রবিবার ● ২৮ জানুয়ারী ২০২৪
প্রথম পাতা » সাহিত্য রম্যগল্প » আলিফ লায়লা
আলিফ লায়লা
“শাড়ি খুলে স্বাদ মেটে নি?? এবার কি বাকি গুলোও খুলতে এসেছেন??”
কথাটা শুনে রাজ্য অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায় নীশুর দিকে। তার চোখ থেকে যেন আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে। সেই ফুলকি নিশুকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে ধেয়ে আসছে তার দিকে। কিন্তু নীশু একটুও ঘাবড়ে যায় নি। তার ইচ্ছে করছে আরো কয়েকটা কঠিন কথা শুনিয়ে দিতে রাজ্যকে। আর শুনাবেই না কেনো?? নীশু প্রায় দুই ঘন্টা সময় ব্যয় করে কত সুন্দর ভাবেই না শাড়িটা পড়েছিল। সে রুম থেকে বের হতে না হতেই রাজ্য কোথা থেকে ধুম করে এসে নীশুর শাড়ির কুঁচিতে হ্যাঁচকা টান দেয়। ব্যস, তাতেই হলো। হরহর করে শাড়ির কুঁচিগুলো ফ্লোরে গড়াগড়ি খেতে শুরু করলো। রাগে, দুঃখে নীশুর চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরা শুরু করে দেয়। অনুষ্ঠানের আমেজে বাড়ি ভর্তি মেহমান। কেউ দেখলে কি কেলেঙ্কারি-ই না হবে! নীশু কুঁচিগুলো কোনো রকম পেঁচিয়ে নিয়ে রুমে চলে যায়। কাঁদতে কাঁদতে শাড়ি ঠিক করার সময় দরজা খোলার শব্দে সে পেঁছনে তাকিয়ে দেখে রাজ্য আবার চলে এসে তার পিছু পিছু। তাই রাগের মাথায় বলে ফেলে কথাটা। তাতে তার বিন্দুমাত্র অনুতাপ হচ্ছে না। হবেও না। কেনো হবে?? হবে না। হওয়ার কোনো কারণ নেই তো। প্রায় নয় মাস হতে চলল রাজ্য পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরেছে। এই নয় মাসে নীশু যতবার বাড়ি টাতে এসেছে ততবারই রাজ্যের এই মিসবিহেভ এর শিকার হচ্ছে। কিছু দিন আগেই নীশু এসেছিল। সেদিন বিকেলে রাস্তায় হাঁটতে যায়। শীতের আগের বিকাল গুলো খুব ভালো লাগে তার। তখন আকাশের লালচে আভার সূর্য টা তাকে বিমোহিত করে। রাস্তার পাশ ধরে হাঁটতে হাঁটতে সে প্রকৃতিটা উপভোগ করছিল। তখনই রাজ্য বাইক নিয়ে এসে তার গলায় ঝুলে থাকা উড়নাটা ছিনিয়ে নেয়। মাথায় হ্যামলেট না পড়ে তার উড়না পেঁচিয়ে বেঁধে নেয়। তারপর নীশুর দিকে তাকিয়ে বলে,
“উড়না তো গলায়-ই ঝুলে আছে। তার চেয়ে বরং আমার মাথায় থাক।”
বলেই সে হনহন করে চলে যায়। কত বড় বেয়াদব ছেলে! রাস্তা ঘাটে চুরি-ডাকাতি করে। যে সে চোর না। উড়না চোর। তখন নীশুর ইচ্ছে করছিল উড়না তার মাথায় না দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে দিতে। মেরে ভুত বানিয়ে ফেলতে ইচ্ছে হয়েছিল। কিন্তু ভুত বানালে তারই ক্ষতি হত। ছেলেটা যা ভয়ংকর। দেখা যেত ভুত হয়েই নীশুর ঘাড়ে বসে যেত। শুধু এই বাড়িতেই না। নীশুর ভার্সিটিতে পর্যন্ত হামলা করে। এই তো মাস খানেক আগের ঘটনা। নীশু বন্ধুদের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। তখনই রাজ্যের উদয় হয়। সে হুট করে এসে নীশুর হাত ধরে টানাহেঁচড়া করে তাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। সিঁড়ি ঘরের দেয়ালে তাকে চেপে ধরে বলে,
“ভার্সিটিতে কি ফ্যাশন সোও করতে আসা?? নাকি ছেলেদের সাথে ফষ্টিনষ্টি করতে আসা?? কোনটা??”
