মঙ্গলবার ● ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বাংলাদেশ গড়ার ইশতেহার দেবে আওয়ামী লীগ
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বাংলাদেশ গড়ার ইশতেহার দেবে আওয়ামী লীগ
দরজায় কড়া নাড়ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর মাত্র ১৩ দিন পর অনুষ্ঠিত হবে বহুল কাঙ্ক্ষিত ভোট। নির্বাচন সামনে রেখে আগামী ২৭ ডিসেম্বর নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অন্যান্যবারের মতো এবারও ইশতেহার ঘোষণা করবেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা।
দলীয় সূত্র জানায়, টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ নির্বাচনে প্রতিশ্রুতি প্রণয়নে গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে কাজ শুরু করে। গঠন করা হয় ইশতেহার প্রণয়ন কমিটি। এরইমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে ইশতেহার। এখন কেবল আনুষ্ঠানিক ঘোষণার বাকি। এবারের ইশতেহারে বিগত নির্বাচনের আগে দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের হিসাব-নিকাশের পাশাপাশি থাকবে নতুন নতুন চমক।
ইশতেহার প্রণয়ন কমিটি গঠনের পর একাধিক বৈঠক হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন পেশাজীবীরা তাদের মতামত প্রকাশ করেছেন। এছাড়া এবার ইশতেহার প্রণয়নে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষক-শ্রমিকসহ নানা পেশাজীবী মানুষ, স্থানীয় পর্যায়ের ব্যবসায়ীসহ সবার মতামত নিয়ে ইশতেহার তৈরি করা হয়েছে।
জানা গেছে, এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণকে সামনে রেখে প্রণয়ন করা হয়েছে। ইশতেহারে সবচেয়ে কর্মসংস্থানের বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পাবে। এছাড়া ইশতেহারে সুশাসন নিশ্চিত করা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আর্থিক খাতের শৃংখলা, কর্মসংস্থান, সহজলভ্য প্রযুক্তি ও কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা থাকবে। ইশতেহারের প্রথমাংশে বিগত নির্বাচনের আগে ঘোষিত অঙ্গীকারের বাস্তবায়নের চিত্র তুলে ধরা হবে। দ্বিতীয়াংশে আগামী পাঁচ বছরের প্রতিশ্রুতি এবং এর পাশপাশি থাকবে ভবিষ্যত বাংলাদেশের রূপরেখা।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারের স্লোগান ছিল ‘দিনবদলের সনদ’। সেই ইশতেহারে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার প্রতিশ্রুতি দেয় আওয়ামী লীগ। এরপর ২০১৪ সালে ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে ১০টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে ‘২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’ এবং ‘২১০০ সালের মধ্যে নিরাপদ বদ্বীপ’ গড়ে তোলার পরিকল্পনা দেয়া হয়।
জানা গেছে, এবারের ইশতেহারে রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে ১১টি পরিকল্পনার সবিস্তার বর্ণনা থাকবে ইশতেহারে। ১১ দফা পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে-২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ‘বিনির্মাণ। আর স্মার্ট বাংলাদেশের ভিত্তিতে হবে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি। স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে ‘রূপকল্প ২০৪১’কে ধারণ করে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে ২য় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১; স্মার্ট ডেল্টা বিনির্মাণে ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’, ৯ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ২০২৬-২০৩০, ১০ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ২০৩১-২০৩৫, একাদশ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ২০৩৬-২০৪০।
এছাড়া কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে উৎপাদন পরিচালনা ও বৃদ্ধি করা হবে। ক্ষুদ্র, কুটির, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্প গড়ে তোলা হবে। সড়ক, নৌ, রেল ও বিমানপথে যাতায়াতের গৃহীত সব প্রকল্প শেষ করা হবে। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ নিশ্চিত করে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগের অতীতের ইশতেহারে সরকারের নির্দিষ্ট মেয়াদের বাইরে দীর্ঘমেয়াদি নানা উন্নয়নের পথনকশা ছিল। এর প্রতিটিই অত্যন্ত সুচারুভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। গণমানুষের দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ইশতেহার কেবল একটি দলীয় ইশতেহার নয়, এটি প্রকৃত অর্থে গোটা জাতির ইশতেহার। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করে সেটি গুরুত্বপূর্ণ।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্ণেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বিবার্তাকে বলেন, ইশতেহারে অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ গঠন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, কৃষি, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে আগামী পাঁচ বছরের জন্য আমাদের কী অঙ্গীকার সেসব থাকবে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে করা হবে এমন বিষয়ের সাথে ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নের কথাও থাকবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বিবার্তাকে বলেন, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ হবে তারুণ্য নির্ভর, এজন্য নতুন ইশতেহারে তরুণদের বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে। আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তাদের চিন্তা-চেতনা, কর্ম, ও শিক্ষার প্রসার ঘটানোর সুযোগ দেয়ার পাশাপাশি তাদের জন্য কর্মক্ষেত্র তৈরি ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি প্রযুক্তিনির্ভর দেশ। এখন উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আমাদের লক্ষ্য। সেই পরিকল্পনাও আমাদের এই ইশতেহারে উল্লেখ থাকবে। এছাড়া আমাদের পরের একশ বছরে কোথায় যাবে বাংলাদেশ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটার ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ প্রণয়ণ করেছেন, সেই ভাবনার প্রতিফলন থাকবে। এবারের ইশতেহারটা হবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এবারের নির্বাচনের ইশতেহারটা হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বাংলাদেশ গড়ার ইশতেহার।
বিষয়: #নির্বাচন ২০২৪