বুধবার ● ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » বিশেষ প্রতিবেদন » কৈশোরে আর নয় যৌন অপরাধ
কৈশোরে আর নয় যৌন অপরাধ
মোফাজ্জল হোসেন, জয়পুরহাট: বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্য বিষয়ে বয়ঃসন্ধিকালের কিশোর-কিশোরীদের যৌন জ্ঞান ও প্রজননস্বাস্থ্যের প্রসঙ্গটি গুরুত্ব পাচ্ছে। এ সময়টাতেই কিশোর-কিশোরীদের মনে রোমান্টিকতা ও যৌন আগ্রহ সৃষ্টি হয়। যেহেতু যৌনজীবন ও প্রজননস্বাস্থ্য নিয়ে জানা তাদের অধিকার, কাজেই অভিভাবককে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। এর ব্যতিক্রম হলে সন্তান ভুল তথ্য নিয়ে ভুলপথে যেতে পারে।
দেশে সাম্প্রতিক যেসব অপরাধ ঘটছে, আর যারা ঘটাচ্ছে সেদিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে, এদের বড় একটা অংশ কিশোর-কিশোরী এবং তরুণ সমাজ। এসব অপরাধগুলোর মধ্যে যৌনতাকেন্দ্রিক অপরাধের সংখ্যাই বেশি। কিশোর-কিশোরীদের দৈহিক মিলনে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে অনেকের মৃত্যু হয়। এই ঘটনা, শুধু আমাদের দেশে নয়, সারা বিশ্বেই ঘটছে। আর তাই এ রকম মৃত্যু ও সম্পর্ক এখন উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটাকে বলা হচ্ছে কিশোর-কিশোরীদের অস্বাভাবিক যৌন আচরণ।
প্রতিদিন গণমাধ্যমে যেসব অপরাধের ঘটনা ছাপা বা প্রচার হচ্ছে, এর প্রায় প্রতিটির সঙ্গে কিশোর-কিশোরী, তরুণ, যৌনতা ও মাদক জড়িত। সমাজের সর্বস্তরেই এই বয়সী ছেলেমেয়েরা একই ধরনের অপরাধ করে যাচ্ছে। ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, অশ্লীল মন্তব্য, বিভিন্ন ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহার করা, পর্ণ-নায়িকার মতো করে মেয়ে বান্ধবীর কাছ থেকে সাড়া পাওয়ার চেষ্টা, এসবই ঘটছে কিশোর-কিশোরীদের অস্বাভাবিক যৌন আচরণের কারণে। এরসঙ্গে যোগ হয়েছে মাদক ও পর্ণগ্রাফি। পর্ণগ্রাফি বা ইন্টারনেটের যৌনশিক্ষা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুল জিনিস শেখায়।
আমাদের অনেকের ধারণা যৌনতা একটি পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির বিষয় এবং কিশোর-কিশোরীদের এর চর্চা করা উচিত নয়। কিন্তু বাস্তবতা ঠিক তেমনটা নয়। জানা যায়, ১শ’ বছর আগে কিশোর-কিশোরীদের যৌবনের শুরু হতো গড়ে ১৬ বছর বয়সে। এখন সেটা নেমে এসেছে ১০ বছর থেকেই। এর মানে মানুষের যৌনচিন্তা ও শারীরিক প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে আগে ভাগেই।
অপরদিকে আর্থসামাজিক কারণে বিয়ের বয়স যাচ্ছে পিছিয়ে। যার ফলে কিশোর-কিশোরীরা কোনো সমাধান দেখতে পাচ্ছে না। এতে বাড়ছে যৌন হতাশা। যার ফল হলো অস্বাভাবিক যৌনচিন্তা। কিশোর-কিশোরীদের অস্বাভাবিক যৌন আচরণের সঙ্গে সম্পর্কিত হচ্ছে “টিন ডেটিং ভায়োলেন্স”। এই ভায়োলেন্স বা সহিংসতা শুধু যে যৌনসঙ্গীর সঙ্গে হতে পারে তাই নয়, এটি নিজের শরীরের ওপরও হতে পারে। যৌনক্রিয়ায় কোনটা স্বাভাবিক ও কোনটা অস্বাভাবিক এই বোধটা ঠিকমতো তৈরি হচ্ছে না কিশোর-কিশোরীর মধ্যে। সুস্থ যৌনক্রিয়া কী সেই শিক্ষা পাওয়ার আগেই তারা পেয়ে যাচ্ছে অস্বাভাবিক যৌনক্রিয়ার শিক্ষা।
এর পাশাপাশি শহর ও গ্রামের কিশোর-কিশোরীরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন সব এনিমেশন বা গেইম দেখছে, যা মনকে ধর্ষকামী করে তোলে। কিশোর-কিশোরীরা যখন এসব চরিত্রকে আদর্শ মনে করে নিজেদের তাদের সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করে, তখন তারা না জেনে, না বুঝে জড়িয়ে পড়ে
ক্ষতিকর ও অস্বাভাবিক যৌন আচরণে।
