শিরোনাম:
ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩১

Somoy Channel
মঙ্গলবার ● ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » অনুপ্রেরণা (গল্প) » অস্থিত
প্রথম পাতা » অনুপ্রেরণা (গল্প) » অস্থিত
১৪০ বার পঠিত
মঙ্গলবার ● ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

অস্থিত

অস্থিতআমার মা সারা বছর বড় ভাইয়ের বাসায় থাকেন।প্রথমে আপত্তি করেছিলাম ভীষণ।কিন্তু মায়ের যুক্তির সাথে পেরে উঠতে পারি নি। মা বলেছিলেন,
-তোরা দুইজনে অফিস করিস,সিয়াম স্কুলে থাকে।একা তোর ফ্ল্যাটে দমবন্ধ লাগে,সময় কাটে না।
-টিভি দেখবেন, নামাজ পড়বেন।সময় কেটে যাবে।
-তোদের বাসায় বাবা অনেক গরম লাগে।
-দক্ষিণমুখী ঘরটা আপনার, জানালা খুলে আরাম করে ঘুমাবেন।
মা কোনোরকম এক সপ্তাহ থাকেন এরপর তল্পিতল্পা গুছিয়ে ভাইয়ের বাসায় রওনা হন৷এনিয়ে মায়ের সাথে কয়েকবার মনোমালিন্য হবার পর হাল ছেড়ে দিয়েছি। উনার বয়স হয়েছে,যেখানে থেকে শান্তি পায় থাকুক।বড় ভাইকে কিছু দিলে ভাই নিবেন না। তাই মাসের শেষে মাছ-মাংস থেকে শুরু করে কাঁচা তরকারি বাজার করে ভাইয়ের বাড়ি উপস্থিত হই। ভাবীর রান্নার হাত অসাধারণ। দুপুরে দুই ভাইয়ে জম্পেশ খাওয়াদাওয়া হয়। বিকেলে বাড়ি ফেরার সময় মায়ের বালিশের নীচে কয়েকটা হাজার টাকার নোট গুঁজে দিয়ে আসি।
এরপরও আমার ভেতর থেকে খুঁতখুঁতানি যায় না।খাবার টেবিলে নারকেলের দুধ দিয়ে চিংড়ি মাছের মালাইকারি দেখলে মায়ের কথা মনে হয়। মা খুব শখ করে খান।ঈশিতা সেদিন লেবু পাতা দিয়ে ঝাল ঝাল পাবদা মাছের ঝোল করেছিল। ভাতের নলা গলা দিয়ে যাচ্ছিল না। আমার মত মায়েরও পাবদা প্রিয় মাছ। অফিসিয়াল গ্যাঞ্জাম হয় কত, ঈশিতার সাথে ঝগড়া হয় খুব।সেই সময় আমি মাকে মিস করি। মাকে স্বার্থপর মনে হয় ভীষণ।
প্রথম রোযায় ঈশিতার অফিস ছুটি ছিল। গ্রোসারি শপ ঘুরে ইচ্ছামত বাজার করে আনল। ইফতার করতে বসে দেখি এলাহি ব্যাপার। সাত-আট রকমের ফল, শরবত, লাচ্ছি, ফালুদা, কাটলেট, ভাজাভুজি আইটেম তো আছেই।
ঈশিতা বলল,
-জিনিসপত্রের কি পরিমাণ দাম বেড়েছে জানো? এক কেজি নাশপাতি ৪৫০ টাকা।
আস্তে করে বললাম,
-নাশপাতি মায়ের প্রিয় ফল।
ঈশিতা আমার মনের অবস্থাটা বুঝল।
-চলো কাল গিয়ে মাকে নিয়ে আসি। আমি গেলে মা না করতে পারবেন না।
বড় ভাই থাকেন কলাবাগান এড়িয়ায়। ছোট্ট দুইখানা বেডরুমে গাদাগাদি করে পাঁচজন লোক বাস করে। শোবার জায়গা হয় না তাই ডাইনিং এ খাট পাতা হয়েছে।এঘরে দীপু ঘুমায়।বড় ভাইয়ের ছেলে, এবার এইচ.এস.সি দিয়েছে। মা সোহার সাথে এক বিছানাতে ঘুমায়। পাখির খাঁচার চেয়ে বিঘত খানেক বড় ঘরে বড় খাট রাখার জায়গা নেই। দুজনের ঘুমাতে কষ্ট হয় তা খাট দেখলেই বোঝা যায়।