শিরোনাম:
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

Somoy Channel
মঙ্গলবার ● ১৬ জানুয়ারী ২০২৪
প্রথম পাতা » অনুপ্রেরণা (গল্প) » ইনবক্স
প্রথম পাতা » অনুপ্রেরণা (গল্প) » ইনবক্স
৭৯ বার পঠিত
মঙ্গলবার ● ১৬ জানুয়ারী ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

ইনবক্স

ইনবক্সইনবক্সে সেদিন একটা মেসেজ এসেছিলো তাতে লেখা ছিলো,
“আমি একজন বে*শ্যা। আপনাকে আপনার একটি গল্প পড়ে নক দিলাম। জানি, ভাবছেন মজা করছি। কিন্তু, আমি মজা করছি না। সত্যিটাই বলছি। এখন হয়তো ভাবতে পারেন, আমি আপনাকে মেসেজ দিলাম কেনো? আমার মতো বে*শ্যা কেনো আপনাকে মেসেজ দিবে? আমিও ভেবেছিলাম দিবো না। পরে ভাবলাম, যে মানুষটা একজন বে*শ্যাকে নায়িকা করতে পারে, সে মানুষটাকে মেসেজ দেওয়াই যায়। তাই, আপনাকে নক দিয়েছি। যদি রুচিতে না বাঁধে তবে আমাকে রিপ্লাই দিবেন। আপনার সাথে আমি একটু কথা বলতে চাই। যদিও রুচিতে বাধতে পারে। কতো মানুষকে দেখলাম রাতের অন্ধকারে আদর করতে করতে মরে যায় মতো অবস্থা, অথচ দিনের আলোয় আমাকে সহ্য করতে পারে না। গালি দেয়।”
আমি মেসেজটি দেখে কতক্ষণ চুপ করে বসে থাকলাম। ফিল্টার মেসেজে ৪ দিন আগে এসেছে মেসেজটি। আমি মেসেজটা পড়ে প্রোফাইলটা চেক করলাম। তারপর তাকে উত্তর দিলাম, “বলুন.. আমার শুনতে কোনো আপত্তি নেই।”
মেয়েটি মেসেজটি উত্তর দিলো পরদিন। লিখলো, “দুঃখিত, আপনি যখন মেসেজ দিয়েছিলেন তখন আমি অন্য একজনের ফাই ফরমাশ পূরণ করতে ব্যস্ত ছিলাম। তাই, ফেসবুকে ছিলাম না। যাই হোক, আপনাকে নক দিয়েছি আমার জীবন কাহিনী শোনানোর জন্য। আপনি কি শুনবেন? না শুনলেও খুব একটা ক্ষতি নেই। তারপরও, আমি বলতে চাই।
গুলশান ২ এ বাবা-মায়ের সাথে বড় হয়েছি আমি। পড়ালেখায় খুব ভালো ছিলাম। মা-বাবার আদর-শাসনে আট দশটা সুখী পরিবারের মতোই কেটে যাচ্ছিলো আমার জীবন। কিন্তু, বিপত্তি বাঁধলো ইন্টার পরীক্ষা শেষ হবার পর। যখন আমি বাকীদের মতো ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, ঠিক তখনই মা মারা যান। হার্ট অ্যাটাকে। এরপর মাকে চিরবিদায় দিয়ে শুরু হলো আমার আর বাবা পথচলা। কিন্তু, মায়ের মৃত্যুর কারণে আমার আর ভালো প্রস্তুতিও নেওয়া হলো না, ভর্তি পরীক্ষায় টিকতেও পারলাম না। এর কিছুদিন পরের ঘটনা। মায়ের অভাবে নাকি মায়ের শরীরের অভাবে বাবা এতোটাই ক্ষুধার্থ হয়ে উঠলেন যে তিনি আমাদের ঘরের কাজের বুয়ার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। সেদিন আমি থাকায় বুয়া কোনোমতে রক্ষা পেয়ে গিয়েছিলো। এর পরপরই বাবা আরেকটি বিয়ে করেন।
নতুন মা বরাবরের মতন আমাকে মেনে নিতে পারেননি। ঘরের সব কাজ করাতেন। এভাবেই যাচ্ছিলো দিন। কিন্তু, কিছুদিন পর তার একজন আত্নীয় আমাদের বাসায় আসেন। লোকটা সৌদি আরবে থাকেন। তিনি আমাকে একা পেলেই উল্টাপাল্টা মন্তব্য করতেন। বলতেন, আমি খুব সেক্সি, আমি খুব পারবো- ইত্যাদি ইত্যাদি। একারণে আমি তাকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করতাম। কিন্তু, তখনো আমি বুঝতে পারিনি আমার জীবনে কি দিন আসতে যাচ্ছে। লোকটা দেশে আসলে বড় বড় হোটেলে থাকতেন, আর মেয়ে নিয়ে ফূর্তি করতেন। তিনি সেই অভিজ্ঞতা থেকে আমার নতুন মাকে বললেন, এতো সুন্দর একটা শরীর ঘরে রেখে দিয়েছো? ওকে কাজে লাগালে কত টাকা আসবে কল্পনা করতে পারবা?
নতুন মা প্রথমে শুনতে চাননি। কিন্তু, টাকার অ্যামাউন্ট শুনে রাজি হয়ে গেলেন। টাকা এমন এক জিনিস, যাকে কেউ ফেলতে পারে না। তাইতো, আমার বাবাও কিছু বললেন না। নীরবে সম্মতি দিয়ে গেলেন।
সেই থেকে বাধ্য হয়ে আমার এই পেশায় আসতে হলো। লোকটা ৪.৫ স্টার হোটেলে কথা বলে ঠিক করে দিলেন। সেখান থেকে গাড়ি পাঠায়, আমি যাই, তাদের ফূর্তি শেষে আবার ফিরে আসি। আর সব টাকা যায় আমার নতুন মায়ের হাতে। জানেন, আমাকে মোবাইল ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। যদি পালিয়ে যাই। শুধু একটা পুরনো কম্পিউটার আছে। তাতে অনেক বলে নেট লাগিয়েছি। এছাড়া, আমাকে ঘর থেকেও বের হতে দেয় না। আমি শুধু বের হতে পারি হোটেলের গাড়ি আসলেও। তারাও আমাকে স্বাধীনতা দেয় না, কারণ, আমার মতো মালকে তারা হাতছাড়া করতে পারবে না। আরো শুনবেন? আমাকে পেট ভরে খেতেও দেওয়া হয় না। কেননা, তাতে আমি মোটা হয়ে যাবো।
এই হলো আমার জীবন। পুরোটা আপনাকে বললাম, কারণ আমি মুক্তি চাই। আপনি কি আমায় মুক্তির পথ দেখাতে পারবেন? নাকি আত্ন*হ*ত্যাই আমার মুক্তির পথ? আমি আপনার উত্তরের অপেক্ষায় থাকলাম।
ভালো থাকবেন।”
পুরো মেসেজ পড়ে আমি চুপ করে রইলাম। কি উত্তর দিবো আমার জানা নাই…
[সত্য ঘটনা অবলম্বনে]
ইনবক্স
সংগৃহীত



বিষয়: #


আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)