শিরোনাম:
ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩১

Somoy Channel
রবিবার ● ১০ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » সাহিত্য রম্যগল্প » গল্প এইতো_তুমি_আমি
প্রথম পাতা » সাহিত্য রম্যগল্প » গল্প এইতো_তুমি_আমি
১১৬ বার পঠিত
রবিবার ● ১০ ডিসেম্বর ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

গল্প এইতো_তুমি_আমি

গল্প এইতো_তুমি_আমিছোট বোন আমার স্বামীর কো’লে বসার চেষ্টা করেছিলো,বারবার গা”ল স্পর্শ করে,এসব শুনে বেশ হতভম্ব হলাম।
অনুপ বললো ” শ্যালিকা আমার কো’লে বসার চেষ্টা করেছিলো ”
” ফ্রী-মিক্সিং ওর স্বাভাবেই আছে,খারাপ কোনো উদ্দেশ্য না।তুমি কিছু মনে করিও না প্লিজ,আমি ওকে বকে দিবো ”
” রাগার প্রয়োজন নেই,ও আবার অন্যকিছু ভেবে বসবে।যতদিন শ্বশুর বাড়িতে আছি শ্যালিকারা কথা বলতে এলে তুমিও সেখানে উপস্থিত থাকবা ”
যেখানে অন্য নারীর স্পর্শ পাওয়ার জন্য ছেলেরা মরিয়া হয়ে ওঠে সেখানে অনুপ নিজেই মেয়েদের থেকে দুরে থাকে!অনুপের মতো ব্যক্তিত্ববান স্বামী পেয়েছি ভেবে প্রায়ই আমার চোখ ভিজে ওঠে।
রাতে খাওয়া শেষে অনুপ সোফায় বসে টিভি দেখছে ঠিক তখনি দিয়া টিভির সামনে দাঁড়িয়ে বললো ” এইযে আমার রোবটিক জামাইবাবু,আপনি এরকম কেন?”
অনুপ বিরক্তি কাটিয়ে বললো ” কেমন? ”
” এইযে আপনার এতো সুন্দরী একটা শ্যালিকা আশপাশে ঘুরঘুর করে,সেটা আপনার চোখে পড়ছে না? ”
” কি যে বলো!পড়বে না কেন ”
” কেমন পড়ে বুঝতেই তো পারছি।টিভি না দেখে আমাকে দেখলে চাইতেও তো পারেন।এতো সুন্দরী একটা শ্যালিকা,দেখতে ইচ্ছে করেনা বুঝি? ”
দিয়ার এসব ডাবল মিনিং কথা অনুপের প্রচন্ড বিরক্ত লাগে।তবুও মুচকি হেসে বললো ” তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন,বসো ”
দিয়া অনুপের কাছে এসে বললো ” আপনার পাশে বসবো? ”
শ্যালিকার এমন প্রশ্নে ভদ্রতার খাতিরে বাধ্য হয়ে অনুপ বললো ” বসো সমস্যা নাই ”
দিয়া বসতে বসতে ” আমার স্পর্শ পেয়ে আবার উল্টোপাল্টা কিছু করে ফেলবেন না তো? ”
একথা বলে দিয়া হাসতে লাগলো।এমন রসিকতায় অনুপ ভেতরে ভেতরে রাগে জ্বলে যাচ্ছে।দিয়া বললো
” জামাইবাবু,শ্যালিকার সম্পর্ক হবে খুনসুটির।আপনি হাত দেখতে পারেন?বোনের স্বামীকে বিয়ে করার কোনো সম্ভাবনা রেখা খুঁজে পান কিনা দেখুন তো ”
একথা বলে দিয়া অনুপের দিয়ে হাত এগিয়ে দিলো।অনুপ শুধু কাচুমাচু করছে কিছু বলতে পারছে না,বড্ড লাজুক প্রকৃতির।এমন সময় ঘরের কাজ সেরে রুমে আসলো রুপা।রুপাকে দেখে অনুপ স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।রুপাকে দেখে দিয়া বললো
