মঙ্গলবার ● ১২ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » সর্বশেষ » আফগানিস্তানকে টপকে আফিম উৎপাদনে শীর্ষে মিয়ানমার: জাতিসংঘ
আফগানিস্তানকে টপকে আফিম উৎপাদনে শীর্ষে মিয়ানমার: জাতিসংঘ
২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে আফিম চাষে বিশ্বের শীর্ষস্থান দখল করে রেখেছিল দেশটি। তবে, আফিম বাণিজ্যে তালেবান সরকার কঠোর হওয়ায় আফগানিস্তানে এর চাষ কমেছে। এবার আফগানিস্তানকে পেছনে ফেলে বিশ্বের বৃহত্তম আফিম উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে শীর্ষ স্থান দখল করে নিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমার। আফিম বা পপি উচ্চ আসক্তিযুক্ত মাদক, যা থেকে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে হেরোইন তৈরি হয়।
১২ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার জাতিসংঘের ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম অফিসের (ইউএনওডিসি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধমূলক সংস্থা ইউএনওডিসির তথ্যমতে, চলতি বছরে এ পর্যন্ত মিয়ানমার আফিমের উৎপাদন ৩৬ শতাংশ বাড়িয়ে আনুমানিক ১ হাজার ৮০ টন করবে। যা গত বছরে ছিল ৭৯০ টন। যেটি হেরোইনের মূল উপাদান।
ইউএনওডিসি বলছে, গত বছরের এপ্রিলে আফিম চাষে নিষেধাজ্ঞা দেয় আফগানিস্তানের তালেবান সরকার। এরপরেই দেশটিতে আফিমের চাষ ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের এপ্রিলের পর থেকে আফগানিস্তানে ৩৩০ টন আফিমের উৎপাদন হয়েছে।
জাতিসংঘের ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম অফিসের (ইউএনওডিসি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নোবেলজয়ী নেতা অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। এরপর থেকেই দেশটিতে সহিংসতা চলছে এবং অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিদ্রোহীদের প্রতিরোধের মুখে পড়েছে জান্তা সরকার। সেনাবাহিনী ক্ষমতায় আসার পরই দেশটির অনেক চাষি আফিম চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।
জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থাটির ধারণা, ২০২২-২৩ বছরে মিয়ানমারে যতটুকু আফিম চাষ হবে তা সবশেষ ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ইউএনওডিসি বলছে, মিয়ানমারের বর্তমান অবস্থা আফিম চাষের জন্য উপযুক্ত। সেখানে এর চাষ বাড়ছে। এর মূলে রয়েছে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, উন্নত সেচ এবং সারের ব্যবহার। এতে করে আফিমের ফলনও বাড়ছে।
এর ফলে মিয়ানমারে বৈধ ব্যবসার সুযোগ কমে গেছে। অন্যদিকে অনিয়ন্ত্রিত বাজার, দুর্বল রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো, মুদ্রাস্ফীতি এবং আর্থিক জটিলতা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিকল্প জীবিকা হিসেবে আফিমসহ অন্যান্য মাদকের ব্যবসায় ঝুঁকছে মানুষ। ২০২২ সালের শেষের দিকে মিয়ানমারের বহু কৃষক পপি চাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশটিতে প্রতি কেজি তাজা ও শুকনো আফিমের দাম বেড়ে যথাক্রমে ৩১৭ এবং ৩৫৬ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালে মিয়ানমারে ৪৭ হাজার হেক্টর জমিতে পপি চাষ হয়েছে, যা ২০২২ সালের তুলনায় প্রায় ১৮ শতাংশ বেশি।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, মিয়ানমারের ৪১ হাজার ৩০০ হেক্টর বা এক লাখ দুই হাজার ৫৪ একর জমিতে আফিমের চাষাবাদ করা হয়। এর মধ্যে শান প্রদেশেই ৮৮ শতাংশ চাষাবাদ হয়। ইউএনওডিসি বলছে, শান প্রদেশে পশ্চিমাঞ্চলে প্রতি হেক্টর জমিতে আফিমের গড় উৎপাদন বেড়েছে ১৯ দশমিক আট কিলোগ্রাম। শান প্রদেশটি মিয়ানমারের মোট ভূমির প্রায় এক-চতুর্থাংশ। এই অঞ্চলটি গিরিখাত, জঙ্গল ও পাহাড়ে ঘেরা।
জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনের বিষয়ে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের মুখপাত্রের মন্তব্য চেয়েও পায়নি এএফপি। তবে, মাদক নির্মূল ইউনিটে কাজ করেন দেশটির একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, অভ্যন্তরীণ সহিংসতার জন্য আফিম ক্ষেত শনাক্ত ও ধ্বংসে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে বেগ পোহাতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, নিরাপত্তা ছাড়া, আমরা চাইলেও অনেক কিছু করতে পারি না।
এএফপি জানিয়েছে, মিয়ানমারের সবচেয়ে বেশি চাষাবাদ হয়ে থাকে শান প্রদেশে। তবে, এই প্রদেশের উত্তরাঞ্চলে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সহিংসতা বেড়েছে। সেখানে বিরোধী কিছু গোষ্ঠী একজোট হয়ে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
বিশ্বজুড়ে বিক্রি হওয়া বেশিরভাগ হেরোইনই আসে মিয়ানমারে ও আফগানিস্তান থেকে।
মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এবং লাওসের সীমানা যেখানে মিলিত হয়েছে, সেই অঞ্চলটিকে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল নামে ডাকা হয়। অঞ্চলটি ঐতিহাসিকভাবে আফিম ও হেরোইন উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলে এবারও বেড়েছে আফিমের উৎপাদন।
বিষয়: #:জাতিসংঘ #আফগানিস্তান #আফিম #উৎপাদন #মিয়ানমার #শীর্ষ