শিরোনাম:
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

Somoy Channel
বুধবার ● ২৪ জানুয়ারী ২০২৪
প্রথম পাতা » সাহিত্য রম্যগল্প » গল্পঃ_বেলাশেষে
প্রথম পাতা » সাহিত্য রম্যগল্প » গল্পঃ_বেলাশেষে
৬১ বার পঠিত
বুধবার ● ২৪ জানুয়ারী ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

গল্পঃ_বেলাশেষে

গল্পঃ_বেলাশেষেযার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে প্রথমত আমি তার তৃতীয় স্ত্রী আর দ্বিতীয়ত তিনি বয়সে আমার থেকে অনেক বড়। একসময় আমি তাকে চাচা হিসেবে সম্বোধন করতাম কিন্তু ভাগ্য দোষে আজ তার সাথে আমার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হয়েছে।
তবে বিয়েটা আমার নিজের ইচ্ছায় হয়েছে, অবশ্য ইচ্ছাকৃতভাবে এই বিয়েটা না করলে আমাকে হয়তো সৎ মায়ের অত্যাচারে আ’ত্মহত্যা করতে হতো, তাই তো এই বিয়েটাকে হাসিমুখে মেনে নিলাম, এতে সৎ মা ও নগদ ৫০ হাজার টাকা পেলো, আর আমি ও অন্তত মনের মতো জিবন না পেলোও আমার আকাশে কখনো কালো মেঘে রাগটা দেখা না যাওয়ার মতো জিবন পেয়েছি।
.
যাইহোক বিয়ের পর লোকটির সাথে তার বাড়িতে যেতেই ভয়ে হাত,পা সব কেমন জানী কাঁপতে থাকে,তার বাড়ি দেখে শুধু একটা কথাই মনে হলো বিশাল সম্রাজ্যের সম্রাট তিনি, যা আমার ধরাছোঁয়ার বা কল্পনার বাহিরে, পৃথিবীতে এতো সুন্দর বাড়ি আছে তা আমি কখনোই জানতাম না, অবশ্য জানবো কি করে আমার জ্ঞান যে অতি ক্ষুদ্র। যা বেড়ার ওই ছোট ঘরের ভিতরে বন্দি ছিলো। ঘরে পা দিতেই চারপাশে তাকিয়ে ভয়ে ঘামাতে লাগলাম, আমার এরুপ অবস্থা দেখে লোকটি মুচকি হেসে আমাকে বললো,
– ‘তুমি কি কোনো কারনে ভয় পাচ্ছ?’
লোকটির মুখ থেকে কথাটি শুনে টপটপ করে আমার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো, অবশ্য পড়বেনাই কেন পুরো বাড়িতে ঝাড়বাতির আলোতে একজন উচু লম্বা ফর্সা মতো বয়স্ক লোক আর আমি ছাড়াই কেহই নেই।
আর তাছাড়া ওনার ডাগর- ডাগর চাহনি দেখে যে কেহই ভয়ে আতকে উঠবে, বুঝে ফেললাম লোকটি ভালো নয় তাইতো ওনার প্রথম স্ত্রী গুলো ওনাকে ছেড়ে চলে যায়।
– ‘কী হলো তোমার বাড়ি পছন্দ হয়নি।’
– ‘না, ইয়ে মানে বা,বা বাড়ি প,প।’
– ‘এরুপ তোতলাচ্ছো কেন, আর এমন ঘামাচ্ছ বা কেন, আমি কি বাঘ না সিংহ।’
লোকটি এই কথাটি বলে হাসতে - হাসতে উপরে উঠতে লাগলো, হঠাৎ করতালি দিতে লাগলো, ওনার করতালির আওয়াজে বাড়ির চারপাশের সবগুলো লাইট ক্রমানয়ে জ্বললো, তারপর অনেকগুলো মহিলা বের হলো।
তারা আমাকে দেখে হাসিমুখে বলতে লাগলো,
– ‘আফামনি আপনাকে স্বাগতম!’
এই বলে আমার মাথায় ফুল ছুড়তে লাগলো। অতঃপর, তারা আমাকে ধরে উপরের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো, আমি তো প্রায় হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। উপরে তারা আমাকে ওই লোকটির ঘরে নিয়ে গেলো, সম্রাটের রুম, সম্রাটের মতোই বিলাসীপূর্ণ।
পালঙ্কের মধ্যে মহিলাগুলো আমাকে বসিয়ে বলতো লাগলো,
– ‘আফামনি আপনার কিছু লাগলেই শুধু আমাদের ডাকবেন, আমরা চলে আসবো।’
