রবিবার ● ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
প্রথম পাতা » সাহিত্য রম্যগল্প » তুমিময়_বসন্ত
তুমিময়_বসন্ত
লেখক_মৌসুমী_আক্তার:
–কবুল বলার ঠিক দশ মিনিট পরেই আমাকে নিয়ে বসিয়ে দেওয়া হলো ফুলদ্বারা সজ্জিত একটি রুমে। রুমটা দেখেই বুঝতে পেরেছি এটা আমার জন্য মর*ণসজ্জা মানে ফুলসজ্জার খাট।মেঝেতে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে আয়াস + শুদ্ধতা লেখা সেটা আবার লাভ আকারে বৃত্তাকার করে রাখা।যেটা ছিলো আমার জন্য সব থেকে বেশী বিরক্তিকর আর কষ্টের ব্যাপার।অভি ছাড়া অন্য কারো নামের পাশে নিজের নাম টা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না আমি।চিনি না জানিনা দু’মিনিটের পরিচয় নেই যার সাথে তার সাথে ফুলসজ্জা কি আদেও সম্ভব।আমার সাথে ঠিক এমনটায় হলো।দুঃখে -কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে।
–এরই মাঝে আয়াস ঘরের ভেতর প্রবেশ করলেন কানে ফোন নিয়ে।কারো সাথে ফোনে কথা বলছেন বলে মনে হচ্ছে।ঘরে প্রবেশ করেই এক হাতে ফোন অন্যহাতে দরজার সিটকিনী লাগিয়ে দিয়ে আমার দিকে তাকালেন।চোখে গভীর চাহনী যেনো দীর্ঘকাল ধরে দেখার তৃষ্ণা তার চোখে।একটা অপরিচিত মেয়ের দিকে একটা ছেলে এইভাবে কিভাবে থাকতে পারে। আমার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলেন এরপর ই আবার ফোনে মনোযোগ দিলেন।মাথার পেছনের চুলে হাত চালাচ্ছেন আর ফোনে কথা বলছেন। সিটকিনী ভালোভাবে লাগানো হয়েছে চেক করে নিয়ে আবার ও এক হাত দিয়েই সেরোয়ানির বোতাম খুলতে খুলতে আমার দিকে এগিয়ে এলেন।আমার দিকে এগোতে গিয়ে আবার থমকে গেলেন চোখ দিলেন ফ্লোরের দিকে।আমি উনার দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য করছি উনি কি করছেন।ফোনটা কেটে দিয়ে ফ্লোরে হাঁটু ভেঙে বসে পড়লেন।আমার আমার লেখা নামের গোলাপের পাঁপড়ি গুলো সব একজায়গা করলেন।পাঁপড়ি গুলো তুলে সেরওয়ানির পকেট থেকে একটা রোমাল বের করে রোমালের মধ্য নিয়ে আবার পকেটে রাখলেন।হাঁটু ভাজ করে বসে মনে হয় একটু কষ্ট হয়ে গিয়েছে উনার উঠে দাঁড়িয়ে একটা জোরে নিঃশ্বাস নিলেন।
আবার ও আমার দিকে তাকালেন আর ধীর পায়ে এগিয়ে আসছেন আমার দিকে।ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে আমার।আমার জীবনে প্রথম এমন বাজে অভিজ্ঞতা।হৃদপিণ্ড কাঁপছে। দ্রুত রেসপন্স করছে হার্টবিট।
আমি জড়ানো কন্ঠে বললাম,
‘একি আপনি সেরওয়ানি খুলছেন কেনো।আর দরজা লাগালেন কেনো?’
