বুধবার ● ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » স্বাস্থ্য » স্তন ক্যানসার নিয়ে যত কথা
স্তন ক্যানসার নিয়ে যত কথা
ক্যানসার বহু ধরনের। এর মধ্যে স্তন ক্যানসার একটি। নারীর স্তন ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা ২৮ দশমিক ১ শতাংশ। শুধু সঠিক সময়ে ধরা না পড়া, ভুল জানা বা বোঝা ও অসচেতনতায় অনেকে মৃত্যুবরণ করে থাকেন। স্তন ক্যানসার সম্পর্কে প্রথমেই জানতে হবে এর ধরনগুলো। কারও শরীরের যদি কোথাও অস্বাভাবিকভাবে কিছু বাড়তে থাকে এবং পিণ্ড হয়, তখন তাকে সাধারণ টিউমার বলে। এ টিউমার তিন ধরনের- বিনাইন (ক্ষতিকর নয়), ম্যালিগন্যান্ট (এ টিউমারই ক্যানসার) এবং ভবিষ্যতে ম্যালিগন্যান্ট হতে পারে (যা ভবিষ্যতে ক্যানসারে রূপ নিতে পারে)। সাধারণত বিনাইন টিউমার পিণ্ডের মতো। আলাদা করা যায়। এক বা একাধিক জায়গায় আবদ্ধ থাকে। সিস্ট বা থলির মতো থাকতে পারে। ম্যালিগন্যান্ট ক্যানসার পি- না হয়েও নরম থাকতে পারে। এর কোনো সীমানা নির্ধারণ করা যায় না। আকার-আকৃতি যেমন বোঝা যায় না, তেমনি এক জায়গায় আবদ্ধ না থেকে আশপাশে ছড়িয়ে গিয়ে সুস্থ কোষ ধ্বংস করে ফেলে। এর সঠিক চিকিৎসা না করালে মৃত্যু হয়। মূল উৎপত্তিস্থল থেকে ক্রমে এগুলো মেটাস্টাসাইজ হয়ে শরীরের অন্য স্থানে ছড়িয়ে যায়। তখন আর আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। ভবিষ্যত ম্যালিগ্যান্ট যে কোনো ধরনের হতে পারে। এর মধ্যে কয়েক ধরনের টিউমার হলো- বিনাইন, দেখতে পিণ্ডবদ্ধ কিন্তু ছড়াচ্ছে না, ভবিষ্যতে ছড়াতে পারে। সবসময় যে ক্যানসার বিস্তার নিয়ম মেনে হয়, তা নয়। বিনাইন কখনো কখনো ম্যালিগ্যান্টে রূপ নিতে পারে। ম্যালিগ্যান্ট পি-বদ্ধ হতে পারে আবার নমনীয় ক্যানসার কোষ হতে পারে। ডাক্তাররা নিশ্চিত বিনাইন মনে করলে আক্রান্তকে সার্জারি না করে ফলোআপে রাখেন। বিনাইন ক্ষতিকর না হলেও অনেক সময় বাড়তে বাড়তে বড় ধমনি বা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ও টিস্যুতে চাপ তৈরি করে, যা পরবর্তীকালে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। আবার অনেক বিনাইন টিউমার তৈরি করে। বায়োপসি করার সময় ভেতরের কোষগুলো শরীরের অন্য অংশে গিয়ে সমস্যা করে। রোগী ও রোগের অনেকগুলো বিষয় বিবেচনা করে চিকিৎসা করা হয়। যেমন প্রাইমারি লোকেশন, বিনাইন বা ম্যালিগন্যান্ট, লসিকাগ্রন্থি (লিম্ফ নোড অর্থাৎ শরীরের রোগ প্রতিরোধকারী ব্যবস্থার অংশ) আক্রান্ত কিনা, সাইজ, গ্রেড, মেটাস্টাসাইজ হয়েছে কিনা ইত্যাদি। আবার ক্যানসার হওয়ার পর ভালো হবে কিনা, রোগী কতদিন বাঁচবে, এটা নির্ভর করে মূলত চিকিৎসার কার্যকারিতা, সাইজ, গ্রেড, বয়স বৃদ্ধিহার এবং আক্রান্ত ব্যক্তির ওপর।
প্রথম ধাপ : ক্যানসার নয়, ছড়িয়ে পড়ার লক্ষণ ধরা পড়েনি। ৫ বছর পর্যন্ত বাঁচার হার শতভাগ।
ধাপ দ্বিতীয় : ১ ও ২ সেমি ছোট টিউমার, ছড়িয়ে পড়ছে না। ১-বি খুব ছোট টিউমার থাকতে পারে, নাও থাকতে পারে কিন্তু খুব ছোট একাধিক কোষ পাওয়া গেছে। লসিকাগ্রন্থিতে থাকতে পারে, না-ও থাকতে পারে। ৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে।
ধাপ তৃতীয় : এ, বি ভাগ আছে, টিউমার ৫ সেমি পর্যন্ত হতে পারে।ছোট একাধিক ক্যানসার কোষ আছে (২ মিমি নিচে) ৩টির মতো লসিকাগ্রন্থিতে ছড়িয়ে পড়ছে। ৫ বছর পর্যন্ত বাঁচার হার ৯০ ভাগ।
ধাপ চতুর্থ : এ, বি, সি ভাগ আছে, ভয়াবহ অবস্থা, কোনো লক্ষণ থাকতে পারে, নাও থাকতে পারে। লাল হয়ে বা ফুলে উঠতে পারে স্তন। স্তনে গরম অনুভূত হওয়া, বগলের নিচে ব্যথা হতে পারে, চামড়ায় পরিবর্তন আসা, ক্যানসার বড় হয়েছে, ১০টির বেশি গ্রন্থিতে ছড়িয়ে পড়ছে, ৫ সেমি বড় টিউমার বা যে কোনো আকার-আকৃতির ক্যানসার থাকতে পারে। বুকের পেশি ও আশপাশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ৫ বছর পর্যন্ত বাঁচার হার ৭২ ভাগ।
ধাপ পঞ্চম : ক্যানসার লসিকাগ্রন্থি ও রক্তের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে, মেটাস্টাসিস চামড়া, হাড়, ফুসফুস, লিভার, কিডনি ও রক্তে ছড়িয়ে পড়ছে। ৫ বছর পর্যন্ত বাঁচার হার ২০ ভাগ।
লেখক : রেডিয়েশন ও মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট
অধ্যাপক ও প্রধান, অনকোলজি বিভাগ, এনাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, সাভার, ঢাকা
বিষয়: #কথা #ক্যানসার #স্তন