শিরোনাম:
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

Somoy Channel
মঙ্গলবার ● ২৩ জানুয়ারী ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » জয়পুরহাটে একটি গ্রামে নারী-পুরুষ সবাই বানায় কুমড়ো বড়ি
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » জয়পুরহাটে একটি গ্রামে নারী-পুরুষ সবাই বানায় কুমড়ো বড়ি
৩৩৯ বার পঠিত
মঙ্গলবার ● ২৩ জানুয়ারী ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

জয়পুরহাটে একটি গ্রামে নারী-পুরুষ সবাই বানায় কুমড়ো বড়ি

জয়পুরহাটে একটি গ্রামে নারী-পুরুষ সবাই বানায় কুমড়ো বড়িমোফাজ্জল হোসেন, জয়পুরহাট: জয়পুরহাট শহরের শান্তিনগর তাঁতিপাড়া গ্রামের প্রায় সব নারী-পুরুষের পেশা কুমড়ো বড়ি বানানো। এক সময় পরিবারের প্রয়োজনে খাওয়ার জন্য বানাতো কুমড়ো বড়ি। সেটি এখন তাঁতিপাড়া গ্রামের শ্রমজীবী মানুষদের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে। ৩/৪ মাস তৈরি হয় এই কুমড়ো বড়ি। কুমড়ো বড়ি বিক্রি করে তাদের সংসার চলে ৬/৭ মাস।
বড়ি বানানোর কারিগরদের তথ্যমতে, জয়পুরহাট শহরের তাঁতিপাড়া এই গ্রামে প্রতি মাসে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকার কুমড়ো বড়ি বিক্রি হয়। কুমড়ো বড়ি উত্তরাঞ্চলের মানুষের জনপ্রিয় খাবার। মাষকলাই ও চাল কুমড়া দিয়ে তৈরি হয় কুমড়ো বড়ি। মূলত শীতকালেই এটি তৈরি ও খাওয়ার চলনটা বেশি। জেলার স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে নওগাঁ, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, পার্বতীপুর, নীলফামারীসহ কয়েক জেলার পাইকাররাও এসে নিয়ে যায় এখানকার কুমড়ো বড়ি। প্রতি বছর শীত এলেই তারা তৈরি করেন কুমড়ো বড়ি। এর আগে তৈরি করতেন তাদের বাবা-দাদারা। শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে বাবা-দাদার এই পেশা কুমড়ো বড়ি তৈরি করে।
তাঁতিপাড়া গ্রামের অধিকাংশ নারী-পুরুষই সনাতন ধর্মের। শীতকালের সময়টায় গ্রামের প্রবেশমুখ থেকেই চোখে পড়ে চাটাইয়ের ওপর সারি করে বিছানো সাদা মাষকলাইয়ের তৈরি কুমড়া বড়ি। গ্রামের ভিতরে গৃহিণীরা বাড়ির ছাদে একত্রে দল বেঁধে বা কেউ কেউ মাটিতে মাদুর পেতে বড়ি তৈরির কাজ করছেন।
এ কাজে নারীদের হাতের ছোঁয়াই বেশি। তবে বাড়ির পুরুষদের ভূমিকা কম নয়। তারা যাতায় কালাই ভাংগলেও বেশির ভাগই ভাংগে এখন মেশিনে। এমনকি বড়িও বানান। তাদের সাথে হাত মিলিয়ে ছোটরাও শিখে নেন বড়ি তৈরির কাজ।
তাঁতিপাড়া গ্রামের মানিক চন্দ্র বলেন, এ গ্রামে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ঘর কুমড়ো বড়ি তৈরির সঙ্গে জড়িত। প্রত্যেক বাড়ি প্রতি মাসে গড়ে ২শ’ থেকে ৩শ’ কেজি বড়ি তৈরি করে। আশ্বিন মাস থেকে শুরু হয় এ বড়ি তৈরির কাজ। চলে চৈত্র মাস পর্যন্ত। সাংসারিক কাজের পাশাপাশি এই বড়ি তৈরি ও বিক্রি করে থাকে তারা।
