শিরোনাম:
ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩১

Somoy Channel
রবিবার ● ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ছাত্রলীগ করার অপরাধে ঋণ পেলেন না ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ছাত্রলীগ করার অপরাধে ঋণ পেলেন না ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী
৫৯ বার পঠিত
রবিবার ● ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

ছাত্রলীগ করার অপরাধে ঋণ পেলেন না ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী

ছাত্রলীগ করার অপরাধে ঋণ পেলেন না ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীঅফিসে প্রধানমন্ত্রীর ছবি কেন, প্রশ্ন ব্যাংক কর্মকর্তার! শেষ পর্যন্ত একসময় ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকার কারণে ঋণ পেলেন না ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। ভুক্তভোগীর সামনেই ঋণ গ্রহণের কাগজপত্র ছিড়ে ফেললেন ব্যাংক কর্মকর্তা।

মো. মেহরাব হোসেন খান একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। ‘এনএনটি’ নামে হাতে তৈরি একটি ব্যাগের কারখানা আছে। স্কুল ছাত্রছাত্রীদের প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ বিধায় জানুয়ারি মাসে এসব ব্যাগের চাহিদা থাকে প্রচুর। তিনি জানুয়ারি মাস লক্ষ্য করে ব্যাগের উৎপাদন বাড়াতে চেয়েছিলেন- যাতে চাহিদা অনুযায়ী ব্যাগের জোগান দিতে পারেন। সেই লক্ষ্যে তিনি ব্যাংক থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নেওয়ার চিন্তা করেন।

২৬ নভেম্বর, ২০২৩ তারিখে ব্র্যাক ব্যাংক, ধোলাইখাল শাখায় ৭ লক্ষ টাকা ঋণের জন্য আবেদন করেন মেহরাব। যথারীতি ঋণ পাওয়ার জন্য যা যা ডকুমেন্টস (ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন, আয়কর রিটার্ন ইত্যাদি) প্রয়োজন তার সবকিছুই ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছিলেন। কর্তৃপক্ষ সকল কাগজপত্র যাচাই করার পর ঋণ প্রদান করবেন মর্মে ভুক্তভোগী মেহরাবের কাছ থেকে ৩,৭২,১২৬*২=৭,৪৪,২৫২/- টাকার দুটি চেক নেন। ৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলেন তিনি ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে ঋণ পেয়ে যাবেন। কিন্তু ১১ ডিসেম্বর ব্র্যাক ব্যাংক, ধোলাইখাল শাখার কাস্টমার রিলেশন অফিসার জাকির হোসেন ভুক্তভোগী মেহরাবকে কল দিয়ে দ্রুত ব্যাংকে আসার জন্য বলেন। ব্যাংকে যাওয়ার পর মেহরাব হোসেন জানতে পারেন আপাতত তাকে ঋণ দেওয়া হচ্ছে না। জানুয়ারি ২০২৪ এর শেষ অথবা ফেব্রুয়ারির শুরুতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়। তখন তারা ভেবে দেখবেন ঋণ দেওয়া যাবে কি-না। কিন্তু জানুয়ারির শেষে মেহরাব হোসেনের ঋণের প্রয়োজন নেই, কারণ তখন ব্যাগের চাহিদা তেমন থাকে না।

ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই মেহরাব হোসেনকে ঋণ দিলেন না। ঋণ না দেওয়ার বিষয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে বারবার জিজ্ঞেস করা হলেও তারা এর কোন উত্তর দেননি। এক পর্যায়ে ব্র্যাক ব্যাংকের ধোলাইখাল শাখার ঋণ সেকশনের ম্যানেজার সাব্বির বলেন, নির্বাচনী সহিংসতার কারণে দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। যদিও এর কোনো অফিসিয়াল ডকুমেন্ট তিনি দেখাতে পারেননি। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের কারণে ঋণ দেওইয়া বন্ধ কিন্তু এমডি বললে ঋণ দিবে। তবে ছোট লোনগুলো নির্বাচনের কারণে দিবে না। কারণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ হঠাৎ ডিসিশন নিয়ে মেইল করেছে, ছোট ঋণের কোঠা পূরণ হয়ে গেছে। ছোট লোনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আসছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। সাব্বির বলেন, টাকা দিবে, কিন্তু সময় লাগবে। সাব্বির আরও বলেন, ডিসেম্বরে ৮০% ছোট লোনই দেওয়া বন্ধ থাকে।