এই বলে তারা চলে গেলো, কিছু বুঝে উঠতে পারলাম না, শুধু ভাবতে লাগলাম কি হচ্ছে এসব আমার সাথে। হঠাৎ ভয়ে আবারো কাপঁতে লাগলাম এই ভেবে যে এখন তো লোকটি আমার ঘরে আসবে। না জানি আমার সাথে কিরুপ আচরণ করবে, কিন্তু আমার এ ভাবনা ভূল ছিলো।
রাত প্রায় দুটো বেজে যায়, কিন্তু লোকটির কোনো সন্ধানই নেই, নিশ্চিন্ত মনে স্বার্থপরের মতো ঘুমিয়ে পড়লাম, হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ পেলাম,বুঝে ফেললাম বুড়োটা ঘরে এসেছে, হালকা চোখ খুলে দেখি লোকটি দরজা লাগাচ্ছে, তারপর ধীরে- ধীরে আমার দিকে এগিয়ে আসলো।
মনে- মনে ভাবলাম যদি ওনি আমার গায়ে সামান্য পরিমান হাত দেয় তাহলে আমি ওনার হাতটা আজ ভেঙ্গেই ফেলবো, কিন্তু অবাক হয়ে গেলাম লোকটির কান্ড দেখে, আমার গায়ে হাত দেওয়া তো দূরে থাক বরং একটা চাদর আমার গায়ে দিয়ে দেয়। তারপর সোফায় গিয়ে বসে মুখটাকে চেপে ধরে কাঁদতো লাগলো, আমি অবাক হলাম লোকটার এই অবস্থা দেখে, এতোক্ষন কোথায় ছিলো আর এমন কী হলো যে ওনার মতো লোকের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে, এসব ভাবতে- ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম টেরই পেলাম না।
.
সকাল কানের মাঝে গুনগুন কোরানের সুর ভেসে আসছিলো, সেই সুরে উন্মাদ হয়ে চোখ খুলতেই দেখি লোকটি নামাজ পড়ে কোরাআন তেলওয়াত করছে, খুব অবাক হলাম, এই লোকটি যদি খারাপ হয়ে তাহলে এতো সকালে কেন খোদাকে স্মরণ করবে আর যদি ভালোই হয় তাহলে কেন ওনার পর - পর দুটো স্ত্রী ওনাকে ছেড়ে চলে যায়, আর কেনই বা আমার মতো একটি অল্পবয়সী মেয়েকে বিয়ে করলো? আবার আমার সৎ মা থেকে আমাকে নগদ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে কিনলো! এমন একজন খারাপ ব্যাক্তি আবার ভোরে আল্লাহকে ডাকছে, ভাবতেই অবাক লাগে।
– ‘ও তুমি ঘুম থেকে উঠে গিয়েছো?’
লোকটির গলার আওয়াজ পেয়ে ভাবনার জগত থেকে বাস্তবতায় ফিরতেই দেখি ওনি মুচকি হেসে আমার পানে চেয়ে আছে। তা দেখে আমি আবার কান্না করে দিলাম, লোকটি তখন বিষাদ কন্ঠে আমাকে বললো,
– ‘আমাকে দেখে কেন তুমি কান্না করছো, কেন আমাকে ভয় পাচ্ছ?’
আমি লোকটির প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম, পাশের একটা কক্ষে গিয়ে নামাজ পড়ে নিলাম, তারপর নামাজের বিছানায় লোকটির ভয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম, ঘুম যখন গভীর হলো, নিচ থেকে তখন কিছু চিৎকারের শব্দে লাফ মেরে উঠে পড়লাম, হাড়িপাতিল নিচে ফেলে দেওয়ার, কারো কান্নার শব্দ বারবার কানে আসতে লাগলো।
.
আমি ভয়ে - ভয়ে রুম থেকে বের হয়ে সামনেই এগোতেই দেখি, নিচে একজন মহিলা ছেড়া কাপড়, আর ব্লাউজ, রুক্ষ চুল, হাতে- মুখে ময়লা নিয়ে ড্রাইনিং টেবিলের উপরে রাখা সমস্ত খাবার ফেলে দিচ্ছে, ওনার পিছনে কালকের সেই দাসীগুলো।
দৌড়ে- দৌড়ে ওনাকে বলছে,
– ‘মা এমন করবেন না, স্যার জানলে রাগ করবে!’
মহিলাটির করুন চেহারা দেখে আমার মায়া হতেই আমি নিচে নেমে মহিলাটির সামনে যাই, ওনার সামনে যেতেই ওনি আমার দিকে একটি গ্লাস ছুঁড়ে মারে ফলে আমার কপলাটা ফেটে যায়, ঠিক তখনি উপর থেকে ওই লোকটি বলে উঠলো, ‘কী ব্যাপার?’
