শিরোনাম:
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

Somoy Channel
সোমবার ● ১ জানুয়ারী ২০২৪
প্রথম পাতা » অনুপ্রেরণা (গল্প) » ভালো থেকো স্মৃতি
প্রথম পাতা » অনুপ্রেরণা (গল্প) » ভালো থেকো স্মৃতি
৮৪ বার পঠিত
সোমবার ● ১ জানুয়ারী ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

ভালো থেকো স্মৃতি

- মেডাম সকাল বেলা যে লোকটাকে আপনি চড় মেরেছিলেন সেই লোকটা সন্ধ্যা বেলা হাসপাতালে মারা গেছে। মৃত্যুর কারণ হচ্ছে সে নাকি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল, ভালো থেকো স্মৃতিবিকেলে হঠাৎ বাসস্ট্যান্ডে অসুস্থ হয়ে পড়ার পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আর সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
দারোয়ানের মুখে কথাটা শুনে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম তার মুখের দিকে। কত সহজে সে আমার সঙ্গে কথাগুলো বলে গেল কিন্তু আমার ভিতরে যে কতটা আঘাত করে কথাটা প্রবেশ করেছে সেটা আমি অনুভব করছি।
- বললাম, তুমি কি নিশ্চিত যে সেই লোকটাই এই মৃত ঘোষণা করা লোক?
- হ্যাঁ মেডাম, আপনিই তো বলেছেন তার দিকে ভালো করে নজর রাখতে। তিনি দুপুরের সময় কিন্তু আমাদের বাসার সামনে আরেকবার এসে ঘুরে গেছে।
- আমি আশ্চর্য হলাম, মানে কি?
- জ্বি মেডাম, একটা চিঠি নিয়ে এসেছিল আর সে চিঠি আপনার কাছে দিতে বলেছিল।
- তো দেননি কেন?
- আমি তো সেই চিঠি গ্রহণ করিনি, তারপর তিনি সেই চিঠি আমাদের বাসার সামনে যে ছোট্ট একটা ডাস্টবিন আছে সেখানে ফেলে গেছিল। তবে তার জন্য মনটা খারাপ লাগছে মেডাম, যদি জানতাম আজকেই মারা যাবে তাহলে দুপুরে তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতাম না।
- আপনি কি আমার সঙ্গে গিয়ে সেই চিঠিটা বের করতে পারবেন রহমান ভাই?
- চেষ্টা করতে পারি কিন্তু ময়লার মধ্যে এতক্ষণ কি থেকে কি হয়ে গেছে তার ঠিক আছে নাকি?
- তবুও চলুন না যদি খুঁজে পাই।
প্রায় ৩০ মিনিট খোঁজাখুঁজি করে একটা চিঠির মতো কাগজ পাওয়া গেল, প্রথম দুটো লাইন পড়ে বুঝতে পারছি এটাই সেই চিঠি। দ্রুত বাসায় ঢুকে নিজের রুমে এসে পাতাটা চোখের সামনে পড়ার জন্য তুলে নিলামঃ-
স্মৃতি…
নামটা লিখতে গিয়েই কেমন কেঁপে উঠলাম, মনে হচ্ছে চারিদিকে তোমাকে দেখছি। কিন্তু আমি খুব ভালো করে জানি সেটা অসম্ভব, তোমার শহরের প্রতিটি গলিতে আমার প্রবেশ নিষিদ্ধ। অথচ কথা ছিল সারাজীবন তোমার শহর চলবে আমার রাজত্ব। সময় বদলে যায়, মানুষকে দেওয়া মানুষ এর প্রতিশ্রুতি হারিয়ে যায়। আমার নাম অনুভব আর তোমার নাম স্মৃতি, তুমি সবসময় বলতে যে অনুভবের স্মৃতি নাম মিলিয়ে আল্লার আমাদের এ পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। আসলেই কি তাই?