বড়ি তৈরির কারিগর শ্যামলী মহন্ত জানান, শীতের এই মৌসুমে প্রতিদিন ভোর রাত থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত তারা বড়ি বানানোর কাজ করেন। প্রথমে মাসকলাই রৌদ্রে শুকিয়ে যাতায় ভেঙ্গে খোসা ছাড়িয়ে নিতে হয়। পরে প্রায় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা মাষকলাই পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। ঢেঁকি বা শিল-পাটায় কুমড়ো বেটে নিয়ে মিশ্রণ তৈরি করতে হয়। এরপর কলাই ও চাল কুমড়া দুইটির মিশ্রণে বানানো হয় বড়ির উপকরণ। এরপর বড়িগুলো পাতলা কাপড়ে সারি করে বাঁশের মাচাতে রেখে রোদে শুকানো হয়। এতে সময় লাগে অন্তত তিন দিন। অনেকে বড়িকে শক্ত করার জন্য অল্প পরিমাণে আলো চালের আটা মেশায়।
এই গ্রামের আরেক নারী কারিগর ডলি রানী জানান, সংসারের অন্যান্য কাজের পাশাপাশি কুমড়ো বড়ি তৈরি করি। এ কুমড়ো বড়ি প্রায় ২০ বছর থেকে তৈরি করি। দৈনিক ১০ কেজি কুমড়ো বড়ি তৈরি করি। আমার স্বামী কুমড়ো বড়ি বাজারে বিক্রি করে। এ বড়ি বিক্রি করে যে আয় হয় তা দিয়ে আমাদের সংসারে আগের থেকে অনেক উন্নতি হয়েছে এবং ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়াও করাচ্ছি।
ডলি রানীর স্বামী জানান, অন্য সব ব্যবসার মতো এতেও জিনিসপত্রের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে। গত মৌসুমে প্রায় আড়াই লাখ টাকার বড়ি বিক্রয় করেছিলেন তিনি। এবছর মাষকলাই ১৭৫/১৮০ টাকা কেজি। প্রতি পিস কুমড়া প্রকার ভেদে ৮০ টাকা থেকে ১শ’ টাকা পর্যন্ত।
কারিগররা আরো জানান, প্রত্যেক ঘরে প্রতি মাসে গড়ে ৩শ’ কেজি কমুড়ো বড়ি তৈরি ও বিক্রি করে। দুই ধরনের কুমড়ো বড়ি তৈরি হয়। একটি সাধারণ মানের। আর ভালোটি শুধু মাষকলাই দিয়ে তৈরি, দামও তার বেশি। সাধারণ বড়ি পাইকারিতে বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৩শ’ টাকায় এবং ভালোটি ৪শ’ টাকা। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হয় সাধারণ মানের বড়ি সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা কেজি। ভালো মানের বড়ি ৫শ’ টাকা কেজি।
কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রতন কুমার রায় জানান, কুমড়ো বড়ি বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এর সঙ্গে জড়িতদের একদিকে কর্মসংস্থান হচ্ছে অন্য দিকে গ্রামীন অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখছে তারা। জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে কুমড়ো বড়ি বিক্রি হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচাল রাহেলা পারভীন জানান, প্রতি ১শ’ গ্রাম মাষকলাইতে আছে ৩শ’ ৪১ মিলিগ্রাম ক্যালরি, ৯শ’ ৮৩ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম, প্রোটিন ২৫ গ্রাম, সোডিয়াম ৩৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ১শ’ ৩৮ মিলিগ্রাম আয়রন ৭ দশমিক ৫৭ মিলিগ্রাম।
অপরদিকে, চালকুমড়া একটি পুষ্টিকর সবজি। এতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবার রয়েছে তাই চাল কুমড়ার উপকারিতা অনেক। যক্ষ্মা কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাস্ট্রিকসহ বহু রোগের উপশম করে চাল কুমড়া। চাল কুমড়া তরকারি হিসেবে খাওয়া ছাড়াও মোরব্বা, হালুয়া, পায়েস এবং পাকা কুমড়া এবং কালাই ডাল মিশিয়ে কুমড়ো বড়ি তৈরী করেও খাওয়া হয়। সব মিলিয়ে কুমড়ো বড়ি নিঃসন্দেহে একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর খাবার।



বিষয়: #


আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)