আয়াস ঠোঁটের কোনে খানিক টা নিঃশব্দে বাঁকা হাসি দিয়ে বললেন,
‘এ ঘরে আমাকে যে উদ্দেশ্য পাঠানো হয়েছে সে উদ্দেশ্য সফল করতেই এসছি ডিয়াস মিসেস মুগ্ধতা আয়াস।’
‘ভয়ে প্রায় তোতলিয়ে বললাম,কি.. কি কারণে পাঠানো হয়েছে।’
‘তুমি কি এটা বোঝোনা কেনো পাঠানো হয়েছে আমাকে ডিয়ার মিসেস।’
‘দে..দেখুন আমাদের বিয়ে হলেও এ বিয়ে আমি মানিনা।আপনাকে চিনিনা জানিনা এমন একটা অপরিচিত মানুষের সাথে আমি এসবের জন্য মোটেও প্রস্তুত নই বুঝেছেন।দূরে সরুন না হলে আমি চিৎকার করবো কিন্তু।’
উনি ধীরে ধীরে খাটের আরো কাছে চলে এলেন একদম খাটের সাথে মিশে দাঁড়ালেন।আমি উনাকে দেখে ঘাবড়ে গিয়ে খানিকটা ঝুঁকে গেলাম।উনার দুই হাতের মধ্যবর্তী জায়গা অবস্থান করছি এইবার আমি।উনি আমার দিকে সম্পূর্ণ ঝুঁকে ভ্রু নাচিয়ে নাচিয়ে বললেন,
‘চিৎকার করার অভ্যাস ভালোই আছে তোমার সেটা কিছুক্ষণ আগেই বুঝতে পেরেছি।লিগ্যাল ওয়াইফ আমার তুমি আমি কাছে গেলে চিৎকার দিলে সেটা কি খুব শোভনীয় দেখাবে মিস শুদ্ধতা।ওপস সরি!ভেরি সরি!তুমি তো এখন আর মিস শুদ্ধতা নও কিছুক্ষণ আগেই কাগজে কলমে সাক্ষর করে মিসেস শুদ্ধতা আয়াস হয়ে গিয়েছো।বাই দ্যা ওয়ে কোনসবের জন্য প্রস্তুত নও তুমি ডিয়ার মিসেস মুগ্ধতা আয়াস।হোয়াট ডু ইউ মিন বাই এসবের জন্য প্রস্তুত নই।আমার কিউরিয়াস মাইন্ড সেই এইসব সম্পর্কে কিছুটা ব্যাখা শুনতে চাইছে।’
ভাবখানা দেখো যেনো ন্যাকা।কিছুই জানেনা,কিছুই বোঝে না।আমার থেকে বুঝতে চাইছে।এসব আর্মি ছেলেরা অতিরিক্ত ভাবের হয় আর প্রচুর ফাজিল হয় আগেই শুনেছি আমি।এমন ভাবে কথা বলছে আমার জায়গা অন্য কোনো মেয়ে থাকলে নির্ঘাত উনার কথা বলার ধরণ শুনে ক্রাশ খেয়ে আহত হতো।কথায় কথায় ভ্রু নাচায় শুধু কপাল টানটান করে।
আবার ও জড়ানো কন্ঠে বললাম,
‘আপনি যে কারণে এখানে এসেছেন সেসবের জন্য প্রস্তুত না আমি।আপনি সব বোঝেন বুঝেও জানতে চাইছেন।’
উনি যেভাবে ঝুঁকে এসেছেন আমি সম্পূর্ণ সুয়ে পড়লাম বিছানার উপর তা না হলে উনার সাথে আমার টাচ লেগে যাবে।উনিও ঠিক ততটায় ঝুঁকে এসেছেন আমার দিকে।আমাদের দুজনের মাঝে দূরত্ব এক ইঞ্চি মতো হবে।উনি সেরওয়ানির লাস্ট বোতাম টা খুলছেন আমার দিকে তাকিয়ে আর দুষ্টু হাসি হাসছেন আমার দিকে তাকিয়ে।
আমি যেনো আর একটু হলে খাটের সাথে নিজেকে পিষে পটল তুলে ফেলতাম।ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিয়ে বললাম,