তুমি আজকে সকাল বেলা আমার গালে একটা চড় মারলে, আমি মোটেই রাগ করিনি। কারণ তুমি হয়তো জানো না, আমাদের দীর্ঘ ভালোবাসার মধ্যে এটাই ছিল আমার শরীরে তোমার স্পর্শ। হোক সেটা আক্রোশ কিংবা বিরক্তিকর আচরণ তবুও প্রথম স্পর্শ বলে কথা। তোমার সঙ্গে আমার পরিচয় ফেসবুকে, তারপর দীর্ঘ ভালোবাসার মধ্যে একবারই দেখা হয়েছে। সেদিনের সেই মাত্র তিন ঘন্টা আজও সেই হাসপাতালের দেয়াল জুড়ে অনুভবের স্মৃতি হয়ে আছে।
তোমার মনে আছে?
সেদিন দেখা হবার পরে বাসায় ফিরে তুমি অনেক আফসোস করে বলেছিলে ” অনুভব, তোমার ওই হাতটা একটিবারের জন্য ধরতে খুব ইচ্ছে করছিল কিন্তু সাহস হয়নি। ভেবেছিলাম হঠাৎ করে তুমিই আমার হাতটা ধরবে অনুভব, কারণ তুমি তো এই স্মৃতির মনের কথা বুঝতে পারো। ”
আমি সেদিন বলেছিলাম, হাত ধরার জন্য সামনে সারাটা জীবন অপেক্ষায় আছে। কিন্তু সেদিন যদি জানতাম বদলে যাবে তুমি, তাহলে শুধু হাত নয় বরং তোমাকেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরতাম। বিশ্বাস করো খুব ভালোবাসি, কিন্তু ভালোবাসতে চাইনি তোমায় কারণ…
তুমি ভালোবাসা চাইতে আর আমি এড়িয়ে চলতে চাইতাম, কারণ আমি নিজেও জানি না। কিন্তু তবু তোমার একনিষ্ঠ ভাবে পিছনে লেগে থাকা আর ধৈর্যের কাছে হার মানলাম। মানুষ কথা বলতে বলতে কিন্তু একসময় মায়ায় জড়িয়ে যায়, মানুষ কীভাবে প্রেমে পড়ে আর কেন পড়ে সেটা কেউ জানে না। আমিও হয়তো তোমার ভালোবাসার কাছে হেরে গিয়ে নিজেই ভালোবেসেছিলাম আর তাই পথচলার শুরু। আমার এক কাছের বন্ধু তখন বলেছিল তোমাকে অগ্রাহ্য করেছি তাই তুমি নাকি আমার সঙ্গে প্রেম করার জিদ করছো। কারণ যাদের টাকা আছে তাদের জেদও আছে খুব বেশি, তাই সে ওটা বলতো।
কিন্তু তোমার দিনের পর দিন অফুরন্ত ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করতো। তবে সবসময় যে ভয়টা আমার ছিল তা হচ্ছে তুমি বড়লোক বাবার মেয়ে। বড়লোক মানুষরা আমেরিকা থেকে পছন্দের কোনকিছু কিনে আনতে পারে। কিন্তু দেশে ফিরে গুলিস্তানে কিছু পছন্দ হলে সেই আমেরিকান পছন্দের জিনিস ও হয়ে যায় অপছন্দের।
সবসময় ভয় হতো তুমি যদি হারিয়ে যাও তাহলে আমার কি হবে? তোমাকে যখন মাঝে মাঝে এসব কথা বলতাম তখন বড্ড রাগ করতে। বলতে, আমি তোমাকে বিশ্বাস করতে পারি নাই বলে এমন মনে হচ্ছে। কিন্তু দেখো, সত্যি সত্যি তুমি আজ চলে গেলে, কেন চলে গেলে সেই কারনটা পর্যন্ত বলে গেলে না।
শুধু বললে,
” মানুষের জীবনে কতকিছুই তো ঘটে তাই বলে কি জীবন থেমে যায়? আবেগ দিয়ে তো দুনিয়া চলে না, তাই বাস্তব মেনে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। ”
