রবিবার ● ৩ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » মতামত » মনোনয়ন এবং ৫০/৫০ আওয়ামী নেতাকর্মী প্রসঙ্গে!
মনোনয়ন এবং ৫০/৫০ আওয়ামী নেতাকর্মী প্রসঙ্গে!
১/১১ পরবর্তী ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩০ আসনে জয়লাভ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে। এত বড় জয়ের পরও একশ্রেণির ৫০/৫০ (পেশায় ব্যবসায়ী/মনেপ্রাণে বিএনপি-জামাতের সমর্থক) মানসিকতার লোকজন ভেবেছিল ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের খবর আছে!
বিএনপি-জামাতের আদর্শ লালনকারী (মনে করে জামাত-বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় আইলে এইদেশে আল্লার আইন আর সৎ লোকের শাসন চালু হইব) ব্যবসায়ীরা দেখল, আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মুথলি দেশ চালাইতে শুরু করছে। ওই সময় তাগো বোধদয় হইলো- শেখ হাসিনা যেই ভাবে দেশ চালাইতাছে- তাতে লম্বা সময় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকব। তারপর ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ হেট্রিক ক্ষমতায় আইলো। পিতা মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের এত দারুণ পরিচালক হইছে যে, এই গাড়ি দেশের ইতিহাসে এহনই সবচাইতে ভালো চলছে তাঁর হাতেই। যদিও আমার আলাপের বিষয় ভিন্ন।
আলাপ হইল, ২০০৮ সালের পূর্ব ও পরে আওয়ামী লীগের পার্থক্য লইয়া?
পার্থক্য এই যে, ২০০৮ সালের পর থেকে এই পর্যন্ত যারা দলেদলে স্বার্থ হাসিলের জন্য আওয়ামী লীগের পতাকাতলে জড়ো হইছে- তাদের শতকরা ৯৯ ভাগ ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে না। তার মনেমনে জামাত-বিএনপিই জপে। তাগোর মধ্যে অধিকাংশই মনে করে— যুদ্ধাপরাধের দায়ে আমৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ওরফে দেইল্লা রাজাকার জান্নাতুল ফেরদৌস পাইবো এবং সে জান্নাতের টিকেট দেওয়ার ক্ষমতা রাখতো ও রাখে।
শঙ্কার বিষয় হইলো ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়! আওয়ামী লীগ ক্ষমতাহীন হইলে দলের সবচেয়ে বড় ক্ষতি এরাই করবে। এখনও করছে, দল ক্ষমতায় বলে এর প্রভাবটা প্রকাশ্যে কমই আসছে। কথা হইলো, এগো চিনবেন কেমনে? লেবাস, কথাবার্তা, কর্মকাণ্ড, চিন্তা-চেতনায় এগো চিনতে পারবেন। অতএব তাগো বিষয়ে আওয়ামী লীগকে ভীষণ সাবধানে চলতে হবে- তা না হলে যা ক্ষতি তাতো ইতোমধ্যে হয়েছে। দলের সর্বোচ্চ ফোরাম থেকে শুরু করে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে তাদের আগেপিছে বিবিধ বিশেষণ যুক্ত হইছে! এমন অন্য সবাইকে (নিজে বাদে) পরিচয় করিয়ে দিতে সেও ওইসব বিশেষণ ব্যবহার করে।
গভীর শঙ্কার বিষয় হইলো এই যে, যারা কমিটি দেওয়ার ক্ষমতা রাখে তারাই তো— অর্থ, প্রতিপত্তি, নারীসহ বিবিধ অনৈতিক সুবিধার জন্য তাদেরকে দলের সাংগঠনিক পদে জায়গা কইরা দিছে। যখন ওইসব মহান (!) নেতৃবৃন্দ তৃণমূল নেতা-কর্মীদের কথায় টিকতে না পারে— তখন তারাও জামাত-বিএনপি মতাদর্শ লালান করা আওয়ামী নেতাগো নানা কথা বলে!
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ যারা লালন করে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে যারা আর্শীবাদ মনে করে— ওইসব নেতাকর্মী, আদর্শিক মানুষ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার পক্ষের সৃষ্টিশীলগণ, সাংস্কৃতিক কর্মী, নির্বাচনে নৌকায় ভোট দেয় এমন লোকজন- তারা প্রায় সবাই জানে কতটা নির্লজ্জভাবে পদ-পদবীর বানিজ্যকরণ হইছে!
তাই বঙ্গবন্ধুর নামের উপর দাঁড়িয়ে থাকা সংগঠনকে যারা ব্যক্তিগত লাভালাভির জন্য পণ্য বানাইয়া বেইচ্চা দিলো, শেখ হাসিনার বিশ্বাসের যারা ঘাতক হইলো- তাদেরকে এবং যারা তাগোর হাত ধইরা মুজিববাদে বিশ্বাস না করা সত্ত্বেও মুখেমুখে জয় বঙ্গবন্ধু বলল— এই দুইশ্রেণির নেতাগো বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সময়ের দাবি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলে সংস্কার হচ্ছে, তার অংশ হিসেবে অমন সব নেতাদের (অনুপ্রবেশে সহায়তাকারী ও অনুপ্রবেশকারী) খুঁজে বের করে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হোক। তারও আগে দলের নীতি-নির্ধারকদের ভীষণ সাবধান হওয়া দরকার— যেন কোনোভাবেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এইসব দ্বৈতনীতির লোকজন প্রার্থী হতে না পারে। দেশ ও দলের বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে এই ইস্যু এখনই কবর দেয়া উচিৎ।
লেখক : হাবিবুর রহমান রোমেল, সাহিত্যক ও সাংবাদিক।
(ফেসবুক থেকে)
বিষয়: #নির্বাচন ২০২৪