মঙ্গলবার ● ১৬ জানুয়ারী ২০২৪
প্রথম পাতা » বিশেষ প্রতিবেদন » জয়পুরহাটে বেড়েছে সরিষার চাষ, প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য হলুদ সরিষা ফুল
জয়পুরহাটে বেড়েছে সরিষার চাষ, প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য হলুদ সরিষা ফুল
মোফাজ্জল হোসেন, জয়পুরহাট: শস্য উদ্বৃত্ত জয়পুরহাট জেলা। গত বছরের তুলনায় এ বছর ৬ হাজার ৬শ’৮৯ হেক্টর জমিতে সরিষা বেশি চাষ হয়েছে। দিগন্তজুড়ে হলুদের সমারোহ। হলুদ সরিষা ফুলে ফুলে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য শোভা পাচ্ছে মাঠে মাঠে। সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধে আকৃষ্ট করছে সবাইকে। সরিষার মাঠে গেলে মন জুড়িয়ে যাবে। অন্য ফসলের তুলনায় কম খরচে, অল্প সময়ে বেশি লাভ হওয়ায় সরিষা চাষে ঝুঁকেছে এ জেলার কৃষকরা। আবহাওয়া অনূকুলে থাকলে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার কড়ই, বম্বু, দস্তপুর, পুরানাপৈল, সোটাহার, পাঁচবিবি উপজেলার বাগজানা, আয়মারসুলপুর, কড়িয়া, ফিসকারঘাট, আক্কেলপুর উপজেলার ইসলামপুর সহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ মাঠে শুধু সরিষার চাষ। সরিষার হলুদ ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে পুরা মাঠ। এরই মধ্যে মৌমাছিরা গুনগুন শব্দে সরিষা ফুল থেকে মধু আহরোন করছে। হলুদ সরিষার ক্ষেতের দৃশ্য মানুষকে মুগ্ধ করছে। নিজেকে মোবাইলের ক্যামেরায় বন্দী করছে তরুন-তরুনী, শিশু সহ নানা বয়সের মানুষ। এদিকে গাছে গাছে ইতিমধ্যে সরিষার দানা আসতে শুরু করেছে।
কৃষকরা বলছেন, কম খরচে বেশি লাভবান হয় সরিষা চাষে। এছাড়া ভোজ্যতেলের দাম লাগামহীন হওয়ায় এ জেলায় গত বছরের চেয়ে এবার বেশি পরিমাণ জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। তাইতো রোপন করা সরিষা নিয়ে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন জেলার কৃষকরা।
সদর উপজেলার কড়ই উত্তর পাড়া গ্রামের কৃষক মোজাম্মেল হক, বুলু মিয়া, আব্দুল মোত্তালেব বলেন, আমরা গত বছরের তুলনায় এবার একটু সরিষা বেশি চাষ করেছি।
মাহমুদ হাসান জানান, গত বছর আমি ৬বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছিলাম, ভাল দাম পাওয়ায় এবার করেছি ৯ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি।
কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ৬ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। ৬ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। অন্য ফসলের চেয়ে সরিষা চাষ ঝামেলা কম। এছাড়াও সেচ দিতে হয়না। প্রথমে জমিতে হালচাষ করে নিয়ে সরিষার বীজ বোপন করার পর একবার সার দিলেই সরিষা পাওয়া যায়। বাজার মূল্য ভাল পেলে এবার বিঘাপ্রতি ২০/২৫ হাজার টাকার সরিষা বিক্রি হবে বলে আশা করছি।
একই এলাকার আরেক কৃষক মোজাম্মেল হক বলেন, সারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছরের চেয়ে এবার আমার দুই হাজার টাকা বিঘা প্রতিতে খরচ বেশি হয়েছে। প্রায় ৭ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। এক বিঘাতে সর্বোচ্চ ৮ মণ ফলন পাওয়া যায়।
পাঁচবিবি উপজেলা কড়িয়া এলাকার কুতুবুল ইসলাম জানান, কয়েক বছর আগে আলুর আবাদ করতাম। আলু চাষ করে ব্যাপক লোকশানে পড়েছিলাম। তাই এবার সরিষার চাষ করেছি। এই সরিষার অল্প সময়ে ফলন পাওয়া যায়। খরচও অনেক কম, তাই লাভবান হওয়া যায়।
আক্কেলপুর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের কৃষক হাসান আলী বলেন, গত বছর এই এলাকায় এতো সরিষার চাষ ছিলনা। ভোজ্যতেলের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকরা সষিরার চাষ বেশি করেছেন। আমিও এবার সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। এক বিঘাতে ৬/৭ মণ ফলন হয়। ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত মণ বিক্রি করা যায়।
মাতাপুর গ্রামের আব্দুর রহমান বলেন, তেলের দাম এতো বেশি, তাই ১ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি তেল করার জন্য। এছাড়া সরিষা থেকে উৎপাদিত খৈল সারাবছর গরুকে খাওয়ানো যাবে।
এ বিষয়ে জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোছাঃ রাহেলা পারভীন জানান, অন্য ফসলের চেয়ে সরিষা সহজ ও অল্প খরচে চাষ করা যায়। চলতি মৌসুমে জেলায় সরিষার চাষ হয়েছে ২১ হাজার ৩শ’ ৪৯ হেক্টর জমি। গত বছর সরিষা চাষ হয়েছিল ১৪ হাজার ৬শ’ ৬০ হেক্টর জমিতে। যা গত বছরের তুলনায় ৬ হাজার ৬শ’৮৯ হেক্টর জমিতে এবার বেশি চাষ হয়েছে। এ থেকে উৎপাদন ল্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৬ হাজার ২শ’ ৯৮ মেট্রিক টন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রণোদনাসহ সকল প্রকার সহযোগিতা করা হয়েছে কৃষকদের।
বিষয়: #জয়পুরহাট #ফুল #সরিষা #সৌন্দর্য #হলুদ