তুমি এগিয়ে গেলে, আর ভালোবাসার আঘাতে আহত মুমূর্ষু হয়ে আমি পড়ে রইলাম রাস্তার পাশে খাদের কিনারে। হ্যাঁ, অনেকেই সেই খাদ থেকে টেনে উঠাতে চেয়েছে কিন্তু আমি তাদের কারো হাত ধরিনি। কারণ আমার বিশ্বাস ছিল, জীবনের পথে চলতে চলতে একদিন তুমি আমার কথা মনে করে আবার ফিরে আসবে। তোমার অপেক্ষায় থেকে থেকে আর কারো হাত ধরিনি, কিন্তু যখন বুঝতে পারছি যে তুমি তো অনেক দুর এগিয়ে গেছ। তখন ত্যাগ করলাম তোমার ফিরে আসার সম্ভাবনা, সিদ্ধান্ত নিলাম কারো সাহায্য নিয়ে নয় বরং একা একা যেভাবেই হোক বের হবো। অনেক কষ্টে খাদ থেকে উঠলাম কিন্তু ততদিনে বড্ড দেরি হয়ে গেছে স্মৃতি। তোমার অপেক্ষায় থাকতে গিয়ে নিজের অজান্তেই শরীরে ক্যান্সার বাধিয়েছি বেশ মারাত্মক আকারে।
মা-বাবা তো ছিল না, একমাত্র বোনটিকে দেখতে গেলাম তাদের বাসায়। অনেকদিন পর নিজের ভাইকে যেন চিনতে পারছিল না সে।
তোমাকে খুঁজে বের করলাম, তুমি একটা সরকারি চাকরি নিয়ে বেশ ব্যস্ত। তোমার আশেপাশেই থাকা শুরু করলাম, ভাইরাসে আক্রান্ত শহরের মধ্যে নিজেকে মাস্ক পরে লুকিয়ে রাখা খুব সহজ।
সবসময় তোমার চোখের সামনে থাকতাম, আমার অস্তিত্ব তুমি বুঝতেই পারলে না।
শুনলাম তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, নামকরা ডাক্তার ছেলের সঙ্গে তোমার বিয়ে হবে। তোমার জীবনটা সত্যিই বেশ উজ্জ্বল, জীবনের এই শেষ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে তোমার জন্য দোয়া রইল।
আগেই বলেছি আমি ক্যান্সারে আক্রান্ত, যেকোন সময় মরে যাবো। আজকে সকালে ফজরের কিছু পরেই হঠাৎ মনে হচ্ছিল তোমার সঙ্গে জীবনের শেষ দেখা করা দরকার। তাই তোমার সামনে গিয়ে হাজির হলাম, তবে মোটেই লস হয়নি কিন্তু আমার। তোমার প্রথম স্পর্শ পেয়ে আজ অনেকটা আনন্দিত হলাম, সত্যি বলছি।
আমার বাবা মৃত্যু আগে প্রায় ১৭ বছর ধরে শশুর বাড়িতে যাননি। কিন্তু যেদিন তিনি মারা গেছেন তার ঠিক চারদিন আগে তিনি আমার নানা বাড়ি মানে বাবার শশুর বাড়িতে গেলেন। তিনদিন পরে সেখান থেকে ফিরলেন আর একদিন পরেই তিনি মারা গেছেন। বাবা হয়তো বুঝতে পেরেছেন তিনি মারা যাবে তাই শেষ একবার গিয়েছিল বেড়াতে।
আমিও ৩/৪ দিন ধরে বুঝতে পারছি আমার আয়ু ফুরিয়ে গেছে। তোমার কাছে একটা কথা জানার প্রবল ইচ্ছে ছিল কিন্তু জানা হলো না।
” স্মৃতি, কেন চলে গেলে? আমি তো অনেক অনেক ভালোবাসি, তবুও কেন চলে গেলে? ”
আমার মৃত্যুর যেদিন এক বছর পূর্ণ হবে, সেদিন সন্ধ্যা বেলা তোমার বাসার দক্ষিণের বারান্দায় বসে আকাশে তাকাবে। তারপর ঠোঁট নেড়ে তুমি বিড়বিড় করে বলে দিও আমি শুনে নেবো।
আধো রাতে যদি ঘুম ভেঙ্গে যায়,
মনে পড়ে মোরে প্রিয়!
চাঁদ হয়ে রবো আকাশের গায়ে,
বাতায়ন খুলে দিও।
——— সমাপ্ত ———-
অণুগল্প : ভালো থেকো স্মৃতি।
মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব।
গল্পটা ভালো লাগলে শে য়া র করুন। নতুন পাঠকেরা এমন অসাধারণ সব গল্প পড়তে পেজ ফ-লো করে সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত



বিষয়: #  #  #


আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)