‘আপনার কি কোনো লজ্জা নেই।এইভাবে একটা অপরিচিত মেয়ের সামনে সেরওয়ানি খুলছেন,আর আপনি যা ভাবছেন তা কিন্তু কখনোই হবেনা। ‘
উনি খাট থেকে তোয়ালে টা নিয়ে এক ঝটকায় উঠে দাঁড়ালেন সেই সাথে আমার এক হাত ধরে টান দিলেন আমিও উঠে গেলাম।উনি আমার দিকে আবার তাকিয়ে ভ্রু উঁচিয়ে বললেন,
‘মন মাইন্ড এত ডার্টি কেনো তোমার?নিষ্পাপ ছেলেদের দেখে এমন জঘন্য চিন্তা কিভাবে আনো মাথায়।ইচড়ে পাকা তো খুব তুমি। আমি এই ঘরে চেঞ্জ করতে এসছি তোমার সাথে ফুলসজ্জা করতে নয় ওকে।এ বাড়িতে এ ঘর ছাড়া কোনো এটাস্ট বাথরুম নেই।তোমার খালামানি আমাকে এ ঘরেই পাঠিয়েছন চেঞ্জ করতে।এই দেখো আমাকে তোমার বাড়ির লোকজন ধরে এই সেরওয়ানি পরিয়ে দিয়েছেন।এটা না পড়লে নাকি বিয়ে হতো না যত্তসব ফাউল নিয়ম কানুন।বাড়ির মুরব্বিরা ধরে এসব পরিয়ে দিলো আর তাদের মেয়ে কিনা আমাকে নিয়ে উল্টা -পাল্টা ভাবছে।গরমে লাইফ টা হেল হয়ে যাচ্ছে দেখতে পাচ্ছো না আর কিছুক্ষণ এ পোশাকে আমি থাকলে তুমি অকাকেই বিধবা হয়ে যেতে।বাইরে মানুষ জন ভরপুর দরজা না লাগিয়ে চেঞ্জ করবো কিভাবে।বাই দ্যা ওয়ে তুমি কি দরজা খুলেই চেঞ্জ করো নাকি ডিয়ার মিসেস মুগ্ধতা আয়াস।ইন্না লিল্লাহ তুমি দরজা খুলেই ভাবতেই পারছি না।আমার বউ না জানি কতজন।’
আমি এবার চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বললাম,
‘আপনি চেঞ্জ করতে যান। আর একটাও বাজে কথা বলবেন না।’
উনি চেঞ্জ করতে ভেতরে প্রবেশ করলেন।
–কিছুক্ষণ আগেই আয়াস কে খালু একটা সেরওয়ানি দিয়েছিলেন পরার জন্য।তাদের রিকুয়েষ্ট এ আয়াস ব্লেজার খুলে সেরওয়ানি পরেছিলো।আয়াস এর না মা বাবা ও উপস্হিত আছে এখানে।আমার মা বাবার সাথে হাসি খুশি মুখে গল্প করেই যাচ্ছে।এমন একটা ভাব যেনো এ বাড়িটা স্বাভাবিক একটা বিয়ে বাড়ি।এখানে তেমন কিছু ঘটেই নি।কারো মাঝে কোনো অস্বাভাবিক ভাব নেই যে এ বাড়ির এক মেয়ের জায়গা অন্য মেয়ের বিয়ে হয়েছে।আয়াস ওয়াশ রুমে গিয়েছে দেখে আমি বাইরে বেরোলাম।অহনা ই পারবে আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে।আমাকে ফাঁসিয়ে বিয়ে দিয়ে নিজে হেসে খেলে বিয়ে বাড়ির দায়িত্ব পালন করছে।দরজার বাইরে গিয়ে দেখলাম অহনা ছাদের দিকে যাচ্ছে।আমিও অহনার পিছ পিছ গেলাম।অহনাকে ছাদে গিয়েই নিরিবিলি যা বলার বলবো।হঠাত অহনার একটা কথা আমার দু’পা থামিয়ে দিলো।আমি ভীষণ অবাক হয়ে গেলাম অহনার একটা কথা কানে আসাতে।অহনা ফোনে কাউকে বলছে,