.
লোকটিকে দেখামাএই মহিলাটি ভয়ে দাসিগুলোর পেছনে লুকিয়ে পড়ে, লোকটি নিচে নামতেই দাসীদের জিজ্ঞাসা করতে লাগলো,
– ‘কী হয়েছে?’
– ‘স্যার, খাচ্ছে না।’
লোকটি কথাটি শুনে যেই গরম চোখে মহিলাটির দিকে তাকালো ওমনেই মহিলাটি একটা রুমের দিকে চলে গেলো, আর দাসীগুলো ও। লোকটি তখন আমার কাছে এসে বললো,
– ‘দুঃখিত, আসলে….. ‘
আমি তখন লোকটির দিকে মুখ করে মাথা নিচু হয়ে হাত দিয়ে ইশারা দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,
– ‘মহিলাটি কে?’
লোকটি তখন আমাকে বললো,
– ‘ওনি - আমার মা।’
উওরটি শুনতেই ওনার প্রতি আমার আর ও বেশি ঘৃণা জন্মে গেলো, ওনি কত খারাপ হলে ওনার মায়ের এই অবস্থা, আর কতটা কঠোর হলে ওনার মা ওনাকে ভয় পায়, রাগে আমি লোকটির সামনে থেকে চলে যেতে লাগলে লোকটি আমাকে বলে উঠলো,
– ‘তুমি আমার সাথে কথা বলছো না কেন? এরকম বোবাদের মতো ইশারা দিয়ে কথা বলছো কেন? আর তাছাড়া তুমি কোথায় যাচ্ছ তোমার কপাল ফেটে গেছে মলম লাগাতে হবে যে।’
লোকটির কথায় আমি কোনো উওর না দিয়ে সোজা উপরে চলে গেলাম।
উপরে গিয়ে ফাটা কপাল নিয়ে বিছানায় বসে ভাবতে লাগলাম — ‘ওনি এতো খারাপ কেন? কেন আমার কপালেই আল্লাহ এমন একটা লোককে স্বামী হিসেবে জুটালো।’
এসব ভেবে যখন কাঁদতে লাগলাম, ঠিক সেই সময় একটা দাসী আমার ঘরে এসে বললো,
– ‘আফা এতো জেদ ভালো না!’
এই বলে আমার কপালে মলম লাগাতে লাগলো।
আমি তাকে বলললাম,
– ‘তোমাকে এই ঘরে কে আসতে বলছে?’
– ‘কে আর কইব ভাইজান মানে, স্যার।’
ওই লোকটির কথা শুনতেই, ওই মহিলাটির চেহারা ভেসে উঠে, দাসী কে তখন কৌতুহল বর্শে প্রশ্ন করলাম,
– ‘আচ্ছা দাসী, ওই মহিলাটি কী ওনার মা?’
– ‘হ্যা আফা, ওনিই আপনার শাশুড়ি।’
– ‘আচ্ছা আমাকে কয়েকটা প্রশ্নের উওর দিবে?’
– ‘জ্বি বলেন, পারলে দিমু।’
– ‘আচ্ছা তোমার সাহেবের আগের স্ত্রী গুলো কেন চলে গেছে? তোমার সাহেবের মায়ের এই অবস্থা কেন? আর তোমার সাহেবকে কেনই বা ওনি এতো ভয় পায়?’
আমার প্রশ্নগুলো শুনে মহিলাটি কিছুসময় আমার দিকে হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, তারপর বলে উঠে,
– ‘আল্লাহ, আফামনি আপনে কিছুই জানেন না?’
– ‘কেন কি জানবো আমি?’
– ‘আল্লা আফামনি আপনে জানেন যে সাহেব……. ‘
কথাটি বলেই হঠাৎ দাসী থেমে গেলো, ওর এভাবে নিশ্চুপ হওয়া দেখে আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম,
– ‘কী ব্যাপার এভাবে থেমে গেছো কেন?’
ও তখন ইশারা দিয়ে দরজার দিকে লক্ষ্য করলো।
আমি কৌতুহলে ও দিকে তাকাতেই দেখি ওই লোকটি রাগান্বিত চোখে দাসীর দিকে চেয়ে আছে।
দাসী লোকটির এমন রাগ দেখে ভয়ে-ভয়ে বললো,
– ‘আমাকে ক্ষমা করে দিন,আর এ ভুল হবে না।’
লোকটি তখন বললো,
– ‘হুম, আর যেনো এ ভুল যেন আর না হয়,যাও মায়ের কাছে যাও।’
এই বলতে দাসী নিচে চলে গেলো, আর লোকটি আমার কাছে এসে তখন বলতে লাগলো…

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত



বিষয়: #  #


আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)