জানুয়ারি মাসে ঋণের প্রয়োজন নেই বলে মেহরাব ঋণ নেবেন না। তাই তিনি ঋণ সংক্রান্ত সকল ডকুমেন্টস নিয়ে আসার সময় কাস্টমার রিলেশন অফিসার জাকির হোসেন দৌড়ে আসেন এবং তার হাত থেকে ডকুমেন্টসগুলো নিয়ে ছিড়ে ফেলার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে মেহরাব বাঁধা দিলে জাকির হোসেন ব্যাংকের ঋণ সংক্রান্ত দুটি কাগজ ছিড়ে ফেলেন।

মেহরাব হোসেন তার ডকুমেন্টস ছিড়ে ফেলার কারণ এবং কেন ঋণ দেওয়া হচ্ছে না সে বিষয়ে জানতে চেয়ে ধোলাইখাল ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের কাছে যান। ম্যানেজার তাকে জানান, নির্বাচনের কারণে আমাদের ব্যাংকের ঋণ দেওয়া বন্ধ নেই, ব্যাংকের সকল কাজ চলমান রয়েছে। তিনি (সাব্বির হোসেন) এমন কথা (নির্বাচনের কারণে ঋণ দেওয়া বন্ধ) বলতে পারেন না।

তিনি জানান, অডিটের পর ভালো রিপোর্ট দিলে তখন একাউন্ট করে লোন দেওয়া হয়।

ইতোপূর্বেই মেহরাবের প্রতিষ্ঠানে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অডিট করেছেন কিন্তু তখন কোনো নেতিবাচক প্রতিবেদন তারা দেননি। এমনকি মেহরাব হোসেন ব্র্যাক ব্যাংকে একাউন্ট খুলে দুটি চেকও জমা দিয়েছিলেন।

ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের কাছে সদুত্তর না পেয়ে মেহরাব হোসেন আসেন এসএমই ব্রাঞ্চের হেড মাহফুজুর রহমানের কাছে। কেন তার প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া হচ্ছে না তার কারণ তিনি অফিসিয়ালি জানতে চান। তখন মাহফুজুর রহমান বলেন, ব্যাংক লিখিত কোনো স্টেটমেন্ট দেয় না।

তিনি জানান, ঋণ যেকোনো সময় ডিক্লাইন হতে পারে। ১/২ দিনের মধ্যে পেয়ে যাবেন বলার পরও ডিক্লাইন হতে পারে। ফাইল সব ঠিক, এপ্রোভড, লোন পেয়ে যাবে তখনও ডিক্লাইন হতে পারে। এসএমই লোন স্লো, যারা ২০ লাখ পাওয়ার কথা তারা ১০-১৫ লাখ পাচ্ছেন।

কিন্তু তিনিও মেহরাবের ঋণ হঠাৎ করে ডিক্লাইন হওয়ার কারণ স্পষ্ট করে বলতে পারেননি।

মেহরাব হোসেন অভিযোগ করে বিবার্তাকে বলেন, ব্র্যাক ব্যাংক লোন ডিসেম্বরে দেওয়ার কথা বলার পর কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই জানুয়ারির শেষ অথবা ফেব্রুয়ারিতে দেওয়ার কথা বলছেন, যখন আমার লোনের প্রয়োজন নেই। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ডিসেম্বরে টাকা দিবেন বলেই আমার কাছ থেকে সকল ডকুমেন্টস ও দুটি চেকও নিয়েছেন।