‘আমার সব চেষ্টা সফল।মুগ্ধতার বিয়ে আমি দিয়ে দিয়েছি।আমার রিভেঞ্জ আমি ঠান্ডা মাথায় নিয়েছি।’
ফোনের ওপাস থেকে একটা মেয়েলি কন্ঠ বলছে,
‘আয়াস কি সবটা জানে।’
অহনা বলছে,
‘আয়াস সবটায় জানে।আর জেনেই অহনাকে ভালোবাসে। ‘
ফোনের ওপাশের কথা আমি আর শুনতে পেলাম না।
অহনা আবার ও বলছে,
‘আয়াস এমন একজন কে ভালোবাসে যে আয়াস কে ভালো ই বাসে না।আর আমাকে দেখ এত ভালবাসার পরেও সে আমার মুখের উপর বলে দিলো সে আমি নয় মুগ্ধতাকে ভালবাসে।’
আবার ও ফোনের ওপাশের কথা আমি শুনতে পেলাম না।
অহনা আবার ও বলছে,
‘গেম তো মাত্র শুরু হলো।তাছাড়া আয়াস এর কনফিডেন্স আছে সে মুগ্ধতাকে তার প্রেমে ফেলেই ছাড়বে।আর তখন ই হবে আমার রিভেঞ্জ ফুলফিল।আমি যতটা কেঁদেছি ওকেও ঠিক অতটায় কাঁদতে হবে।আমার লাইফ টা জাস্ট হেল করে দিয়েছে।’
আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো।অহনা আমার থেকে কিসের রিভেঞ্জ নিতে চাইছে।আয়াস কে তার মানে অহনা ভালবাসে।দুজন দুজন কে আগে থেকেই চিনে। আয়াস এর তার মানে অহনার সাথে রিলেশন এ ছিলো।আয়াস অহনাকে ঠকিয়েছে না কি।কিছুই তো মাথায় আসছে না।কি জানে আয়াস সবটা।আমাকে আয়াসের প্রেমে ফেললে কিসের রিভেঞ্জ ফুলফিল হবে।আয়াস আর অহনার বিয়ে ঠিক হলে অহনা কেনো পালালো আর আয়াস ই বা কেনো জোর করে আমাকেই বিয়ে করলো।মাথা ভীষণ ভাবে ঘুরে উঠলো, চক্কর দিয়ে উঠলো পড়ে যেতেই কারো শক্ত পক্ত হাত জোড়া আমাকে আকড়ে ধরলো।সাথে সাথে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বললো,
‘নতুন বউ কোথায় লজ্জায় ঘোমটা টোমটা দিয়ে চুপচাপ বসে থাকবে।তোমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি আছেন তারা কি ভাববে নতুন বউ এভাবে ছোটাছুটি করলে।’
—মুহুর্তের মাঝেই নিজেকে আয়াসের কোলে দেখে ভড়কে গেলাম আমি।এত ঠোঁট কাটা কেনো এই মানুষ টা।যা মন চাচ্ছে তাই বলে যাচ্ছে।আয়াসের কোল থেকে ঝাড়ি মেরে নিচে নেমে গেলাম আমি।আয়াসের দিকে রাগি রাগি মুডে তাকিয়ে আমি চলে গেলাম।বসন্তের প্রথম দিনে নিজের সাথে এমন একটা ঘটনা ঘটবে ভাবতে পারিনি আমি।অভির জন্য মনের ভেতর জ্বলে পড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।অভি ছাড়া পৃথিবীর কাউকে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।একজন কে ভালবাসে অন্য একজনের সাথে সংসার করা কোনভাবেই সম্ভব নয়।মা বাবার প্রতি ভীষণ দুঃখ হচ্ছে আমার।সব কিছু জেনে শুনে কিভাবে এমন টা করলো তারা আমার সাথে।