রবিবার ● ৩ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » বিশেষ প্রতিবেদন » নৌকার প্রার্থীকে বিষদাগার, স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন কুলাউড়া ছাত্রলীগ সভাপতি তায়েফ!
নৌকার প্রার্থীকে বিষদাগার, স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন কুলাউড়া ছাত্রলীগ সভাপতি তায়েফ!
আসন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে নৌকা প্রতীকে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। গত ২৭ নভেম্বর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান জানিয়েছেন, নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন বঞ্চিত নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করলে এবং সেই প্রার্থীর পক্ষে কোন ছাত্রলীগ নেতা কাজ করলে তাদের প্রতি কঠোর হবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
সেই নির্দেশনার কোনো তোয়াক্কা না করে এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন কুলাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিয়াজুল তায়েফ। শেষ পর্যন্ত ওই প্রার্থীর সাথে থাকার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। এমনকি অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থীকে ইঙ্গিত করে ফেসবুকে ‘বহিরাগত ক্যাডার’, ‘ সিলেটি গডফাদার’-এর মতো শব্দ ব্যবহার করে নানা বিষদাগারও করে যাচ্ছেন ওই ছাত্রলীগ নেতা। এ নিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগেও তৈরি হয়েছে বিভক্তি।
নিয়াজুল তায়েফের ফেসবুক ঘেটে দেখা গেছে, গত ৬ দিনে স্বতন্ত্র প্রার্থী একেএম সফি আহমদ সলমানে’র পক্ষে অন্তত ১৪টি পোস্ট দিয়েছেন তিনি। তবে এসব স্ট্যাটাস আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে নয় বরং সিলেট থেকে কুলাউড়া এসে প্রচারণায় অংশ নেয়া সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে দিয়েছেন বলে দাবি করছেন তায়েফ। এর বাইরে বিভিন্ন পোস্টে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে উদ্দেশ করেও স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ জানুয়ারি মাসে নিয়াজুল তায়েফ সভাপতি ও আবু সায়হামকে সাধারণ সম্পাদক করে কুলাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের নয় সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। এক বছরের জন্য ঘোষিত সেই কমিটির মেয়াদ পেরিয়েছে পাঁচ বছর আগে। জানা গেছে, তায়েফ ছাত্রলীগের রাজনীতি করলেও তার ছাত্রত্ব অনেক আগেই শেষ হয়েছে। এখন পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী বনে যাওয়া তায়েফ রহিমা কনস্ট্রাকশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী এবং দি মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সদস্য। তার বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ পরিচয়ে নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে। এছাড়া তায়েফের বিরুদ্ধে সাংবাদিককে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগও আছে।
২০২১ সালে পার্শ্ববর্তী রাজনগর উপজেলা ছাত্রলীগ নিয়ে নিউজ করায় এক সাংবাদিককে কল করে হত্যার হুমকি দেন তায়েফ। জানা যায়, রাজনগর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে ‘এক বছরের কমিটিতে সাড়ে ৪ বছর পার’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার মৌলভীবাজার প্রতিনিধি হোসাইন আহমদ প্রতিবেদনটি করেন। এদিন রাতেই কল করে কুলাউড়া ছাত্রলীগের সভাপতি নিয়াজুল তায়েফ সাংবাদিককে হত্যার হুমকি দিয়ে বলেন, ‘লাফালাফি কম করে করো, সাংবাদিকতা চলে যাবে। কুলাউড়া আসলে বুঝবেন। এক রান (পা) টেংরায় (রাজনগর উপজেলার একটি ইউনিয়ন) ও এক রান কুলাউড়া উপজেলাতে ছিঁড়ে রাখব।’ একই সঙ্গে গালিগালাজ এবং নানা হুমকি দেন তিনি। এর প্রেক্ষিতে ভুক্তভোগী সাংবাদিক থানায় জিডি করেন।
গত ৩০ নভেম্বর নিজ ফেসবুক নিজ আইডিতে নিয়াজুল তায়েফ লিখেন, বহিরাগত আন্ত-বিভাগের সশস্ত্র ক্যাডারদের আকস্মিক মহড়ায় কুলাউড়া শহরকে অশান্ত করার অপচেষ্টা!! শহরবাসী আপনারা যার প্রত্যক্ষদর্শী,,,, মহড়া দিয়ে ওরা কিসের আভাস দিচ্ছে?? বর্তমানে এমন যখন অবস্থা?? তাহলে আমাদের বুঝতে বাকি নেই এরা যদি জোর করে দখল করে ক্ষমতার চেয়ার পায় তাহলে কিছু দিন পরে এই বহিরাগত সশস্ত্র ক্যাডারদের গডফাদাররা কুলাউড়া থেকে আমাদেরকে বিতাড়িত করতে দ্বিধাবোধ করবেন না,,,,,’।
