্না, ধোঁয়া উড়ছে।
রাতের খাওয়ার পর দুই কাপ চা নিয়ে আমরা বারান্দায় বসি। এটা আমাদের নিত্য দিনের অভ্যাস। আজও তার ব্যত্যয় হলো না। সারাদিনের টুকরো টুকরো আলাপে চা পান প্রায় শেষের দিকে, আমি সীমাকে একটু ভাব নিয়ে বললাম
- আজকে আমার পারফর্মেন্স কেমন দেখলে? আসলে ইচ্ছা করলেই সব পারা যায়।
সীমার কাছে ৫ তরকারির বিষয়টা অবিশ্বাস্য লাগছে, যদিও সে সেটা প্রকাশ করছে না।
ঠিক এমন সময় সীমার ফোনে রাশেদ চাচীর নামটা ভেসে উঠলো, চাচী সীমাকে কল দিয়েছেন। আমি তাড়াহুড়ো করে বেডরুমে চলে এলাম। আধঘন্টা পর সীমা এসে ঢুকলো বেডরুমে। আমি ঘুমের ভান করে পড়ে আছি বিছানায়।
সীমা কিছুক্ষণের নিরবতার পর আমাকে উদ্দেশ্য করে শুধু বললো
- এতো বুদ্ধি নিয়ে ঘুমাও কেমন করে?
বদের হাড্ডি কোথাকার!
আমি মনে মনে ভাবলাম , যাক এক মাসের জন্য নিরাপদ। পরেরটা পরে দেখা যাবে। মাথায় নতুন কিছু তখন আসবে।
সমাপ্ত

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত



বিষয়: #  #  #  #


আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)