বুধবার ● ৩ জানুয়ারী ২০২৪
প্রথম পাতা » অনুপ্রেরণা (গল্প) » সমতা
সমতা
“ভাই ১০০ টাকা খুচরা দিতে পারবেন? দোকানদার খুচরা দিতে পারছে না!”
রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছি। এমন সময় অচেনা একটা লোকের মুখে এমন কথা শুনে বেশ বিরক্ত হলাম। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আড্ডা দেওয়া আমার রোজকার অভ্যস। আজও দাঁড়িয়ে আছি, হঠাৎ করেই এক লোক এসে আমাকে কথাটা বললো।
আমি কিছুটা বিরক্ত হয়ে তাকে টাকাটা খুচরা করে দিলাম। আমার কাছ থেকে টাকাগুলো নিয়ে সে একটা ফুলের দোকানে প্রবেশ করলো। কিছুটা অবাক হলাম। লোকটার বয়স ৫০ এর কাছাকাছি। এই বয়সে ফুলের দোকানে কি কাজ থাকতে পারে! কোনো স্কুল কলেজ সাজানোর কাজে ফুল নিলে তো অনেক ফুল নেওয়া উচিত তাহলে একশো টাকা কেন খুচরা দিতে পারবে না৷ আমি বরাবর একটু কৌতূহলী স্বভাবের। অন্যের ব্যাপার নিয়ে অযথা গোয়েন্দাগিরি করাটা আমার বড্ড বাজে স্বভাব। আমি আর কিছু না ভেবে তাকে অনুসরণ করে দোকানে দাঁড়িয়ে থাকলাম। সে দোকান থেকে ২টা গোলাপ আর ২টা বেলিফুলের মালা নিলো। ওরে ব্যাস! এই বয়সে এসব দিয়ে চাচা কি কাজ করবে! দেখতে হবে ব্যাপারটা।
আমাকে দেখে চাচা মুচকি হেসে বললো,
– ” ভাই খুচরা দিতে পারছিলো না তাই আপনার কাছে গেছিলাম। আপনি অনেক উপকার করলেন। না হলে আজ ফুল কিনতেই পারতাম না এখান থেকে। ”
বলেই একগাল হাসি দিয়ে চলে গেলো। হাসির গোডাউন খুলে রেখেছে কেমন জানি! বুঝি না মানুষ এতো হাসে কি করে! আমার তো মুখ গোমড়া করে থাকতেই বেশি ভালো লাগে।
এসব কথা ভাবতে ভাবতে ফুলের দেকান থেকে বেরিয়ে এলাম। দোকান থেকে বের হতেই চোখে পড়লো চাচা কাচের চুড়ি কিনছে তাও আবার দুই ডজন। এগুলো মানুষ সাধারণত তার প্রেমিকা বা নতুন বিয়ে করা বউকে দেয়।বা মেয়েকেও কিনে দিতে পারে। আমি আর নিজের কৌতুহল চাপিয়ে রাখতে পারলাম না। নিশ্চয়ই কোনো ভেজাল আছে। উহ্ আমিও উনার পিছনে দৌঁড়ানো শুরু করলাম।
এক পর্যায়ে তাকে নিজের সীমানার মধ্যে পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
– “চাচা এই ফুল আর চুড়ি কার জন্য নিলেন? আপনার মেয়েকে দিবেন নাকি? ”
উনি আমার দিকে তাকিয়ে লজ্জার হাসি হেসে বললো,
– ” না আসলে এগুলো আপনার চাচির জন্য, আজ আমাদের বিবাহবার্ষিকী।আপনার চাচি ফুল খুব পছন্দ করে তাই নিলাম।আমার মেয়ে নেই। দুইটা ছেলে মাত্র।”
আমি প্রথমে একদম অবাক হয়ে গেলাম। বাপ রে এই বয়সেও কত প্রেম ভালোবাস এদের! তারপর একটু হেসে বললাম,
– ” এতো ভালোবাসা আপনার চাচির উপর? চাচি কিন্তু ভাগ্যবতী এটা বলতেই হবে!”
উনি মুচকি হেসে জবাব দিলেন,
– ” তোমার চাচি রোজ আমার জন্য রান্না করে, বাড়ির সকল কাজ করে, ঘর সামলায়! আমি রাতে বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত জেগে থাকে। তাকে ভালোবাসবো না তা কি করে হয় বলো?”
কেন যেন জানতে ইচ্ছে করলো উনি কি কাজ করেন। মানে পোশাক অতোটা বড়োলোকি ভাবের নয় তাই প্রশ্ন করে বসলাম,
– ” যে চাচা কি কাজ করেন আপনি?”
চাচা স্বাভাবিক ভাবে বললো,
– ” ভাড়ার অটোরিকশা চালাই।পাঁচজনের সংসার আল্লার রহমতে চলে যায়।”
আমি মুচকি হেসে বললাম,
– “তা চাচা সব দুইটা করে নিলেন যে চাচি তো অনেক খুশি হবে!”
সে হেসে উত্তর দিলো,
– ” না ভাই দুইটা আপনার চাচির না। একটা গোলাপ, একটা মালা আর এক ডজন চুড়ি আমার মায়ের অন্যটা আপনার চাচির। ”
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।
সে আমার দিক তাকিয়ে বললো,
– “একসময় আব্বাকে দেখতাম মাকে ফুল চুড়ি এসব দিতো। মা খুব পছন্দ করে।তাই আপনার চাচির জন্য ফুল চুড়ি কিনলে আমি মায়ের জন্যও কিনি। এই দুইটা উপহার দু’জনকে দিলে তাদের হাসিকে আমার বিশ্বজয় মনে হয়। আজ আসি ভাই পরে কথা হবে। ”
লোকটা চলে গেলো। আর আমি অবাক হয়ে ভাবতে লাগলাম কত ধনি লোক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শিক্ষিত মানুষ মা আর বউয়ের সমতা বোঝে না। আর উনি অশিক্ষিত হয়েও কতো সুন্দর বলে গেলেন।শিক্ষা কখনো কাগজে কলমে হয় না।শিক্ষা মানুষের বিবেকে প্রকাশ পায়।
সমাপ্ত
ফারহানা_কবীর_মানাল
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত
বিষয়: #অনুপ্রেরণা #গল্প #সমতা