তখন নীশু একটা কথাও বলতে পারেনি। শুধু অঝোরে তার চোখ থেকে অশ্রু ঝরেছে। আর রাজ্য তার ঠোঁটের লিপস্টিক বুড়ো আঙুল দিয়ে ছেদ্রে দিয়েছে। তার চোখের কাজল ছড়িয়ে দিয়েছে। চুল এলোমেলো করে দিয়ে এসেছে। শুধু চুল না তাকেও লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে এসেছে। সেদিন নীশু একটা ক্লাসও করতে পারেনি। শুধু সেদিন না। সেদিনের পর প্রায় পনেরো দিনের মতো সে ভার্সিটি যায় নি। পনেরো দিন পর গিয়ে শুনে রাজ্য তার বন্ধুদের হুমকি ধামকি দিয়ে এসেছে যেন নীশুর আশেপাশে তাদের না দেখে। এরপর থেকে শুধু বন্ধু গুলোই না বান্ধবী গুলোও তার সাথে মিশতে চায় না। যে কোনো ভাবেই তাকে এড়িয়ে চলে। এখন আর তার ভার্সিটি যেতেও ইচ্ছে করে না। এ বাড়িতেও আসত না। শুধুমাত্র নীশুর মায়ের জন্য এসেছে। রাজ্যের মায়ের বন্ধু নীশুর মা। তাদের বন্ধুত্ব কে সম্মান করে বলেই সে এসেছে। তাই বলে সে এ ধরনের ব্যবহার কেনো পাবে?? নীশুর ইচ্ছে হচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত জঘন্য ভাষায় রাজ্যকে অপমান করতে। কিন্তু যে কথা বলেছে তার জন্যই সে ফেঁসে গেছে। রাজ্য সত্যি সত্যিই নীশুর সামনে এসে তার শাড়ির আঁচলে টান দিতে যায়। রাজ্যের টানাহেঁচড়াতে শাড়ি না খুললেও শাড়িতে থাকা পিন খুলে গিয়ে নীশুর শরীর ক্ষত বিক্ষত করছে। চুলের খোঁপা খুলে গিয়ে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে তার চুল। শুধু তাই না, হাতের রেশমি কাঁচের চুড়ি গুলোও ভেঙ্গে গেছে। ভোরের শিশিরের মতো সেই হাত থেকে টুপ টুপ করে রক্ত ঝরছে। চুড়ির আঘাতে যে কেটে গেছে হাতটাও। টুপটাপ করে শুধু রক্তই ঝরছে না, সাথে চোখের পানিও বাঁধ ভেঙে গড়িয়ে পড়ছে গালে। গাল বেয়ে বুকে। রাজ্য শাড়ি ছেড়ে দিয়ে নীশুর দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। আর নীশু সেখানেই বসে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে। নীশুর খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে। ছেলেটা এমন কেনো?? কেনোই বা তার সাথে এমন করে?? কি দোষ করেছে নীশু?? নীশুর কান্নার বেগ বেড়েই চলছে। অসাড় হয়ে যাচ্ছে তার শরীর। কাটা জায়গা গুলোতে জ্বালাপোড়া শুরু হয়ে গেছে। তবুও ইচ্ছে করছে না উঠে গিয়ে অয়েনমেন্ট লাগাতে। নীশু ফ্লোরে হাত পা ছড়িয়ে অঝোরে কাঁদছে শুধু।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত
বিষয়: #আলিফ #লায়লা