টেবিলে সোহার বইখাতার স্তূপ, ওয়ারড্রবে একটা ড্রয়ার মায়ের জন্যে বরাদ্দ, আর সব সোহার সম্পত্তি। ছোটবেলা থেকে দেখেছি মা খুব শৌখিনভাবে থাকতে ভালোবাসেন,এখানে শৌখিনতার বালাই নাই। বড় ভাইয়ের কাটা-কাপড়ের ব্যবসা আছে। ব্যবসায় লাভ-লোকশান কেমন হয় জানি না তবে ভাবীর চেহারায় মলিনতার ছাপ আর ফ্রীজ ভর্তি তেলাপিয়া মাছ দেখে সহজেই আন্দাজ করতে পারি। দিনের বেলায় লাইট অন করে রাখতে হয়, মাথার উপর ফ্যান ঘ্যারঘ্যার শব্দ করে ঘোরে মায়ের তবু এখানে থাকা চাই।
মাকে এবার সত্যি নিয়ে এলাম। দক্ষিণমুখী ঘর, ধবধবে সাদা বিছানার চাদর, জানালা জুড়ে সবুজাভ নীল বাহারি পর্দা। মাকে জড়িয়ে বললাম,
-মা, আপনার পছন্দ হয়েছে তো?
মা হাসলেন,
-এবার আর একা থাকতে হবে না। সিয়ামের একমাস স্কুল বন্ধ। আপনার সারাদিনের সঙ্গী পেয়ে গেছেন।
তিনটায় অফিস ছুটি। ঈশিতা রান্না করে, মা পাশে টুকিটাকি সাহায্য করে আর গল্প করে।দেখে মনটা ভরে যায়। রোজ অফিস যাবার সময় জিজ্ঞেস করি,
-মা, আপনার কি খেতে মন চায়?
-আমি বুড়া মানুষ একটা হলেই হল।
-শাহি জিলাপি খাবেন মা?
-তোর ইচ্ছা হলে আনিস।
ইফতারে এক টুকরো মুখে জিলাপি মুখে মা বলেন,
-সোহা জিলাপি খেতে ভালোবাসে।
বেশ কয়েকদিন পর খাবার টেবিলে দেখি মায়ের মুখ অন্ধকার।
-তোরা তরকারিতে খুব ঝাল খাস।
ঈশিতাকে বললাম ঝাল কমিয়ে রাঁধতে।পরদিন ঈফতারে বললেন,
-এত ভাজাপোঁড়া খেলে গ্যাস্ট্রিক হয়ে যাবে। ঈশিতা ফ্রুট সালাদ এগিয়ে দেয়।
মায়ের মুখ থেকে তবু অন্ধকার সরে না। প্লেটে এক টুকরো গরুর মাংস নিয়ে নাড়াচাড়া করেন,
-দীপু গরুর মাংসের কালাভুনা হলে দুই প্লেট ভাত খায়।
ঈশিতা ঘুমাতে এসে বলল,
-মায়ের কি এমন দুঃখ বলো তো।
-কেন?
- মা নামাজ পড়তে বসে মোনাজাতে ভীষণ কান্নাকাটি করছে।
পাশ ফিরে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। মায়ের দুঃখটা আর অজানা নেই।
পরদিন শুক্রবার। মাকে নিয়ে বাজার করতে গেলাম।গরুর মাংস,শাহি জিলাপি আর বাকি যা যা মা খেতে ভালোবাসেন।ভাইয়ের বাসায় ফিরতেই মা সোহাকে জড়িয়ে ধরে হু হু কান্না৷ যেন কতদিন পর ওদের দেখছে। ফিরে আসার সময় বালিশের নীচে রোজকারের চেয়ে কয়েকটা হাজার টাকার নোট বেশি রেখে এলাম। ওষুধপত্র, হাত-খরচ ছাড়াও মায়ের টাকার প্রয়োজনটা আরো বেশি।
একা বাড়ি ফিরছি তবু বুকের ভেতর সেই অস্থিরতা নেই। মায়েদের স্বার্থপর ভেবে আমরাই ভুল করি।এক সন্তান ভারী হয়ে গেলে অন্য সন্তানের পাল্লায় ঢাল হয়ে দাঁড়ান যেন দাঁড়িপাল্লার দুটো দিক সমান সমান থাকে।মায়েরা চিরকাল সমান সমান হয়ে ভালোবেসে যায়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত



বিষয়: #


আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)