” দিদি তোর জামাই তো দারুণ হাত দেখতে পারে।আমার রেখায় কি আছে শুনবি? ”
রুপা আমতা আমতা করে বললো ” কি? ”
দিয়া মুখ টিপে হেসে বললো ” আমরা একসময় সতীন হবো,একটা স্বামী নিয়ে দু’জন চুল ছেঁড়াছিঁড়ি করবো।হাহাহাহা,জামাইবাবু হাত দেখে এটাই বললো ”
রুপা অনুপের দিকে একপলক তাকালো।অনুপ যে এমন কিছু বলেনি সে বিষয়টা রুপার জানা।রুপা বললো
” অনেক রাত হইছে দিয়া ”
” হু।কাল তো তোরা চলে যাবি,আজ একটু মজা করতে দিবি না? জামাইটাকে এতো নিজের ভাবিস কেন।সুন্দর জামাইয়ের সাথে সুন্দরী শ্যালিকা মজা করবেই,এটা মেনে নে ”
এটা বলে দিয়া হাসতে লাগলো।অনুপ সংকুচিত হয়ে রুপার দিকে তাকাচ্ছে।রুপা কি বলবে বুঝতে পারছে না।দিয়া একসমানে কথা বলেই যাচ্ছে।যার বেশিরভাগই অ”শ্লীল।এই মেয়েটা শহরে পড়তে গিয়ে একদম ন”ষ্ট মাইন্ডের হয়ে গেছে।রুপা আনমনে পায়ে আলতা দিচ্ছিলো।কথাবার্তার এক পর্যায়ে রুপা শুনতে পেলো দিয়া বলছে
” ওখান থেকে পড়ে গেলে আপনি ধরতে পারবেন? দেখি আমায় কোলে নিন তো,নিতে পারবেন কিনা আগে থেকে জেনে রাখা ভালো ”
কোথা থেকে পড়ে যাওয়া নিয়ে তাদের মধ্যে কথা হচ্ছিল রুপা খেয়াল করেনি।কথাটা বলেই দিয়া অনুপের কো”লে বসতে যাবে এমন সময় অনুপ সোফা থেকে উঠে দিয়ার গালে প্রচন্ড একটা চ”র বসিয়ে দিলো।আকষ্মিক ঘটনায় আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।দিয়া গালে হাত রেখে একপলক আমার দিকে তাকালো,এরপর ছুটে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো।
অনুপ একদম চুপচাপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।অতিরিক্ত রেগে গেলে ও চুপচাপ হয়ে যায়।কেন চ”র মে”রেছে সেটা এখনি জানতে চাইলাম না।রাগ কমলে ও নিজেই বলবে।
কিন্তু বিষয়টা শুধু এইটুকুতেই থামলো না।ডাল পালা ছড়িয়ে হুলুস্থুল কান্ড বাঁধিয়ে ফেললো।মিনিট দশেক পর আমার বড়দা এসে অনুপের কান বরাবর একটা চ”র বসিয়ে দিলো,অনুপ মেঝেতে পড়ে গেলো।বড়দা অনুপের গেঞ্জি ধরে টেনে দাড় করিয়ে প্রচন্ড একটা ধাক্কা দিলো।
দিয়াকে চ”র মে”রেছে জন্য বড়দা অনুপকে এভাবে মা”রবে?এরপর বড়দা যা বললো সেটা শুনে আমার মাথায় র’ক্ত উঠে গেলো…….
” তোর এত্তো বড় কলিজা,আমার বোনের শরী”রে বাজে ভাবে স্পর্শ করিস?তোর কি অবস্থা করি দেখ শুধু
বড়দার এমন কথায় আমার মাথায় র’ক্ত উঠে গেলো।দিয়ার দিকে তাকালাম,দিয়া সমানে কেঁদে যাচ্ছে।লক্ষ্য করলাম ওর বু’কে ওড়না নেই।ছিহ!সামান্য চ”ড় মা”রায় দিয়া এরকম বাজে ভাবে অনুপকে সবার সামনে হেনস্তা করবে?
