মঙ্গলবার ● ১২ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » বিশ্ব » জান্তা-বিদ্রোহীদের সঙ্গে শান্তি আলোচনার ফলাফল ইতিবাচক: চীন
জান্তা-বিদ্রোহীদের সঙ্গে শান্তি আলোচনার ফলাফল ইতিবাচক: চীন
মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে সংঘাত অবসানে জান্তা ও সশস্ত্র সংখ্যালঘু বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে শান্তি আলোচনায় বসেছিল চীন। সেই আলোচনা থেকে ইতিবাচক ফলাফল এসেছে বলে দাবি করেছে বেইজিং।
সোমবার (১১ ডিসেম্বর) চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং এ কথা জানিয়েছেন।
তবে বৈঠকে কোন কোন পক্ষ অংশ নিয়েছিল সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি তিনি। মায়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতীর প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। গত ২৭ অক্টোবর চীন সীমান্তসংলগ্ন অঞ্চলে বিদ্রোহী গোষ্ঠী তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি, দ্য মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি ও আরাকান আর্মি সম্মিলিতভাবে মায়ানমারের জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে অপারেশন ১০২৭ শুরু করে।
সেই অপারেশন শুরুর পর জান্তা বাহিনীর দখল থেকে বিপুল পরিমাণ ভূমির নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেয়। সেই অভিযান এখনো চলমান। এরই মধ্যে চীন সফরে গিয়েছিলেন জান্তা সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থান শোয়ে। সেখানে তিনি চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন, যেন শান্তি আলোচনা শুরু করতে এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে চাপ দেয়া হয়।
তারই ধারাবাহিকতায় আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সেই আলোচনার ফলাফল নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মাও নিং বলেন, উত্তর মায়ানমারে সংঘর্ষে জড়িত পক্ষগুলো শান্তি আলোচনায় বসেছে বলে চীন আনন্দিত। এই আলোচনা থেকে ইতিবাচক ফলাফল এসেছে।
তিনি আরও বলেন, বেইজিং এ শান্তি আলোচনা পরিণতিতে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সমর্থন দিয়ে যাবে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তা দেশটির সব পক্ষের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করবে। এটি চীন-মিয়ানমার সীমান্তের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ব্যাপারে সহায়ক হবে। তবে বার্তা সংস্থা এএফপি এ ব্যাপারে মিয়ানমারের জান্তার কোনো মন্তব্য নিতে পারেনি।
এর আগে, গত সপ্তাহের বুধবার চীনের রাজধানী বেইজিং সফরে যান মায়ানমারের জান্তা সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থান শোয়ে। সেখানে তিনি গত বৃহস্পতিবার যোগ দেন লাচাং-মেকং কো-অপারেশন শীর্ষক পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বৈঠকে। তারই এক ফাঁকে থান শোয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠকে মায়ানমারের অন্তত তিনটি ভ্রাতৃপ্রতিম বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে যুদ্ধ ছেড়ে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাপ দেওয়ার জন্য ওয়াং ইকে অনুরোধ করেন থান শোয়ে। বৈঠক শেষে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৈঠকে ওয়াং ই বলেছেন, চীন আশা করে মায়ানমারে শিগগিরই জাতীয় ঐক্য ও সমঝোতা শুরু হবে এবং দেশের সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্য থেকে রাজনৈতিক রূপান্তর সূচিত হবে।
এছাড়া চীনা একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে, জান্তা সরকার বিদ্রোহীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য চীনের সাহায্য কামনা করেছে। তবে জান্তা বাহিনী নিয়ন্ত্রিত সরকারি গণমাধ্যম জানিয়েছে, চীন ও মায়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদ্বয় পশ্চিম মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কায়াকপায়ু গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণকে ত্বরান্বিত করা, মায়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয় হয়ে ইউনান প্রদেশের সঙ্গে রাখাইন প্রদেশকে সংযুক্ত করার জন্য একটি রেলপথ নির্মাণ নিয়ে আলোচনা করেছেন। উল্লেখ্য, দুটি প্রকল্পই চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অংশ।
শান্তি ফেরাতে বিদ্রোহীদের চাপ দিতে চীনকে অনুরোধ মিয়ানমারের শান্তি ফেরাতে বিদ্রোহীদের চাপ দিতে চীনকে অনুরোধ মিয়ানমারের পাশাপাশি এ দুই নেতা মাদক, মানব পাচার ও অনলাইন কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পাশাপাশি বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা করেছে বলেও জানানো হয়েছে মায়ানমারের সরকারনিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে।
মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল নিউ লাইট জানায়, গত সপ্তাহে জান্তা সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীনের কুনমিংয়ে ইউনান প্রাদেশিক পার্টি কমিটির উপসচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা সীমান্ত এলাকাগুলোর শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনা করেন। মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রধান মিত্র ও অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ হলো চীন। ২০২১ সালে জান্তার ক্ষমতা দখলকে অভ্যুত্থান হিসেবে স্বীকার করতেও নারাজ চীন।
মিয়ানমারে ২৭ অক্টোরব থেকে জান্তাবিরোধী প্রতিরোধ আক্রমণ শুরু হয়।
সামরিক জোট থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স ও জাতীয় ঐক্য সরকার সমর্থিত (এনইউজি) তথাকথিত জনগণের প্রতিরক্ষা বাহিনী সমন্বিতভাবে অপারেশন ১০২৭ নামের এই প্রতিরোধ আক্রমণ শুরু করে। উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্য থেকে সামরিক শাসন উত্খাতের জন্য শুরু হওয়া চলমান এই আন্দোলন-সংঘাতের তীব্রতা বেড়ে সমগ্র মিয়ানমারে ছড়িয়ে পড়েছে। সূত্র : এএফপি, ইরাবতী
বিষয়: #আলোচনা #ইতিবাচক #চীন #জান্তা #ফলাফল #বিদ্রোহী #শান্তি #সঙ্গ