এখান থেকে যাওয়ার পরে এ বাড়ির কারো সাথে আর কখনো কোনো কথা বলবোনা আমি।আয়াস নামক মানুষ টা সব কিছুর জন্য দায়ী।আমি কখনোই আয়াস কে ক্ষমা করবো না।এরই মাঝে খালামনি মানে আরহীর আম্মু আমাকে ধরে নিয়ে সেই সাজানো ঘরটায় নিয়ে গেলো।খুব বেশী সাজানো নয় এই ঘরটা তবে বেডের উপর গোলাপের পাপড়ি দিয়ে লাভ আকৃতি করে রাখা আর ওয়ালে টেপ দিয়ে ঘন ঘন গোলাপ লাগিয়ে রাখা।স্বল্প সময়ে এটুকু আয়োজন বোঝায় যাচ্ছে।আর ফ্লোরে আয়াস এর নাম লেখা।এখন মন চাচ্ছে এই আরহীকে জ*বাই করে ফেলতে।আজ এই আরহীর চক্করে আমার জীবন টা নষ্ট হয়ে গেলো।
ছোট খালামনি মানে আরহীর আম্মু আমাকে বাসর ঘরে নিয়ে এলো।
‘খালামনিকে বললাম,এটাকি ঠিক হলো খালামনি একটা অচেনা পুরুষের সাথে আমাকে বিয়ে দেওয়া?’
‘আমার আর তোর মায়ের যখন বিয়ে হয়েছিলো তোর বাবা আর খালুকে ও আমরা দেখেছিলাম না।আমাদের কি ঘর সংসার হয় নি।আমাদের কি দাম্পত্য জীবনে কোনো অসুবিধা আছে। আয়াস খুব ভালো ছেলে নাহলে কি আর তোর খালু বিয়েটা দিতো।’
‘আমি অভিকে ভালবাসি খালামনি।কোনো আয়াস ফায়াস আমি মেনে নিতে পারবোনা।’
‘একদম চুপ!বাইরে আয়াস আছে সে যেনো কিছুতেই অভির কথা না জানে বুঝলে।মুগ্ধ তোমার এখন বিয়ে হয়ে গিয়েছে আর আয়াস ই তোমার স্বামি।এখন পরপুরুষের কথা ভুলেও ভেবোনা।অভিকে নিয়ে কম অশান্তি তুমি করোনি।এইবার অভি অভি কম করে করো বুঝলে।’
‘আমি কিন্তু পালিয়ে যাবো অভির সাথে বলে দিলাম খালামণি।’
‘তোমার স্বামি আর্মি অফিসার কাজ টা খুব সহজ হবে না মুগ্ধ।আয়াস কে এতটাও দূর্বল ভেবোনা মুগ্ধ।’
এরই মাঝে আরহী গালের সব গুলো দাঁত বের করে হাসতে হাসতে আয়াস কে নিয়ে রুমের মধ্য প্রবেশ করলো।আমার জীবন টা এইভাবে জ্বালিয়ে দিয়ে আরহী দাঁত বের করে কিভাবে হাসছে ওর কি একটুও লজ্জা লাগছে না।সাথে আরহীর ভাই অয়ন ভাইয়ার বউ পিহু ভাবি।ভাবির হাতে এক থালা দুধ ভাত।আমার সন্দিহান মন ভেবে যাচ্ছে এই দুধ ভাত দিয়ে কি হবে।
–ভাবি বললো,আয়াস ভাই আমার ননদের পাশে গিয়ে বসো।
–আয়াস জুতা খুলে আমার পাশে এসে বসলেন।আরহী যেনো আমাকে চিনেই না আয়াসের পাশে বসে গল্প করেই যাচ্ছে।
–ভাবি বললো, এখন দুধ ভাত খাওয়ানোর পালা।বিয়ের পর স্বামি স্ত্রী দুজন-দুজন কে খাওয়াতে হয়।
–আয়াস নিচের ঠোঁট কামড়ে মৃদু মৃদু হাসছে।রাগে সমস্ত শরীর পুড়ে যাচ্ছে আমার।আমাকে কিনা এখন এর হাতের খাবার খেতে হবে।আমি এক বাক্য বলে দিলাম আমি এসব পারবো না খাওয়াতে।আয়াস সাথে সাথে আমার দিকে তাকালো।