বড়দা অনুপের গা”লে আরেকটা চ”র বসিয়ে দিলো।আমি গিয়ে প্রচন্ড ধাক্কায় বড়দার থেকে অনুপকে সরিয়ে নিলাম।ইতোমধ্যে বাবা মা দু’জনেই ঘরে ঢুকলো।বাবা ধমক দিয়ে বললো
” কি হইছে এখানে?দিয়া কাঁদছে কেন? ”
দিয়া বাবাকে জরিয়ে ধরে মিথ্যা কান্নার অভিনয় করতে লাগলো।আমি শুধু দেখছি,নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারছি না।বড়দা বাবাকে বললো
” ওই শয়তানরে আজ আমি মে”রেই ফেলবো ”
বাবা বললো ” কি করছে ও ”
দিয়া ফুপিয়ে কেঁদে বললো ” জামাইবাবু আমার বু”কে বাজেভাবে হাত দিয়েছে।আমি বাঁধা দেওয়ায় চ”ড় মে”রেছে ”
দিয়ার অভিনয়ে আমার পায়ের র”ক্ত মাথায় উঠে গেলো।দিয়ার দিকে তেড়ে যেতেই বড়দা আমার বাঁধা দিয়ে বললো
” কেমন ছেলেকে ভালোবেসেছিস? মেয়ে দেখলে মাথা ঠিক থাকে না।শ্যালিকাকেও ছাড়লো না।ওর কলিজা কুত্তাকে খাওয়াবো আমি ”
আমি কিছু বলবো তার আগেই অনুপ আমায় থামিয়ে দিয়ে বললো ” রুপা এখান থেকে চলো ”
আমি বিস্মিত হয়ে বললাম ” চলো মানে?ওরা ভুল ধারণা নিয়ে বসে থাকবে নাকি? আর দিয়াকে আমি ছেড়ে দিবো ভেবেছো?দেবতা তুল্য একটা মানুষকে নিয়ে নোংরা কথা বলতে ওর একটুও মুখে বাঁধছে না? ”
অনুপ আমায় সরিয়ে নিয়ে বড়দার সামনে হাত জোর করে বললো ” দাদা,আপনাকে আমার আর বলার কিছু নেই।শুধু দিয়ার কথার উপর ভিত্তি করে আপনি আমার গা”য়ে হাত তুলে আমায় চরম অপমান করলেন ”
বড়দা বললো ” অপমানের দেখছোস কি?তোরে তো….! ”
একথা বলে বড়দা আবারো তেড়ে এলো অনুপের দিকে।বাবা থামিয়ে দিয়ে বললো ” হৈচৈ করো না।ঘরের কথা ঘরেই থাক।আর রুপা মা,তোকে হাজারবার বলেছিলাম এই ছেলের চরিত্র খারাপ আছে।অবাধ্য হয়ে বিয়ে করলি। আজ দিয়া….”
বাবাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম ” আসল চরিত্রহীন তো তোমরা বাবা ”
বাবা গম্ভীর হয়ে বললো ” আমরা চরিত্রহীন?”
