সোমবার ● ২৯ জানুয়ারী ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » সিলেটে গ্যাস: তিন মাসে তিন কূপের সন্ধান, দুয়ার খুলছে সম্ভাবনার
সিলেটে গ্যাস: তিন মাসে তিন কূপের সন্ধান, দুয়ার খুলছে সম্ভাবনার
সিলেটে কূপ খননের কারণে মাসে মাসেই মিলছে গ্যাসের সন্ধান। গত তিন মাসে তিনটি কূপে গ্যাসের সন্ধান মিলেছে। এতে গ্যাসের মজুদের সম্ভাবনাকেও আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে দুই বছরে ৭টি কূপ খনন করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তিনটি কূপ খননের বিষয়ে জানা যায়।
প্রাকৃতিক সম্পদের আঁধার হিসেবে পরিচিত সিলেট । আর নতুন ওই তিনটি কূপসহ সবমিলে প্রতিদিন সিলেট থেকে আরও ২৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে। সর্বশেষ সিলেট গ্যাসফিল্ডের আওতাধীন রশিদপুরের ২ নং কূপে গ্যাসের নতুন স্তরের সন্ধান মেলে।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, সিলেটের রশিদপুর-২নং গ্যাস কূপ অনুসন্ধানে নতুন গ্যাস স্তরের সন্ধান পাওয়া গেছে; যার পরিমাণ প্রায় ১৫৭ বিলিয়ন ঘনফুট এবং বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১০ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা।
আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে এখান থেকে দৈনিক ৮০ লাখ ঘনফুট হারে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে শেখ হাসিনা সরকারের অগ্রাধিকার আগামীতে বাংলাদেশের জন্য আরও বড় সুসংবাদ বয়ে আনবে আশা করি।’
এর আগে, গত ২৬ নভেম্বর দেশের সবচেয়ে পুরানো গ্যাসক্ষেত্র হরিপুরের ১০ নম্বর কূপে গ্যাসের সন্ধান মেলে। খনন কাজ শেষে ওইদিন গ্যাস প্রাপ্তির তথ্য নিশ্চিত করে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল)। গতবছরের জুনে এই কূপ খনন কাজ শুরু হয়। ১৪৯ কোটি টাকায় সিলেট-১০ নম্বর কূপ খনন করে চীনা কোম্পানি সিনোপেক।
কূপটিতে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে জানিয়েছে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কর্তৃপক্ষ।
সিলেট গ্যাস ফিল্ড কর্তৃপক্ষ জানায়, এখানে থেকে দৈনিক ১৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন তারা। এই কূপে মজুদ গ্যাসের মূল্য ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এলএনজি আমদানি মূল্য হিসেবে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।
এরও আগে, গত ২২ নভেম্বর সিলেটের কৈলাশটিলায় পরিত্যক্ত ২ নং কুপ থেকে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। এখান থেকে দৈনিক ৭০ লাখ ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে।
জানা যায়, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি মোট ১৪টি কূপ খনন করবে। প্রথম দুই বছরে ৭টি শেষ করার কথা ছিল। তবে তিনটির কাজ শেষ হয়েছে। আর চলছে একটি কাজ, যা এক মাসের মধ্যে শেষ হতে পারে।
কোম্পানিটি সূত্র জানিয়েছে, তাদের খনন করা দুটি কূপ থেকে ১ কোটি ৬০ লাখ ঘনফুট গ্যাস নতুন যুক্ত হয়েছে গ্রিডে। আর একটি অনুসন্ধান কূপে নতুন গ্যাস পাওয়ার পাশাপাশি তেলও পাওয়া গেছে। তবে এটি থেকে গ্যাস উত্তোলন করতে আরও অন্তত ৮ মাস সময় লাগতে পারে।
সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান গণমাধ্যমে জানান, জমি অধিগ্রহণ, ঠিকাদার নিয়োগ, খননের যন্ত্রপাতি আনায় সময় লেগে যায়। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সবগুলো শেষ করা হবে।
সিলেটের হরিপুরে প্রথম গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায় ১৯৫৫ সালে। এরপর আবিষ্কার হতে থাকে একের পর এক গ্যাসক্ষেত্র। বর্তমানে এসজিএফএল-এর আওতায় পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। সেগুলো হলো- হরিপুর গ্যাসফিল্ড, রশীদপুর গ্যাসফিল্ড, ছাতক গ্যাসফিল্ড, কৈলাশটিলা গ্যাসফিল্ড ও বিয়ানীবাজার গ্যাসফিল্ড। এর মধ্যে ছাতক গ্যাসফিল্ড পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। বাকিগুলোর মধ্যে ১৪টি কূপ থেকে বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ১০৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে।
জানা যায়, জ্বালানি সংকট নিরসনে গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে দেশের ৪৬টি কূপ অনুসন্ধান, খনন ও পুনঃখননের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। ২০২৫ সালের মধ্যে এসব খনন কাজ শেষ হওয়ার কথা। এতে ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
২০২২ সালে সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের (এসজিএফএল) আওতাধীন সিলেট-৮, কৈলাশটিলা-৭ ও বিয়ানীবাজার-১ নামে তিনটি পরিত্যক্ত কূপ পুনঃখনন করা হয়। এসব কূপ থেকে দৈনিক ১৬ থেকে ১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় সঞ্চালন লাইনে সরবরাহ করা হচ্ছে।
বিষয়: #কূপ #গ্যাস #তিন #দুয়ার #মাস #সন্ধান #সম্ভাবনা #সিলেট