কিশোর-কিশোরীরা বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তিকর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বয়ঃসন্ধিকালের প্রজনন স্বাস্থ্য ও যৌন স্বাস্থ্য নিয়ে সঠিক শিক্ষা দিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো হতে পারে এই জ্ঞান দেয়ার ক্ষেত্রে মূল স্থান। তাহলে সব ধরনের ছেলে-মেয়েদের কাছে যৌনতা এবং এ-সম্পর্কিত পারস্পরিক অন্তরঙ্গতার বিজ্ঞানভিত্তিক, বাস্তবসম্মত এবং সমালোচনার ঊর্ধ্বে উঠে তথ্য পৌঁছানো সহজ হবে। তথ্য দেয়ার পাশাপাশি সিদ্ধান্ত গ্রহণে দক্ষতা, যৌনশিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কেও ধারণা দেয়া যাবে।
এখনও পরিবার, সমাজ ও স্কুল পর্যায়ে প্রজননস্বাস্থ্য ও যৌনশিক্ষা নিয়ে কথা বলাটা ট্যাবুই রয়ে গেছে। অথচ দেখা যাচ্ছে বিশ্বজুড়ে কিশোর-কিশোরীরা অপ্রাপ্ত বয়সেই অনিরাপদ যৌন সম্পর্কে দিন দিন জড়িয়ে পড়ছে। তারাই সবচেয়ে বেশি অঘটন ঘটাচ্ছে। আমরা এখনও মনে করছি আমাদের হয়তো সন্তানরা যৌন সম্পর্কে জড়াচ্ছে না। সামাজিক ও ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে আমরা তাদের এই চর্চা থেকে সরিয়ে রাখতে পারছি। বাস্তবে আসলেই কি তা পারছি? এ বিষয়ে অভিভাবক, শিক্ষকদের সচেতনতা বাড়াতে হবে।
স্থানীয় একজন গাইনির চিকিৎসক কথা প্রসঙ্গে বলেন, অবিবাহিত কিশোরীদের বাবা-মা বা কিশোরীরা নিজেই তার প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালের দ্বারস্থ হয়, অ্যাবরশন বা গর্ভপাত ঘটানোর জন্য। যেহেতু অ্যাবরশন বৈধ নয়, তাই এরা গোপনে এমন জায়গায় গর্ভপাত করায়, যা পরবর্তী সময়ে তাদের স্বাস্থ্যহানি ঘটে থাকে। এখনও এ অবস্থায় বেশ কিছু বিবাহিত ও অবিবাহিত কিশোরীরা আসে, যারা অনিরাপদ যৌন সম্পর্কের কারণে এখন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে।
সরকার এসব কথাকে মাথায় রেখে কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিলেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না, কারণ সচেতনতার অভাব। ‘বর্তমান এ পরিস্থিতিতে কিশোর-কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার’-এর ওপর করা সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের পরেও কেন এমনটা হচ্ছে, এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত অপারেশন প্ল্যানে বয়ঃসন্ধিকালের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্প থাকলেও, বাবা-মা, অভিভাবক, স্কুল-কলেজ, ধর্মীয় গুরু, সমাজকর্মী, স্থানীয় মোড়ল ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এই বিষয়গুলো নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামান না। অথচ এ বিষয়ে তাদেরই সবচেয়ে বেশি সচেতন হওয়ার কথা বলা হচ্ছে বার বার।
বাংলাদেশ গৃহগণনা/জনশুমারী (২০২২) সালের হিসাব অনুযায়ী দেশে মোট জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৫৭ শতাংশ জনগোষ্ঠীই কিশোর-কিশোরী। অথচ কৈশোরবান্ধব সেবা কেন্দ্রের সেবা সম্পর্কে কিশোর-কিশোরীদের কোনো সুস্পষ্ট ধারণা নেই বা তাদের সেভাবে জানানোও হয় না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা নেয়ার ক্ষেত্রে গোপনীয়তার অভাব রয়েছে।
কিশোর-কিশোরীরা সেবা গ্রহণের সময় সেবাদানকারীর কক্ষের বাইরে অযাচিত ভাবে মানুষ উঁকিঝুঁকি দেয়। যত্ন নিয়ে বা গুরুত্ব দিয়ে কিশোর-কিশোরীদের বিশেষ করে কিশোর ও অবিবাহিতা কিশোরীদের সঙ্গে কথা বলা হয় না। অনেক ক্ষেত্রে কিশোর-কিশোরীরা স্কুলে থাকার কারণে স্বাস্থ্যসেবা নেয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের সময়সূচির অনুসারে সেবাকেন্দ্রে আসতে পারে না এবং স্বাস্থ্যসেবাও নিতে পারে না।