” হ্যা।দিয়া কি না কি বললো আর বড়দা এসে মা”রতে শুরু করলো? একটা বার জানার ও চেষ্টা করলো না দিয়া সত্যি বলছে না মিথ্যা! ”
বড়দা বললো ” কি করতে হবে সেটা তোর থেকে শুনে আমায় করতে হবে নাকি? ”
অনুপ শুধু দিয়াকে বললো ” এমনটা না করলেও পারতে “।বাবা বড়দাকে বললো ” অনেক রাত হইছে।আশপাশের লোকজন যেন না জানে।হৈচৈ করো না।যাও ঘরে যাও ”
সবাই চলে যাওয়ার পর অনুপ আমার কাছে এসে মৃদু স্বরে বললো ” রুপা আমি বাড়িতে যাবো।তুমি আমার সাথে আসবে না কাল আসবে? ”
” এখানে আর এক মুহুর্ত না।আমার স্বামীকে যেখানে এভাবে অপমান করা হলো সে বাড়িতে আমি আর পা রাখবো না ”
সে রাতেই বাড়ি চলে আসলাম।সারা রাস্তা অনুপ একটা কথাও বলেনি।লোকটা একসব নুইয়ে পড়েছে।ওর শুকনো মুখ দেখে আমার বু’ক হাহাকার করে উঠলো।ইচ্ছে করছিলো যদি সম্ভব হতো তাহলে দিয়াকে খু”ন করে আসতাম।
বিছানায় শুয়ে অনুপ বারবার এপাশ ওপাশ করছে।যে ছেলেকে সামান্য একটু জোরে কথা বললেই অপমানবোধে ছটফট করে সেই ছেলেকে আজ কতই না অপমানিত হতে হলো! তাও এরকম নোংরা একটা ইস্যু নিয়ে।
অনুপের চুলে হাত বুলাতে ওর মাথায় হাত রাখার চেষ্টা করলাম।অন্ধকারে হাতটা ওর গা”ল স্পর্শ করলো।গা”ল ভেজা। বুঝতে পারলাম অনুপ কান্না করছে।আধশোয়া হয়ে বসে অনুপকে বললাম
” একটু উঠে বসো তো ”
অনুপ শোয়া থেকে উঠে বসলো। আমার কোলে ওর মাথা রেখে চোখের জল মুছে দিলাম। চুলে বিলি কে’টে দিতে দিতে বললাম ” দিয়া এরকম জঘন্য একটা কাজ করবে আমি ভাবতেই পারছি না ”
অনুপ বললো ” দাদা আমাকে একটা বার বলতেও তো পারতো!ওনারা কি আমায় এতটুকুও বিশ্বাস করে না? ”
রুপা ধরা গলায় বললো ” ও বাড়ির কারোর সাথে আমার আর কোনো সম্পর্ক নেই ”
অনুপ আমার কোলে মাথা রেখে বাচ্চা ছেলের মতো অনেক্ক্ষণ কাঁদলো।এক সময় এসে ঘুমিয়ে পড়লো।কিন্তু আমি ঠিকই জেগে রইলাম।অনুপ ভিষণ ইমোশনাল।এই অপমানিত হওয়ার দা”গ এতো সহজে ওর মন থেকে যাবে না।দেখা যাবে মাঝরাতে উঠে ভুলভাল কিছু একটা করে বসবে।সারারাত অনুপকে জরিয়ে ধরেই বসে রইলাম।ঘুমের ঘোরে অনুপ বিরবির করে বললো ” রুপা আমি এটা করিনি,আমি এটা করিনি, করিনি ”
রুপা মনে মনে বললো,সেটা আমি জানি অনুপ।ওখানে আমি উপস্থিত না থাকলেও কখনই বিশ্বাস করতাম না এমন নোংরা একটা কাজ তুমি করতে পারো।আমিতোমায় বিশ্বাস করি।তুমি কেমন সেটা তুমি না বললেও আমি ভালোভাবেই বুঝি।
দিয়া যে এতোটাও নিচে নামতে পারে আমার জানা ছিলো না।ভেবেছিলাম যা হয়েছে সেখান পর্যন্তই বিষয়টা থেমে যাবে,কিন্তু আমি ভুল ছিলাম।
পরেরদিন কিছুটা বেলা গড়াতেই বাড়িতে একজন পুলিশ এলো।অনুপের থেকেও আমি বেশি অবাক হয়েছিলাম।দিয়া কি অনুপের নামে কে”স করে দিয়েছে? অনুপের ক্যারিয়ার,তার থেকেও বড় কথা,ওর দিদির সংসার ভাঙ্গতে ওর একটুও খারাপ লাগছে না? তাও আবার সম্পুর্ন ভুল একটা ইস্যুকে ভিত্তি করে!
তবে কি আমাদের সুখের সংসারটা এখানেই তচনচ হয়ে যাবে?
চলবে?
গল্প এইতো_তুমি_আমি
লেখক জয়ন্ত_কুমার_জয়
১ + ২
পরবর্তী পর্ব পেতে পেইজে ফলো দিয়ে রাখুন
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত



বিষয়: #  #  #


আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)