তিনি লিখেন, ‘সিলেট নগরীতে এদের তাণ্ডবে যেভাবে পাড়া-মহল্লায় অলিতে গলিতে তাদের দুঃশাসনের স্বীকার হচ্ছে সাধারণ জনগণ শান্তিপ্রিয় মানুষ প্রতিদিন এদের দ্বারা সংঘটিত খুন-গুম, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, দখলদারী’র ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাক্ষী বহন করছে ঠিক তেমনি এরা সুযোগ পেলে এদের তাণ্ডবে ক্ষমতার হিংস্রতায় আতঙ্কের শহরে পরিণত হবে আমাদের শান্তিপ্রিয় এই স্বপ্নের কুলাউড়া শহর!! শান্তিপ্রিয় শহরবাসী আপনাদের বিবেকের কাছে প্রশ্নটা রাখলাম?? আপনাদের সুচিন্তিত মতামত এবং কুলাউড়াবাসী আপনাদের প্রিয় সন্তান এর পাশে থেকে বহিরাগত সিলট’র ক্যাডারদের সিলটি/গডফাদার এর হিংস্র রক্তচক্ষু থেকে কুলাউড়াবাসী কে হেফাজত করবেন।’ উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক হওয়ার আগে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পালন করেছেন।
তায়েফের এই ফেসবুক স্ট্যাটাসের মন্তব্যের ঘরে এম কাউসার আহমদ লিখেন, ‘পক্ষে, বিপক্ষে আবার পছন্দ, অপছন্দে মতামত থাকতেই পারে কিন্তু ভাই দায়িত্বশীল জায়গা থাকি ইরকম কথা একদম বেমানান। কুলাউড়া মানুষ জানে কে কেমন!! অতএব এখন অপেক্ষা করইন আর দেখইন কুলাউড়ার মানুষ তাদের রায়ের প্রতিফলন ৭ জানুয়ারি কেমনে দেয়।’
নাসিফ চৌধুরী নামে আরেকজন লিখেন, ‘পুরো সিলেট বিভাগের মানুষ জানে কে কি রকম। সুতরাং প্রতিদন্তিতার সুযোগে মানুষকে ভুল-বুজানোর চেষ্টা করবেন না। ভাল ব্যবহারকে কারও দুর্বলতা ভাবা ভুল।’
রুম্মান চৌধুরী মন্তব্য করেন, ‘মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে কেউই কখনো সফল হতে পারেনি, যোগ্যতার বলয়ে নিজের প্রার্থীকে বের করে আনুন, সবার সাথে সৌহার্দ্য পূর্ণ সম্পর্ক রাখুন।আপনার জন্য শুভ কামনা।’
রিফাত তালুকদার নামে একজন সেই পোস্টে মন্তব্য করেছেন, ‘কুলাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় নতুন কমিটি গঠন চাই।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়াজুল তায়েফ বলেন, এখানে কিছু খারাপ পোলাপাইন কুলাউড়া শহরে আইসা.. অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কুলাউড়া শহরে ঢুকছে। সাধারণ মানুষকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদান করেছে। আপনি জানেন যে, এবারের নির্বাচন নেত্রী অবাধ, সুষ্ঠু করবেন। আমরা ১৩-১৪ বছর ধরে ছাত্রলীগ করি। আমাদের নেত্রী বলেছে সাধারণ ভোটারকে সেন্টারমুখী করতে হবে, স্পষ্টভাবে বলেছেন। নেত্রী তো বলেন নাই সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখাতে।
তিনি বলেন, কুলাউড়ায় ২ লাখ ৮৫ হাজার ৫৪ ভোট আছে। সিলেটের এমসি কলেজের ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত সুজন পুরকায়স্ত এবং আরো কিছু উগ্র সন্ত্রাসী অস্ত্রসহ কুলাউড়া শহরে ঢুকে সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এটা তো আমি জাস্ট প্রতিবাদ করেছি। আমি ব্যক্তি বিশেষের বিপক্ষে স্ট্যাটাস দেই নাই। আমি স্ট্যাটাস দিয়েছি যারা বহিরাগত কুলাউড়ায় আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। কুলাউড়ার মানুষের স্বার্থে আমি প্রতিবাদ করেছি।
স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে সংগঠনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন কি-না? জানতে চাইলে তায়েফ বলেন, আমি তো কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে মানি। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক, নৌকার পক্ষের লোক। প্রার্থীকে নৌকা দিয়ে পাঠিয়েছেন আমরা তো কাজ করবো। আমরা তো পক্ষে আছি, নৌকার বিপক্ষে না।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম বিবার্তাকে বলেন, আমি এরকম কোনো কিছু শুনিনি। ছাত্রলীগ থেকে ইনস্ট্রাকশন দেয়া আছে নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য। মার্কা দেয়া হবে ১৮ তারিখের ভেতরে। হয়তো অনেকে এখন কাজ করতেছে- সবগুলো বন্ধ হয়েছে। উপজেলাভিত্তিক সভাপতি-সম্পাদক যারাই আছে আমাদের আলোচনা হয়েছে। শীঘ্রই কার্যক্রম শুরু করবো, সমস্যা নাই। এরপরও যদি সেন্ট্রালের মেসেজ যদি কেউ না শুনে তাহলে সেন্ট্রাল ছাত্রলীগ যে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলবে আমরা সেটা করবো।
জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বিবার্তাকে বলেন, বিষয়টা অবগত না, জেনে মন্তব্য করতে পারবো।
বিবার্তা
বিষয়: #নির্বাচন ২০২৪