তিনি বলেন, ব্যাংকের লোকজন যখন অডিটে এসেছিলেন তখন ধোলাইখাল ব্রাঞ্চের ঋণ শাখার ম্যানেজার সাব্বির কারখানার অফিসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি দেখে জিজ্ঞেস করেছিলেন ‘আপনার অফিসে প্রধানমন্ত্রীর ছবি লাগানো কেন?’ তিনি আরো বলেন, ‘আমার বাড়ি গোপালগঞ্জ, আমি অফিসে প্রধানমন্ত্রীর ছবি লাগাই না- আপনি কেন লাগিয়েছেন? আপনি রাজনীতি করেন?’ ‘হ্যাঁ, আমি রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম, এখন ব্যবসা করছি’।

তিনি আরো বলেন, অডিটে প্রতিষ্ঠানের সবকিছুই ঠিক ছিল। আমার প্রতিষ্ঠানের মার্কেট ভ্যালু ৫০ লাখ টাকা, তার বিপরীতে ৭ লাখ টাকা লোনের জন্য এপ্লাই করেছি। সেই ঋণ ১০-১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে পাওয়ার কথা। ব্যাংক থেকে আমার বাবার কাছেও ফোন করে জানানো হয় লোন পাচ্ছি। কিন্তু এরপরই সাব্বির টালবাহানা শুরু করেন। হঠাৎ ১১ ডিসেম্বর, ২০২৩ তারিখে সকাল ১০.৩০ মিনিটের দিকে জাকির হোসেন আমাকে ফোন দিয়ে ধোলাইখাল ব্রাঞ্চে আসতে বলেন। আমি ব্রাঞ্চে গেলে সাব্বির জানান, নির্বাচন, হরতাল, অবরোধ, ডিসেম্বর মাস ইত্যাদি নানা অজুহাত দেখিয়ে ঋণ পেতে দেরি হবে। যদিও এই সমস্ত অজুহাত ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন ধোলাইখাল ব্রাঞ্চের ম্যানেজার।

এনএনটি এর কর্ণধার বলেন, ব্যাংকে ডেকে নিয়ে আমাকে রীতিমতো অপমান করা হয়। আমার বাবা বাংলাদেশে ব্যাগ প্রস্তুত কারক সমিতির সভাপতি। আমার বাবাকে নিয়েও নানা কথা বলেন সাব্বির। আমি ঋণের টাকা দিবো না, টাকা নিয়ে ইতালি পালিয়ে যাবো ইত্যাদি মিথ্যাচার করেন।

এব্যাপারে কাস্টমার রিলেশন অফিসার জাকির হোসেন বলেন, (গ্রাহকের কাছ থেকে) চেক নেওয়ার পর ঋণ ডিক্লাইন করার নিয়ম নেই, এটা ম্যানেজমেন্টের উপর নির্ভর করে। মেহরাবের হাত থেকে ডকুমেন্টস নিয়ে ছিড়ে ফেলার বিষয়ে জাকির হোসেন বলেন, এগুলো আমাদের ডকুমেন্ট আমরা রেখে দিছি, ওনার যে ডকুমেন্ট সেগুলো ওনাকে দিয়ে দিছি।

এব্যাপারে ধোলাইখাল ব্রাঞ্চের এসএমই জোনের হেড মাফফুজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন, পরে কথা বলবেন বলে ফোন রেখে দেন।

এব্যাপারে ঋণ সেকশনের ম্যানেজার সাব্বির এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার মুঠোফোনের নম্বর দিতে অস্বীকৃতি জানান কাস্টমার রিলেশন অফিসার জাকির হোসেন।

উল্লেখ্য, ৩১ মে, ২০২৩ সালের হিসেব অনুযায়ী, ব্র্যাক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ; খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৬১৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। যেখানে প্রতিনিয়ত বিশেষ বিবেচনায় হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হচ্ছে সেখানে মাত্র ৭ লাখ টাকা ঋণের জন্য একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ঋণ পাচ্ছেন না। তার প্রতিষ্ঠানের বাজার মূল্য ৫০ লাখ টাকা হলেও তার বিপরীতে মাত্র ৭ লাখ ঋণ দেয়নি ব্র্যাক ব্যাংক। অফিসে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি থাকার কারণে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। ছাত্রলীগ করার কারণে টাকা মেরে দিবেন এমন মিথ্যাচার শুনতে হয়।



বিষয়: #  #  #  #  #


আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)