কৈশোরকালে মন ও দেহের যে বৃদ্ধি ঘটে, সেই পরিবর্তনের সঙ্গে বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছানো শিশু-কিশোরদের মনো-দৈহিক ও মনো-সামাজিক, আবেগীয় ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তন ঘটে। বয়ঃসন্ধিকালে শিশু-কিশোরদের নিজের দেহ ও মন নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকে। আর এই প্রশ্নের সঠিক জবাব না পেলে বিভ্রান্তি থেকে নানা রকম ক্ষতি হতে পারে। একজন শিশু যখন বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছে, তখন সেই শিশুর জন্য শারীরিক ও মানসিক ভাবে বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন। পরিবার ও সমাজ যৌনজীবন ও প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে কোনো আলোচনাকে গ্রহণ করে না। বরং এই বিষয়ক আলোচনাকে ঘরে-বাইরে, এলাকায়, স্কুলে এখনও ঠেকানোর চেষ্টা করে থাকে। যৌন স্বাস্থ্য বিষয়ে শিক্ষা কিন্তু শুধু যৌনতা বিষয়ে শিক্ষা নয়, এ শিক্ষা শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্য, আবেগ, মানসিক এবং সামাজিক শিক্ষা, যা মানুষের সারাজীবন প্রভাব রাখে। অথচ আমাদের সমাজে বয়ঃসন্ধিকালের শিশু-কিশোরদের এসব নিয়ে কথা বলাটা এখনও একধরনের প্রাচীন ধারার মধ্যে রয়ে গেছে। ফলে যা জানা তাদের জন্য জরুরি, তারা তা জানতে পারছে না। প্রচলিত ধারণা ও বিভিন্ন ধরনের বিতর্কিত কথাবার্তার কারণে বয়ঃসন্ধিকালের স্বাস্থ্য ইস্যুগুলো নিয়ে কথাই বলা যায় না। অথচ সমাজে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে নেতিবাচক ঘটনা ঘটেই চলেছে। যেমন বাল্য বয়সে গর্ভধারণ, অনিারপদ গর্ভপাত, যৌনরোগ সংক্রমণ, যৌনতা-বিষয়ক সহিংসতা।
আমাদের মতো দেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করে বয়ঃসন্ধিকালের শিশু-কিশোরদের যৌনতা-বিষয়ক শিক্ষা দিলে তারা নষ্ট হয়ে যাবে, যৌন বিষয়ের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। অথচ এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। এই শিক্ষার মাধ্যমে বয়ঃসন্ধিকালের ছেলেমেয়েরা সাধারণ জীবন দক্ষতা, যোগাযোগ, কথা বলা ও শোনার দক্ষতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সমঝোতা করা, কোথা থেকে কীভাবে সাহায্য পাওয়া যাবে, এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারবে। জানতে পারবে, কোন কোন অজানা বিষয়ে বাবা-মা, অভিভাবক, শিক্ষক ও স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র থেকে তাদের উপদেশ নেয়া দরকার। তারা এ-ও শিখবে যে বন্ধু-বান্ধবদের অন্যায় পরামর্শ ও চাপকে কীভাবে অগ্রাহ্য করা সম্ভব? এ-ও বুঝবে যে সামাজিক ট্যাবু ভাঙতে হবে এবং এ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার নিয়ে কাজ করছে ব্র্যাক সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি কর্মসূচির আওতায় অধিকার এখানে এখনই প্রকল্প। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হলো- সমাজের কিশোর ও তরুণরা প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে যাতে খোলামেলা কথা বলতে পারে এবং তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যে সামাজিক ‘ট্যাবু’ ও বাঁধা রয়েছে তা দূর করা। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং জনমত গড়ে তোলার মাধ্যমে এমন একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে কিশোর ও তরুণেরা প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে নিঃসংকোচে কথা বলতে পারে এবং সঠিক তথ্য প্রাপ্তির মাধ্যমে তাদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করতে পারে। তরুণদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার এবং লিঙ্গ ভিত্তিক ন্যায়বিচারের জন্য সুশীল সমাজকে সম্পৃক্ত করে সমাজের সকল স্তরের যুবক-যুবতী ও কিশোর-কিশোরীদের জন্য এমন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলা যা তাদের যৌন ও প্রজনন অধিকার এবং অ-বৈষম্যমূলক লিঙ্গ প্রকাশের বিষয়ে সচেতন এবং ক্ষমতাবান/ আত্মপ্রত্যয়ী করবে।