–ভাবি বললো, তুমি না বললেই কি হবে।বিয়ের দিন কনে চুপচাপ বসে থাকো।আমরা যা করবো সেটাই হবে বুঝলে।ভাবি আয়াস কে বললো মুগ্ধতার মুখে খাবার তুলে দাও।আয়াস নির্লজ্জের মতো খাবার নিয়ে আমার মুখে দিয়ে বললো,না খেলে হাত সরাবো না।তার হাত সরাতে দ্রুত খাবার গিলে ফেললাম।
–ভাবি বললো,এবার মুগ্ধর পালা।আমাকে কয়েকবার বলাতে কাজ না হওয়ায় ভাবি আমার হাত ধরে আয়াস এর গালে দুধ ভাত দেওয়াতে গেলে আয়াস আমার হাতে কামড়ে ধরে রেখেছে।এমন ভেবে ধরেছে ব্যাথাও পাচ্ছিনা আবার হাত ও বের করে আনতে পারছিনা।আয়াস ড্যাবড্যাব করে আমার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হাসি দিচ্ছে।দাঁত কিড়মিড় করে বললাম হাত ছাড়ুন বলছি।
ভাবি আমাকে বলছে কি ব্যাপার মুগ্ধ প্রথমে তো খাওয়াবে না এখন হাত ই সরাচ্ছো না।
–আরহী বললো ভাবি চলো তারা নিজেদের মতো একটু সময় কাটাক।গাড়ি এসে যাবে এখনি তাদের রওনা দিতে হবে।নিজেদের মাঝে কিছুক্ষণ কথা বলুক।ভাবি আর আরহী চলে গেলে আয়াস কে বললাম মানুষের মাঝে এটা কি করলেন।
–আয়াস বললেন,এখন কেউ নেই তাহলে কি এখন।
–আমি আবার ও রাগি মুডে বললাম ভুলেও আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না।আপনি একটা ঠক ছোট লোক মানুষ।
আয়াস উঠে গিয়ে হাত ধুয়ে বললেন,নেক্সট টাইম না জেনে শুনে কিছু বলবেনা।আমি আন্দাজে কথা বলা পছন্দ করিনা একদম।
এক্ষুনি ব্যাগ গুছিয়ে নাও আমাদের বেরোতে হবে।বাইরে গাড়ি হর্ন দিচ্ছে বারবার।
এরই মাঝে দেখি আম্মু আর খালামনি আমার ব্যাগ পত্র সব গুছিয়ে রেখেছে।আমাকে এক্ষুনি আমার প্রিয় বাড়িটা ছেটে বিদায় নিতে হবে।কেমন দুঃস্বপ্নের মতো বদলে গেলো সব কিছু।একটা রাত আমার জীবন বদলে দিলো।অনেক রহস্য অজানা থেকে গেলো।নিজের প্রেমিকের বিয়ে দিয়ে আরহীর নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট হচ্ছে।আজ আর আরহীর সাথে এ ব্যাপারে কোনো কথা বলার সুযোগ হলোনা।এক্ষুনি বিদায় দেওয়া হবে আমাকে।অভিকে বলা ও হলো না আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে অভি।এই নিউজ টা কিভাবে দিবো আমি অভিকে।
অভি আর আমাকে নিয়ে এমন একটা বিয়ের স্বপ্ন ই তো আমি দেখেছিলাম।মা -বাবা জেনে শুনেই বা কেনো অভির সাথে আমার বিয়ে দিলো না।এই আয়াস কে ঘিরে কি কোনো অন্য কাহিনী আছে।সবটায় অজানা আমার।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত
বিষয়: #তুমিময় #বসন্ত