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার কোমরগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল হক মাসুম ও তেঘর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (শারীরিক শিক্ষা) মাহামুদ হাসান পলাশ কথা বলে জানা যায়, ব্র্যাকের এ প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, এসএমসি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বিভাগের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সাথে যুক্ত করে যৌন প্রজনন ও স্বাস্থ্য এবং অধিকার সর্ম্পকে বিস্তারিত ভাবে আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে যে বাঁধা ছিল তা অনেকটাই দূর হয়েছে। আগে শিক্ষার্থীরা এসব বিষয়ে জানা ও বলার আগ্রহ প্রকাশ করত না। এখন বর্তমানে তাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। স্যানেটারী প্যাডের সঠিক ব্যবহার ও হাইজেনিক টয়লেট ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য সকল শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের সাথে আলোচনার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এর ফলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সর্ম্পক নিশ্চিত হয়েছে।
তারা আরো বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে যৌন প্রজনন ও স্বাস্থ্য এবং অধিকার সর্ম্পকে আমাদের অনেক উন্নতি হয়েছে। এ বছর যা উন্নতি হয়েছে তা আগামীতে আরো অনেক বেশি উন্নতি হবে। আমরা চাই এ প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান থাকুক।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার কোমরগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাকির হোসেন ও মিম্মা খাতুন কথা বললে তারা জানান, আমাদের বিদ্যালয়ে শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে আগে পাঠদান তেমন হতো না। ব্র্যাকের নলেজ ফেয়ার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যখন আমরা যৌন প্রজনন ও স্বাস্থ্য এবং অধিকার সর্ম্পকে বির্তক প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি নেই তখন বুঝতে পারি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এ বিষয়ে জানা টা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এরপর থেকে আমরা প্রধান শিক্ষক স্যারের মাধ্যমে আমাদের শারীরিক শিক্ষা বই যথাযথ ভাবে পড়ানোর জন্য অনুরোধ করি এবং এখন সেটা পড়ানো হচ্ছে। এছাড়াও আমাদের বিদ্যালয়ে ব্র্যাকের এ প্রকল্পের মাধ্যমে যৌন প্রজনন ও স্বাস্থ্য এবং অধিকার সর্ম্পকে বিভিন্ন স্লোগান, কার্টুন চিত্র, শিক্ষামূলক কথা দেওয়ালে লেখা হয়েছে।
জয়পুরহাট জেলায় ব্র্যাকের ইয়ুথরা বিভিন্ন স্থানে যৌন প্রজনন ও স্বাস্থ্য এবং অধিকার সর্ম্পকে উঠান বৈঠক করেছে। এর ফলে এখন অনেক সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তারা স্থানীয় স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে গিয়ে তাদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করছে।
এই উদ্দেশ্য অর্জনে প্রকল্পটি যুব ও তরুণ জনগোষ্ঠী (১৫-২৪ বছর), শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, এসএমসি সদস্য, অভিভাবক, ধর্মীয় নেতা, কমিউনিটি লিডার, জেন্ডার বৈচিত্র জনগোষ্ঠী, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় প্রশাসন (মন্ত্রণালয়/ জেলা/ উপজেলা প্রশাসন/ মহিলা বিষয়ক/ সমাজসেবা/ যুব উন্নয়ন/ শিক্ষা/ পরিবার পরিকল্পনাসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ), জনপ্রতিনিধি (স্থানীয় সরকার), স্বাস্থ্য সহায়তা প্রদানকারী সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থা, মিডিয়ার সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন নাগরিক সমাজ ও সিভিল সোসাইটির সদস্যবৃন্দ প্রমূখদের সাথে জয়পুরহাট জেলায় একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।
বিষয়: #অপরাধ #কৈশোর #যৌন